27 Feb মজলিস খোদ্দামুল আহমদীয়া, ঢাকার স্থানীয় প্রশিক্ষণ ক্লাস ২০২২ অনুষ্ঠিত
গত ৪ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ মজলিস খোদ্দামুল আহমদীয়া, ঢাকার স্থানীয় বার্ষিক তালিম-তরবিয়তি প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে (আলহামদুলিল্লাহ)। মজলিস খোদ্দামুল আহমদীয়া, ঢাকার সদস্যদের পাশাপাশি মজলিস খোদ্দামুল আহমদীয় মিরপুর, নাখালপাড়া ও উত্তর বাহেরচর মজলিসমূহ থেকে খাদেম ও তিফলরা অংশগ্রহণ করেছে।
৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বাদ জুম্মা বিকাল ০৩:০০ টায় তালিম-তরবিয়তি প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অধিবেশন কুরআন তিলাওয়াত ও নযমের মাধ্যমে আরম্ভ হয়। উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন জনাব মোস্তাক আহমদ, নায়েব সদর-৪, মজলিস খোদ্দামুল আহমদীয়া বাংলাদেশ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব জুলফিকার হায়দার (আমীর, আহমদীয়া মুসলিম জামাত ঢাকা।) এছাড়া স্থানীয় কায়েদ জনাব ইরফান শাহরিয়ার ইমন এবং তালিম-তরবিয়তি প্রশিক্ষণের নাযেম-ই-আলা জনাব রেজাউদ্দিন আহমদ সাগর সাহেব উপস্থিত ছিলেন। তারা তাদের বক্তব্যে খাদেম ও তিফলদের শুভেচ্ছা ও সুস্বাস্থ্য কামনা এবং নসীহত প্রদান করেন। আমীর সাহেবের দোয়ার মাধ্যমে উদ্বোধনী অধিবেশন সমাপ্ত হয়।
তালিম-তরবিয়তি প্রশিক্ষণে মোট উপস্থিতি ১৩০ জন। তার মধ্যে তিফল ৮৩ জন এবং ৪৭ খাদেম জন। প্রশিক্ষণের কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে সম্পাদনের জন্য অংশগ্রহণকারী সকল সদস্যদের নিয়ে আল হাকাম, আল বদর, আশ্ শামস, আন নূর, আল বাশার এবং আল খালিদ নামে ৬টি গ্রুপ করে তাদের মাঝে দৈনন্দিন কর্মসূচি তৈরী করে দেওয়া হয়। যার মাধ্যমে দলসমূহ পর্যায়ক্রমে বেদারী ও সালাত শৃঙ্খলা, ওয়াকারে আমল, খাবার পরিবেশনের দায়িত্ব পালন করেছে।
তালিম-তরবিয়তি প্রশিক্ষণে পাঠদানের (ক্লাসের) কার্যক্রম সহজ করার জন্য মজলিস খোদ্দামুল আহমদীয়া, ঢাকার উদ্যোগে তালিম-তরবিয়তি প্রশিক্ষণের সেক্রেটারি জনাব মুহাম্মদ মিরাজুল ইসলাম জুম্মন সাহেবের সংকলনে প্রশিক্ষণের সিলেবাসের সকল বিষয় [কুরআন, হাদীস, অর্থসহ নামায, নযম, দোয়া, মহানবী (সা) ও মসীহ মওউদ (আ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী] সংবলিত “আন্ নাশিত্বাত” নামে একটি চমৎকার সহায়িকা (গাইড বুক) প্রকাশ করা হয়।
প্রশিক্ষণে কায়দা পাঠ, কুরআন নাজেরা, কুরআনের সুরা মুখস্থ, হাদিস শিক্ষা, নামাজ শিক্ষা, অর্থসহ নামাজ শিক্ষা, নজম শিক্ষা ও সিলসিলাহর কিতাব পাঠ ক্লাস করানো হয়। বয়স ভিত্তিক বিভিন্ন দল অনুয়াযী ৫ জন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে ক্লাসগুলো সম্পন্ন হয়।
প্রশিক্ষণে ৫টি তরবিয়তি অধিবেশনে যথাক্রমে প্রধান বক্তা ছিলেন সর্বজনাব মওলানা শাহ মোহাম্মদ নুরুল আমীন (বিষয় : আপনার সন্ধানে আছি), মওলানা রাসেল সরকার (বিষয়: মসজিদের আদব ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা) মো. জহুরুল ইসলাম মণি (বিষয়: মজার বিজ্ঞান), মওলানা আব্দুল আউয়াল খান চৌধুরী, ন্যাশনাল আমীর সাহেব (বিষয়: খিলাফতের স্নিগ্ধ ছায়ায়), মুহাম্মদ জাহেদ আলী, সদর সাহেব (বিষয়: পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য)। প্রতিটি অধিবেশনের পর প্রশ্ন-উত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয় এবং কুইজের মাধ্যমে ৫জনকে পুরষ্কৃত করা হয়।
ক্লাস শেষে সিতারা (৭-৯ বছর), কমর (১০-১২ বছর), বদর (১৩-১৫ বছর) ও খাদেম এই চারটি গ্রুপ আকারে কায়দা পাঠ, কুরআন নাযেরা, সিলেবাসের নির্ধারিত মুখস্থ কুরআন তিলাওয়াত, নযম, আযান, লিখিত ও মৌখিক তালিমি প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়। এছাড়াও বিশেষ প্রতিযোগিতা হিসেবে যারা ইমামুস সালাত, সুরা বাকারার প্রথম ১৭ আয়াত মুখস্থ এবং কুরআনের শেষ ১৬টি সুরা মুখস্থ বলতে পেরেছেন তাদের সকলকে পুরস্কৃত করা হয়। তালিমী প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের আকর্ষণীয় পুরষ্কার ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। ইমামুস সালাত-এর জন্যও বিশেষ সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়েছে।
এই প্রশিক্ষণে একজন তিফল কায়দা পাঠ শেষ করে কুরআন নাযেরা পড়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে (আলহামদুলিল্লাহ)। তাকে জামাতের অনূদিত কুরআন মজীদ পুরস্কার দেয়া হয়েছে।
পয়গামে রেসানী, কুইজ, ফুটবল, ক্রিকেট-এর দলীয় খেলাধুলার পাশাপাশি ইন-আউট, চকলেট দৌঁড়, স্ট্যাম্পিং, গোল্ডেন গোল, মেরুদন্ড ব্যায়াম ইত্যাদি একক খেলার প্রতিযোগিতা হয়।
একদল নবীন এবং নিষ্ঠাবান কর্মীর অক্লান্ত পরিশ্রমে ৮ দিন ব্যাপি এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্পন্ন হয়েছে। মহান আল্লাহ তা‘আলা তাদের সকলকে উত্তম পুরষ্কারে ভূষিত করুন।
প্রশিক্ষণের শেষ দিন সমাপনী অধিবেশন কুরআন তিলাওয়াত ও নযমের মাধ্যমে আরম্ভ হয়। অধিবেশনে আহমদীয়া মুসলিম জামাত ঢাকার মোহতরম আমীর সাহেব, মজলিস খোদ্দামুল আহমদীয়া বাংলাদেশের সদর, মজলিস খোদ্দামুল আহমদীয়া ঢাকার মোহতরম কায়েদ সাহেব এবং অনুষ্ঠানটির নাযেম-ই-আলা উপস্থিত ছিলেন।
পুরস্কার বিতরণ শেষে মজলিস খোদ্দামুল আহমদীয়া, বাংলাদেশের সদর মোহতরম মুহাম্মদ জাহেদ আলী সাহেব আহাদনামা পাঠ করান এবং আহমদীয়া মুসলিম জামাত বাংলাদেশের ন্যাশনাল আমীর মোহতরম মওলানা আব্দুল আউয়াল খান চৌধুরী সাহেব দোয়ার মাধ্যমে তালিম-তারবিয়তি প্রশিক্ষনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। এরপর গ্রুপ ছবি তোলার মাধ্যমে উপস্থিত সকলের স্মৃতি ধরে রাখা হয়।