
11 Feb ৬৫তম ওয়াকফে জাদীদ নতুন বছর ঘোষণা এবং চাঁদার গুরুত্ব ৭জানুয়ারী ২০২২
যুক্তরাজ্যের (টিলফোর্ড, সারেস্থ) ইসলামাবাদের মুবারক মসজিদে প্রদত্ত সৈয়্যদনা আমীরুল মু’মিনীন হযরত মির্যা মসরূর আহমদ খলীফাতুল মসীহ্ আল্ খামেস (আই.)-এর ০৭ জানুয়ারি, ২০২২ মোতাবেক ০৭ সুলাহ্, ১৪০১ হিজরী শামসী’র জুমুআর খুতবা তাশাহ্হুদ, তা’ঊয এবং সূরা ফাতিহা পাঠের পর হুযূর আনোয়ার (আই.) বলেন,
وَمَثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ وَتَثْبِيتًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ كَمَثَلِ جَنَّةٍ بِرَبْوَةٍ أَصَابَهَا وَابِلٌ فَآتَتْ أُكُلَهَا ضِعْفَيْنِ فَإِن لَّمْ يُصِبْهَا وَابِلٌ فَطَلٌّ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
(সূরা আল্ বাকারা: ২৬৬) এই আয়াতের অর্থ হল, ‘আর যারা নিজেদের সম্পদ আল্লাহ্র সন্তুষ্টিলাভের আশায় এবং নিজেদের মধ্য থেকে কতককে দৃঢ়তা প্রদানের লক্ষ্যে ব্যয় করে, তাদের উপমা সেই বাগানের মত যা উঁচু স্থানে অবস্থিত; যখন এতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয় তখন তা বর্ধিত ফল বহন করে, আর যদি প্রবল বৃষ্টি না-ও হয় তবে শিশিরই যথেষ্ট। আর তোমরা যা কর সে বিষয়ে আল্লাহ্ সম্যক দ্রষ্টা।’ এই আয়াতে আল্লাহ্ তা’লা মু’মিনদের আল্লাহ্র পথে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের আকাঙ্ক্ষায় ব্যয় করার চিত্র অঙ্কন করেছে অর্থাৎ, এরা এমন মানুষ যারা আল্লাহ্র পথে ব্যয় করে, প্রথমত আল্লাহ্র আদেশে তাঁর পথে ব্যয় করে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। দ্বিতীয়ত, নিজের জাতি এবং নিজ মিশনকে সুদৃঢ় করার জন্য। এ যুগে ইসলামের শিক্ষা এবং প্রচারকে বিস্তৃত করার কাজ হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর স্কন্ধে অর্পিত হয়েছে আর তাঁর অনুসারীদেরও আবশ্যক দায়িত্ব হল, হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর মিশনকে সফল করার জন্য নিজেদের প্রাণ, ধনসম্পদ এবং সময় কুরবানি করা। প্রত্যেক যুগে এবং প্রত্যেক জাতিতে আগত নবী নিজ অনুসারীদের আর্থিক কুরবানী করার উপদেশ দিয়ে এসেছেন আর হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)ও বলেছেন, তোমাদেরকে ধর্মের সেবায় ধর্মের জন্য নিজেদের ধনসম্পদের কিছু অংশ প্রদান করা উচিত, তবেই সত্যিকার ঈমানের পরিচয় লাভ করা যায়। আর মু’মিন নিশ্চিতরূপে ধর্মের খাতিরে বিভিন্ন আর্থিক কুরবানি করে থাকে আর এসব কুরবানির উদ্দেশ্য কাউকে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করা নয় বরং (মু’মিনের) যদি কোন অভিপ্রায় থেকে থাকে তা হল, আমাদের খোদা যেন কোনভাবে আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান, আমাদের আত্মা যেন দৃঢ়তা লাভ করে, আমরা আমাদের ঈমান এবং বিশ্বাসে যেন সুদৃঢ় হই, আমাদের জাতি যেন উন্নতি করে, আমরা যেন যথাসাধ্য নিজেদের ধনসম্পদ দিয়ে আমাদের দুর্বলদের শক্তিশালী করতে পারি। যে উদ্দেশ্যে আমরা এ যুগের ইমাম এবং মহানবী (সা.)-এর নিবেদিতপ্রাণ দাসের হাতে বয়’আত করেছি, তা যেন আমরা অর্জন করতে সক্ষম হই। অতএব, এমন মানুষ (নিজ) স্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে চিন্তা করে। তাদের আত্মা তাদেরকে ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমে আল্লাহ্ তা’লার সন্তুষ্টি অর্জন করার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করে। অতঃপর তারা ত্যাগের সেই উন্নত মান অর্জন করে বা অর্জনের চেষ্টা করে, এরপর আল্লাহ্ তা’লাও এমন লোকদের কুরবানিগুলো গ্রহণ করেন, তাদেরকে আপন কৃপায় ধন্য করেন। আল্লাহ্ তা’লা আমাদের হৃদয়ের অবস্থা ভালোভাবে জানেন, আমাদের নিয়্যত ও সংকল্পকে জানেন। তাই তিনি এটি দেখেন না যে, কেউ বড় কুরবানি করল না-কি ছোট, কেউ বড় অংক দিল না-কি ছোট অংক (দিল) বরং আল্লাহ্ তা’লা নিয়্যত অনুসারে প্রতিদান দিয়ে থাকেন। তাই এই আয়াতে আল্লাহ্ তা’লা বলেন, আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যারা ব্যয় করে তাদের উপমা দু’ধরনের, প্রথমত ‘ওয়াবেলুন’ তথা বড় বড় ফোঁটার মুষলধারে বৃষ্টির আর দ্বিতীয়ত ‘তাল্লুন’ তথা হালকা বা গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির যা কুয়াশার মত পড়ে অথবা শিশিরের ন্যায়। অধিক সম্পদশালী ব্যক্তি তো ধর্মের খাতিরে অনেক ব্যয় করে-ই অথবা করতে সক্ষম কিন্তু দরিদ্র মানুষের মনে আক্ষেপ থাকতে পারে, সে ভাবতে পারে, সম্পদশালী তো (আল্লাহ্র পথে) ব্যয় করে আর্থিক কুরবানিতে এগিয়ে যাচ্ছে, বিত্তবানরা তো মোটা মোটা অংক দিয়ে আল্লাহ্ তা’লার সন্তুষ্টি অর্জন করছে এবং তাঁর নৈকট্যলাভকারী হচ্ছে অথবা হওয়ার চেষ্টা করছে অথবা অর্জন করতে সক্ষম হবে। আমার কাছে তো যৎসামান্য অর্থ আছে, আমি কীভাবে তার সমপর্যায়ে যেতে পারি! উত্তরে আল্লাহ্ তা’লা বলেন, যেভাবে ঊর্বর ভূমি অল্প বৃষ্টি বা শিশিরবিন্দু দ্বারাও উপকৃত হতে পারে, অনুরূপভাবে অসচ্ছলদের সামান্য কুরবানি ‘তাল্লুন’ তথা শিশির বা হালকা বৃষ্টির মর্যাদা রাখে আর সেই সামান্য কুরবানিও ফুলফল বহনে সামান্য ভূমিকা পালন করবে না (বরং বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকে)। ত্যাগের প্রতিদান তো মহান আল্লাহ্ দিবেন, প্রত্যেক কর্মের প্রতিদান তো আল্লাহ্ তা’লাই দিয়ে থাকেন। আল্লাহ্ যেহেতু তোমার অবস্থা ও ইচ্ছা-অভিপ্রায় সম্পর্কে অবগত, তাই তিনি তোমাদের সামান্য কুরবানীরও দ্বিগুণ বরং এর চেয়েও অধিক প্রতিফল দিবেন। মহানবী (সা.) এক জায়গায় বলেন, ‘আজ এক দিরহাম এক লাখ দিরহামের চেয়ে এগিয়ে গেছে। সাহাবীরা (রা.) নিবেদন করেন, হে আল্লাহ্র রসূল! এটি কীভাবে সম্ভব হল? তিনি (সা.) বলেন, একজনের কাছে দুই দিরহাম ছিল। সে তার থেকে এক দিরহাম দিয়ে দিয়েছে। অপর একজনের কাছে অঢেল অর্থসম্পদ ছিল, সে তার মধ্য থেকে এক লাখ দিরহাম দিয়েছে। তার এক লাখ দিরহাম কুরবানী তার সম্পদের তুলনায় খুবই সামান্য ছিল।’ অতএব, আল্লাহ্ তা’লা উদ্দেশ্য বা অভিপ্রায় অনুসারে প্রতিফল দিয়ে থাকেন আর সেই কর্মের প্রতিফল দিয়ে থাকেন যা ঐসব অবস্থায় কুরবানি করা হয়ে থাকে। (মহান আল্লাহ্) দরিদ্রদেরও প্রবোধ দিয়েছেন যে, তোমাদের সামান্য কুরবানীর কোন মূল্য নেই- এমনটি ভেবো না। বরং এরূপ সামান্য কুরবানিও একদিকে যেখানে তোমাদের ঈমানকে দৃঢ়তাদানকারী, সেখানে জামা’তের দৃঢ়তারও উপকরণ সৃষ্টি করে। অতএব, মহান আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে এক উদ্দীপনার সাথে প্রদানকৃত কুরবানিই আল্লাহ্র অনুগ্রহকে আর্কষণ করে। আমাদের প্রত্যেক কর্মের প্রতি আল্লাহ্ তা’লা দৃষ্টি রাখেন। অতএব, আমাদের এই উদ্দেশ্যকে সর্বদা দৃষ্টিপটে রাখা চাই যে, আমরা যে কাজই করব, তা তাঁর সন্তুষ্টির লক্ষ্যেই করব। যদি এই চেতনা সৃষ্টি হয় তবেই মানুষ মহান আল্লাহ্র অনুগ্রহরাজির প্রকৃত উত্তরাধিকারী সাব্যস্ত হয়। হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর যুগে তাঁর অনুসারীদের অধিকাংশই ছিল হতদরিদ্র কিন্তু ত্যাগের ক্ষেত্রে তারা এতোটাই অগ্রগামী ছিলেন যে, এক জায়গায় হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) তাদের প্রসংশায় বলেন, “আমি দেখি, আমাদের জামাতে শতশত এমন মানুষও আছে, খুব কষ্টে যাদের পরনের কাপড় জোটে, কষ্টেসৃষ্টে তাদের (গায়ের) চাদর বা পায়জামা জোগাড় হয়। তাদের কোন ধনসম্পদ নেই কিন্তু তাদের সীমাহীন আন্তরিকতা ও আত্মনিবেদন আর ভালোবাসা ও ঐকান্তিকতা দেখে আমরা অবাক ও বিষ্ময়াভিভূত হই, যা কখনও কখনও তাদের মাধ্যমে প্রকাশ পায় অথবা যার লক্ষণ তাদের চেহারায় সুস্পষ্ট ভাবে প্রকাশ পায়। তারা নিজেদের ঈমানে এরূপ সুদৃঢ় এবং বিশ্বাসে এতটাই সত্যনিষ্ঠ এবং সত্যবাদিতা ও অবিচলতায় এতটাই আন্তরিক ও বিশ্বস্ত হয়ে থাকে যে, যদি এই ধনসম্পদের মোহে আচ্ছন্ন ও পার্থিব ভোগবিলাসে আসক্ত লোকেরা সেই স্বাদ সম্পর্কে জানতে পারে তবে এর বিনিময়ে তারা সবকিছু বিসর্জন দিতে প্রস্তুত হয়ে যাবে।” অন্যত্র তিনি (আ.) বলেন, “আমি দেখতে পাচ্ছি, এই জামা’ত নিষ্ঠা ও ভালোবাসায় অভাবনীয় উন্নতি সাধন করেছে। কখনও কখনও জামা’তের নিষ্ঠা, ভালোবাসা ও ঈমানের উচ্ছাস দেখে আমি নিজেও আশ্চর্য ও বিস্মিত হই। এমনকি শত্রুরাও বিস্ময়াভিভূত হয়।” অতএব, নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততায় উন্নতি এবং ঈমানী উদ্দীপনার অতুলনীয় মান এমন, যার ব্যবহারিক দৃষ্টান্ত আজও আমরা হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর জামা’তে দেখতে পাই। বরং নবাগত আহমদীরাও নিষ্ঠা ও বিশস্ততায় এতটা উন্নতি লাভ করেছে যে, দেখে আশ্চর্য হতে হয় এত স্বল্প সময়ে তারা এতটা উন্নতি সাধন করেছে! অথচ তারা কেবল অল্প কিছুদিনই পূর্বেই বয়আ’ত করেছে। কিন্তু মহানবী (সা.)-এর নিবেদিতপ্রাণ দাসের প্রতি ভালোবাসার সম্পর্ক এবং খিলাফতের প্রতি বিশ^স্ততা এবং নিষ্ঠার মান তেমনিই যেমনটি হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) বলেছেন অর্থাৎ শত্রুরাও বিষ্ময় প্রকাশ করে যে, কী এমন জিনিষ যা তাদের মাঝে এই (অভাবনীয়) পরিবর্তন সৃষ্টি করেছে? এটি নিশ্চিতভাবে তাদের প্রতি আল্লাহ্ তা’লার একটি বিশেষ অনুগ্রহ, আল্লাহ্ তা’লা তাদের পুণ্যস্বভাব এবং ঐকান্তিকতা দেখে তাদের ওপর বর্ষণ করেছেন। এই পুণ্যস্বভাব ও পুণ্যপ্রকৃতি এবং বয়’আতের দাবি পুরণ আর যুগ খলীফার সাথে বিশসস্ততার সম্পর্ক রক্ষা তাদের কথা-কাজে প্রকাশ পেতে থাকে। বর্তমানে জগদ্বাসী যেখানে জাগতিকতায় নিমজ্জিত, সেখানে এসব মানুষ আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আর্থিক কুরবানিতে পরস্পর প্রতিযোগিতা করে, কেননা, তারা এই বুৎপত্তি লাভ করেছে যে, আল্লাহ্ তা’লার সন্তুষ্টিলাভের একটি মাধ্যম আল্লাহ্র পথে ব্যয় করাও বটে। অতএব, কে আছে বর্তমানে হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর মাধ্যমে আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত এই জামা’ত সম্পর্কে একথা বলতে পারে যে, এটি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে! এই জামা’ত তো ফলে-ফুলে সুশোভিত হওয়া ও উন্নতি করার জন্যই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আর শত্রুর কোন আক্রমনই এই জামা’তের কেশাগ্রও বাঁকা করতে সক্ষম হবে না। আর আল্লাহ্র কৃপায় (এ জামা’ত) ফুলে-ফলে সুশোভিত হচ্ছে। আর্থিক কুরবানীর বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এখন আমি এ বিষয়ে কতিপয় ঘটনা উপস্থাপন করছি যে, মানুষ আশ্চর্যজনক কুরবানীর মাধ্যমে নিজেদের ঈমান ও দৃঢ় বিশ্বাসের প্রমাণ দিয়ে থাকে আর আল্লাহ্ তা’লাও অভাবনীয়ভাবে তাদের ঈমানকে দৃঢ়তা দান করেন। আফ্রিকার সিয়েরা লিওনের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক ব্যক্তি সম্পর্কে সেখানকার স্থানীয় মিশনারী বর্ণনা করেন। তিনি (অর্থাৎ মিশনারী সাহেব) সেখানে সফরে গিয়েছিলেন, মাসের শেষ দিকের ঘটনা। সেখানকার একটি জামা’তের সদস্যদের ওয়াক্ফে জাদীদের (চাঁদার) প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করেন। লোকেরা মসজিদে উপস্থিত ছিল। তিনি এদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্থানীয় ইমাম শেখ উসমান সাহেব চাঁদার জন্য যে অর্থ সঞ্চয় করেছিলেন, তা প্রদান করেন এবং বলেন, আমরা আমাদের ওয়াদা পূর্ণ করতে পারছি না, কিন্তু আমাদের মনোবাসনা হল, আমরা যেন আমাদের টার্গেট বা ওয়াদা পূর্ণ করি। এখন যেহেতু আর কোন মাধ্যম ও উপকরণ দেখা যাচ্ছে না তাই মুয়াল্লিম সাহেবকে তিনি বলেন, দোয়া করিয়ে দিন। স্থানীয় মিশনারী বলেন, আমি দোয়া করাই এবং সবাই উচ্চস্বরে ‘আমীন’ বলে। এরপর আমি মোটর সাইকেল যোগে মিশন হাউজে ফিরে আসি। তিনি বলেন, আমার মিশন হাউজে পৌঁছার পূর্বেই সেই ইমাম সাহেবের ফোন আসে যে, আমি আপনার সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে মিশন হাউজে আসছি। আমি খুবই অবাক হই (এই ভেবে যে,) আমি তো মাত্র সেখান থেকে এলাম আর এর মধ্যেই ফোনও চলে এসেছে। সেই স্থানীয় ইমাম আমার কাছে আসার পর বলেন, আমরা যে দোয়া করেছিলাম তার যে ফল প্রকাশ পেয়েছে তা হল, কিছুক্ষণ পরই আমার এক আত্মীয় আসে এবং পকেটে হাত দিয়ে তিনি এক লাখ লিওন আমার হাতে তুলে দেন কোন একটি বিষয়ে আমাকেও দোয়ার অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, এটি দেখে আমি সেখানেই উচ্চস্বরে ‘আল্লাহ্ আকবর’ ধ্বনি উচ্চকিত করতে আরম্ভ করি। সেই ব্যক্তি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, কী হয়েছে? আমি তাকে বলি, আমাদের ওয়াক্ফে জাদীদের চাঁদা প্রদানের একটি ওয়াদা ছিল। তাতে কিছু অর্থ প্রদান করা বাকি ছিল। একটু আগেই আমরা দোয়া করেছিলাম আর এরমধ্যেই আল্লাহ্ তা’লা তোমাকে প্রেরণ করেছেন এবং এই অর্থ আমাকে পঠিয়েছেন। সেই ইমাম অর্থাৎ, শেখ উসমান সাহেব এরপর পুরো অর্থ অর্থাৎ একলক্ষ লিওন তৎক্ষণাৎ এসে ওয়াক্ফে জাদীদ খাতে প্রদান করেন। সেই অর্থ তার জন্য অনেক বড় অংকের ছিল, যদিও আমাদের কাছে তা খুব অল্পই হবে। সেই অর্থ পাউন্ডে পরিবর্তন করলে কেবল সাড়ে ছয় পাউন্ড হবে কিন্তু এটি তার জন্য ছিল অনেক বড় কুরবানী যা ছিল আল্লাহ্র কৃপা আকর্ষণকারী। যত টাকাই (হাতে) এসেছে, তৎক্ষণাৎ এসে (বায়তুল মালে) জমা করিয়ে দিয়েছেন একেই বলে নিষ্ঠা, নিজের প্রয়োজন থাকা সত্তে¡ও নিজের কাছে রাখেন নি। আর এটি সে ধরণেরই একটি দৃষ্টান্ত যেখানে এক দিরহাম এক লক্ষ দিরহামের চেয়ে অগ্রগামী সাব্যস্ত হয়েছিল। নিশ্চিতভাবে আল্লাহ্ তা’লা তার প্রতি স্বীয় স্নেহদৃষ্টি দিয়ে থাকবেন। এরপর দেখুন! কুরবানির এই উন্নত মান কেবল এক জায়গায় নয়, কেবল পুরুষদের মাঝেই নয় বরং মহিলাদের মাঝেও তা দৃষ্টিগোচর হয়। একটি দেশ (হচ্ছে) চাড, সেখানকার মুবাল্লিগ বলেন, এখানেও আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় বড় বড় নিষ্ঠাবান জামা’ত প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। চাড জামা’তের অধিকাংশ সদস্যই নবাগত। একজন নারী সদস্য হলেন উম্মে হানী। ওয়াক্ফে জাদীদ খাতে তিনি ৭০ হাজার ফ্রাঙ্ক চাঁদা দেয়ার অঙ্গীকার করেন, কিন্তু (অর্থের) কোন যোগান হয় নি। তার কাছে একটি উট ছিল, সেই উটটি তিনি ১ লক্ষ ৭০ হাজার (ফ্রাঙ্কে) বিক্রি করে দেন এবং তা দিয়ে ওয়াক্ফে জাদীদের অঙ্গীকারকৃত চাঁদাও পরিশোধ করেন আর এরপর অবশিষ্ট অর্থ তিনি নিজের কাছে রাখেন নি, বরং তা-ও বিভিন্ন খাতে চাঁদা হিসেবে প্রদান করেন। আরেকটি দেশ হল, টোগো। সেখানে ইব্রাহীম নামে একজন আহমদী আছেন। তিনি মানুষের গবাদিপশু চরানোর কাজ করেন, অর্থাৎ ছাগপাল চরান। আর এ থেকে যা-ই উপার্জন হয় সেখান থেকে তার সামর্থ্যরে চেয়ে অনেক বেশি কুরবানী করেন। সেখানে তিনি (ওয়াক্ফে জাদীদের চাঁদার) অঙ্গীকার করেছিলেন কিন্তু তিনি সেই অঙ্গীকার রক্ষা করতে পারেন নি। (তার) কাছেই একটি নদী রয়েছে আর সেই নদী থেকে বালু উত্তলোন করা হয়। সেখানে তিনি রাতের বেলা কায়িকশ্রম দিয়ে দুই ট্রাক বালু ভরেন এবং এতে যে আয় হয় যে অর্থ উপার্জন হয় তা তিনি ওয়াক্ফে জাদীদ খাতে চাঁদা দিয়ে দেন। (তিনি) এতো কঠোর পরিশ্রম কেন করেছেন! আর সবচেয়ে বড় কথা হল, এতো কঠোর পরিশ্রমের পরও কোন অর্থ তিনি নিজের জন্য রাখেন নি। এর একমাত্র কারণ হল, তিনি (এখন) আল্লাহ্ তা’লার সন্তুষ্টি অর্জনের প্রকৃত জ্ঞান লাভ করেছেন। এরপর নারীপুরুষ বা কেবল বয়স্ক লোকদের বিষয়ই নয় বরং যৌবনে পদার্পণকারী তরুণদেরও একই অবস্থা। মধ্য আমেরিকার একটি দেশ হচ্ছে, বেলিজ। এখান থেকে এর দূরত্ব হাজার হাজার মাইল। সেখানে কখনও যুগ খলীফা গমন করেন নি আর (সেখানকার) সবাই নবাগত আহমদী। কিন্তু চিন্তাধার এক ও অভিন্ন। আফ্রিকার বা আমেরিকার, দ্বীপপুঞ্জের অথবা এশিয়ার চিন্তাধারাই হোক না কেন সবার চিন্তাধারা অভিন্ন। এটি হল, সেই বিপ্লব যা হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) সৃষ্টি করেছেন। ঘটনার বিবরণ হল, সেখানে ১৪ বছরের এক কিশোর রয়েছে সে তাহরীকে জাদীদের চাঁদা দিয়েছিল আর আমি এখানে তার উল্লেখ করেছিলাম। এতে লোকেরা তাকে অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানায় আর কানাডা থেকে কেউ তাকে উপহারস্বরূপ ২০০ ডলার প্রেরণ করে। (তিনি তাকে বলেন,) তুমি যেহেতু এধরণের কুরবানী করেছ তাই আমার পক্ষ থেকে এটি তোমার পুরস্কার। এখন সেই কিশোরের অবস্থা দেখুন! মাত্র ১৪ বছরের কিশোর, এখানে হলে তাৎক্ষণিকভাবে বিভিন্ন গেম্স কেনার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। কিন্তু সে বলেছে, আমাকে (আমার) সামাজিক নিরাপত্তা কার্ড বানাতে হবে এজন্য আমার ৩০ ডলারের প্রয়োজন ছিল। তাই ৩০ ডলার আমি রেখে দিয়েছি অবশিষ্ট ১৭০ ডলার আমি পুনরায় চাঁদা দিয়ে দিচ্ছি। দরিদ্র পরিবারের সন্তান, তাকে (একথা) বলাও হয়েছে যে, তোমার নিজের খরচের জন্য রাখ, জোর দিয়েও বলা হয়েছে। কিন্তু সে অনেক জোরাজুরি করে পুরো অর্থই চাঁদা দিয়ে দেয়। একেই বলে, ধর্মকে জাগতিকতার ওপর প্রাধান্য দেয়া। আল্লাহ্ করুন! এই কিশোরের মাঝে যেন এমন চিন্তাধারা সর্বদা বহাল থাকে এবং জাগতিক এই পরিবেশের (কবল) থেকে আল্লাহ্ যেন এই কিশোরকে রক্ষা করেন। আরেকটি দেশ জ্যামাইকা। পূর্বে উল্লিখিত কিশোরের নাম দানিয়েল আর এখন যার কথা উল্লেখ করছি সেই যুবকের নাম ইয়াসিন। বহুদিন যাবৎ সে বেকার ছিল। অলিগলিতে টুকটাক জিনিষ তথা চকলেট ইত্যাদি বিক্রি করে সে দিনাতিপাত করত। কিন্তু এই অবস্থায়ও সে এ চিন্তায় মগ্ন থাকত যে, আমাকে আর্থিক কুরবানী করতে হবে; ওয়াক্ফে জাদীদের চাঁদা দেয়ার অঙ্গীকার করেছি, বছর শেষ হয়ে যাচ্ছে অথচ আমার কাছে কিছুই নেই। অবশেষে একদিন সন্ধ্যায়, ডিসেম্বর মাসের একেবারে শেষের দিকে সে মিশনারীর নিকট এসে বলে, আজ আমি ৪শ’ জ্যামাইকান ডলার আয় করেছি, এখান থেকে ২৫ শতাংশ আলাদা করে একশ’ ডলার আপনাকে ওয়াক্ফে জাদীদের চাঁদা দিচ্ছি। এরপর একটি দরিদ্র দেশের আহমদীর নিষ্ঠা, বিশ^স্ততা এবং আল্লাহ্ তা’লার সন্তুষ্টি ও তাঁর ভালোবাসা আকর্ষণ করার অসাধারণ উদাহরণ দেখুন! লোকেরা বলে, এরা অশিক্ষিত মানুষ, দরিদ্র। কিন্তু এরা শিক্ষিতদের চেয়েও ধর্মের বুৎপত্তি বেশি রাখে এবং মনের দিক থেকে ধনী। দেশটি হল, গিনি কোনাকরি। এখানকার মুবাল্লিগ ইনচার্জ বলেন, ওয়াক্ফে জাদীদের আর্থিক বছরের শেষ দশকে আমি ওয়াক্ফে জাদীদের গুরুত্ব ও এর কল্যাণ সম্পর্কে খুতবা দেই। আর তাতে তিনি আমার দেয়া বিভিন্ন খুতবা থেকে কয়েকটি উদ্ধৃতিও উপস্থাপন করেন। জামা’তকে আর্থিক কুরবানী করতে অনুপ্রাণীত করেন এবং দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, খুতবা শেষ হবার পর একজন দরিদ্র কিন্তু অত্যন্ত নিষ্ঠাবান আহমদী মূসা সাহেব নিজের পকেটে থাকা সাকুল্য অর্থ, যার পরিমাণ ২ লাখ ১৮ হাজার ৫শ’ গিনি ফ্রাঙ্ক বের করে ওয়াক্ফে জাদীদ খাতে দিয়ে দেন। আমি যখন তাকে জিজ্ঞেস করি, আপনি অনেক বড় অংকের চাঁদা দিলেন, গত বছরও অনেক বড় অংক চাঁদা দিয়েছিলেন, এর কারণ কী? উত্তরে তিনি বলেন, আমার হৃদয়ে খলীফাতুল মসীহ্র একথাটি লৌহশলাকার মত গেঁথে গিয়েছে যে, এক হৃদয়ে দু’টি ভালোবাসা (একত্রে) থাকতে পারে না। বান্দা হয় খোদাকে ভালোবাসবে নতুবা সম্পদকে। এজন্যই আমি সুযোগ পেলেই চেষ্টা করি আমার কর্মের মাধ্যমেও যেন এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তিনি বলেন, আমার ঈমান তো হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)’র মত হওয়া সম্ভব নয় যে, বাড়ির সবকিছু আল্লাহ্ তা’লার পথে ব্যয় করব; কিন্তু এটুকু তো করতে পারি যে, পকেটে থাকা পুরো অর্থ আল্লাহ্র পথে দিয়ে দেই! আর দোয়ার আবেদনও করছি, আল্লাহ্ তা’লা যেন আমাকে হযরত আবু বকর (রা.)’র মত ঈমানও দান করেন। তিনি বলেন, আরেকটি বড় কারণ হল, যখন থেকে আমি আর্থিক কুরবানীতে অংশগ্রহণ করতে আরম্ভ করেছি, আল্লাহ্ তা’লা আমাকে ঈমানের সম্পদে সমৃদ্ধ করে দিয়েছেন, আমার ঈমানও বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে এবং আমি নিজের ভেতর এক অসাধারণ পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। এটি হল সেই চিন্তাধারা ও উপলদ্ধি যা অনেক শিক্ষিত মানুষের মাঝেও নেই! আল্লাহ্ তা’লা ঈমানের ক্ষেত্রে অগ্রসর হবার ব্যবস্থাও কীভাবে করেন (দেখুন)! এÑসংক্রান্ত আরেকটি ঘটনা। একটি দেশ আছে গিনি কোনাকরি। সেখানকার একজন নিষ্ঠাবান সচ্ছল আহমদী আল্ হাসান সাহেব বলেন, আমি চাঁদার টাকা একটি খামে ভরে নিজের টেবিলে রাখি, (তিনি ব্যবসা করেন) কিন্তু ব্যস্ততার কারণে মিশন হাউজে পাঠাতে পারি নি। হঠাৎ মনে পড়ায় আমি সেই টাকা ড্রাইভারকে দেই আর বলি, যাও মিশন হাউসে গিয়ে চাঁদা দিয়ে আসো। এরপর আমি নিজের কোন কাজে বাইরে চলে যাই। এই সময়ের মধ্যেই, অর্থাৎ তার বাইরে থাকাবস্থাতেই তার পাশের অফিসে আগুন লেগে যায় এবং সবকিছু পুড়ে ভস্মিভূত হয়ে যায়। তিনি বলেন, আমার কাছে ফোন আসতে থাকে যে, তোমার অফিসে আগুন লেগেছে। তাই আমি তড়িঘড়ি সেখানে ফিরে আসি। তিনি বলেন, আমি মনে মনে ভাবছিলাম, এটি কীভাবে সম্ভব? আমি তো আল্লাহ্ তা’লার খাতিরে কুরবানী করি। তিনি বলেন, কিন্তু আল্লাহ্র মহিমা দেখুন! আল্লাহ্ তা’লা কীভাবে লাজ রাখেন! অন্য অফিসটির দেয়ালের সাথে লাগোয়া হওয়া সত্তে¡ও আমার অফিস একদম সুরক্ষিত থাকে আর তখন এই অফিসে কোম্পানির বিরাট অংকের অর্থও গচ্ছিত ছিল। সংলগ্ন দু’টি অফিস একদম পুড়ে যায়, কিন্তু তার অফিস সুরক্ষিত থাকে। তিনি বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে আমার মাথায় আসে যে, নিঃসন্দেহে এটি চাঁদার কল্যাণে হয়েছে। তাদের জ্ঞানও রয়েছে এমন নয় যে, তাদের জ্ঞান নেই। তিনি বলেন, এর পাশাপাশি হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর এই এলহামের প্রতিও আমার মনোযোগ নিবদ্ধ হয় যে, ‘এই আগুন তোমার দাস বরং দাসানুদাস’। যাহোক, তিনি বলেন, এভাবে আল্লাহ্ তা’লা হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর এক নগণ্য দাসকে ক্ষতির হাত থেকে নিরাপদ রেখেছেন। আরেকটি ঘটনা গাম্বিয়ার আমীর সাহেব বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের একটি রিজিওয়নের মুয়াল্লিম সাহেব বলেনÑ আমাদের জামা’তের এক বন্ধু সাম্বুবা সাহেব ওয়াক্ফে জাদীদÑ সংক্রান্ত আমার গত বছরের খুতবা শোনেন যাতে নববর্ষের ঘোষণা করা হয় এবং আমি তাতে বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করি। তখন তিনি (এ খাতে) ৫শ’ ডালাসী চাঁদা দেয়ার ওয়াদা করেন। তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা’লা তার প্রতি এমন অনুগ্রহ করেছেন যে, এ বছর তার দ্বিগুণ ফসল হয়। ফলে তিনি ৫শ’ ডালাসী দেয়ার অঙ্গীকার করা সত্তে¡ও এক হাজার ডালাসী চাঁদা দেন। আরো বলেন, তার জমিতে উৎপাদিত বজারার ওপর তিনি ১০ আঁটি যাকাত দিয়েছিলেন। কিন্তু এ বছর তার উৎপাদন এত (বেশি) ছিল যে, তিনি ৫০ আঁটি (যাকাত) দেন। অনুরূপভাবে চিনাবাদামের ওপরও কয়েক বস্তা, সম্ভবত দুই বস্তা যাকাত প্রদান করেন। তিনি বলেন, যেসব আহমদী বন্ধু নিয়মিত চাঁদা দেন তাদের ফসল পূর্বের তুলনায় ভালো হয়েছে। এখন অÑআহমদীরা বলছে, আহমদী জামা’তের মধ্যে কোন একটি বিষয় অবশ্যই রয়েছে, যখনই তাদের সদস্যরা আল্লাহ্ তা’লার পথে খরচ করে তাদের ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। কেবল আফ্রিকা বা বিভিন্ন দরিদ্র দেশের আহমদী এবং নবাগত আহমদীরাই নয় বরং সম্পদশালী বিভিন্ন দেশের স্থানীয় লোকদের মধ্য থেকে যারা ঈমান আনার সৌভাগ্য লাভ করেছেন তাদের কুরবানীরও দৃষ্টান্ত রয়েছে। জার্মানির মুবাল্লিগ লিখেন, রোয়েডার্য হাইম জামা’তকে চাঁদা প্রদানের আহŸান জানানো হয় যে আপনাদের চাঁদা বৃদ্ধি করুন এবং ঘাটতি দূর করুন। তখন সেখানকার জামা’তের প্রেসিডেন্ট সাহেবের স্ত্রী, একজন জার্মান আহমদী এবং খুবই নিষ্ঠাবতী। তিনি যখন বলেন যে, আমরা চাই জামা’তের চাঁদাও বৃদ্ধি পাক আর অধিক চাঁদাদাতা জামা’তগুলোর তালিকাতেও (আমরা) অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাই। তখন সেই জার্মান নও আহমদী মহিলা; ১৯ হাজার ইউরো চাঁদা দেন। তিনি নবাগত নন, কেননা তিনি আহমদী হয়েছেন অনেক দিন হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এ অর্থ আমি গাড়ি ক্রয় করার জন্য রেখেছিলাম। কিন্তু যুগ খলীফার সামনে আমাদের জামা’তের নাম আসা উচিত এমর্মে আমার হৃদয়ে গভীর উদ্দীপনা সৃষ্টি হয় তাই আমি এ অর্থ প্রদান করছি আর আমি যেন আল্লাহ্র সন্তোষভাজন হই। এরপর জার্মানিরই একজন শিক্ষার্থী ৫শ’ ইউরো চাঁদা প্রদানের ওয়াদা লেখান। তার পিতামাতা তাকে বলে, ৫শ’ ইউরো তুমি কীভাবে দিবে? উত্তরে সে বলে, যে করেই হোক আমি প্রদান করবো। সে বলে, তাৎক্ষণিকভাবে আল্লাহ্ তা’লার পক্ষ থেকে এর উত্তর এভাবে পাই যে, এক সপ্তাহের মধ্যেই বিশ^বিদ্যালয় থেকে আমাকে ফোন করে বলা হয়, আমরা ৪০ জন শিক্ষার্থীকে মনোনীত করেছি যাদেরকে বিশ^বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষাবৃত্তি দেয়া হবে। কাজেই তুমি তোমার একাউন্ট নম্বর পাঠাও যেন তোমাকে বৃত্তির টাকা প্রেরণ করা যায় আর তোমাকে এক হাজার ইউরো পাঠানো হচ্ছে। সে বলে, আল্লাহ্ তা’লা আমাকে দ্বিগুণ করে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এরপর যুক্তরাজ্যের দৃষ্টান্তও রয়েছে। আমাদের বালাম বেগ (জামাতের) একজন সদস্য আছেন। ওয়াক্ফে জাদীদের লক্ষ্য পূরণে কিছুটা ঘাটতি ছিল। অতিরিক্ত চাঁদা প্রদান করেন কিন্তু এরপরও কিছু ঘাটতি ছিল। তিনি বলেন, প্রথমে স্থানীয় কাউন্সিলের পক্ষ থেকে একটি চিঠি পাই যাতে সার্ভিস চার্জ হিসেবে (আমার কাছে) অনেক বড় অংক দাবি করা হয়েছিল। তখনও আমি এ বিষয়েই ভাবছিলাম আর তখনই ওয়াক্ফে জাদীদ (দপ্তরের) পক্ষ থেকেও চাঁদা দেয়ার কথা বলা হয়। আমি প্রথমে ওয়াক্ফে জাদীদের চাঁদা দিয়ে দেই। এর পরদিনই কাউন্সিল থেকে পুনরায় চিঠি আসে যাতে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে। তারা লিখে, আমরা তোমাকে টাকা দাবি করে যে পত্র পাঠিয়েছিলাম তা ভুলক্রমে পাঠিয়েছিলাম। সমন্বয়ের পর দেখা গেছে, তোমাকে আমাদের দিতে হবে না বরং আমরাই তোমাকে কিছু অর্থ দিব। তিনি বলেন, ওয়াক্ফে জাদীদ খাতে আমি যে চাঁদা দিয়েছিলাম সেটির তুলনায় এই অংক দশগুণ বেশি ছিল। এভাবেই আল্লাহ্ তা’লা ঈমানে দৃঢ়তার জন্য অনেক সময় তাৎক্ষণিকভাবেই ফিরিয়ে দেন। এরপর আল্লাহ তা’লার পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক স্বীয় দানে ধন্য করার আরেকটি দৃষ্টান্ত রয়েছে ইন্ডিয়া থেকে। ইন্সপেক্টর সাহেব বলেন, ওয়াক্ফে জাদীদের বছরের শেষের দিকে সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে ইয়াদগীর জামাতে যাই। তিনি সেখানে এক যুবকের কাছে যান এবং তাকে ওয়াক্ফে জাদীদের চাঁদা দেওয়ার কথা বলেন তখন সেই যুবক বলে, এ মুহূর্তে আমার পকেটে কেবল পনেরশ’ টাকা আছে তাও আবার কাউকে দেয়ার জন্য রেখেছি আর তাকে দেয়াটা খুবই জরুরী। এরই মধ্যে আপনি ওয়াক্ফে জাদীদের চাঁদা চেয়েছেন, এখন আমি ভাবছি যে, কী করবো? আমি যদি এখন আপনাকে চাঁদা দেই তাহলে সেই ব্যক্তিকে কোত্থেকে দিব? তাছাড়া এ মুহূর্তে তাৎক্ষণিকভাবে বাড়তি কোন টাকা যোগাড় করাও সম্ভব হবে না। যাহোক তিনি বলেন, ঠিক আছে কোন সমস্যা নেই আমি আমার চাঁদাই দিচ্ছি। একথা বলে, পনেরশ’ টাকা চাঁদা দিয়ে সে চলে যায়। তিনি বলেন, পরদিন সেক্রেটারী ওয়াক্ফে জাদীদের সাথে আমি সেই যুবকের সাথে সাক্ষাতের জন্য তার দোকানে যাই তখন তিনি তার পকেট থেকে টাকা বের করে বাইরে রাখেন, তা এত পরিমাণ ছিল যে, টাকার স্তুপ হয়ে যায়। তিনি বলেন, আমি গতকাল চাঁদা দিয়ে যখন বাড়ি পৌঁছি তখন কতিপয় এমন জায়গা থেকে টাকা আসে, যেসব জায়গায় মানুষের কাছে এতদিন আমার টাকা আটকে ছিল আর এখন কয়েক হাজার রুপি আমার হাতে আছে। এভাবে আল্লাহ তা’লা বরকত দিয়েছেন। ধনী বন্ধুরাও রয়েছেন, যদিও জাগতিকদের দৃষ্টিতে এরা ততটা ধনী নন কিন্তু জামাতের দৃষ্টিতে ধনী। কেরোলাই এর একজন বন্ধু রয়েছেন যিনি দশ লক্ষ রুপি চাঁদা দিয়েছেন। তার স্ত্রী খ্রিস্টধর্ম ছেড়ে আহমদী হয়েছেন এবং দোয়া ও নামাযে গভীর আগ্রহ রাখেন, খুবই নিষ্ঠাবতী আহমদী। তিনি মূসী, বরং স্বামী-স্ত্রী উভয়েই মূসী। তিনি বলেন, আমরা তাদের বাড়িতে গেলে তার স্ত্রী আমাদেরকে পাঁচ লক্ষ রুপির চেক লিখে দেন। ইন্সপেক্টর সাহেব বলেন, আপনার স্বামী পূর্বেই দশ লক্ষ রুপি দিয়েছেন। আবার আপনিও দিচ্ছেন। একথার যে উত্তর সেই ভদ্র মহিলা দিয়েছেন তা হল, আমরা যেসব নিয়ামত পেয়েছি তা চাঁদার কল্যাণেই পেয়েছি। এজন্য বারবার চাঁদা দিতে মন চায়। এই (চাঁদার) কল্যাণেই আমাদের ব্যবসায় উন্নতি হচ্ছে, তাই চাঁদা দেয়া থেকে আমরা কখনও বিরত হবো না। মালীর মুবাল্লিগ সাহেব লিখেন, কায়ি শহরে আমরা জামাতী রেডিও চ্যানেলে আর্থিক কুরবানী এবং ওয়াক্ফে জাদীদের গুরুত্ব এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে (আলোচনা) অনুষ্ঠান করি। তিনি বলেন, এরপর আমরা বিভিন্ন জামাত পরিদর্শনে যাই, সাধ্যমত সব জামা’ত আর্থিক কুরবানী হিসাবে কিছু না কিছু উপস্থাপন করে। একজন নও আহমদী বলেন, আমি যখন চাঁদার তাহরীক সম্বন্ধে শুনি তখন আমার কাছে আল্লাহ্র রাস্তায় দেয়ার মত নগদ কোন অর্থ ছিল না। তখন আমি সিদ্ধান্ত করি যে, আমিও নিজের পক্ষ থেকে আহমদীয়া জামা’তকে কিছু না কিছু অবশ্যই দিবো, অন্যদের থেকে আমি পিছিয়ে থাকবো না। তিনি বলেন, আমি জঙ্গলে চলে যাই এবং শুকনো ও পুরোনো অনেক লাকড়ি জড়ো করি এবং সেখানেই সেসব লাকড়ি থেকে কয়লা প্রস্তুত করি এবং সেগুলো নিজ গ্রামে নিয়ে আসি। জামা’তের প্রতিনিধি দল যখন পরিদর্শনে আসে তখন তিনি বিশ বস্তা কয়লা চাঁদা হিসাবে প্রদান করেন। এই হতদরিদ্র মানুষের পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব ছিল তা তিনি করেছেন। যাহোক, (সেগুলো ছিল) পঞ্চাশ হাজার ফ্রাঙ্ক মূল্যমানের। তিনি বলেন, এখন আমি খুবই আনন্দিত কেননা, আমিও আর্থিক কুরবানীতে অংশগ্রহণ করেছি। পোল্যান্ড থেকে এক বন্ধু লিখেন, মুরব্বী সাহেব বছর শেষে ওয়াক্ফে জাদীদের চাঁদা দেয়ার আহŸান জানান। তিনি বলেন, আমার কাছে তখন প্রায় একশ’ যালুতী (পোলিশ মূদ্রা) ছিল। তিনি বলেন, সেদিন তথা ২৬ তারিখ কাদিয়ান জলসাও ছিল আর তিনি আমার বক্তৃতাও শুনতে চাচ্ছিলেন, এদিকে তাঁর মোবাইলের (ইন্টারনেট) প্যাকেজও শেষের পথে ছিল, বক্তৃতা কীভাবে শুনবে? তিনি বলেন, আমার বক্তৃতা শুনতেও খুব মন চাচ্ছিল। যাহোক, আমি বিশ যালুতীর প্যাকেজ ক্রয় করি এবং মাথাপিছু ২৮ যালুতী করে আমি, আমার ছেলে ও স্ত্রীর নামে চাঁদা প্রদান করি। আর আমি সিদ্ধান্ত নেই, (মাসের) বাকী দিনগুলোতে আমি কোন কিছু ক্রয় করব না এবং বাড়িতে বিদ্যমান জিনিস দিয়েই কোনমতে দিন পার করবো। কিন্তু এ আক্ষেপও হল যে , যদি আরো বেশি অর্থ থাকতো তবে আরো বেশি চাঁদা দিতে পারতাম। তিনি বলেন, আমরা দোয়া করি আর আল্লাহ্ তা’লা স্বীয় করুণা বর্ষণ করেন। ২৮ ডিসেম্বর আমি কাজ থেকে বাড়ি ফিরছিলাম তখন এক বন্ধু যার কাছে আমি ১২ যালুতি পেতাম, সে বলে আমার স্মরণ থাকে না এখন আপনি এটি নিয়ে নিন। তিনি আরো বলেন, বাড়ি ফিরে আমি যখন আমার একাউন্ট দেখি তখন দেখলাম বিভিন্ন স্থান থেকে কীভাবে যেন বারশ’ নব্বই যালুতী আমার একাউন্টে জমা হয়েছে। তিন বছর ধরে আমি যে ফ্যাক্টরীতে কাজ করছিলাম তারা কখনও অতিরিক্ত অর্থ দেয়নি। ওয়াক্ফে জাদীদের চাঁদার কল্যাণেই এই অর্থ আমার একাউন্টে এসেছিল আর এভাবে আমি তেরশ’ যালুতী পেয়ে যাই। এরপর আমি আরো তিনশ’ যালুতী চাঁদা দেই। আল্লাহ্র আরেকটি অনুগ্রহ হয়েছে। আমার ছেলে যেখানে কাজ করে সেখানে অক্টোবর বা নভেম্বরে বছরে একবার তাঁর বেতন বৃদ্ধি পেত। এবছর অক্টোবরে একবার তার বেতন বৃদ্ধি পেয়েছিল, কিন্তু ৩১ ডিসেম্বর তার বেতন আরেকবার বৃদ্ধি পায়। তিনি বলেন, এ বিষয়টি আমাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি করেছে। তাঞ্জানিয়ার শিয়াঙ্গা অঞ্চলে একটি জামাত রয়েছে। সেখানকার নবদীক্ষিতরা ধীরে ধীরে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় অংশ নিচ্ছেন। সেখানকার মুয়াল্লিম লিখেন, এক বন্ধু রমযান সাহেব গত বছর বয়’আত করেছেন। তিনি সামর্থ্যানুযায়ী তাহ্রীকে জাদীদ ও ওয়াক্ফে জাদীদের ওয়াদা লিখান। বছর শেষ হবার পূর্বেই তিনি ওয়াদার চেয়ে দ্বিগুণ পরিশোধ করেন। অনুরূপভাবে অন্য এক সময়ে তিনি তার পরিবারের পক্ষ থেকে একটি প্লটও জামাতের নামে দিয়ে দেন। তিনি যে গ্রামে থাকতেন সেখানকার লোকদের জন্য এটি খুবই আশ্চর্যজনক ব্যাপার ছিল। কয়েকজন ঠাট্টা করে বলে, এ লোক তো এভাবে অবিবেচকের ন্যায় ধর্মের পথে তার সব সম্পদ উড়িয়ে ফেলবে। কিন্তু তিনি মুয়াল্লিমকে বলেন, প্রকৃতপক্ষে আহমদীয়া জামাতে অন্তর্ভুক্ত হয়েই তিনি আর্থিক কুরবানীর গুরুত্ব এবং এর তাৎপর্য বুঝতে পেরেছেন। তিনি বলেন, যখন থেকে তিনি আল্লাহ্র পথে কুরবানী করতে আরম্ভ করেছেন, তার কাজে অনেক বরকত হয়েছে। লোকেরা যাই বলুক, প্রকৃতপক্ষে চলতি বছরেই বিভিন্ন স্থানে আরও প্লট ক্রয় করার এবং দু’টি বাড়ি নির্মাণের তার তৌফিক লাভ হয়েছে। এ সবকিছুই আল্লাহ্র পথে কুরবানী করার এবং জামাতের নামে একটি প্লট দেয়ার কল্যাণেই হয়েছে। এরপর রয়েছে সিয়েরা লিয়নের একটি ঘটনা। ঈমান ও নিষ্ঠায় কীভাবে নবদীক্ষিতগণ উন্নতি করছে দেখুন! পোর্ট লুকো রিজিওনের মিশনারী জিব্রীল সাহেব বলেন, নব দীক্ষিতদের একটি জামাতে ওয়াক্ফে জাদীদের চাঁদার তাহরীক করা হয়। তখন এক বয়ষ্কা অন্ধ মহিলা এক বাচ্চার সাহায্য নিয়ে আমার কাছে আসেন এবং বলেন, আমি কোন ওয়াদা লেখাই নি ঠিকই কিন্তু আমি ওয়াক্ফে জাদীদ খাতে চাঁদা দেয়ার জন্য এ দু’হাজার লিওন নিয়ে এসেছি। স্থানীয় মিশনারী বলেন, আপনি নিজে কেন কষ্ট করলেন আমাকে ডাকলে আমি নিজেই আপনার কাছে চলে আসতাম। সেই হতদরিদ্র ও বাহ্যত অশিক্ষিতা বৃদ্ধা মহিলার উত্তর শুনুন! তিনি বলেন, একেতো আমি সামান্য পরিমান অর্থ দিতে এসেছি। সেটিও আপনাকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে দিব? আমি পুরো সওয়াব নিজেই পেতে চাই এজন্য নিজেই হেঁটে চলে এসেছি। আইভরিকোস্ট থেকে সান-পেদ্রো অঞ্চলের মুবাল্লিগ বলেন, কোলি বালি সাহেব নামে জামাতের একজন সদস্য গত রমযান মাসে আমাকে ফোন করে ওয়াক্ফে জাদীদের চাঁদা সম্পর্কে জানতে চান, রমযান মাসে চাঁদা দেয়া বা চাঁদা বৃদ্ধি করার কোন আবশ্যকতা আছে কিনা? উত্তরে আমি তাকে বলিÑ মহানবী (সা.) ও হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর আদর্শ এমনই ছিল যে, তাঁরা রমযানে প্রচুর পরিমাণে আল্লাহ্র রাস্তায় আর্থিক কুরবানি করতেন। এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে বলি। আর ওয়াক্ফে জাদীদ ও তাহরীকে জাদীদ সম্পর্কেও তাকে অবহিত করি যে, ইসলাম প্রচারের কাজে এই (অর্থ) কীভাবে ব্যবহৃত হয় আর এটিও বলি যে, আবশ্যক না হলেও নিজের সাধ্যানুসারে রমযান মাসে এসব চাঁদার তাহরীকে বেশি বেশি অংশগ্রহণ করা উচিত। যাহোক, তখন এই ভদ্রলোক যিনি আগে থেকেই প্রতি মাসে ২০ হাজার ফ্রাঙ্ক চাঁদা প্রদান করে আসছিলেন, তিনি ওয়াদা করেন, ভবিষ্যতে কেবল রমযান মাসেই নয় বরং নিয়মিত প্রতি মাসে তার বিগত লাযেমী চাঁদার পাশাপাশি ৩০ হাজার ফ্রাঙ্ক অতিরিক্ত অর্থ বিশেষভাবে ওয়াক্ফে জাদীদ ও তাহ্রীকে জাদীদ খাতে প্রদান করবেন। আর এই ওয়াদাও করেন, এই বছর সমাপ্ত হওয়ার পূর্বেই ওয়াক্ফে জাদীদ খাতে প্রদত্ত এই অতিরিক্ত অর্থ আরো বৃদ্ধি চেষ্টা করবেন, ইনশাআল্লাহ্। তিনি বলেন, আল্লাহ্র কৃপায় ভদ্রলোক রমযানের পর থেকে অদ্যাবধি মাসের শুরুতেই এক সচেতনতা নিয়ে লাযেমী চাঁদা প্রদান করছেন। এশায়াতে ইসলাম বা ইসলাম প্রচারে বিভিন্ন ব্যয়ের কথা হচ্ছে তাই, এখানে এটিও উল্লেখ্য যে, আল্লাহ্ তা’লা জামা’তকে গত বছর ১৮৭টি মসজিদ নির্মাণ করার তৌফিক দিয়েছেন। এছাড়া বর্তমানে আফ্রিকাতে ১০৫টি মসজিদ নির্মাণাধীন রয়েছে। অনুরূপভাবে ১৪৪টি মিশন হাউস প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যার অধিকাংশই আফ্রিকাতে এবং ৪৫টি মিশন হাউস নির্মাণাধীন রয়েছে। এছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে যেখানে আমরা মিশন হাউস নির্মাণে অপারগ সেক্ষেত্রে বাড়ি ভাড়া নেয়া হয়। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ৭৩১টি মিশন হাউস এবং মুরুব্বি হাউস ভাড়া নেয়া হয়েছে। এশিয়ার অন্যান্য দেশেও ৬৩২টি মিশন হাউস ভাড়ায় নেয়া হয়েছে। মোটকথা, ওয়াক্ফে জাদীদের চাঁদার সিংহভাগ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ব্যয় করা হয়। মসজিদ নির্মাণ করার প্রসঙ্গ এসেছে। একাজও এতো সহজে হয়ে যায় না; সর্বত্র বিরুদ্ধবাদীদের বিরোধিতারও সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু আল্লাহ্ তা’লার খাতিরে জামা’ত এসব কাজ করে যাচ্ছে আর আল্লাহ্র পক্ষ থেকে জামাতের উন্নতির প্রতিশ্রুতিও রয়েছে; এজন্য বিশেষ ঐশী সমর্থনও (জামা’তের) সাথে থাকে। কঙ্গো কিনশাসা’র একটি ঘটনা বর্ণনা করছি, সেখানকার মুবাল্লিগ লিখেন, এখানে বান্দোরো অঞ্চলে দু’বছর হল একটি জামা’ত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, মসজিদ নির্মাণাধীন রয়েছে। সেখানে সুন্নী সম্প্রদায়ের মুসলমানরা আহমদীদেরকে বিভিন্নভাবে কষ্ট দেয়া ও সরকারি বিভিন্ন অফিসে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার ক্ষেত্রে চেষ্টার কোন ত্রুটি করে নি। যখন কোন দূরভিসন্ধিই সফল হয় নি তখন তারা হত্যার হুমকি দিতে আরম্ভ করে। যাহোক, বিরুদ্ধবাদীরা তো কোনভাবেই সফল হয় নি কিন্তু অপরদিকে মসজিদ নির্মাণের কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। সেখানকার নির্মাণ কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত একজন আহমদী বন্ধু বলেন, মসজিদ নির্মাণকালে একদিন স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন খ্রিস্টান অধ্যাপক এসে মসজিদ নির্মাণ কাজে সাহায্য করতে আরম্ভ করেন। এমনকি তিনি যেসব আহমদী দূর-দূরান্ত থেকে বালু বয়ে আনতেন তাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঠেলা গাড়ি ইত্যাদি টেনেছেন! একদিকে বিরোধীরা তাদের কাজ করছে অপরদিকে আল্লাহ্ তা’লা অন্যদের মাধ্যমেও কাজ করিয়ে নেন। এভাবে পূণ্যবানরা আসেন। এরপর ক্যামেরুনের একটি ঘটনা রয়েছে। সেখানকার বোয়াদাসিনিচ নামক স্থানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের বাস, এটি দোলা শহরের একটি পাড়া বা মহল্লা। তিনি বলেন, সেখানে দু’বছর পূর্বে জামা’ত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মসজিদ নির্মাণের কাজ আরম্ভ হলে এলাকার এডমিনিস্ট্রেটর বা প্রশাসকের পক্ষ থেকে চিঠি আসে যে, মসজিদের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দাও। জামা’ত কাজ বন্ধ করে দেয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুসলমানদের কোন একটি সংগঠন গভর্নর সাহেবকে এবং সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে চিঠি লিখেছে যে, এই জামা’ত একটি উগ্রপন্থী জামা’ত, ইসলামের সাথে এদের কোন সম্পর্ক নেই, তাই এরা মসজিদ নির্মাণ করতে পারবে না। এই অপপ্রচার ইসলামী দেশগুলোতে করা হয় আর তাদের মৌলভীরা সেখানে গিয়েও একই কাজ করতে থাকে। যাহোক, তারা আমাকেও পত্র লিখে, নিজেরাও দোয়ায় রত হয় এবং বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগও করে। তিনি বলেন, এক মাস পর প্রশাসক আমাদেরকে তার অফিসে ডেকে পাঠান আর বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, চীফ ইমাম এবং মুসলমানদের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গকেও ডেকে পাঠান। এরপর প্রশাসক মহোদয় একটি প্রতিবেদন পাঠ করতে আরম্ভ করেন। মুসলমানদের অভিযোগের ভিত্তিতে যে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল, তিনি বলেন, আমরা (নির্মাণ) বন্ধ করে দিয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু ক্যামেরুনের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আমরা রিপোর্ট সংগ্রহ করেছি। (আর তা হল,) আহমদীয়া জামা’ত একটি আন্তর্জাতিক জামা’ত। দু’শ’র অধিক দেশে এই জামা’ত কাজ করছে। ক্যামেরুনেও তারা গত পনেরো বছর ধরে কাজ করছে। এখানেও তারা অনেক স্থানে মসজিদ নির্মাণ করেছে। যাহোক, তিনি বলেন, এভাবে তারা ধর্মের সেবা করছে। এছাড়া মানবসেবামূলক কার্যক্রম সম্পর্কেও তিনি বলেন যে, অনেক এলাকায় তারা সুপেয় পানির নলক‚প এবং টিউবওয়েল স্থাপন করেছে। এরা এতীমদের লালনপালন করছে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাক্ষেত্রে সাহায্য করছে। একইভাবে উগ্রপন্থী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে সর্বদা এই জামা’ত সোচ্চার। অতঃপর তিনি বলেন, এই জামা’ত শান্তি ও সম্প্রীতির শিক্ষা প্রদান করে আর একথাও বলে যে, জিহাদ তরবারির নয় বরং জিহাদ হল কলমের। এই সমস্ত কথা তিনি সেসব লোকের সামনে উপস্থাপন করেন। এছাড়া তিনি এটিও বলেন যে, মুসলমানদের বড় বড় নেতৃবৃন্দ এবং সরকারপ্রধানসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ তাদের জলসায় যোগদান করে থাকেন। কাজেই, তাদের মসজিদ নির্মাণ বন্ধ করার কোন যৌক্তিকতা নেই। তারা এখানেও মসজিদ নির্মাণ করতে পারে। তিনি যখন রিপোর্ট উপস্থাপন সমাপ্ত করেন তখন সেখানকার বা সেই এলাকার যত মুসলমান নেতৃবৃন্দ ছিল সবাই দাঁড়িয়ে যায় এবং বলে, এরা কাফির, আমরা এদেরকে কাফির মনে করি, আর আপনি যে রিপোর্ট প্রস্তুত করেছেন তা আমাদেরকে জিজ্ঞেস না করেই করেছেন, তাই আমরা এটি মানি না। যাহোক, এডমিনিস্ট্রেটর বা প্রশাসক রাগান্বিত হয়ে তাদেরকে বলেন, আমার কাজ কীভাবে করতে হবে তা আমি জানি। আপনারা এখান থেকে চলে যান। এরপর তারা নীরব হয়ে যায় এবং তিনি জামা’তকে বলেন, আপনারা মসজিদ নির্মাণ করুন। আহমদীয়া জামা’তের সেবামূলক কর্মকান্ডের যে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে তা প্রত্যেক বিবেকবানকে জামা’তের প্রশংসা করতে বাধ্য করে। আল্লাহ্ তা’লার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যখন কাজ করা হয় তখন আল্লাহ্ তা’লা সাহায্যকারীদের বাহিনী প্রেরণ করেন এবং স্বয়ং তাদের অর্থাৎ, বিরুদ্ধবাদীদের প্রতিবন্ধকতা দূর করে দেন। আল্লাহ্ তা’লার কৃপারাজি কীভাবে বৃদ্ধি পায় (এবার) সে সম্পর্কিত একটি ঘটনা বর্ণনা করছি। ঘানার আপার ওয়েস্ট রিজিওনের একটি রিপোর্ট রয়েছে। তবলীগের ফলে ষাটটির অধিক বয়’আত হয়। গ্রামে জামা’তের একটি ছোট্ট কাঁচা ইটের মসজিদ ছিল। আমাদের সফলতা দেখে অ-আহমদী মুসলমানরা আমাদের মসজিদের ঠিক সামনে খুব সুন্দর একটি পাকা মসজিদ নির্মাণ করায় এবং সেই মসজিদের লোভ দেখিয়ে আমাদের নবাগত আহমদীদেরকে নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা করলে কয়েকজন দুর্বল প্রকৃতির নবদীক্ষিত তাদের দিকে চলেও যায়। পরবর্তীতে জামা’তও সেখানে অনেক সুন্দর এবং বৃহৎ মসজিদ নির্মাণ করে। এখন আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় আমাদের নিজেদের সদস্যরা তো মসজিদে আসেই, এছাড়া অ-আহমদীদেরও একটি বৃহৎ সংখ্যা সেখানে আসতে আরম্ভ করেছে। আমাদের মসজিদ মুসল্লিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে এবং তাদের মসজিদ খালি হয়ে গেছে বা সেখানে খুব কম মানুষ রয়ে গেছে। আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় নবদীক্ষিতদের তা’লীম ও তরবীয়তের জন্য এখন সেখানে প্রত্যহ ক্লাসও হচ্ছে, যার ফলে সেখানে প্রতিনিয়ত জামা’তের উন্নতি ঘটছে। আল্লাহ্ তা’লার কৃপার (এমন) অনেক ঘটনা রয়েছে। আল্লাহ্ তা’লা সত্য প্রতিশ্রæতিদাতা। তিনি হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর সাথে কৃত নিজ প্রতিশ্রুতিসমূহ পূর্ণ করছেন আর অদৃশ্য হতে সাহায্যও করেন এবং করবেন, ইনশাআল্লাহ্। আমাদেরকে তিনি সুযোগ প্রদান করেন মাত্র যাতে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তাঁর পথে (আমরা) খরচ করতে পারি এবং আল্লাহ্ তা’লার কৃপাবারির উত্তরাধিকারী হতে পারি। আল্লাহ্ তা’লা আমাদের তৌফিক দান করুন আমরা যেন আল্লাহ্ তা’লার কৃপাভাজন হতে পারি। এখন আমি রীতি অনুসারে গত বছর অর্থাৎ, ২০২১ সনের ওয়াক্ফে জাদীদের সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট উপস্থাপন করব। আর এ বছর ২০২২ সনের জানুয়ারি মাসে নতুন বছরও আরম্ভ হয়ে গেছে। গত বছরটি ছিল ৬৪তম বছর। এ বছরের রিপোর্ট হল, এবছর ওয়াক্ফে জাদীদ খাতে আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় জামা’ত যে কুরবানী করেছে (তার পরিমান হল) ১ কোটি ১২ লক্ষ ৭৭ হাজার পাউন্ড বা প্রায় ১১.২ মিলিয়ন (পাউন্ড)। গত বছরের তুলনায় এই কুরবানী ৭ লক্ষ ৪২ হাজার পাউন্ড বেশি। পৃথিবীর অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে এটি আল্লাহ্ তা’লার অনেক বড় অনুগ্রহ। এ বছরও যুক্তরাজ্য জামা’ত মোট (চাঁদা) সংগ্রহের দিক থেকে প্রথম স্থানে রয়েছে। পাকিস্তানের মুদ্রামানে যেহেতু ধ্বস নেমেছে, তাই তাদের অবস্থান অনেক নেমে গেছে। তা সত্তে¡ও নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী তারা অনেক কুরবানী করছেন। যাহোক, অবস্থানের দিক থেকে যুক্তরাজ্য প্রথম স্থানে রয়েছে। এরপর রয়েছে জার্মানি। আর আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় যুক্তরাজ্য এ বছর বেশ ভালো কুরবানী করেছে আর জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যের মাঝে অনেক পার্থক্য রয়েছে। এরপর তৃতীয় স্থানে রয়েছে কানাডা। এরপর রয়েছে যথাক্রমে আমেরিকা, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মধ্য প্রাচ্যের একটি জামা’ত, ঘানা এবং বেলজিয়াম। মাথাপিছু (চাঁদা) প্রদানের দিক থেকে প্রথম স্থানে রয়েছে আমেরিকা, এরপর যথাক্রমেÑ সুইজারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্য। আফ্রিকায় সম্মিলিত (চাঁদা) সংগ্রহের দিক থেকে উল্লেখযোগ্য জামা’তগুলোর মাঝে প্রথম স্থানে রয়েছে ঘানা। এরপর রয়েছে যথাক্রমেÑ মরিশাস, নাইজেরিয়া, বুরকিনা ফাঁসো, তানজানিয়া, সিয়েরা লিওন, লাইবেরিয়া, গাম্বিয়া, উগান্ডা এবং দশম স্থানে রয়েছে বেনিন। আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় মোট চাঁদাদাতার সংখ্যা হল, ১৪ লক্ষ ৪৫ হাজার। যুক্তরাজ্যের দশটি বড় জামা’তের মাঝে (চাঁদা) সংগ্রহের দিক থেকে , প্রথম স্থানে রয়েছে ইসলামাবাদ, এরপর যথাক্রমেÑ ফার্নহাম, উস্টারপার্ক, চীম সাউথ, অল্ডারশট, বার্মিংহাম সাউথ, ওয়ালসল, জিলিংহাম, গিলফোর্ড ও ইয়োল। সম্মিলত (চাঁদা) সংগ্রহের দিক থেকে প্রথম পাঁচটি রিজিওনের মাঝে প্রথম হল, বায়তুল ফুতুহ্। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইসলামাবাদ, এরপর যথাক্রমেÑ মসজিদে ফযল, বায়তুল এহসান এবং মিডল্যান্ডস। আতফাল বিভাগের দিক থেকে শীর্ষ দশটি জামা’ত হল, প্রথম স্থানে ইসলামাবাদ, দ্বিতীয় স্থানে অল্ডারশট, এরপর যথাক্রমেÑ ফার্নহাম, রোহ্যাম্পটন, গিলফোর্ড, ইয়োল, মিচাম পার্ক, বায়তুল ফুতুহ্, ওয়ালসল এবং বার্মিংহাম ওয়েস্ট। (চাঁদা) সংগ্রহের দিক থেকে জার্মানীর পাঁচটি স্থানীয় এমারতের মাঝে প্রথম স্থানে রয়েছে হ্যামবুর্গ, এরপর যথাক্রমেÑ ফ্র্যাঙ্কফুর্ট, গ্রস গেরাও, উইযবাদেন এবং ডিটসেন্ বাখ। (চাঁদা) সংগ্রহের দিক থেকে শীর্ষ দশটি জামা’তের তালিকা হল, রোয়েডার মার্ক প্রথম স্থানে, এরপর যথাক্রমে রোডগাও, নয়েস, রোয়েডার্য হাইম, মাহদীয়াবাদ, ফ্রেডবার্গ, হ্যানাও, ফ্লোরেনয্ হাইম, ফ্রাঙ্কনথল, কোবলেনয্ এবং নিডা। আতফাল বিভাগের ক্ষেত্রে (জার্মানীর) ৫টি শীর্ষ রিজিওন হল, প্রথম হামবুর্গ, এরপর যথাক্রমেÑ হিসেন সাউথ ওয়েষ্ট, তাউনসন, হিসেন মিটে এবং রায়েন লেন ফলয। (চাঁদা) সংগ্রহের দিক থেকে কানাডার এমারতগুলো হল যথাক্রমে- ভন, ক্যালগেরী, পিসভিলেজ, ভ্যানকুভার এবং ব্রাম্পটন ওয়েস্ট। আর কানাডার দশটি বড় জামা’ত হল যথাক্রমে- হাদীকা আহমদ, মিল্টন ওয়েস্ট, ব্র্যাডফোর্ড, ডারহাম, মিল্টন ইস্ট, রিজাইনা, অটোয়া ওয়েস্ট, উইনিপেগ, হ্যামিল্টন মাউন্টেন এবং এবোটস্ফোর্ড। আর আতফাল বিভাগের ক্ষেত্রে ৫টি উল্লেখযোগ্য এমারত হল, প্রথম ভন, এরপর পিসভিলেজ, ক্যালগেরী, টরন্টো ওয়েস্ট এবং ব্রাম্পটন ওয়েস্ট। আতফাল বিভাগের ৫টি শীর্ষ জামা’ত হল যথাক্রমে- হাদীকা আহমদ, ব্র্যাডফোর্ড, ডারহাম, লন্ডন এবং মিল্টন ওয়েস্ট। (চাঁদা) সংগ্রহের দিক থেকে আমেরিকার শীর্ষ ১০টি জামা’ত হল যথাক্রমে- মেরিল্যান্ড, লস এঞ্জেলেস, ডেট্রয়েট, সিলিকন ভ্যালী, বোস্টন, অস্টিন, ফিনিক্স, সিরাকিউস, লাস ভেগাস এবং ফিসবার্গ। আতফাল বিভাগের ক্ষেত্রে (আমেরিকার) শীর্ষ ১০টি জামা’ত হল যথাক্রমে-মেরিল্যান্ড, লস এঞ্জেলেস, সিয়াটল, অরল্যান্ড, অস্টিন, সিলিকন ভ্যালী, ফিনিক্স, ফিসবার্গ, লাস ভেগাস এবং জায়ান। পাকিস্তানে প্রাপ্তবয়স্কদের চাঁদা আদায়ের দিক থেকে প্রথম তিনটি জামা’ত হল, যথাক্রমেÑ লাহোর, রাবওয়া এবং করাচী। আর বিভিন্ন জেলার অবস্থানগত দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে ইসলামাবাদ, এরপর যথাক্রমে- ফয়সালাবাদ, গুজরাত, গুজরাঁওয়ালা, সারগোধা, মুলতান, উমরকোট, হায়দ্রাবাদ, মিরপুর খাস এবং ডেরাগাজী খান। মোট (চাঁদা) সংগ্রহের দিক থেকে (পাকিস্তানের) শীর্ষ দশটি জামা’ত হল, যথাক্রমে ইসলামাবাদ শহর, ডিফেন্স লাহোর, টাউনশিপ লাহোর, ক্লিফটন করাচী, দারুয্ যিকর লাহোর, মডেল টাউন লাহোর, গুলশানে ইকবাল করাচী, সামানাবাদ লাহোর, আযীযাবাদ করাচী এবং আল্লামা ইকবাল টাউন লাহোর। আর আতফাল বিভাগের ক্ষেত্রে (পাকিস্তানের) ৩টি বড় জামা’ত হল, প্রথম লাহোর, দ্বিতীয় করাচী এবং তৃতীয় রাবওয়া। আতফাল বিভাগের ক্ষেত্রে জেলাপর্যায়ে অবস্থান হল, প্রথম স্থানে রয়েছে ইসলামাবাদ। এরপর যথাক্রমে- শিয়ালকোট, রাওয়ালপিন্ডি, সারগোধা, ফয়সালাবাদ, গুজরাত, হায়দ্রাবাদ, মিরপুর খাস, উমরকোট, এবং নারোয়াল। যেসব জামাত (চাঁদা প্রদানের ক্ষেত্রে) অসাধারণ উন্নতি করেছে সেগুলো হল, ড্রিগরোড করাচী, মুঘল পুরা লাহোর, গুজরাঁওয়ালা শহর, বায়তুল ফযল ফয়সালাবাদ, পেশাওয়ার শহর, দিল্লী গেইট লাহোর, কোটলী আযাদ কাশ্মীর এবং নানকানা সাহেব। ভারতের শীর্ষ দশটি প্রদেশ হল, কেরালা, জম্মু কাশ্মীর, তামিলনাডু, তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লী এবং মহারাষ্ট্র। চাঁদা সংগ্রহের দিক থেকে (ভারতের) শীর্ষ দশটি জামা’ত হল, হায়দ্রাবাদ প্রথম স্থানে। এরপর যথাক্রমে- কাদিয়ান, কেরোলাই, পার্থাপুরাম, কোয়েম্বাটুর, বেঙ্গালুরু, কোলকাতা, কালীকাট, রিশিনগর এবং মেলাপেলায়াম। অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ দশটি জামা’ত হল যথাক্রমে- মেলবোর্ন লঙ্গওয়ারেন, ক্যাসেল হিল, মার্সডেন পার্ক, এডিলেইড সাউথ, মেলবোর্ন বেরভিক, পার্থ, প্যানরিথ, এডিলেইড ওয়েস্ট এবং লোগান ইস্ট। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার জামা’তগুলো হল, মেলবোর্ন লঙ্গওয়ারেন, ক্যাসেল হিল, মার্সডেন পার্ক, এডিলেইড সাউথ, মেলবোর্ন বেরভিক, পার্থ, প্যানরিথ, এডিলেইড ওয়েস্ট, বযাকটাউন এবং ক্যানবেরা। আতফালদের ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ জামা’তগুলো হল, মেলবোর্ন লঙ্গওয়ারেন, এডিলেইড সাউথ, মেলবোর্ন বেরভিক, লোগান ইস্ট, পার্থ, ক্যাসেল হিল, মেলবোর্ন ইস্ট, মাউন্ট ড্রুইট, প্যানরিথ এবং ব্রিসবেন সেন্ট্রাল। এই ছিল তাদের (চাঁদা সংগ্রহের দিকে থেকে জামা’তগত) অবস্থান। আল্লাহ্ তা’লা সকল (আর্থিক) কুরবানীকারীর ধনসম্পদ ও জনবলে প্রভূত বরকত দান করুন। (আমীন) (সূত্র: কেন্দ্রীয় বাংলাডেস্কের তত্ত্বাবধানে অনূদিত)