ওয়াকফে জাদীদের নতুন বছরের ঘোষণা এবং আর্থিক কুরবানীর গুরুত্ব সম্পর্কে প্রদত্ত জুমুআর খুতবা ৬ জানুয়ারি ২০২৩

জুমুআর খুতবার সারমর্ম

যুক্তরাজ্যের (টিলফোর্ড, সারেস্থ) ইসলামাবাদের মুবারক মসজিদে প্রদত্ত সৈয়্যদনা আমীরুল মু’মিনীন হযরত মির্যা মসরূর আহমদ খলীফাতুল মসীহ্ আল্ খামেস (আই.)-এর ০৬ জানুয়ারি ২০২৩ মোতাবেক০৬ সুলাহ ১৪০২ হিজরী শামসীর জুমুআর খুতবাতাশাহ্হুদ, তা’ঊয এবং সূরা ফাতিহা পাঠের পর হুযূর আনোয়ার (আই.) পবিত্র কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করে বলেন,لَن تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ ۚ وَمَا تُنفِقُوا مِن شَيْءٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ[আলে ইমরান : ৯৩]এই আয়াতের অনুবাদ হলো, তোমরা কখনো পুণ্য অর্জন করতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা সেসব বস্তু হতে খরচ কর যা তোমরা ভালোবাস। আর তোমরা যা কিছুইখরচ কর, নিশ্চয় আল্লাহ্ তা উত্তমরূপে অবগত আছেন। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত আকদাস মসীহ্ মওউদ (আ.) একস্থানে বলেন, তোমরা প্রকৃত পুণ্য যা নাজাত বা পরিত্রাণ প্রদানকারী তা কখনোই অর্জন করতে সক্ষম হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা খোদা তা’লার পথে সেই সম্পদ ও বস্তু খরচ না করবে যা তোমাদের নিকট প্রিয়। এরপর তিনি (আ.) বলেন, তোমরা প্রকৃত পুণ্য কখনোই অর্জন করতে সক্ষম হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না মানবজাতির সেবায় সেই সম্পদ খরচ করবে যা তোমাদের প্রিয় সম্পদ।অতএব আল্লাহ্ তা’লা আর্থিক কুরবানীকে এতটা গুরুত্ব প্রদান করেছেন যে, প্রকৃত পুণ্য (হলো সেটি) যার দ্বারা খোদা তা’লা সন্তুষ্ট হন, কিন্তু শর্ত হচ্ছে তা যেন খোদা তা’লার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে করা হয়। (অর্থাৎ কোনো পুণ্যকর্ম)তখনই প্রকৃত পুণ্য হিসেবে গণ্য হবে যখন নিজের প্রিয় বস্তু খোদা তা’লার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসায় ব্যয় করা হবে। এরপরই এটি নাজাত বা পরিত্রাণ লাভের মাধ্যমে পরিণত হয়। একস্থানে তিনি (আ.) বলেন, এটি তো কোনোপুণ্য নয় যে, কারো গরু অসুস্থ হওয়ার পর তা বাঁচার কোনো সম্ভাবনা থাকলে সে বলবে, একে খোদার পথে উৎসর্গ করে দিচ্ছি অথবা কোনোভিক্ষুক এলেতাকে ঘরের বাসী রুটি দেয়া দেয়া, অর্থাৎ পুরোনো রুটি যা ঘরের কেউ খায় না,এগুলো তো এমনিতেই তার কোনো কাজে আসবে না। আল্লাহ্ তা’লার পথে সেই সম্পদ গৃহীত হয় যা কারো প্রিয় সম্পদ আর সে তা ত্যাগ স্বীকার করে আল্লাহ্ তা’লার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে প্রদান করে। এটিই প্রকৃত পুণ্য। এটিই সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসার প্রকৃত পরিচায়ক। এ থেকে বুঝা যায়, আমাদের হৃদয়ে অন্যের জন্য কতটুকু সহমর্মিতা রয়েছে, আমাদের হৃদয়ে ধর্ম সেবার কতটুক স্পৃহা রয়েছে এবং এ বিষয়ে আমাদের কীরূপ উৎসাহ ও উদ্দীপনা রয়েছে।এরপর হযরত আকদাস মসীহ্ মওউদ (আ.) একস্থানে বলেন, পৃথিবীতে মানুষ সম্পদকে অনেক বেশি ভালোবাসে। এজন্যইস্বপ্নের ব্যাখ্যা সম্পর্কিত গ্রন্থে লেখা আছে, যদি কেউ স্বপ্নে দেখে, সে কলিজা বের করে কাউকে দিয়ে দিয়েছে তবে এর অর্থ হলো সম্পদ (দান করা)। এজন্যই প্রকৃত খোদাভীতি ও ঈমান অর্জনের জন্য (আল্লাহ্ তা’লা) বলেন, لَن تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَঅর্থাৎপ্রকৃত পুণ্য তোমরা কখনোই লাভ করতে সমর্থ হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরাসবচেয়ে প্রিয় বস্তু ব্যয় নাকরবে। কেননা খোদা তা’লার সৃষ্টির প্রতি সহমর্মিতা ও সদাচারের একটি বড় অংশ সম্পদ খরচ করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেআর মানবজাতি ও খোদার সৃষ্টির প্রতি সহমর্মিতা এমন এক বিষয় যা ঈমানের দ্বিতীয়াংশ আর যা ছাড়া ঈমান পূর্ণতা ও দৃঢ়তা লাভ করতে পারে না। যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ আত্মত্যাগ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত অন্যের উপকার কীভাবে করতে পারে! অন্যের কল্যাণ সাধন ও সহমর্মিতা প্রকাশের জন্য আত্মত্যাগ আবশ্যক বিষয় আর এই আয়াত لَن تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ এ এই আত্মত্যাগেরই শিক্ষা ও নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। অতএব আল্লাহ্ তা’লার পথে সম্পদব্যয় করাটাও মানুষের সৌভাগ্য ও খোদাভীতির মান ও সৌরভের পরিচায়ক। হযরত আবু বকর (রা.)-এর জীবনে খোদার খাতিরে উৎসর্গের মান এবং সুবাশএমন ছিল যে, মহানবী (সা.) কোনো প্রয়োজনের কথা বললে তিনি ঘরের সমস্ত সম্পদ নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। অতএব কুরবানীর এবং প্রিয় সম্পদ উপস্থাপন করার এগুলো হলো সেসব মানদণ্ড যার সর্বোৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত, যেমনটিহযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) বলেছেন, হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) প্রতিষ্ঠা করেছেন। আর পরবর্তীতে সাহাবীরা নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী ও তাদের মর্যাদার নিরিখে কুরবানীর এরূপ মান প্রতিষ্ঠা করেছেন। পুনরায় হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর যুগে আমরা দেখি, তাঁরমিশনকে পূর্ণ করার জন্য,যা বইপুস্তক প্রকাশ ও ইসলাম প্রচারের জন্য ছিল, সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত হযরত হেকীম মওলানা নূরুদ্দীন খলীফাতুল মসীহ্আউয়াল (রা.) প্রতিষ্ঠা করেছেন। অতএব হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-কে তিনি (রা.) লিখেছেন, যার উল্লেখ স্বয়ং হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) করেছেন যে,আমি আপনার জন্য নিবেদিত। আমার যা কিছু রয়েছে তা আমার নয় আপনার। হযরত পীর ও মুর্শিদ! আমি পরম বিনয়ের সাথে নিবেদন করছি, আমার সমস্ত অর্থসম্পদ যদি ধর্মের প্রচারে ব্যয় হয়ে যায় তাহলে আমি (মনে করব, আমি আমার) লক্ষ্যে পৌঁছে গেছি। আবার তিনি (রা.) লিখেন, আপনার সাথে আমার সম্পর্ক (উমর) ফারুকের ন্যায় এবং (নিজের) সবকিছু এই পথে উৎসর্গ করার জন্য প্রস্তুত আছি। দোয়া করুন আমার মৃত্যু যেন সিদ্দীকদের মৃত্যু হয়।অনুরূপভাবে হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর অসংখ্য সাহাবী ছিলেন যারা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী কুরবানী করেছেন এবং এমন এমন কুরবানী করেছেন যে, হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) বলেন, আমি তাদের কুরবানী দেখে বিস্মিত হয়ে যাই। এসব কুরবানী তারা কেন করেছেন? এর কারণ হলো, হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর মিশন, যা ইসলাম প্রচারের মিশন,তাতে যেন তারা তাঁর সাহায্যকারী হতে পারেন। এজন্যসৃষ্টির প্রতি সহানুভূতির বেদনা অনুভব করে তাদেরকেও মহানবী (সা.)-এর নিবেদীতপ্রাণ দাসের জামা’তে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কুরবানী উপস্থাপন করতে পারেন আর হেদায়েতের পূর্ণতার ক্ষেত্রে নিজেদের ভূমিকা রাখতে পারেন।কুরবানীর এই চেতনা জামা’তের সদস্যদের মাঝে এমনভাবেসঞ্চারিত হয়েছে যে, হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর পর প্রতিষ্ঠিত খিলাফত ব্যবস্থাপনাতেও আল্লাহ্তা’লা প্রত্যেক যুগে (এমন) কুরবানীকারীদের দান করে আসছেন। যারা কুরবানী করে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থকেঅগ্রাহ্য করে আরোঅধিক কুরবানী করার চেষ্টা করছেন। তাদের মাঝে পুরানো আহমদীরাও রয়েছেন এবং নবদীক্ষিত আহমদীরাও রয়েছেন, যাদের কুরবানীর কিছু দৃষ্টান্তও (এখন)আমি উপস্থাপন করব। যাহোক আজকের খুতবা, অর্থাৎ জানুয়ারি মাসের প্রথম খুতবাটি সাধারণত ওয়াকফে জাদীদের নতুন বছর ঘোষণার ব্যাপারে হয়ে থাকে। হযরত মুসলেহ্ মওউদ (রা.) ১৯৫৭ সালে এই তাহরীকের সূচনা করেছিলেন। যা গ্রামাঞ্চলে তরবিয়ত ও তবলীগের জন্য তিনি আরম্ভ করেছিলেন। যা প্রথমে শুধুমাত্র পাকিস্তান পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তীতে চতুর্থ খিলাফতের যুগে এটিকে বিস্তৃতি দিয়ে সকল দেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়াএই চাঁদার অর্থ, অর্থাৎ উন্নত দেশগুলোর অর্থ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে তরবিয়ত ও তবলীগের উদ্দেশ্যে খরচ করার নির্দেশ হযরত খলীফাতুল মসীহ রাবে (রাহে.) দিয়েছিলেন। আর সাধারণভাবে এই ধারাই এখনও অব্যাহত আছে। এই চাঁদার অর্থ আফ্রিকায় এবং অন্যান্য দরিদ্র দেশে ব্যয় করা হয়। আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় জামা’তের সদস্যরা এতে ব্যাপকহারে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু এমন নয় যে, আফ্রিকা এবং অন্যান্য উন্নত অথবা উন্নয়নশীল দেশের আহমদীরা এতে অংশ নেয় না। তাদের কুরবানীও তাদের আয় এবং অবস্থা অনুযায়ী প্রশংসনীয়। কিন্তু তাদের অতিরিক্ত ব্যয় ধনী দেশগুলোর চাঁদা থেকেই পূরণ করা হয়, অর্থাৎউন্নত দেশগুলোর চাঁদার মাধ্যমে পূর্ণ করা হয়। সকল স্থানেই এসব কুরবানীকারী এবিষয়টি খুব ভালোভাবে অনুধাবন করে যা একটি হাদীসে কুদসীতে মহানবী (সা.) বলেছেন,আল্লাহ্ তা’লা বলেন, হে আদমেরসন্তান! তুমি নিজের ধনসম্পদ আমার নিকট জমা করে নিশ্চিন্ত হয়ে যাও। আগুন লাগারও কোনো ভয় নেই, পানিতে ডুবে যাওয়ারও কোনো আশঙ্কা নেই এবং কোনো চোরের চুরি করারও ভয় নেই। আমার কাছে গচ্ছিত সম্পদের পুরোটাই আমি তোমাকে ফেরত দিব সেদিন যখন তুমি এর সবচেয়ে বেশি মুখাপেক্ষী থাকবে। অতএব আল্লাহ্ তা’লার পথে কৃত কুরবানী কেবল এই পৃথিবীতেই কল্যাণসাধন করে না, বরং মৃত্যুর পর পরকালেও কল্যাণ প্রদান করবে। আল্লাহ্ তা’লা পবিত্র কুরআনে বলেন,وَمَا تُنفِقُوا مِنْ خَيْرٍ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنتُمْ لَا تُظْلَمُونَ (সূরা আল বাকারা: ২৭৩)অর্থাৎ আর তোমরা যে ধনসম্পদই খরচ করো তা তোমাদের পুরোপুরি ফেরত দেয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি কোনো অন্যায় করা হবে না। অতএব আল্লাহ্ তা’লা যখন প্রতিশ্রুতি দেন তখন তা পূর্ণও করেন। এর দৃষ্টান্ত এই পৃথিবীতেওতিনি আমাদের দেখিয়ে দেন যাতে তুমি এ বিশ্বাসে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাও যে,পরকালেও আল্লাহ্ তা’লার পুরস্কারের ভাগিদার হবে। জাগতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো নয় যে, ব্যাবসায় অর্থলগ্নি করলে আর তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেল কিংবা সাময়িক লাভবান হলেও তা কেবল জাগতিক লাভ হলো, ভবিষ্যতের কোনো নিশ্চয়তা নেই। বরং জাগতিক কতক ব্যাবসা এমন রয়েছে যা কিছু কাল পর্যন্ত লাভজনক হলেও পরে এর পরিচালকেরাই সবকিছু আত্মসাৎ করে ফেলে আর যেসবদরিদ্রমানুষ অর্থলগ্নি করে তাদেরঅর্থ খোয়া যায়। যেমন বর্তমানে অনেক আলোচিত বিষয় হলো, (সেসব) মানুষের কয়েক বিলিয়ন ডলার খোয়া গেছে যারা বিট কয়েন কিংবা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে অর্থলগ্নি করেছিল। এগুলোর পরিচালকেরাই এ অর্থ আত্মসাৎ করেছে। সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। যাহোক, বিট কয়েন প্রভৃতির এই যে ব্যাবসা তা আমার মতে এক প্রকার জুয়াও বটে। কিন্তু যাহোক আল্লাহ্ তা’লা কীভাবে তাঁর সন্তুষ্টির খাতিরে কুরবানীকারীদের পুরস্কৃত করেন তার এক অদ্ভুত দৃশ্য/দর্শন রয়েছে! যেভাবে আমি বলেছিলাম যে, আমি কিছু দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করব। এগুলো এমন দৃষ্টান্ত যেখানে কুরবানীকারীরা জাগতিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি তাদের ঈমানও সমৃদ্ধ হয়। উদাহরণস্বরূপলাইবেরিয়ার একটি উদাহরণ রয়েছে। বোমি কাউন্টি নামক এক স্থানের মোয়ল্লেম সাহেব বলেন, ওয়াকফে জাদীদের চাঁদা সংগ্রহের জন্য আমি ফোম্বায় যাই, সেখানে নবদীক্ষিত আহমদীদেরএকটি জামা’ত রয়েছে। স্থানীয় ইমাম সাহেবের সাথে সাক্ষাতের পর একটি সম্মিলিত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যেখানে গ্রামের অধিকাংশ সদস্যই উপস্থিত হয়। জামা’তের সদস্যদের ওয়াকফে জাদীদের গুরুত্ব ও কল্যাণ সম্পর্কে বুঝানো হয়। অনুষ্ঠানের পর ব্যক্তিগত পর্যায়ে সদস্যদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা আদায় করা হয়। সেই সময় এক যুবক আহমদীর বাড়িতে যাই। তার ঘরে কিছুই ছিল না। তার মা ক্ষমা চেয়ে বলেন, এই মুহূর্তে চাঁদা দেয়ার মতো কোনো অর্থ নেই, পরবর্তীতে কোনো এক সময় দিয়ে দিব। তিনি বলেন, আমরা ফিরে আসি। কিছুক্ষণ পর সেই যুবক দৌড়াতে দৌড়াতে আসে এবং বলে, এই ২শ ৫০ লাইবেরিয়ান ডলার আছে যা আমার পিতা স্কুলের ফিস বাবদ দিয়েছিলেন, এটি আমি চাঁদা হিসাবে দিয়ে দিচ্ছি যাতে আমাদের বাড়ি এই তাহরীক থেকে বঞ্চিত না থাকে। তিনি বলেন, কিছুদিন পর সেই যুবক আমার সেন্টারে এসে বলে, আপনার চলে যাওয়ার দুদিন পরই আমি সংবাদ পাই যে, আমার কোনো এক আত্মীয় আমার স্কুলের ব্যয় নির্বাহের জন্য২৫শ লাইবেরিয়ান ডলার পাঠিয়েছেন। অতএব তা দিয়ে আমি আমার স্কুলের ফিসও প্রদান করি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসও ক্রয় করি। সে বলে, আল্লাহ্ তা’লা তো আমাকে আমার কুরবানীর চেয়ে দশগুণ বৃদ্ধি করে ফেরত দিয়েছেন। এভাবে আল্লাহ্ তা’লা হৃদয়গুলোতে ঈমান ও একীন সৃষ্টি করেন। আল্লাহ্ তা’লা যখন এ জগতেও কল্যাণমণ্ডিত করছেন তখন পরকালের যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে তা আল্লাহ্ তা’লা পূর্ণ করবেন ইনশাআল্লাহ্, যেখানে এসব হিসাব জমা হচ্ছে।এরপর গিনি কোনাকোরির একটি উদাহরণ রয়েছে। সেখানকার একটি আঞ্চলিক জামা’তের নাম ‘মানসায়া’। সেখানকার মিশনারী বলেন, আমরা ‘ওয়াকফে জাদীদ’-এর দশক উদ্যাপন করছিলাম। জামা’তের বন্ধুদের মসজিদে এবং ব্যক্তিগতভাবেও ‘ওয়াকফে জাদীদ’-এর চাঁদার গুরুত্ব ও কল্যাণের বিষয়ে অবগত করে এই কল্যাণময় তাহরীকে অন্তর্ভুক্ত হবার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করছিলাম। তখন গ্রামের মসজিদের ইমাম আবু বকর কামারা সাহেব যিনি সদ্য আহমদী হয়েছেন তিনি বলেন, আমিইপ্রথমে চাঁদা দিব, কেননা আমাদেরকে অন্যদের জন্য আদর্শ হতে হবে।এ অবস্থাও রয়েছে। এমনটি নয় যে, নিজে তো তাহরীকে অংশগ্রহণ করে না অথচ অন্যদেরকে (এতে অংশ নিতে) বলে। বরং তিনি বলেন, প্রথমে আমাদের অংশগ্রহণ করা উচিত, তাই তিনি তার পকেটে থাকা১০ হাজার গিনি ফ্রাঙ্ক চাঁদা হিসেবে প্রদান করেন। পরবর্তীতে তিনি সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে এসে বলেন, সেই চাঁদা তো আমি দিয়েই দিয়েছিলাম কিন্তু কিছুক্ষণ পরই আমার এক বন্ধু আমাকে ১৫ লক্ষ গিনি ফ্রাঙ্ক উপঢৌকনসরূপ প্রেরণ করেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি, আমার উক্ত কুরবানীর ফলেই আল্লাহ্ তা’লা আমাকে এই অর্থ দান করেছেন। তিনি বলেন, আমি পূর্বের তুলনায় আরো বেশি এবং নিয়মিত চাঁদায় অংশগ্রহণ করব। অতএব নবদীক্ষিত আহমদীদের সাথে এই হলো আল্লাহ্ তা’লার আচরণ, অর্থাৎ আমার পথে ব্যয় করলে এখানেও পুরস্কৃত করব আর ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতিও ইনশাআল্লাহ্ পূর্ণ হবে।এরপর রয়েছে ক্যামেরুন। সেখানকারমোয়ল্লেম সাহেব লিখেন, এক আহমদী যুবক আমার সাথে তাহরীকে জাদীদের চাঁদা সংগ্রহের উদ্দেশ্যে গ্রামে গ্রামে যেতে থাকে। বেকার ছিল তাই সে নিজে ‘তাহরীকে জাদীদ’-এর খাতে কেবল এক হাজার সিফা চাঁদা দেয় আর বলে, আমার জন্য দোয়া করুন, আমার চাকরি হলে আমি আরো (চাঁদা) দিব। মোয়ল্লেম সাহেব বলেন, ঠিক আছে, আমি দোয়া করছি কিন্তু তুমিও তোমার চাকরির জন্য দোয়া করো। কিছুকাল পর আল্লাহ্ তা’লা তার দোয়া কবুল করেন। এক মাস পর সেটঘঙ-এর একটি প্রতিষ্ঠানে গাড়ি চালক হিসেবেকাজ পেয়ে যান। ফলে সে ওয়াকফে জাদীদ খাতে ১০ হাজার সিফা চাঁদা হিসেবে প্রদান করেন। (আর সে বলে,) আমি কষ্টের সময় যা দিয়েছিলাম তার প্রতিদানে আল্লাহ্ তা’লা আমার আয় বৃদ্ধি করেছেন।তানজানিয়ার আমীর সাহেব লিখেন, এক জামা’তের একজন মহিলা বলেন, একদিন তিনি ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়ের উদ্দেশ্যে বাজারে যাচ্ছিলেন।পথিমধ্যে মোয়ল্লেম সাহেবের সাথে সাক্ষাত হয়। তিনি ওয়াকফে জাদীদের চাঁদার বিষয়ে অবগত করে চাঁদা প্রদানের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, আমি তাঁকে বলি, আমার কাছে কেবল ২ হাজার সিলিং আছে আর বাজার থেকে আমি দ্রব্যসামগ্রী কিনতে যাচ্ছি। অতএব এক হাজার সিলিং চাঁদা হিসেবে প্রদান করছি আর অবশিষ্ট এক হাজার সিলিং দিয়ে আমি জিনিসপত্র কিনে নিব। তিনি বলেন, এক মহিলা আমাকে পিছন দিক থেকে ডাক দেন যিনি কিছুদিন পূর্বে আমার কাছ থেকে ৫ হাজার সিলিং ঋণ নিয়েছিলেন আর এক সুদীর্ঘকাল অতিবাহিত হয়ে গিয়েছিল, তাই আমি তা ফেরত পাওয়ার আশাও ছেড়ে দিয়েছিলাম। সেই মহিলা আমাকেডাক দিয়ে সেই ৫ হাজার সিলিং দেয়ার পর বলে, এই নাও তোমার পাওনা যা আমার ফেরত দেয়ার ছিল। এই মহিলা পুনরায় মোয়ল্লেম সাহেবের কাছে ফিরে এসে বলেন, এ অর্থ তো চাঁদার বরকতে আল্লাহ্ তা’লা আমাকে (ফেরত) দিয়েছেন। অতএব তিনি আরো এক হাজার সিলিং চাঁদা হিসেবে প্রদান করেন। লাইবেরিয়ার মোয়ল্লেম সাহেব বর্ণনা করেন, সেখানের একটি জামা’তের নাম গান্টা। সেখানকার এক সদস্যা আয়েশা সাহেবা, আমরা তার বাড়ি যাই এবং ওয়াকফে জাদীদের তাহরীকে অংশগ্রহণের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করি। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমার কাছে দেয়ার মত কিছুই নেই কিন্তু আপনারা একটু অপেক্ষা করুন, আমি কোনো ব্যবস্থা করছি যেন আপনরা আমার বাড়ি থেকে শূণ্য হাতে ফিরে না যান। (এ চিন্তাও ছিল যে, কেউ যেন শূণ্যহাতে ফিরে না যান)। অতএব তিনি দ্রুত কারো কাছ থেকে ঋণ নিয়ে এক শত লাইবেরিয়ান ডলার চাঁদা হিসেবে প্রদান করেন। মোয়ল্লেম সাহেব বলেন, আমি তখনও তাঁর বাড়িতেই ছিলাম এমন সময় সেই মহিলার ফোনে ক্ষুদে বার্তা আসে যে,কেউ একজন তাঁর একাউন্টে কিছু অর্থ অনলাইন ট্রান্সফার করেছে। সেই মহিলা বলেন, এখনই আমি যে লাইবেরিয়ান এক শত ডলার চাঁদা দিয়েছিলাম এর বিনিময়ে আল্লাহ্ তা’লা আমাকে তাৎক্ষণিকভাবেপুরস্কৃত করেছেন।এরপর গিনি কোনাকোরি মোবাল্লেগ লিখেন, জামা’তের এক সদস্যের নাম সৈয়দ ওবা সাহেব। তিনি বেকার ছিলেন। মাইনিং কোম্পানিতে তিনি চাকুরির জন্য আবেদন করে রেখেছিলেন কিন্তু কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছিল না। ওয়াকফে জাদীদের দশক পালনেরসময় তাঁকে যখন ওয়াকফে জাদীদের চাঁদা প্রদানের বিষয়ে স্মরণ করানো হয় তখন তিনি বলেন, আমি তো বেকার মানুষ, বেশি অর্থ দেয়ার সাধ্য নেই। যাহোক পকেটে হাত দিয়েতিনি ৫ হাজার গিনি ফ্রাঙ্ক বের করে চাঁদা হিসেবে প্রদান করেন। (আর বলেন,) আমার কাছে সর্বসাকুল্যে এই পরিমান অর্থই আছে। (মোবাল্লেগ সাহেব) বলেন, চাঁদা প্রদানের পাঁচ দিন পর আরেকটি মাইলিং কোম্পানির পক্ষ থেকে তাঁকে চাকুরির প্রস্তাব দেয়া হয় যেখানে তিনি আবেদনও করেন নি আর আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় মাসিক ৫ লক্ষ ফ্রাঙ্ক বেতনে তিনি চাকুরি পান। তিনি নিজে বলেন, আল্লাহ্র পথে আমি যে যৎসামান্য কুরবানী করেছিলাম, আল্লাহ্ তা’লা স্বীয় প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কয়েকগুণ বাড়িয়ে তা ফেরত দিয়েছেন।অতঃপর নাইজেরিয়ার মোবাল্লেগ লিখেন, কানু প্রদেশের একজন আহমদী বন্ধুর নাম নাসের সাহেব। (মোবাল্লেগ সাহেব বর্ণনা করেন) তিনি বলেছেন, আমি তিন বছর যাবৎ চাকুরীহীন অবস্থায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলাম। আমার মনে হলো, আমি কেন নিজ সাধ্যানুযায়ী পুরনরায় চাঁদা দেয়া শুরু করছি না?[চাকুরি ছিল না তাই চাঁদা দেয়াও বন্ধ রেখেছিলেন। (সে মনে মনে বলে,) আমার যতটুকু সাধ্য আছে তা থেকেই চাঁদা দেয়া শুরু করি]। মুরব্বী সাহেবকে তিনি বলেন, গত বছর জুন মাস থেকে চাঁদা দেয়া শুরু করি। তিনি বলেন, তিন মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পূর্বেই আমার সাথে এক বন্ধু যোগাযোগ করে বলেন, এক কোম্পানির মার্কেটিং-এর জন্য একজন লোক প্রয়োজন। এভাবে সেই কোম্পানি আমাকে কাজে নিয়ে নেয় আর এটিই ছিল এ কোম্পানির এধরনের প্রথম চুক্তি। তিনি বলেন, ফলে আমার নিশ্চিত বিশ্বাস জন্মায় যে, এতদিন পর আমি যে চাকুরি পেয়েছি অথবা আমার যে কর্মসংস্থান হয়েছে তা সেই চাঁদার কল্যাণেই হয়েছে।এরপর মধ্য আফ্রিকার মোবাল্লেগ সাহেব লিখেন, একজন নবদীক্ষিত আহমদীর নাম জিব্রিল সাহেব। তিনি বলেন, গত বছর আমি জামা’তে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর থেকেই আমার আধ্যাত্মিক ও নৈতিক অবস্থায় পরিবর্তন আসা শুরু হয়। [এটিও প্রণিধানযোগ্য বিষয় যে, কেবল জামা’তে অন্তর্ভুক্তই হন নি বরং দোয়াও করে থাকবেন, নিজ অবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টাও করে থাকবেন, ফলে তাঁর প্রতি আল্লাহ্ তা’লার কৃপাও হয়েছে আর তাই তিনি নিজেই অনুভব করেছেন যে, আমার আধ্যাত্মিক আর নৈতিক অবস্থায় পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে]। তিনি বলেন, এরপর একদিন মোবাল্লেগ সাহেব যখন ওয়াকফে জাদীদের চাঁদার তাহরীক করে বলেন, বছর শেষ হতে যাচ্ছে, স্বল্প হলেও চাঁদা দিন। তখন আমি চাঁদার রশিদ কাটাই আর সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত আমার কাজে অনেক বরকত হয়েছে, আল্লাহ্ তা’লার বিশেষ কৃপা লাভ হয়েছে। এখন আমি কাজ ছাড়া থাকি না। পূর্বে কয়েকদিন পর্যন্ত কোনো ক্রেতা আসতো না, এখন দৈনিক আসে আর আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় এত ভালো অর্থোপার্জন করি যা পূর্বে আমি কল্পনাও করতে পারতাম না।এরপর টোগো থেকে মোবাল্লেগ আরেফ সাহেব লিখেন, কারা অঞ্চলেআবা কাজী সাহেব নামের একজন ভদ্রলোক রয়েছেন। তিনি বলেন, আমার আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না অথচ ওয়াকফে জাদীদের (চাঁদা পরিশোধের) শেষ মাস চলছিল। চিন্তায় ছিলাম অঙ্গীকারকৃত চাঁদা কীভাবে পরিশোধ করব। পরে আমার মাথায় একটি চিন্তা এলো, বাড়িতে ছোট একটি ছাগল আছে যেটিকে আমি অন্য একটি উদ্দেশ্যে রেখে দিয়েছি সেটি বিক্রি করে চাঁদা পরিশোধ করে দিব। [বাড়িতে একটি জিনিসই ছিল এছাড়া আর কিছুই ছিল না সেটি বিক্রি করেই চাঁদা পরিশোধ করে দেই।] তিনি বলেন, আমি সবে নিয়্যত করেছিলাম এরই মধ্যে একদিন মিশনারী সাহেব চাঁদা নেয়ার জন্য আসেন। সে দিনই এক ব্যক্তি ঋণেরটাকা ফেরতদিতেআসে যেআমার কাছ থেকে ঋণ নিয়ে রেখেছিল আরযা ফেরত পাওয়ার কোনো আশা ছিল না। তিনি বলেন, ফলে সেই পুরো অর্থ আমি ওয়াকফে জাদীদের চাঁদা হিসেবে দিয়ে দেই। এভাবে আল্লাহ্ তা’লা আমাকে অদৃশ্য থেকে সাহায্য করেন। নেকী করার ইচ্ছা করেছে কিন্তু তা বাস্তবায়নের পূর্বেই আল্লাহ্ তা’লা ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। প্রিয় জিনিস উৎসর্গ করার চিন্তা করেছে কিন্তু তা (করার) পূর্বেই আল্লাহ্ তা’লা পুরস্কৃত করেছেন। কেননা হৃদয়ের অবস্থা সম্পর্কে তিনি খুব ভালোভাবে জানেন।মার্শাল আইল্যান্ডের সাজেদ ইকবাল সাহেব বলেন, এখানে আরেকজন মহিলা রয়েছেন (তার নাম) লোরিন সাহেবা তিনি বলেন, আর্থিক কুরাবানীর ফলেআল্লাহ্ তা’লা আমার এবং আমার পরিবারের প্রতি অনেক কৃপা করেছেন। পূর্বে তিনি আর্থিক কুরবানীতে অংশগ্রহণ করতেন না, কেননা কুরবানী করার ফলে আল্লাহ্ তা’লা যে কত বেশি বরকত দান করেন তা তিনি বিশ্বাস করতেন না। এছাড়া তখন তার আর্থিক সঙ্কটও ছিল। ভোজ্যপণ্য ক্রয় করার মতো অর্থও তার কাছে থাকত না আর পরিবারের ব্যয়ভার নির্বাহ করতেও হিমশিম খেতে হতো। কিন্তু মসজিদে আর্থিক কুরবানীর কল্যাণ সম্পর্কে খুতবা শোনার পর তিনি চিন্তা করেন (আর্থিক) কুরবানীতে অংশগ্রহণ করা উচিত। কাজেই তিনি বলেন, আমি (আর্থিক) কুরবানী করতে এবং চাঁদা দিতে আরম্ভ করি। এখন আল্লাহ্ তা’লার এত কৃপা হয়েছে যে, পরিবারের ব্যয়ভারও নির্বাহ হয়ে যায় আর পানাহারেও কোনো কষ্ট হয় না। অনেকবার এমন হয় যে, এমন এমন স্থান থেকে আমাদের কাছে অর্থ এসে যায় যা আমাদের কল্পনাতেও থাকে না আর আমরা যতই দেই আল্লাহ্ তা’লাও ততই বৃদ্ধি করতে থাকেন। এসব নবদীক্ষিত আহমদীর সাথেও আল্লাহ্ তা’লা তাদের ঈমান দৃঢ় করার জন্য এরূপ আচরণ করে থাকেন।ভারত থেকে ওয়াকফে জাদীদ ইন্সপেক্টর সাহেব বলেন, তিনি তামিলনাডুর মেলা পালন জামা’তের বাজেট ও চাঁদা সংগ্রহের জন্য যান, সেখানে একজন নিষ্ঠাবান আহমদীর সাথে সাক্ষাৎ হয়। তিনি বলেন, আমি ২০১৪ সনে বয়আত করেছিলাম আর এভাবে জামা’তে আহমদীয়ার সদস্য হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছিলাম। এই নবদীক্ষত সদস্য, এখন তো আর নবদীক্ষিত নন, যাহোক তিনি বলেন, আমি যখন বয়আত করেছিলাম তখন আমি আমার ওয়াকফে জাদীদ খাতে ৪ হাজার রুপী চাঁদা প্রদানের অঙ্গীকার করে তা পরিশোধ করি। কেননা তখন আমার এতটুকুই সামার্থ্য ছিল আর এরপর আমি আমার সামর্থ্য অনুসারে প্রতি বছর (এর পরিমান) বৃদ্ধি করতে থাকি আর এর ফলে আল্লাহ্ তা’লাও ব্যবসাবাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দান করতে থাকেন। এর কিছুদিন পর বাড়ির অন্য সদস্যরাও বয়আত করে নেয়। তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় আজ আমার ওয়াকফে জাদীদ খাতে চাঁদার পরিমান ৫ লক্ষ রুপী হয়েছে। গত বছর রমযান মাসে তিনি তার পুরো ৫ লক্ষ রুপী চাঁদা পরিশোধ করে দেন। তিনি বলেন, লক ডাউন সত্তে¡ও আমার চাঁদার কল্যাণে ব্যবসাবাণিজ্যে কোনো ক্ষতি হয় নি, বরং (আয়) আরো বৃদ্ধি পেতে থেকেছে। আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় ব্যবসাবাণিজ্যের পরিধি এখন ভারতের গন্ডি পার করে থাইল্যান্ডেও ছড়িয়ে দিয়েছি। তিনি বলেন, এসবই চাঁদার কল্যাণ। এই হলো আল্লাহ্ তা’লার কৃপা। জুয়ার মত কোনো ব্যাবসা নয় বরং অর্থ লগ্নি করেছেন, পরিশ্রম করেছেন এবং আল্লাহ্ তা’লার পথে ব্যয় করেছেন, ফলে আল্লাহ্ তা’লাও অনেক গুণে বৃদ্ধিকরে(ফেরত) দিয়েছেন।এরপর ভারতের আরেকটি উদাহরণ রয়েছে। সেখানকার, অর্থাৎ কেরেলার মালামপুরের মোবাল্লেগ ইনচার্জ লিখেন, নাযেম মাল সাহেব, অর্থাৎ ওয়াকফে জাদীদের ইন্সপেক্টর সাহেব অর্থ বছরের সমাপ্তির বিষয়টি দৃষ্টিপটে রেখে জামা’তী সফরে ছিলেন। আমাদের অঞ্চলেও তিনি আসেন তখন রহমান সাহেব নামের এক নিষ্ঠবান আহমদী, তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী তার ফোন আসে যে, আমার কোম্পানিতে চলে আসুন। নিজের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিতে আমি একটি নতুন অংশ বানিয়েছি, সেখানে (আপনাকে দিয়ে) দোয়া করাব। আমরা সেখানে যাওয়ার পর কোনো কথা বলার পূর্বেই তিনি ১০ লক্ষ টাকার একটি চেক দেন। একই সাথেতিনি তার বড় গাড়িটি(আমাদের) এই সফরের জন্য পেট্রোল ভরিয়েদিয়ে দেন। তিনি (ইন্সপেক্টর সাহবে) বলেন, ছোট গাড়ি হলেই আমাদের চলবে। জবাবে তিনি বলেন, না, কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের জন্য ভালো নির্ভরযোগ্য গাড়ি থাকা আবশ্যক যেন আপনি স্বাচ্ছন্দ্যে সফর করতে পারেন। তিনি বলেন, এ অর্থ আমি আমার একটি সম্পত্তি রেজিস্ট্রির জন্য রেখেছিলাম কিন্তু আপনি আসার কারণে ওয়াকফে জাদীদ খাতে দিয়ে দিয়েছি এবং রেজিস্ট্রির তারিখ পিছিয়ে দিয়েছি। সেই ব্যক্তি বলেন, কয়েক দিন পর কোনো চেষ্টা ছাড়াই একটি বড় অঙ্কের অর্থ তিনি লাভ করেছেন যা তার প্রয়োজনের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি ছিল, অর্থাৎ ১০ লক্ষেরও অনেক বেশি অর্থ ছিল।মরিশাস থেকে এক ভদ্রমহিলা মিস শাবরীয সাহেবা বলেন, জন্মদিনের উপঢৌকন হিসেবে পিতামাতার পক্ষ থেকে আমি (কিছু) অর্থ পাই, (সেখান থেকে) ওয়াকফে জাদীদ ও তাহ্রীকে জাদীদ খাতে আমি ৫শ করে (চাঁদা) দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই, যা আমি একটি খামে ভরে রেখেছিলাম। তখন আমি অসুস্থ ছিলাম। এ অবস্থায় আমার এক চাচা এবং এক কাজিন আমাকে দেখতে আসেন আর তারা দুজনেই আমাকে খাম দেন। প্রত্যেক (খামে) ৫ হাজার করে (মরিশাস রুপী) ছিল। এটি দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে যাই যে, আল্লাহ্ তা’লা আমাকে তা থেকে দশ গুণ বেশি পুরস্কার দিয়েছেন।আবার জর্জিয়া জামা’তের প্রেসিডেন্ট সাহেব বলেন, (আমাদের) এক সদস্য মুহাম্মদ আবু হাম্মাদ সাহেব। তিনি ফিলিস্তিনের অধিবাসী। জর্জিয়ায় তিনি মেডিক্যালের ছাত্র হিসেবে পড়াশোনা করছেন। তিন বছর পূর্বে তিনি বয়আত করেছিলেন। আল্লাহ্র রাস্তায় এভাবে ব্যয় করা উচিত এই প্রতিপাদ্যের ওপর ওয়াকফে জাদীদ দশক উপলক্ষ্যে জামা’ত একটি সেমিনারের আয়োজন করে। তিনি বলেন, তখন (তিনি একজন ছাত্র) আমার কাছে প্রায় ৩শ ডলার ছিল, তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, অর্ধেকটা ওয়াকফে জাদীদ খাতে দিয়ে দিব। কেননা এই আয়াতটি আমার মনে পড়ছিল যে, ক্বাদ আফলাহা মান যাক্কাহা, অর্থাৎ যে পবিত্র হয়েছে নিশ্চয়ই সে সফলকাম হয়ে গেছে। অতএব চাঁদা পরিশোধ ও সাধারণ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচের পর মাস শেষে আমার ব্যাংক একাউন্টে কেবল ২ ডলার ছিল। ডিসেম্বরের শেষ দিকে আমার এক আত্মীয় জর্জিয়া আসার কথা ছিল। তাই আমি এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিলাম যে, আমি কীভাবে তার আতিথেয়তা করব? কিন্তু যে দিন অতিথি আসেন সেদিনই আল্লাহ্ তা’লা তাঁর বিশেষ কৃপায় কোনোভাবে ব্যাংক একাউন্টে এক হাজার ডলার ট্রান্সফার করিয়ে দেন। তিনি বলেন, এজন্য সর্বদাই আমি আল্লাহ্ তা’লার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি এবং একেও চাঁদার কল্যাণ মনে করি। এসব বিষয় আসলে চিন্তার ওপর নির্ভর করে। বস্তুবাদি মানুষ ভিন্ন কিছুই ভাবে কিন্তু একজন ধার্মিক মানুষ মনে করে, তাঁর পথে খরচ করার কারণে আল্লাহ্র ফযল হচ্ছে।কেনিয়ার মোয়াল্লেম সাহেব লিখেন, তার জামা’তের একজন নবদীক্ষিত ভদ্রমহিলা খাদিজা সাহেবা, তিনি নার্সারি স্কুলের শিক্ষিকা। বছরের প্রথমেই তিনি ওয়াকফে জাদীদ খাতে চাঁদা প্রদানের অঙ্গীকার ৫শ শিলং লিখিয়ে তা পরিশোধও করে দেন। তিনিবলেন, আমি তার রশিদ দেয়ার জন্য স্কুলে যাই। এর পরের দিন তিনি আমার বাড়ি এসে আমার স্ত্রীকে বলেন, আমি আরো ৫শ শিলং চাঁদা দিতে চাই। তিনি বলেন, (এর কারণ) যাতে মোট চাঁদা প্রদানের পরিমান এক হাজার শিলং হয়ে যায়। অর্থাৎ তিনি বলেন, আমি এ চিন্তা করে (এটি) করছি যেন আল্লাহ্ তা’লা আমাকে অধিক বরকত দান করেন। বাড়ি ফেরার পর আমার স্ত্রীর কথা শুনে রশিদ কেটে আমি তাকে তা দিতে গেলে তিনি বলেন, আমার এক পুত্র কলেজে পড়ে, তার পড়াশোনার ব্যয় নির্বাহের জন্য আমি আবেদন করেছিলাম অথচ তা মঞ্জুর হচ্ছিল না কিন্তু আজই আমার কাছে কলেজ থেকে ফোন এসেছে, তার পড়াশোনার খরচ বাবদ ৩০ হাজার শিলিং সরকারের পক্ষ থেকে স্কুলের একাউন্টে জমা হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমি খুব শান্তি পেয়েছি।ইন্দোনেশিয়ার আমীর সাহেব লিখেন, আব্দুর রহীম নামের এক ব্যক্তি যিনি ছোট একটি জামা’তের সদস্য তিনি বলেন, প্রত্যেক বছরই আমি ওয়াকফে জাদীদের চাঁদা দিয়ে থাকি। ২০১৯ ও ২০ সাল আমার জন্য খুব কঠিন বছর ছিল, কেননা এই বছরগুলোতে আমার কোনো চাকরি ছিল না। তিনি বলেন, কিছু দিন পূর্বে আমি আমার চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যাবসা করার চেষ্টা করি। এতেও সফলতা পাই নি। পুঁজির টাকা ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যায়। তখন ওয়াকফে জাদীদের বছর শেষ হতে চলেছিল। আমি চাঁদা দেয়ার অঙ্গীকার করে রেখেছিলাম, কিন্তু তা পরিশোধের কোনো ব্যবস্থা হচ্ছিল না। চাকরি পাওয়াও দুষ্কর ছিল, কেননা আমি বয়স ৫১ বছর, এই বয়সে খুব কষ্টেই চাকরি পাওয়া যায়। তিনি বলেন, প্রতিদিন তাহাজ্জুদের নামাযে আমি দোয়া করতাম [আর এখানে আমাকেও তিনি চিঠি লিখতেন যে, আমাকে ওয়াকফে জাদীদের চাঁদা পরিশোধ করতে হবে আমি যেন এর তৌফিক লাভ করি।] তিনি বলেন, ফলে ওয়াকফে জাদীদের বছর শেষ হওয়ার পূর্বেই আল্লাহ্ তা’লা আমাকে কোনো না কোনোভাবে আমার ওয়াদা অনুযায়ী চাঁদা প্রদানের সামর্থ্য দান করেন। যাহোক আমি কোনোভাবে তা পরিশোধ করে দেই। তিনি বলেন, চাঁদা পরিশোধ করার কয়েকদিন পর আমি যেখানে চাকরি করতাম সেখানকার এক অফিসার আমাকে ফোন করে বলেন, আমাকে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হয়েছে। আল্লাহ্ তা’লার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি, কেননা আমি চাকরি পেয়ে গেছি। আমি বিস্মিত ছিলাম, কেননা যে ব্যক্তি আমাকে ডেকেছিলেন তিনি সরাসরি আমার সুপারভাইযার ছিলেন না। আমার বন্ধুও এ উৎকণ্ঠায় ছিল যে, আমাকেই কেন ডাকা হলো? কেননা আমি প্রায় ৭ বছর পূর্বে সেখান থেকে পদত্যাগ করেছিলাম। তিনি বলেন, এটিও আল্লাহ্ তা’লার অনুগ্রহ, কেননা এই বয়সে আমার স্থায়ী উপার্জনের পথ খুলে গেছে। সেনেগালের একটি স্থানের নাম তাম্বাকুন্ডা, সেখানকার মোবাল্লেগ সাহেব বলেন, আমার জামা’তী সফরের সময় এক স্থানে যখন চাঁদা দেয়ার আহ্বান করা হয় আর গত বছরের খুতবায় আমি যেসব মানুষের ঘটনা শুনিয়েছিলাম সেগুলো সেখানে শুনানো হয় তখন একজন আহমদী উসমান সাহেব বলেন, তিনি যখন বয়আত করেন তখন তার আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয় ছিল আর বয়আতের পর আপন-পর সবাই বিরোধী হয়ে যায়। বিরোধীরা চারবার তার ঘর জ্বলানোর চেষ্টা করেছে। প্রতিবারই ঘরের একাংশ জ্বলে যেত। তিনি বলেন, কিন্তু জামা’তী চাঁদায় অংশ নেয়ার পর থেকে তার অবস্থা পাল্টে যায়। তিনি বলেন, বিভিন্ন চাঁদার কল্যাণে এখন তিনি পাকা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। পূর্বে তো খর বা ছন দিয়ে বাড়ি তৈরী করতেন যা পুড়ে যেত, কিন্তু (এখন পাকা বাড়ি) নির্মাণ করে নিয়েছেন। ছেলেমেয়েরাও শহরে ভালোভাবে পড়াশোনা করছে। প্রতি বছরই তিনি অন্যান্য চাঁদার পাশাপাশি ওয়াকফে জাদীদের চাঁদাও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করে প্রদান করেন। তিনি বলেন, যারা আমার বিরোধী ছিল তাদের সবাই হয়তো মারা গেছে আর কেউ কেউ বেঁচে থাকেও খুবই শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে।তানজানিয়ার আমীর সাহেব একজন কৃষকের ঘটনা লিখেছেন। তার টমেটোর ক্ষেত রয়েছে। এই টমেটো ক্ষেতে ভিক্টোরিয়া লেক থেকে পানি উঠিয়ে সেচ দেয়া হয়। এ কাজের জন্য মেশিন, অর্থাৎ পাম্প ভাড়া করতে হয়। তিনি বলেন, এ বছর বৃষ্টি কম হয়েছে আর ক্ষেতের অবস্থাও খুব খারাপ হয়ে গেছে। আশপাশের ক্ষেতের মালিকরা যারা তাদের ক্ষেতে সেচ দিয়েছিল তারা তাকে নিয়ে উপহাস করে বলছিল, তোমার ফসলের এ কী অবস্থা! যাহোক তিনি বলেন, মোয়াল্লেম সাহেব আমাকে চাঁদার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তখন আমার কাছে যে এক হাজার শিলিং ছিল তা আমি চাঁদা হিসেবে দিয়ে দেই আর মোয়াল্লেম সাহেব (আমাকে) রশিদ কেটে দেন। পরের দিন আমেলার মিটিংয়ে তিনি এসে মোয়াল্লেম সাহেবকে বলেন, আমি যে ব্যাবসা করেছিলাম তার মুনাফা আমি পেয়ে গেছি, কেননা এই মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি আমার জমিতে বর্ষিত হয়েছে আর পানিতে জমি ভরে গেছে। আল্লাহ্ তা’লা এভাবে আমাকে পুরস্কৃত করেছেন।সিয়েরালিওন থেকে মোবাল্লেগ সাহেব লিখেন, সিয়েরালিওনের এক শিক্ষক ও গবেষক এলেক্স টামু সাহেব লিখেন, তার ওসীয়্যতের চাঁদা এবং অন্যান্য কিছু চাঁদা বকেয়া পড়ে গিয়েছিল, কেননা গতবছর সরকারী কিছু সমস্যার কারণে অফিস বেতন-ভাতা প্রদানে অনেক বিলম্ব করে এবং কিছুদিনের জন্য জীবনযাপন চরম সংকটপূর্ণ হয়ে পড়ে। যাহোক, তিনি কোথাও থেকে অর্থ জোগাড় করে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা করেন এবং এই অভাব ও সংকটের সময়েও তিনি ওসীয়্যতের চাঁদা এবং অন্যান্য চাঁদাও পরিশোধ করেন। তিনি বলেন, চাঁদা প্রদানের পর প্রথমে আমাকে একটি চাউল গবেষণা প্রজেক্টে গিনি কোনাকোরির কমিটির সদস্য হিসাবে নির্বাচন করা হয়। শুধু তাই নয় একটি বড় ফার্ণিশড বাড়িও আমি পেয়ে যাই। ২০২২ এর যুক্তরাজ্যের জলসার পূর্বেই আমি ঘরে টিভি ও এমটিএ লাগানোর সৌভাগ্য পাই। এছাড়া আল্লাহ্ তা’লার সবচেয়ে বড় যে অনুগ্রহ (আমার প্রতি হয়) তা হলো, জাপানের কাগুশীমা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার জন্য স্কলারশিপের সুযোগ আসে। তিনি বলেন, আমিও আবেদন করি। ফলে অফিসের পক্ষ থেকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমাকে মনোনীত করে নেয়া হয়। তিনি বলেন, গত বছর থেকে আমি জাপানে বসে আছি। জাপানেও আল্লাহর ফযলে জামা’তের সাথে যোগাযোগ আছে এবং আল্লাহ্ এমনই কৃপা করেছেন যে, ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে আমার পরিবারকে কেবল একটি বাড়িই দেয় নি বরং সিয়েরালিওনে পরিবারের জন্য আংশিক বেতনও জারি করেছে। তিনি বলেন, যাহোক আল্লাহ তা’লা চাঁদার কল্যাণে আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন তা আমার ঈমান বৃদ্ধির কারণ হয়েছে। আহমদী বরং নবদীক্ষিত আহমদীদের মাঝেও আল্লাহ্ তা’লার খাতিরে অর্থসম্পদের প্রতি বিমুখতার দৃষ্টান্ত আমরা আরো দেখতে পাই যেমন, সিয়েরালিওনের মিওম্বা রিজিওনের মোবাল্লেগ লিখেন, খুতবার সময় ওয়াকফে জাদীদ সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় যে, একবার এক সাহাবী কুড়াল নিয়ে জঙ্গলে চলে যান আর কাঠখড়ি কেটে এনে বিক্রি করে উপার্জিত অর্থ রসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, নিকটস্ত একটি গ্রামের নাম হলো, ডোডো। সেখান থেকে আহমদীরা জুমুআর নামাযের জন্য আসে। তাদের মধ্য থেকে একদিন এক আহমদী কাশেম আহমদ সাহেব তপ্ত দুপুরে আসেন এবং বড় অংকের অর্থ উপস্থপন করে বলেন, আমার উপার্জনের সবটাই এখানে আছে যা আমি ওয়াকফে জাদীদের জন্য উপস্থাপন করছি। তাকে বলা হয়, এথেকে আপনি মাসিক খরচাদির জন্য কিছু অর্থ রেখে দিন। এতে তিনি অত্যন্ত জোশের সাথে বলেন, আপনি যেদিন সাহাবীর ঘটনা শুনিয়েছিলেন আমি সেদিনই দৃঢ় সংকল্প করে নিয়েছিলাম, এই ঘটনায় আমল করতে হবে। তাই আপনি পুরো অর্থই রেখে দিন। আল্লাহ্ তা’লা নিজেই আমাকে প্রতিদান দিবেন। এরপর তানজানিয়ার আমীর সাহেব লিখেন, শিয়ানগা রিজিওনের মোয়াল্লেম সাহেব বলেছেন, সেখানে সিম্বাচায়ি নামে একটি গ্রাম রয়েছে, নতুন একটি জায়গা যেখানে জামা’তের চারা রোপিত হয়েছে, অর্থাৎ নতুন জামা’ত প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৮জন সদস্য বয়আত করে জামা’তে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। গত মাসেই এ জামা’ত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মোয়াল্লেম সাহেব বলেন, ডিসেম্বর মাসে তিনি তার অধীনস্থ অঞ্চলের জামা’তগুলোর পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সফরে এই নতুন জামা’তেও যাওয়া হয়। এখানে বয়আতকারী অধিকাংশ সদস্য পূর্বে ধর্মহীন ছিল। ধর্মের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। এজন্য তাদের তরবিয়তের জন্য নামায ও কুরআনের প্রতি দৃষ্টি দেয়া হচ্ছে। যোহরের নামাযের পর তরবিয়তী ক্লাস হয়, উক্ত ক্লাসে মোয়াল্লেম সাহেব নামায পড়ার পদ্ধতি এবং অন্যান্য ফিকাহ্ সংক্রান্ত বিষয়াদি আলোচনা করেন। একজন বয়োজ্যেষ্ঠ আহমদী মোয়াল্লেম সাহেবের ব্যাগে রশিদ বই দেখতে পান, তাই এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেন। মোয়াল্লেম সাহেব বলেন, ওয়াকফে জাদীদ খাতে চাঁদা প্রদানের এটি শেষ মাস আর ওয়াদা অনুযায়ী চাঁদা সংগ্রহ করে আমাকে কেন্দ্রে রিপোর্ট প্রদান করতে হবে যেন খলীফাতুল মসীহ্র কাছে আমাদের রিপোর্ট পৌঁছে। যে আহমদীই এ চাঁদায় অংশগ্রহণ করে তার চাঁদা নিয়ে তাকে এই রশিদ দেয়া হয়। এতে অন্য এক আহমদী জিজ্ঞেস করেন, আমাদের চাঁদা কখন নিবেন? মোয়াল্লেম সাহেব বলেন, আমি তাদেরকে বলি, আমার ধারনা ছিল আপনাদের আর্থিক অবস্থা ভালো নয় আর নতুন নতুন আহমদী হয়েছেন তরবিয়তের প্রয়োজন রয়েছে, আগামী বছর থেকে আপনাদেরকে চাঁদায় অর্ন্তভুক্ত করা হবে। একথা শুনে সকল নও মোবাঈন বলেন, তাহলে কিএ বছর আমাদের নাম খলীফাতুল মসীহ্র কাছে যাবে না? এমনটি হতে পারে না। ফলে সেখানে উপস্থিত সকল সদস্য তাদের কাছে যা কিছু ছিল তাই (চাঁদা হিসেবে) প্রদান করেন। (মোয়াল্লেম সাহেব) যখন চলে আসছিলেন তখন তারা বলেন, মোয়াল্লেম সাহেব! আমাদের আগামী বছরের ওয়াদাও এখন (লিখে) নিয়ে যান। এরপর তারা ওয়াকফে জাদীদের নতুন বছরের ওয়াদাও লিখান। নও মুবাঈনদের মাঝেও আল্লাহ্ তা’লা এভাবে ঈমান সৃষ্টি করছেন, এভাবে তাদেরকে ঈমানে সমৃদ্ধ করছেন।গ্যাম্বিয়ার আমীর সাহেব লিখেন, নর্থ ব্যাংক-এর একটি জামা’ত দুতাবালুতে এক আহমদী বন্ধু জালু সাহেব রয়েছেন। তার পিতা আহমদী নন। তিনি গ্রামের প্রধান। অনেক বয়োঃবৃদ্ধ এবং (প্রায়শ) অসুস্থ থাকেন। এ কারণে তার স্থলে তার ছেলে যিনি একজন আহমদী, গ্রামের বিষয়াদি দেখাশুনা করেন। তিনি বলেন, একদিন এক ইসলামিক এন.জি.ও তাদের গ্রামে আসে। তাদের ভাষ্যমতে তারা মুসলমানদেরকে কেবল ১৫ হাজার ডিলাসি অর্থ সাহায্যস্বরূপ দিয়ে থাকে। তিনি বলেন, তারা আমাকে ফোন করে বলে, আমরা আপনার সম্পর্কে শুনেছি আপনি খুবই ভদ্র ও সুশীল মানুষ। আমরা আপনাকে এবং আপনার পিতাকে সাহায্যস্বরূপ ৩০ হাজার ডিলাসি দিতে চাই কিন্তু সমস্যা হলো, আপনি আহমদী। আপনি যদি জামা’ত ছেড়ে দেন তাহলে আপনি এই অর্থ পাবেন। জালু সাহেব বলেন, এটি শুনে এন.জি.ও-কে উত্তর দেই, আমার অর্থের প্রয়োজন নেই। কেননা জামা’ত আমাদের শিখিয়েছে আল্লাহ্ তা’লা তার বান্দার জন্য যথেষ্ট। এছাড়া প্রতি বছর আমি জামা’তকে ১৫ হাজার ডিলাসির অধিক চাঁদা দিয়ে থাকি। এটি শুনে তারা খুবই অবাক হয় আর বলে, এত বড় অংকে অর্থ তুমি জামা’তকে কেন দাও?অথচ তুমি নিজেই একজন দরিদ্র মানুষ? এটি শুনে সেই আহমদী বলেন, আল্লাহ্ তা’লার যে অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি আমি লাভ করছি আপনিও যদি এটি বুঝতে পারেন তাহলে আপনিও ইমাম মাহদী (আ.)-এর জামা’তভুক্ত হয়ে যাবেন। এ হলো ঈমানের অবস্থা যা আল্লাহ্ তা’লা এ সকল দূরদূরান্তে বসবাসকারী মানুষের হৃদয়ে সৃষ্টি করছেন আর মহানবী (সা.)-এর সত্যিকার দাসকে মানার পর ঈমান দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হচ্ছে। কঙ্গো কিনশাসার আমীর সাহেব লিখেন, জুমুআর খুতবায় ওয়াকফে জাদীদের চাঁদার বিষয়ে আহ্বান জানানো হয়। সে দিনই এক নিষ্ঠাবান আহমদী নুরুদ্দীন সাহেব যিনি পুলিশে চাকরি করেন, তিনি আমাদের মোয়ল্লেম সাহেবকে ফোন করে ডেকে নিয়ে বলেন, আমি বেশ কিছুদিন যাবৎ নিজের জরুরী প্রয়োজনের জন্য কিছু অর্থ জমা করছিলাম। কিন্তু আজকে জুমুআর খুতবায় মুরব্বী সাহেব ওয়াকফে জাদীদের চাঁদার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তাই এ অর্থ চাঁদা হিসেবে নিয়ে নিন। তিনি ওয়াকফে জাদীদ খাতে ২ লক্ষ ১০ হাজার ফ্রাংক চাঁদা প্রদান করেন এবং এটি তার সামর্থ্যরে নিরিখে খুবই অসাধারণ কুরবানী ছিল। এটি হলো প্রিয় সম্পদকে আল্লাহ্র রাস্তায় খরচ করার দৃষ্টান্ত।মেসোডনিয়ার মোবাল্লেগ সাহেব লিখেন, এখানে আহমদীদের প্রায় অধিকাংশই দরিদ্র। কিন্তু তবুও তারা আর্থিক কুরবানীতে অংশগ্রহণ করে থাকেন। একজন আহমদী বন্ধু ফয়সাল সাহেব, যিনি ১৯৯৫ সালে জার্মানিতে বয়আত করেছিলেন। বিভিন্ন দেশে অবস্থান করে পরবর্তীতে মেসোডনিয়া ফেরত চলে আসেন। শুরুর দিকে জামা’তের সাথে তার যোগাযোগও কম ছিল, পরবর্তীতে তার সাথে যোগাযোগ হয়।গত ঈদুল আযহার সময় তিনি দুই-তিন দিন মিশন হাউজে অবস্থান করেন। এ সময় তাকে জামা’তের আর্থিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে অবহিত করা হয়। লাযেমী বা আবশ্যিক চাঁদা ছাড়াও অন্যান্য আর্থিক কুরবানি (অর্থাৎ) তাহরীকে জাদীদ ও ওয়াক্ফে জাদীদ সম্পর্কে বলা হয়। তিনি বলেন, ১০/১২ দিন পর আমি তার সাথে দেখা করতে শহরে গেলে ফিরে আসার সময় তিনি আমার হাতে ১০ হাজার দিনার চাঁদা হিসেবে প্রদান করেন; [এমনিতে এটি সাধারণ একটি অংক, এখানকার হিসেবে প্রায় ৬৩ ইউরো হয়।] এই বন্ধু উপার্জনহীন, দীর্ঘদিন থেকে বেকার। আমি তাকে বলি, আপনি নিজে তো আপনার অবস্থা জানেন, নিজের জন্যও কিছু রাখুন, [কেননা মেসিডোনিয়ার অবস্থার নিরিখে এটি অনেক বড় অংক ছিল।] পরিবারের জন্য খরচ করুন! তিনি জোর করে এবং সানন্দে এই অর্থ নিজের ও নিজের পরিবারের পক্ষ থেকে ওয়াক্ফে জাদীদের চাঁদা হিসেবে প্রদান করেন (এবং বলেন,) তাদের ব্যবস্থা আল্লাহ্ তা’লা করবেন।যাহোক এরা হলেন সেসব মানুষ যারা কুরবানীকারী। তাদের যে সম্পদের প্রয়োজন রয়েছে তাÑই তারা আল্লাহ্ তা’লার পথে দান করেন। হযরত আকদাস মসীহ্ মওউদ (আ.) বলেন,“তোমাদের পক্ষে এটি সম্ভব নয় যে, সম্পদকেও ভালোবাসবে এবং খোদা তা’লাকেও ভালোবাসবে; কেবল একটিকেই ভালোবাসা থাকা সম্ভব। অতএব সৌভাগ্যবান সেই ব্যক্তি যে খোদাকে ভালোবাসে। আর তোমাদের কেউ যদি খোদাকে ভালোবেসে এই পথে সম্পদ ব্যয় করে তবে আমি দৃঢ় বিশ্বাস রাখি তার সম্পদে অন্যদের তুলনায় অধিক সমৃদ্ধি দেয়া হবে। কেননা সম্পদ আপনা-আপনি আসে না বরং আল্লাহ্র ইচ্ছায় আসে। কাজেই যে ব্যক্তি খোদার খাতিরে সম্পদের কিছু অংশ বিসর্জন দেয় সে অবশ্যই তা পাবে।” অতএব প্রত্যেক কুরবানীকারী আহমদী এ কথার সত্যতার সাক্ষী যে, সম্পদ আল্লাহ্ তা’লার পক্ষ থেকে আসে, তিনি (আ.) যা-ই বলেছেন তা সত্য। আল্লাহ্ তা’লা এসব কুরবানীকারীকে তাদের মান আরো উন্নত করার সামর্থ্য দিন। এছাড়া যারা অধিক স্বচ্ছল হওয়া সত্ত্বেও তাদের কুরবানীর মান উন্নত নয় তারা হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর একথার (মর্ম) বুঝতে সমর্থ হোক যেমনটি তিনি বলেছেন, “আমি বারংবার তোমাদের বলছি, খোদা তোমাদের সেবার বিন্দুমাত্র মুখাপেক্ষী নন! তবে হ্যাঁ, তোমাদের প্রতি এটি তাঁর অনুগ্রহ যে, (তিনি) তোমাদেরকে সেবার সুযোগ দান করেন।” যারা কার্পণ্য করে তাদের এ বিষয়ে প্রণিধান করা উচিত। আল্লাহ্ তা’লা জামা’তের ধনাঢ্য লোকদেরও এই কথা অনুধাবন করার সামর্থ্য দিন।এরপর আমি এখন বিগত বছরের ওয়াক্ফে জাদীদের চাঁদার যে পরিসংখ্যান রয়েছে তা বর্ণনা করছি। আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় ওয়াক্ফে জাদীদের ৬৫তম বছর ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হয় এবং পহেলা জানুয়ারি থেকে নববর্ষ আরম্ভ হয়েছে আর জামা’তের সদস্যরা ১২.২ মিলিয়নের অধিক, (১২.২১৫ মিলিয়ন, অর্থাৎ) ১ কোটি ২২ লক্ষ ১৫ হাজার পাউন্ড কুরবানী উপস্থাপন করেছে। বৈশ্বিক মন্দা সত্তে¡ও গত বছরের তুলনায় এই কুরবানী ৯ লক্ষ ২৮ হাজার পাউন্ড বেশি, আলহামদুলিল্লাহ্।চাঁদা সংগ্রহের দিক থেকে যুক্তরাজ্য এবারও বিশ্বের সকল জামা’তের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে। এরপর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কানাডা, এরপর জার্মানি; (তারা) তৃতীয় স্থানে চলে গিয়েছে। এরপর চতুর্থ স্থানে রয়েছে আমেরিকা, পঞ্চম স্থানে ভারত, ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, সপ্তম মধ্যপ্রাচ্যের একটি জামা’ত, অষ্টম ইন্দোনেশিয়া, নবম স্থানে মধ্যপ্রাচ্যের আরেকটি জামা’ত এবং দশম হয়েছে বেলজিয়াম।মাথাপিছু (চাঁদা) প্রদানের দিক থেকে প্রথম স্থানে রয়েছে আমেরিকা, দ্বিতীয় সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য তৃতীয়, অস্ট্রেলিয়া চতুর্থ ও কানাডা পঞ্চম।আফ্রিকার জামা’তগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চাঁদা সংগ্রহকারী জামা’তের মাঝে প্রথমে রয়েছে ঘানা, দ্বিতীয় মরিশাস, তৃতীয় নাইজেরিয়া চতুর্থ বুরকিনা ফাঁসো, পঞ্চম তানজানিয়া, ষষ্ঠ লাইবেরিয়া, সপ্তম গাম্বিয়া, অষ্টম উগান্ডা, নবম সিরেয়া লিওন এবং দশম বেনিন।নিষ্ঠাবান চাঁদাদাতার সংখ্যা (গত বছরের তুলনায়) এ বছর ৬১ হাজার জন বৃদ্ধি পেয়েছে। মোট চাঁদাদাতার সংখ্যা ১৫ লাখ ৬ হাজারে পৌঁছেছে। (চাঁদায়) অংশগ্রহণকারী বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে যেসব দেশ উল্লেখযোগ্য কাজ করেছে তাদের মাঝে প্রথম স্থানে রয়েছে উগান্ডা এরপর রয়েছে গিনি বাসাও। এরপর যথাক্রমে ক্যামেরুন, কঙ্গো ব্রাজভিল, নাইজার, কঙ্গো কিনশাসা এবং সবশেষে রয়েছে বাংলাদেশ। এদেশগুলো উল্লেখের দাবি রাখে।(চাঁদা) সংগ্রহের দিক থেকে যুক্তরাজ্যের ১০টি বড় জামা’তের মধ্যে প্রথম ফার্নহাম, দ্বিতীয় উস্টারপার্ক, তৃতীয় ওয়ালসল, চতুর্থ ইসলামাবাদ, পঞ্চম জিলিংহাম, ষষ্ঠ সাউথ চীম, সপ্তম অল্ডারশট সাউথ, অষ্টম ব্রাডফোর্ড, নবম চীম এবং দশম ইয়োল। রিজিওনের মধ্যে প্রথম বাইতুল ফুতুহ্ রিজিওন। দ্বিতীয় ইসলামাবাদ, তৃতীয় মসজিদ ফযল, চতুর্থ মিডল্যান্ডস, পঞ্চম বাইতুল এহসান। আতফাল বিভাগের দিক থেকে শীর্ষ ১০টি জামা’ত হলো, প্রথম স্থানে অল্ডারশট সাউথ, এরপর যথাক্রমে ইসলামাবাদ, ওয়ালসল, ফার্নহাম, রোহ্যাম্পটন, ইয়োল, অল্ডারশট নর্থ, মিচাম পার্ক, বর্ডন, সাউথ চীম এবং বায়তুল ফুতুহ্। (চাঁদা) সংগ্রহের দিক থেকে ছোট জামাগুলোর মধ্যে ৫টি জামা’ত হলো, স্পেন ভ্যালী, কিথলী, নর্থ ওয়েলস, নর্থ হ্যাম্পটন, সোয়ানযী। (চাঁদা সংগ্রহের দিক থেকে) কানাডার এমারতগুলোর মধ্যে প্রথম হলো ভন, এরপর যথাক্রমে ভ্যানকুভার, ক্যালগেরী, পিস ভিলেজ, টরোন্টো এবং ব্রাম্পটন ওয়েস্ট। প্রথমে ছিল এমারত এখন কানাডার দশটি বড় জামা’ত হলো, প্রথম মিল্টন ওয়েস্ট, দ্বিতীয় হাদীকা আহমদ, তৃতীয় মিল্টন ইস্ট, চতুর্থ উইনিপেগ, পঞ্চম সাস্কাটুন বায়তুর রহমান, ষষ্ঠ ডারহাম ওয়েষ্ট, সপ্তম অটোয়া ওয়েস্ট, অষ্টম ইনিসফিল, নবম রিজাইনা এবং দশম এবোটস্ফোর্ড।আতফাল (বিভাগের ক্ষেত্রে) প্রথম হলো ভন, এরপর যথাক্রমে পিস ভিলেজ, টরোন্টো ওয়েস্ট ক্যালগেরী এবং ব্রাম্পটন ইস্ট। আতফাল বিভাগের ক্ষেত্রে ৫টি শীর্ষ জামা’ত। প্রথমে এমারত ছিল এখন হচ্ছে জামাতগুলো যথাক্রমে এরডরী, সেন্ট ক্যাথেরীন, হাদীকা আহমদ, ইনিসফিল এবং ব্র্যাডফোড ইস্ট।(চাঁদা সংগ্রহের দিক থেকে) জার্মানির ৫টি (স্থানীয়) এমারতের মাঝে প্রথম স্থানে রয়েছে হ্যামবুর্গ, দ্বিতীয় ফ্র্যাঙ্কফুর্ট, তৃতীয় উইযবাদেন, চতুর্থ গ্রস গেরাও এবং (পঞ্চম) রেডস্টেট। আর (চাঁদা সংগ্রহের দিক থেকে) শীর্ষ দশটি জামা’ত হলো যথাক্রমে, রোয়েডার মার্ক, রোডগাও, মাইনস হালকা বায়তুর রশীদ, নোয়েস, ফ্লোরেনয্ হাইম, নিডা, মাহদীয়াবাদ, ফ্রেডবার্গ এবং কোবলেনয্। আতফাল বিভাগের ক্ষেত্রে (জার্মানির) ৫টি শীর্ষ রিজিওন হলো, হিসেন মিটে, হিসেন সাউথ ওয়েষ্ট, হ্যামবুর্গ, তাউনসন এবং উইযবাদেন। (চাঁদা সংগ্রহের দিক থেকে) আমেরিকার শীর্ষ ১০টি জামা’ত হলো, প্রথম মেরিল্যান্ড, এরপর যথাক্রমে, নর্থ ভার্জিনিয়া, লস এঞ্জেলেস, ডেট্রয়েট, সিলিকন ভ্যালী, বোস্টন, অস্টিন, অশকোশ রচেস্টার এবং ফিনিক্স। আতফাল (বিভাগের ক্ষেত্রে আমেরিকার) শীর্ষ ১০টি জামা’ত হলো যথাক্রমে- সাউথ ভার্জিনিয়া, নর্থ ভার্জিনিয়া, মেরিল্যান্ড, সিয়াটল, অরল্যান্ডো, অস্টিন, সিলিকন ভ্যালী, অশকশ, পোর্টল্যান্ড এবং যায়ন। পাকিস্তানের শীর্ষ ৩টি জা’মাত হলো, [পাকিস্তানে চরম অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় স্থানীয় মুদ্রামানের তুলনায় তারা যথেষ্ট উন্নতি করেছে। পাউন্ডের বিপরীতেও তাদের মুদ্রামান একেবারে পড়ে গেছে তা সত্ত্বেও তাদের (চাঁদা) সংগ্রহ অনেক ভালো হয়েছে।জামা’তগুলোর মাঝে] প্রথম লাহোর, এরপর রাবওয়া, এরপর তৃতীয় করাচি। এছাড়া জেলাগুলোর মাঝে ইসলামাবাদ প্রথম, এরপর যথক্রমে সিয়ালকোট, ফয়সালাবাদ, গুজরাট, গুজরানওয়ালা, সারগোধা, উমরকোর্ট, মুলতান, মিরপুর খাস এবং ডেরাগাজি খান। আর চাঁদা সংগ্রহের দিক থেকে (পাকিস্তানের শীর্ষ) ১০টি জামা’ত হলো, ইসলমাবাদ শহর, ডিফেন্স লাহোর, টাউনশিপ লাহোর, দারুয যিক্র লাহোর, মডেল টাউন লাহোর, আল্লামা ইকবাল টাউন লাহোর, রাওয়ালপিন্ডি শহর, আযীযাবাদ করাচী, সামিনাবাদ লাহোর, মোগলপুরা লাহোর। আতফাল বিভাগের ক্ষেত্রে (পাকিস্তানের) ৩টি বড় জামা’ত হলো, প্রথম লাহোর, দ্বিতীয় রাবওয়া এবং তৃতীয় করাচি। আতফাল বিভাগের ক্ষেত্রে জেলাপর্যায়ে অবস্থান হলো, প্রথম স্থানে রয়েছে ইসলামাবাদ। এরপর যথাক্রমে শিয়ালকোট, ফয়সালাবাদ, সারগোধা, উমরকোট, মিরপুর খাস, নারোয়াল, নানকানা সাহেব, জেহলম এবং কোয়েটা।যেসব ছোট জামা’ত (চাঁদা প্রদানের ক্ষেত্রে) অসাধারণ উন্নতি করেছে সেগুলো হলো, শুধু ছোটই নয় বরং বড় বড় শহরও এতে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গুজরানয়ালা শহর, গুলশান জামী করাচি, সদর করাচি, রাওয়ালপিন্ডী কেন্ট, বায়তুল ফযল ফয়সালাবাদ, করীম নগর ফয়সালাবাদ, শিয়ালকোট শহর, পেশোয়ার, সারগোধা এবং ওকাড়া। ভারতের শীর্ষ ১০টি প্রদেশ হলো, কেরালা, তামিলনাডু, কর্ণাটক, জম্মু কাশ্মীর, তেলেঙ্গানা, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র এবং দিল্লী। (চাঁদা সংগ্রহের দিক থেকে ভারতের) শীর্ষ দশটি জামা’ত হলো (যথাক্রমে), কোয়েম্বাটুর, হায়দ্রাবাদ, কাদিয়ান, কেরোলাই, পার্থাপুরাম, বেঙ্গালুরু, মেলাপেলায়াম, কোলকাতা, কালীকাট এবং কেরেঙ্গ।অস্ট্রেলিয়ার (শীর্ষ) ১০টি জামা’ত হলো, প্রথম ক্যাসেল হিল, মেলবোর্ন লঙ্গওয়ারেন, মার্সডেন পার্ক, লোগান ইস্ট, মেলবোর্ন বেরভিক, প্যানরিথ, পার্থ, এডিলেইড সাউথ, মেলবোর্ন ক্লাইড এবং এডিলেইড ওয়েস্ট।প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে (অস্ট্রেলিয়ার) জামা’তগুলো হলো, ক্যাসেল হিল, মেলবোর্ন লঙ্গওয়ারেন, মার্সডেন পার্ক, মেলবোর্ন বেরভিক, লোগান ইস্ট, প্যানরিথ, পার্থ, এডিলেইড সাউথ, এডিলেইড ওয়েস্ট এবং মেলবোর্ন ক্লাইড। আতফালদের ক্ষেত্রে (অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ জামা’তগুলো হলো,) মেলবোর্ন লঙ্গওয়ারেন, লোগান ইস্ট, প্যানরিথ, পার্থ, ক্যাসেল হিল, মেলবোর্ন ক্লাইড, এডিলেইড সাউথ, মেলবোর্ন বেরভিক, মাউন্ট ড্রুইট এবং মেলবোর্ন ওয়েস্ট। আল্লাহ্ তা’লা সকল (আর্থিক) কুরবানীকারীর ধনসম্পদ ও জনবলে প্রভূত বরকত দান করুন। (আমীন)(সূত্র: কেন্দ্রীয় বাংলাডেস্কের তত্ত্বাবধানে অনূদিত)