হুজুরের (আইঃ) হল্যান্ড ও জার্মানী সফর অক্টোবর ২০১৫ ব্যক্তিগত ডায়েরী পার্ট-১ (পর্ব-২)

[হুযুর (আইঃ) এর হল্যান্ড এবং জার্মানী সফরঃ আবিদ খান সাহেবের ব্যক্তিগত ডায়েরী। ইংরেজী থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন নুরে কাওসার রিফাত সাহেব। দ্বিতীয় চ্যাপ্টার প্রকাশ করা হল]

হল্যান্ড আগমন

এরপর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই আমাদের কাফেলা হল্যান্ডে নানপেস্টে প্রবেশ করে। এখানেই হুজুর পরবর্তী ১০ দিন অবস্থান করবেন। আমি পূর্বে কয়েকবার হল্যান্ডে এসেছিলাম কিন্তু এবারই প্রথম কাফেলার সদস্য হিসেবে এসেছি।
২০০৬ সালে আমি যখন উকিল হিসেবে কাজ করতাম তখন আমি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ট্রাইব্যুনালে এক মাসের জন্য ইন্টার্নশীপ করে ছিলাম। ১৯৯৭ সালে হযরত খলীফাতুল মসীহ রাবে(রহঃ) হল্যান্ডে এক সপ্তাহের উর্দু ক্লাস নিয়ে ছিলেন। আমি সেখানেও উপস্থিত ছিলাম। কাফেলা হল্যান্ডে পৌছালে আমি কিছু পরিচিত ও কিছু অপরিচিত মুখ দেখতে পেলাম। স্হানীয় আহমদীদের সাথে সেখানকার মেয়র হুজুরকে স্বাগত জানানোর জন্য উপস্হিত ছিলেন। সকলেই হুজুরকে তিন বছর পর তাদের মধ্যে পেয়ে অনেক আনন্দিত ছিল।

নানপেস্টের আবহাওয়া খুব ঠান্ডা ছিল। সফরের পুরো সময়টাতেই এরকম ঠান্ডা আবহাওয়া বিরাজ করছিল। হুজুর বলেন এই ঠান্ডার মধ্যেই মেয়র সাহেবকে হুজুরের জন্য অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছে। তাই স্থানীয় জামাত যদি পরের দিন হজুরের সাথে তার সাক্ষাতের ব্যবস্থা করতেন তাহলে সেটি বেশি ভাল হতো। এটিই হু্যুরের বিনয়ের একটি উদাহরণ। তিনি তার অতিথির জন্য চিন্তা করতেন যে ঠান্ডার মধ্যে থেকে নিশ্চয় তার কষ্ট হয়েছে।

নতুন মসজিদ বায়তুন নূরে প্রথম নামায আদায়

পৌছানোর পরপরই আমি ওযু করে মসজিদে চলে গেলাম। হুজুরের পূর্ববর্তী সফরের পর বায়তুন নূর মসজিদ নতুন করে তৈরী করা হয়েছে। নতুন মসজিদে হুজুর প্রথমবারের মতো নামায আদায় করেন। পুরোনো মসজিদকে একটি হলরুম বানানো হয়েছে। সেটিকে এখন প্রদর্শনী ও হলরুম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

একজন স্থানীয় আহমদী নামাযের পূর্বে আমাদের বলেন যে হুজুর যেহেতু সফরে আছেন তাই তিনি হয়ত এশার নামায কসর হিসেবে আদায় করবেন। কিন্তু আমাদের পুরো নানপেস্ট সফরে হুজুর কোন নামায কসর করেননি। এতে আমি কিছুটা আশ্চর্য হয়েছি কারণ আমি দেখেছি যে বিভিন্ন সফরে হজুর নামায কসর করেছেন। আমি পরবর্তীতে হুজুরকে ব্যাপারটি নিয়ে জিজ্ঞেস করি। হুজুর বলেন “সব সময় নামায কসর করা বাধ্যতামূলক নয়।”

কিছু স্থানীয় আহমদী মনে করেছেন যে নানপেস্টে হুজুর নিজের বাড়ীর মতোই মনে করেছেন। তাই নামায কসর করেননি। এতে তারা আনন্দ লাভ করেছেন।

হল্যান্ডের বিখ্যাত লঙ্গর খানা

বিভিন্ন সফরে কাফেলার অভিজ্ঞ ব্যক্তিগণ আমাকে সবসময় বলেছে যে হল্যান্ডের লঙ্গরখানার খাবার অনেক সুস্বাদু ও মজাদার। পরবর্তী দশদিন আমি তাদের বক্তব্যের সত্যতা বুঝতে পারি। লঙ্গরখানায় কোন পোলাও কোর্মা নয় বরং সাধারণ সবজি, ভাজি রান্না হতো। কিন্তু সেটি খুবই মজাদার ছিল। আমার সবচেয়ে মজা লেগেছে গরম গরম এশিয়ান রুটি যেটি ডিনারের সময় দেয়া হতো।

একটি বিশেষ সুবিধা

ডিনারের পর আহমদ ভাই আমাকে বলেন যে হল্যান্ড সফরের সময় আমরা একই রুমে থাকব। হুজুর তার বাসস্থানের নিচের বেসমেন্টে আমাদের দুজনের থাকার অনুমতি দিয়েছেন। হুজুরের কাছে থাকা আমার জন্য বড়ই সম্মান ও সৌভাগ্যের বিষয় ছিল। আহমদ ভাই আমাকে নিচের বেসমেন্টে নিয়ে গেলেন। সেখানে আমাদের রুম ছাড়াও একটি বড় বসার রুম ও ডাইনিং রুম ছিল। ডাইনিং রুমের পাশে আরো একটি রুম ছিল।

একটি অপ্রত্যাশিত ভিজিট

তখন প্রায় রাত ১১ টা বেজে গিয়েছিল। তাই আমি আমার লাগেজ খুললাম এবং আমার কাপড় বের করলাম। যদিও আমার ঘুম পায়নি তবুও আমি আমার স্যুট খুলে রাতের শোবার কাপড়(টি-শার্ট ও পায়জামা)পরলাম। আহমদ ভাই ও লাগেজ খুলছিলেন কিন্তু তিনি স্যুটটাই খুলেননি।

আমি আমার বিছানায় বসে মোবাইল চেক করছিলাম। তখনই আমি দরজা খোলার শব্দ পেলাম এবং বেসমেন্টের সিড়ি দিয়ে কারো নেমে আসার শব্দ শুনলাম। তখন আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল কারণ আমি জানতাম সিড়ির উপরে হুজুরের বাসস্থান। আমি কাপড় পরিবর্তন করার পূর্বেই আমাদের দরজায় হুজুর এসে পৌছলেন। হুজুর আমাকে দেখে হাসলেন এবং বললেন “আপনি এখনই ঘুমের জন্য তৈরী হয়ে গিয়েছেন।”

আমি এই পরিস্থিতিতে অত্যন্ত বিব্রতবোধ করছিলাম কিন্তু একই সাথে আনন্দিত ছিলাম কারন হুজুর আমাদের রুমে এসেছেন। হুজুর আহমদ ভাইকে বললেন আব্দুল্লাহ সাপরাহ সাহেবকে ডাকতে। তিনি হুজুরের আমন্ত্রণে জার্মানী থেকে এসেছেন। আহমদ ভাই বের হবার পর হুজুর ড্রয়িং রুমের দিকে গেলেন এবং আমাকে তার সাথে আসতে বললেন।
কয়েক মুহুর্তের মধ্যে আমি দ্রুততার সাথে আমার কাপড় পরিবর্তন করে জিনস ও সোয়েটার পরি। হুজুর আমাকে আবার ডাকেন তাই আমি টুপি না নিয়েই দৌড়িয়ে বের হই।

হুজুর আমাকে দেখে হাসেন এবং বলেন “কাপড় পরিবর্তন করার কোন প্রয়োজন ছিল না কারণ এখন শোবার সময় আবার কাপড় পরিবর্তন করতে হবে।”

হুজুর আমাকে এতই ভালবাসেন যে তিনি আমার ঘরোয়া কাপড়ে কোনই আপত্তি করেননি। কিন্তু কাপড় পরিবর্তন করার পর আমি নিজেই ভাল অনুভব করছিলাম।

কিছু স্মরণীয় মুহুর্ত

আমি সোফাতে হুজুরের বিপরীতে বসেছিলাম। আমাকে হুজুরের বাসস্থানে থাকতে দেবার জন্য আমি হুজুরকে ধন্যবাদ জানালাম। হুজুর বলেন বিগত কয়েক বছরে নানপেস্টে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। যেমন হুজুরের বাসস্থানের নিকটে কিছু ফ্ল্যাট বানানো হয়েছে যেখানে কাফেলা সদস্যরা সফরের সময় থাকতে পারেন। আমি যেরুমে আছি সেটি আগে একটি ড্রয়িং রুম ছিল। হুজুরের নির্দেশে এটি কে অতিথি কক্ষে রূপান্তর করা হয়। আ্মি বলি যে এই খিলাফতের সময়ে বিভিন্ন স্হানে জামাতের বিল্ডিং ও রেস্টহাউজের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন লন্ডনে ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হুজুরের নির্দেশে রেস্টহাউজের সংখ্যা ও মান উন্নত হয়েছে।
কিছুদিন পূর্বে আমি হুজুরকে ব্রিটিশ দৈনিক “ইভিনিংস্ট্যান্ডার্ড” এ একটি কলাম দেখিয়ে ছিলাম। যেখানে সাংবাদিক এডওয়েস্ট আহমদীয়া জামাতের কর্মকান্ডের প্রশংসা করেছেন। তিনি আইএস এর খলীফা ও আহমদীয়া জামাতের খলীফার তুলনা করে আহমদীয়া খলীফার ভুয়সী প্রশংসা করেছেন। হুজুর বলেন যে তিনি এই কলাম পাকিস্তানের কিছু ব্যক্তিকে পড়তে দিয়েছেন। হুজুর এই কলামের শিরোনাম পছন্দ করেছেন যেটি হল “আমাদের লন্ডন খলীফা কেবল ভাল কাজই করে চলেছেন।”

কিছুক্ষণ পর আব্দুল্লাহ সাহেব প্রবেশ করেন এবং আমরা হুজুরের সান্নিধ্যে আরো কিছু সময় কাটাই।

অতীতের গল্প

হুজুর হযরত মুসলেহ মাউদ (রাঃ) এর ঘটনা স্মৃতিচারণ করেন। একবার নাযারাত এ মাল সাহেব হযরত মুসলেহ মাউদ (রাঃ) কে চিঠি লেখেন। তিনি লেখেন যে জামাতের কর্মীদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি করা উচিৎ এবং ঈদের সময় তাদের সামান্য উপহার প্রদান করা উচিৎ। হযরত মুসলেহ মাউদ (রাঃ) এটি অনুমোদন দেন। কিন্তু মাল সাহেব জানান যে জামাতের কাছে এত অর্থ ছিলনা। এটি জানার পর হযরত মুসলেহ মাউদ (রাঃ) নিজে এই অর্থ সরবরাহ করেন যেন জামাতের উপর কোন বাড়তি চাপ না পড়ে।

হুজুরের ব্যক্তিগত জীবন

হুজুর তার ব্যক্তিগত জীবন সম্বন্ধে বলেন যে লন্ডনে প্রতিদিন বিকেলে চা খাবার সময় তিনি তার নাতি-নাতনিদের সাথে কিছুক্ষণ খেলাধুলা ও সময় কাটানোর চেষ্টা করেন। হুজুর বলেন তার ১৭ মাসের নাতি মুয়াজ তিনি সফরে আসার পর কিছুটা চুপচাপ হয়ে গেছে। এটি শুনে আমি হুজুর ও তার পরিবারের প্রতি ভালবাসা বৃদ্ধি পেল। জামাতের জন্য তাদের অসীম ত্যাগ স্বীকার করতে হচ্ছে।

একটি স্মরণীয় দিন

রাত ১১.৪৫ মিনিটে হুজুর তার নিজের রুমে ফিরে যান। আমিও আমার রুমে যাই এবং সারদিনের ঘটনা মনে করি। বিশেষ করে হুজুরের সাথে বিকেলে কাটানো সময়ের কথা।

কয়েক মিনিট পর আহমদ ভাই আমাদের রুমে আসেন এবং আমি তাকে বলি কিভাবে হুজুর আমাকে রাতের পোশাকে দেখে ফেলেছেন। আহমদ ভাই এর উপর একটি ব্যাপারে আমি নির্ভর করতে পারি; সেটি হল তিনি একথা বলবেন না যে “চিন্তা করোনা” বা “এটি কোন ব্যাপার না”। তিনি বলেন “হ্যা আবিদ, হুজুর যখন আসল তখন তোমার এর চেয়ে বেশী খারাপ ভাবে থাকা সম্ভব নয়।” আমরা অনেক হাসলাম। একটি বরকতময় দিন কাটানোর পর আমরা ঘুমাতে গেলাম। আলহামদুলিল্লাহ।

নানপেস্ট রেডিও কে সাক্ষাৎকার

হুজুরের হল্যান্ড সফরের ১ম সপ্তাহে তিনি পাচঁটি মিডিয়াকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। হুজুর মিডিয়াকে অনেক সময় দিয়েছেন এবং মিডিয়াও হুজুরের হল্যান্ড সফর ও জামাতের ইসলামের শান্তিপূর্ণ শিক্ষার প্রচার করার ব্যাপারে উৎসাহ দেখিয়েছে।

হল্যান্ড জামাতের তরুন মোবাল্লেগ সাফির সিদ্দীক সাক্ষাতকারের আয়োজন করেন। সাফির সাহেব জামেআ আহমদীয়া ইউকে থেকে পাশ করেন। সোমবার, ৫ অক্টোবর সকালে, হুজুর নানপেস্ট রেডিওকে সাক্ষাৎকার দেন। এটি একটি স্হানীয় রেডিও হলেও সারা বিশ্বে এটি প্রচারিত হয়। এই সাক্ষাতকার লাইভ প্রচারিত হয়েছিল।

১১.০৫ মিনিটে সাক্ষাতকার শুরু হবে তাই হুজুর ১১ টার দিকে তার অফিসে আসেন। এখানেই সাক্ষাৎকার শুরু হবে। এটি লাইভ সাক্ষাৎকার ছিল তাই সাংবাদিককে পূর্বের অনুষ্ঠান শেষ হবার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছিল। মনে হয় তাদের কিছুটা দেরী হচ্ছিল। হুজুর কোন রকম বিরক্ত না হয়ে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করেন। ২০ মিনিট ধরে সাক্ষাৎকার চলে। সাংবাদিক হুজুরকে হল্যান্ড সফরের উদ্দেশ্য, খলীফা হিসেবে তার দ্বায়িত্ব, ইসলামের শিক্ষা, রাজনৈতিক বিভিন্ন সমস্যা, সন্ত্রাসবাদের উথান, শরণার্থী সমস্যা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় সম্বন্ধে প্রশ্ন করেন।

হুজুর যুক্তিপূর্ণ ভাবে সকল প্রশ্নের উত্তর দেন। হুজুর বলেন হল্যান্ড আসার প্রধান উদ্দেশ্য হল ডাচ সংসদে বিদেশী সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাত করা। হুজুর বলেন তিনি আলমের শহরে একটি নতুন মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্হাপন করবেন ও স্হানীয় আহমদীদের সাথে সাক্ষাৎকরবেন।
হুজুর তার নিজের দ্বায়িত্ব সম্বন্ধে বলেন যে আহমদী মুসলমানরা বিশ্বাস করে আল্লাহতাআলা ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা পুনরুদ্ধাররের জন্য মুহাম্মদ(সাঃ) এর ভবিষ্যত বাণী অনুযায়ী প্রতিশ্রুত মসীহ(আঃ) কে প্রেরণ করেছেন। হুজুর বর্ণনা করেন কিভাবে প্রতিশ্রুত মসীহ(আঃ) এর মৃত্যুর পর খিলাফত ব্যবস্হা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই খিলাফতের কাজ হল আহমদীয়া জামাতকে সঠিক পথ দেখানো ও ইসলামের সঠিক শিক্ষা প্রচার করার কাজ চালিয়ে যাওয়া। হুজুর বলেন “খলীফার দ্বায়িত্ব হল আল্লাহর প্রেরিত নবীর কাজ চালিয়ে যাওয়া। তার কাজ হল ইসলামের সঠিক শিক্ষা প্রচার করা। মানুষকে তাকওয়া ও সঠিকপথে পরিচালিত করা। তাই খলীফা হিসেবে আমি বিশ্বের সকল আহমদী মুসলমানদের দিক নির্দেশনা দেই। খলীফা ও আহমদীদের সম্পর্কের ভিত্তি হচ্ছে পারস্পরিক ভালবাসা।”

হুজুর সিরিয়া থেকে ইউরোপে যেসব শরণার্থী আসছে তাদের সম্বন্ধে বলেন “যারা সত্যিকারের সাহায্যপ্রার্থী তাদের সাহায্য করা সকলের মানবিক দ্বায়িত্ব। কিন্তু বিশ্বনেতাদের শরণার্থীদের নিজ দেশে শান্তি ও সাম্যাবস্থা ফেরানোর চেষ্টা করা উচিৎ যেন তারা নিজের দেশে ফেরত যেতে সক্ষম হয়। কিন্তু একটি ব্যাপার লক্ষ্য রাখতে হবে কোন সন্ত্রাসী যেন শরণার্থী বেশে এখানে আসতে না পারে। শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য যে ব্যয় হবে তা যেন সকল দেশই সমানভাবে ভাগ করে নেয়। আরবদেশগুলোও তাদের প্রতিবেশী দেশের সাহায্য করতে এগিয়ে আসতে হবে।”

সাক্ষাৎকার শোনা

সাক্ষাৎকারশেষে হুজুর কিছু কাজের জন্য আমাকে তার অফিসে ডাকেন। আমি হুজুরকে বলি যে ইউকে ও পাকিস্তানের কিছু আহমদী লাইভ সাক্ষাৎকার শুনেছে। আমার স্ত্রী মালা আমাকে সাক্ষাৎকারের একটি রেকর্ডিং পাঠিয়েছে। যদিও সেটির সাউন্ড কোয়ালিটি বেশি ভাল ছিল না। হুজুর আমার মোবাইল ফোনে সাক্ষাৎকারটি শুনেন।

সাক্ষাৎকার শুনার পর হুজুর বলেন “খলীফাতুল মসীহ দ্বায়িত্ব সম্বন্ধে আমি যে উত্তর দিয়েছি তা প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশি বড় ছিল। কিন্তু এটি যেহেতু লাইভ সাক্ষাৎকার ছিল তাই আমি এর মাধ্যমে কিছু তবলিগের কাজও করতে চেয়েছিলাম। তাই আমি মসীহ মাউদ(আঃ) এর সম্বন্ধে কিছু ভবিষ্যতবাণীর কথাও উল্লেখ করি যেমন সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের ভবিষ্যতবাণী।

হুজুর এরপর তার ইমেইল চেক করা শুরু করেন এবং আমাকে জিজ্ঞেস করেন যে সফর কেমন হচ্ছে। হুজুরের একসাথে কয়েকটি কাজ করার ক্ষমতা আমাকে সবসময় অবাক করে। যেমন হুজুর একই সাথে জামাতের চিঠি – রিপোর্ট পড়েন, দিক নির্দেশনা লেখেন ও তার সামনের মানুষের সাথে আলোচনাও চালিয়ে যান।

আমি হজুরকে বলি হল্যান্ডের পানি মাঝে মাঝেই বেশি গরম হয়ে যায়। এর ফলে আমি সকালে শেভ করার সময় আমার মুখ কিছুটা ঝলসে গেছে। হুজুর আমাকে বলেন সিংক ব্যবহার করার সময় ধীরে ধীরে পানির কল ঘুরাতে যেন হঠাৎ করে পানি বেশি গরম না হয়ে যায়।

হুজুর বলেন সারারাত ঠান্ডা থাকলেও তিনি রুম হিটার অন করেন নি। কিন্তু সকালেও ঠান্ডা থাকার কারণে নাস্তার সময় তিনি হিটার অন করে দেন। এবং বাসায় যেয়ে আবার তিনি হিটার অফ করে দিবেন।

এটি শুনে আমি লজ্জ্বাবোধ করি। কারণ হিটার অন করার পূর্বে আমি কখনো দ্বিতীয়বার চিন্তা করিনা। কিন্তু হুজুর সারারাত ঠান্ডার মধ্যে থাকলেও হিটার অন করেন নি। হুজুরের পরিবারের সাদামাটা জীবন যাপন সত্যই অতুলনীয়।

হুজুর বলেন যে তিনি লক্ষ্য করেছেন যে ডাচ মানুষরা সাধারণত অনেক লম্বা হয়। আমি বললাম যে হুজুর ঠিকই বলেছেন। আমি একটি রিপোর্ট পড়েছি যেখানে লিখেছে ডাচদের গড় উচ্চতা বিশ্বের সকল দেশের মানুষের গড় উচ্চতার মধ্যে সবচে বেশি। হুজুরের সাথে মেয়র সাহেব দেখা করতে এসেছিল তাকে আমার বিশালাকৃতির মনে হয়েছে।

হুজুরের ভালবাসা ও সাহায্য

নানপেস্টে অফিসের স্হান খুব একটা বড় ছিল না। তাই আমি চিন্তিত ছিলাম যে আমি কোথায় কাজ করব। আমি ঠিক করলাম আমার বিছানায় বসেই কাজ করে ফেলব। আমি এসব ব্যাপারে হুজুরকে কিছু বলিনি। কিন্তু সেদিন হুজুর আমাকে বললেন যে আমি যেন পাশের ডাইনিং টেবিলে বসে আমার কাজ করি। আমি বড়ই কৃতজ্ঞবোধ করি। অনেক ব্যস্ততা সত্ত্বেও হুজুর আমার এই সামান্য বিষয়ের দিকেও লক্ষ্য রেখেছেন।

বিশৃঙ্খল অবস্হা

হুজুরের সাথে সাক্ষাৎ করে আমি জুহুর নামায পর্যন্ত কাজ করি। নামাজ পড়ে এসে দেখি ডাইনিং রুমে অনেক পানি জমে আছে। এতে আমি আশ্চর্য হয়ে যাই। কারণ রুমে আর কেউ নেই এবং নামাযের পূর্বে রুম সম্পূর্ণ শুকনো ছিল। আমি চিন্তা করলাম পানিতে কেউ স্লিপ করে পড়ে যেতে পারে এবং হুজুর গতরাতেও এখানে এসেছিলেন। আমি পানি মুছার জন্য আশেপাশে কিছু পাওয়া যায় কিনা খুজতে লাগলাম। আমি একটি টাওয়েল পেলাম এবং সেটি পানির মধ্যে রেখে দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি পানিতে ভিজে গেল। কিন্তু রুমের পানির পরিমাণ একই থাকল। আমি একটি গামলা এনে সেখানে টাওয়েল দিয়ে পানি উঠাতে লাগলাম। ২০ মিনিট চেষ্টা করার পর রুমটি মোটামোটি শুকনো হল। কিন্তু আমি রুমের মধ্যে পানি আসার কোন কারণ খুজে পেলাম না।

পরের দিনও একই সময়ে একই স্হানে এভাবে পানি জমে গেল। আমি ধারণা করলাম নিশ্চয়ই কোথাও কোন লিক আছে যদিও আমি তা দেখতে পাচ্ছি না। আমি আহমদ ভাই কে ডাকলাম। তিনিও কোন লিক খুজে পেলেন না। তিনি বললেন আমাদের গোসলের পানি কোনভাবে লিক হয়ে এখানে আসছে।

আমরা হানিফ সাহেবকে ডাকলাম। তিনি হল্যান্ড জামাতের নানপেস্টে আছেন রক্ষণাবেক্ষণের দ্বায়িত্বে। তিনি অনেক বছর পূর্বে আহমদীয়াত গ্রহণ করেছেন। তিনি পর্যবেক্ষণ করে দেখলেন যে গোসল করার কলে একটি ফাটল রয়েছে। সেজন্য পানি লিক হচ্ছে। তিনি সেটি ঠিক করে দেন এবং আল্লাহর রহমতে পরে আর কোন পানি লিক করেনি।

গেলডারল্যান্ডের সাথে সাক্ষাৎকার

হুজুর বিকেল ৫.২০ মিনিটে জনপ্রিয় ডাচ সংবাদ মাধ্যম গেলডারল্যান্ডকে সাক্ষাৎকার দেন। সাংবাদিক বলেন “আহমদীয়া জামাত ৬০ বছর পূর্বে হেগ শহরে মসজিদে মোবারক প্রতিষ্ঠিত করে। এখন পশ্চিমা বিশ্বে ইসলাম সম্বন্ধে মানুষের ধারণা অনেক পরিবর্তন হয়েছে।” হুজুর বলেন “গত ৬০ বছরে মানুষ কেবল ইসলামই নয় বরং সকল ধর্ম থেকেই দূরে সরে গিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে মানুষের মধ্যে একটি ভ্রান্ত ধারণা তৈরী হয়েছে যে ইসলামই বিশ্বে সকল অশান্তির মূল। প্রকৃতপক্ষে ইসলাম শান্তি ও ঐক্যের কথা বলে। কিন্তু নামধারী মুসলমানগণ ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা থেকে দূরে সরে গিয়েছে। আমরা আহমদী মুসলমানগণ পুরো বিশ্বে শান্তিপূর্ণ ইসলামের বাণী প্রচার করে আসছি।”

সাংবাদিক হুজুরকে জিজ্ঞেস করেন যে বিভিন্ন ইসলামবিরোধী ব্যক্তি ও দল যেমন ডাচ রাজনীতিবিদ গ্রিট উইল্ডারস এর সম্বন্ধে তার কি মতামত। হুজুর বলেন “যারা ইসলামের বিরুদ্ধে, আমি তাদের নিয়ে মোটেই চিন্তিত নই। সকলেরই নিজের মতামত প্রকাশ করার স্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু তারা এটা কখনোই দাবি করতে পারে না যে আমার হৃদয়ে কি রয়েছে সেটি সে আমার থেকে বেশি জানে।”

হুজুরের এই সাহসী বক্তব্য আল্লাহর প্রতি তার আস্থার বহিঃপ্রকাশ। যারা ইসলামের দূর্নাম করে তাদের জন্যও এটি একটি ভাল জবাব ছিল। হুজুর বলেন যারা ইসলামের নিন্দা করে বেড়ায় তারা নিজেরা কোরআন পড়েও দেখেনি। বরং তারা পূর্বের ও পরের আয়াতে না লিখে অপ্রাসঙ্গিকভাবে একটি আয়াত বের করে নিয়ে আসে।

সাংবাদিক বিশ্বে যে বিশৃঙ্খল অবস্হা বিরাজ করছে সে সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেন। হুজুর বলেন “আমি পূর্বেও বলেছি যে এটি মনে করা সম্পূর্ণ ভুল ছিল যে কোল্ড ওয়ারের পর সব ঠিক হয়ে গেছে। বর্তমানে আমরা দেখছি বিভিন্ন জোট ও দল তৈরী হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যেকোন সময় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে।”

সাক্ষাৎকার শেষে সাংবাদিক হুজুরকে সময় দেবার জন্য ধন্যবাদ জানান। হুজুর বলেন “আমি একে সাক্ষাৎকার হিসেবে নয় বরং বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা হিসেবে মনে করি।”

স্হানীয় আহমদীদের সাথে সাক্ষাৎ

সেদিন বিকেলে হুজুর স্হানীয় ডাচ আহমদীদের সাথে সাক্ষাত করেন। যারা সাক্ষাত করেছে তাদের কারো সাথে আমি কথা বলি।

একজন তরুন আহমদী তানভীর(১৮ বছর) ও তার বোন মোকতার(২৩ বছর) এর সাথে আমি কথা বলি। আমি তাদের ভুলক্রমে স্বামী স্ত্রী মনে করি। আমার এই ভুলে তারা একইসাথে আতঙ্কিত হয় ও আনন্দ লাভ করে। তারা বলে “ডাচ সমাজে বেড়ে উঠা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এখানে স্বাধীনতার উপর অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়। সমাজের অনেক অংশই ধর্মবিরোধী। স্হানীয় সমাজের দ্বারা প্রভাবিত না হওয়া বড়ই কঠিন। কিন্তু হুজুরের সাথে সাক্ষাত করে, তার পিছনে নামায আদায় করে আমরা ধর্মের প্রতি আরো ভালবাসা অনুভব করছি।”

মোকতার সাহিবা বলেন “হুজুরের হল্যান্ড সফর আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখনই আমরা হুজুরকে দেখি ও তার কথা শুনি আমরা ধর্ম ও মসজিদের দিকে গভীরভাবে আকৃষ্ট হই। ডাচ সমাজের বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাব আমাদের সবসময় ধর্ম থেকে দূরে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু হুজুর আমাদের মনে করিয়ে দেন যে ধর্ম আমাদের জন্য কেন প্রয়োজনীয়। ”

তানভীর বলেন “আমি এখন আমার ধর্ম সম্বন্ধে গভীরভাবে চিন্তা করতে পারছি এবং আমার মনে হয়েছে খিলাফতের গুরুত্ব অপরিসীম। আমি মনে করি আমি এখন আমার হুজুর ও ধর্মের আরো কাছে চলে এসেছি।”

এরপর আমি আবদুল মোমেন(৩১ বছর) একজন আহমদীর সাথে কথা বলি। তিনি তিন বছর থেকে হল্যন্ডে আছেন। তাকে অনেক আবেগপ্রবণ মনে হচ্ছিল। তার চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছিল। কারণ তিনি প্রথমবারের মতো হুজুরের সাথে সাক্ষাত করেছেন। তিনি বলেন “হুজুরকে সামনা সামনি দেখা আমার কাছে অলৌকিক বলে মনে হচ্ছিল। হুজুরের নূর , সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আমি আমার প্রিয় খলীফার সাথে একই বাতাসে নিশ্বাস নিয়েছি, এজন্য আমার নিজেকে সবচেয়ে সৌভাগ্যশালী মনে হচ্ছে। খলীফার উপস্থিতির যে কি প্রভাব আজকে সেটি আমি বুঝতে পেরেছি।”

আমি একজন তরুণ আহমদী মুহাম্মদ তারেক(১৯ বছর) দেখা করি। সে ৮ বছর পর হুজুরের সাথে সাক্ষাত করছে। সে বলে “আজ আমি একজন সাবালক হিসেবে হুজুরের সাথে প্রথম সাক্ষাৎ করছি। খিলফাতের সাথে যে আশীর্বাদ রয়েছে তা চিন্তা করে আমি অভিভূত হয়ে যাই।হুজুরের আদর্শে সারা বিশ্বে মানুষ আহমদীয়াত গ্রহণ করছে। আমি মনে করি আমাদের তবলীগী প্রচেষ্টা কোন কাজেই আসত না যদি না আমাদের উপর খিলাফতের আশীর্বাদ থাকত।”

আমি আব্বাস(২৩ বছর) নামে আর একজন তরুণ আহমদীর সাথে কথা বলি। সে কিছুদিন হল রাবওয়া থেকে হল্যান্ড এসেছে এবং প্রথমবারের মতো হুজুরের সাথে সাক্ষাৎ করেছে। তিনি বলেন “কয়েক মুহুর্ত পূর্বেই আমি বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে মহৎ মানুষের সামনে বসে ছিলাম। তার সামনে আমি কোন কথাই বলতে পারছিলাম না। আমি কোনভাবে হুজুরকে শুধু দোয়ার জন্য বলতে পারি। আমি মনে করি এটাই যথেষ্ট এবং হুজুরের দোয়া সারাজীবন আমাকে রক্ষা করবে। এই কয়েক মুহুর্ত আমার পুরো জীবনকে পরিবর্তন করে দিবে। আজ আমি আমার খলীফার পিছনে নামায আদায় করি এবং এটি একটি অনন্য অভিজ্ঞতা। আমি পূর্বে কখনো নামাযে এরকম আবেগপ্রবণ হইনি।”

আমি মালিক হাসান আহমদ (২৫ বছর) এক আহমদীর সাথে কথা বলি। তিনি ২০১৪ সালে পাকিস্তান থেকে হল্যান্ড এসেছেন। তিনিও প্রথমবারের মতো হুজুরের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বলেন “হুজুরের রুমে যেয়ে তার সৌন্দর্য দেখে আমি বিস্মিত হয়ে যাই। আমি জানতাম না তার কথায় এত ভালবাসা, দয়া ও প্রভাব প্রকাশ পাবে। আমি আল্লাহর নামে ওয়াদা করছি যে আজ থেকে আমি আমার সাধ্যমতো কোরআন ও খলীফার কথা মেনে চলব।”

আর একজন খাদেম যার নাম মুহাম্মদ লোকমান আহমেদ(৩২ বছর) তিনিও প্রথমবারের মতো হুজুরের সাথে সাক্ষাৎ করেন । তিনি বলেন “আমি এইমাত্র পুরো বিশ্বের ইমামের সাথে সাক্ষাৎ করে আসলাম। আমি তার সামনে বসতে পেরে, তাকে দেখে তার কথা শুনে নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করছি। আমি হুজুরের সকল দিক নির্দেশনা মেনে চলার জন্য অঙ্গীকার করছি। যদি আমি শান্তিতে জীবন যাপন করতে চাই তাহলে এর একমাত্র উপায় হল হুজুরের কথা শোনা ও তা পালন করা।”

আহমদ ভাই এর গোপন প্রতিভা

পরের দিন হুজুর ডাচ সংসদে বক্তৃতা দিবেন। তাই আমি বিকেলে আমার রুমে আসলাম পরের দিনের সফরের জন্য আমার কাপড় ইস্ত্রী করতে। কিন্তু আহমদ ভাই আমার কাপড় ইস্ত্রী করে দিতে চাইলেন।
আমি প্রথমে তাকে মানা করলাম। কিন্তু তিনি বললেন যে কাপড় ইস্ত্রী করতে তার ভালই লাগে। আমার কাপড় ইস্ত্রী খুব সুবিধার হয় না। তাই আমি আর বাড়াবাড়ি না করে আহমদ ভাই এর অফার গ্রহণ করি। আহমদ ভাই পেশাদারী ব্যক্তির মতো আমার কাপড় ইস্ত্রী করে দেন। এভাবে সেদিন আমি তার এই গোপন প্রতিভার কথা জানতে পারি। আমি সফরে তার এই প্রতিভার সুযোগ নিতে চাই নি কিন্তু আমার মনে হয় আরো দুই একবার আমি তার সাহায্য নিয়েছিলাম।

রিফোরমেটোরিস ডাগবাড এর সাথে সাক্ষাৎকার

৬ অক্টোবর ২০১৫ সকালে হুজুর রিফোরমেটোরিস ডাগবাড দৈনিক পত্রিকা কে সাক্ষাৎকার দেন। হুজুরকে সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেন “আপনার উদ্দেশ্য কি মুসলিম বিশ্বের নেতা হওয়া?”

হুজুর বড়ই সুন্দরভাবে এই প্রশ্নের উত্তর দেন “এ ব্যাপারে আমার ব্যাক্তিগত কোন ইচ্ছা নেই। কিন্তু হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ভবিষ্যতবাণী অনুযায়ী শেষ যমানায় ইমাম মাহদী(আঃ) আসবেন এবং তার পরে খিলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। খিলাফতের কাজ হবে মানুষকে তার স্রষ্টার দিকে নিয়ে যাওয়া এবং পারস্পরিক ভালবাসার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হল ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা পুরো বিশ্বে প্রচার করা এবং শান্তির মাধ্যমে সমগ্র মানবজাতিকে ঐক্যবদ্ধকরা।”

সাংবাদিক বলেন “কিছু চরমপন্থী পবিত্র কোরআন থেকে কিছু আয়াত দেখিয়ে তাদের অমানবিক কর্মকান্ডকে সমর্থন দিতে চায়।”

এ ব্যাপারে হুজুর বলেন “আমি পবিত্র কোরআন থেকে এমন আয়াত উদ্ধৃত করতে পারি যেগুলো তাদের কোরআনের আয়াতের ভুল ব্যাখ্যাকে খন্ডন করবে। তারা কিছু কোরআনের আয়াতকে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করছে। পবিত্র কোরআন বলে যে ধর্মে কোন জোর জবরদস্তি নেই। তাই আমরা সকল ধর্ম, সকল নবী ও সকল মানুষকেই শ্রদ্ধা করি।”

সাংবাদিক অন্যান্য মুসলমান বিশেষকরে যারা আহমদীদের উপর অত্যাচার করছে তাদের সম্বন্ধে হুজুরের মতামত কি তা জানতে চান। হুজুর বলেন “আহমদীরা তাদের প্রতি কোন ঘৃণা বা শত্রুতা পোষণ করে না এবং কোন প্রতিশোধও গ্রহণ করতে চায় না। বেশীরভাগ সাধারণ মুসলমানই সত্য জানতো না কারণ তাদের নামধারী নেতা ও মোল্লারা ভুল তথ্য দিয়ে তাদের চোখ অন্ধ করে রেখেছে। ”

শেষের দিকে সাংবাদিক জানতে চান ডাচ সংসদদের জন্য হুজুরের কি বার্তা রয়েছে। হুজুর বলেন “আমার বার্তা হল বিশ্ব শান্তির জন্য আমাদের একজোট হয়ে কাজ করতে হবে কারণ এটিই হচ্ছে সময়ের দাবি।”

আমার ধীর প্রতিক্রিয়া

বিভিন্ন সাক্ষাৎকারের সময় হুজুর মাঝে মধ্যেই আমার কাছে সাম্প্রতিক কোন সংবাদের রেফারেন্স চেয়ে থাকেন। তাই আমার কাজ হল মিটিং এর সময় প্রস্তুত থাকা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এবার আমি রেফারেন্স দিতে দেরী করে ফেলি।

সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে হুজু্র বলেন যে বিভিন্ন অমুসলমান সাংবাদিক বিশ্ব শান্তি স্হাপনায় ও সঠিক ইসলামের প্রচারে আহমদী জামাতের কর্মকান্ডের অত্যন্ত প্রশংসা করেছেন। হুজুর এ ব্যাপারে একটি সাম্প্রতিক সংবাদের কথা বলেন এবং আমাকে সেটি দেখাতে বলেন।

আমি স্বীকার করব যে আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। আমি প্রথমে আমার ফোন বের করলাম, আনলক করলাম এবং সেই সংবাদটি খুজতে শুরু করলাম। আমার কাছে মনে হল অনন্ত কাল পরে আমি সেটি খুজে পেলাম। হুজুর ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করছিলেন। আমি হজুরকে আমার ফোনটি দিতে ধরলাম তখন হুজুর বললেন “এটি আমাকে নয়, সাংবাদিক কে দাও।”

সাংবাদিক সংবাদটি দেখলেন এবং সেটির প্রশংসা করলেন। আমি বিব্রত বোধ করছিলাম কারণ আমার এটি বের করতে অনেকক্ষণ সময় লেগেছিল। সাক্ষাৎকারের পরে হুজুর আমাকে ডেকে নিয়ে বললেন “ এরকম সাক্ষাৎকারের সময় সব সময় রেফারেন্স প্রস্তুত রাখবে। কোথায় কিরকম সংবাদ প্রয়োজন হতে পারে সেটি ধরাণা করে প্রস্তুত থাকবে। আমার কথার চেয়ে সংবাদপত্র কাটিং দেখালে সেটির বেশী প্রভাব পড়ে।”

তাই এর পর থেকে হুজুরের সাক্ষাৎকারের সময় হুজুর যে বিষয় নিয়ে কথা বলছেন আমি সে বিষয়ের সংবাদ ফোনে নিয়ে খুজে আসি যাতে রেফারেন্স হিসেবে দরকার হলে দ্রুত পেশ করা যায়।

চলবে…

প্রথম পর্ব

হুজুরের (আইঃ) হল্যান্ড ও জার্মানী সফর অক্টোবর ২০১৫ ব্যক্তিগত ডায়েরী পার্ট-১ (পর্ব-১)