
17 Aug হযরত খলীফাতুল মসীহ্ আল খামেস (আই.) প্রদত্ত ৬আগষ্ট ২০২১ জুমুআর খুতবা
তাশাহ্হুদ, তা’ঊয এবং সূরা ফাতিহা পাঠের পর হুযূর আনোয়ার (আই.) বলেন:
আজ ইনশাআল্লাহ্ যুক্তরাজ্যের বার্ষিক জলসা আরম্ভ হচ্ছে। সর্বপ্রথম আমি এটি বলতে চাই, এ দিনগুলোতে অনেক দোয়া করুন যেন জলসা সকল অর্থে কল্যাণজনকভাবে অনুষ্ঠিত হয়। আল্লাহ্ তা’লা এ দিনগুলোতে একান্ত ধর্মীয় পরিবেশ বিরাজমান রাখুন আর অংশগ্রহণকারীদের হৃদয়সমূহকে পুণ্য ও তাক্বওয়ায় সমৃদ্ধ করুন। যদিও আজকাল যে মহামারি ছড়িয়ে আছে সেকারণে এখানে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা অনেক সীমিত। কিন্তু আমাকে জানানো হয়েছে যে, ঘরে ঘরে এবং কোন কোন জায়গায়, বিভিন্ন মসজিদে বা যেখানে হলের সুবিধা আছে সেখানে হলে জামা’তী ব্যবস্থার অধীনে জলসা শোনা যাবে। যাহোক, যারাই এভাবে জলসায় যোগদান করছেন তারাও এই চিন্তাচেতনার সাথে জলসায় যোগদান করুন, যেন আপনারা জলসা গাহেই উপস্থিত আছেন। আর তিন দিনই অনুষ্ঠানমালা শ্রবণ করুন এবং দোয়ায় অতিবাহিত করুন। এ বছর এভাবে জলসার আয়োজন ব্যবস্থাপনার জন্যও এক নতুন অভিজ্ঞতা আর অংশগ্রহণকারীদের জন্যও। আয়োজকদের হাতে অতিথিদের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা পূর্বে থাকতো সেগুলো এ বছর তাদের হস্তগত হয় নি। তাদের ধারণা ছিল, সেগুলো হস্তগত হবে কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয় নি। তাই অতিথি বা জলসায় যোগদানকারীরাও এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে যেখানেই আয়োজকদের আয়োজনের ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়ে গেছে সেগুলো উপেক্ষা করুন আর দোয়া করুন যেন আল্লাহ্ তা’লা দ্রুত পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটান আর এরপর জলসা স্বীয় অতীত ঐতিহ্যে আয়োজিত হতে পারে। কারো কারো অভিযোগ রয়েছে যে, কতিপয় শর্তের কারণে আমাদের জলসায় যোগ দিতে দেয়া হয় নি অথবা কোন কোন স্থানে যোগদানকারীদের যে নির্বাচন হয়েছে তা সঠিক নয়। যাহোক, আয়োজনকারীরা এই বিষয়ে তাদের কারণ দেখিয়েছে। কতিপয় স্থানীয় জামা’তের ব্যবস্থাপনাও তাদের কারণ দেখিয়েছে। অজুহাত সঠিক হোক বা ভুল, সেটিকে একপাশে রেখে জামা’তের সদস্যদের আমি এটিই বলব যে, এই ক্ষেত্রেও উপেক্ষা করুন আর ধরে নিন যে, এটি যেহেতু প্রথম অভিজ্ঞতা তাই কিছু ভুল ত্রুটি হয়ে গেছে। তাই ক্ষমা করে দিন আর কোন প্রকার কষ্ট মনে স্থান দেবেন না। এর পর আমি জলসা এবং আতিথেয়তার বরাতে কিছু কথা বলব। সাধারণত জলসার দিনের খুতবায় আমি অতিথিদের দায়িত্বের প্রতি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকি অথবা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কিছু কথা বলে থাকি। জলসার এক জুমুআ পূর্বের খুতবায় অতিথিসেবক ও ডিউটি প্রদানকারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে কিছু বলে থাকি। কিন্তু এবার যেহেতু পূর্বে দায়িত্ব পালনকারীদের দায়িত্ব সম্পর্কে কিছু বলি নি তাই আজ উভয়ের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলব। প্রথম কথা মেজবান ও দায়িত্বপালনকারীদের উদ্দেশ্যে এটি বলতে চাই যে, পরিস্থিতির কারণে আতিথেয়তায় কোন ঘাটতি থাকা উচিত নয়। বিদেশ থেকে যে ছয়-সাত হাজার অতিথি আসতেন, এবার তারা আসছেন না। দেশের বিভিন্ন শহর থেকে আগত অতিথিরা হবেন আর তাদের সংখ্যাও অনেক স্বল্প। তাই এই বিষয়টিকে সহজ মনে করে শৈথিল্য প্রদর্শন করবেন না। যদি কোথাও ঘাটতি থেকে যায় তাহলে যারা কাছের মানুষ হয়ে থাকে, যাদের সাথে সম্পর্ক থাকে, তাদের অভিযোগের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই খুবই সচেতনতা ও মনোযোগের সাথে সবার আতিথেয়তা করুন। কোন প্রকার ঘাটতি যেন না থাকে। আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় যুক্তরাজ্যের জলসার কর্মীদের যতটুকু সম্পর্ক রয়েছে, যেমনটি আমি গতকাল কর্মীদের (কাজের প্রস্তুতি) পরিদর্শনের সময় বলেছিলাম যে, নাসেরাত, লাজনা, আতফাল, খোদ্দাম ও আনসারের মধ্য থেকে, সকল স্তরের কর্মী, নিজেদের দায়িত্ব এবং কাজের ক্ষেত্রে বেশ পারদর্শী হয়ে উঠেছে আর বড় আয়োজন সামলানোর যোগ্যতা রাখে। নতুন অংশগ্রহণকারী ছেলে ও মেয়েদের ভালোভাবে তারা কাজ শেখাতে পারে। তাই এদিক থেকে কোন চিন্তা নেই যে, তারা কাজ জানে না। জলসার প্রতিটি বিভাগে দক্ষতার সাথে কাজ করার লোক রয়েছে এবং তারা কাজ করতে পারে। কিন্তু যেহেতু আল্লাহ্ তা’লারও নির্দেশ রয়েছে যে, মু’মিনকে স্মরণ করাতে থাকা উচিত, এটি তার জন্য উপকারী। আর যেমনটি আমি বলেছি, জলসার আয়োজন সীমিত পরিসরে করা হয়েছে। কখনও কখনও প্রয়োজনাতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস যে, স্বল্প সংখ্যক মানুষের জন্য জলসা হচ্ছে, এটি আমরা সহজেই সামাল দিতে পারব, কতিপয় ক্ষেত্রে অসাবধানতার কারণে ঘাটতি থেকে যায়, ত্রুটি দেখা দেয়। আর দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে যারা নতুন তারা এর ভুল অর্থও গ্রহণ করতে পারে। অতএব, অতিথিদের সেবাযত্নের জন্যও এবং নবাগতদের শেখানোর জন্যও এটি আবশ্যক যে, আয়োজন ততটা বড় না হলেও প্রতিটি বিভাগের প্রতিটি কাজই গুরুত্বপূর্ণ। আর বিশেষ করে আজকাল আবহাওয়াও বেশ প্রতিকূল। এর কারণেও কোন কোন বিভাগের অনেক বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। প্রত্যেক কর্তব্যরত ব্যক্তির একথা স্মরণ রাখা উচিত যে, অতিথি স্বল্প সংখ্যক হোক বা বেশি, জলসায় আগমনকারী অতিথিরা হল, হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর অতিথি। আর আমাদের উচিত তাদের যথাসাধ্য সেবা করা। আতিথেয়তা এমন একটি বৈশিষ্ট্য যা নবী-রসূল এবং তাঁদের জামা’তের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য। অতএব, ধর্মীয় জামা’ত হওয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের জন্য আবশ্যক হল, আমাদের আতিথেয়তা যেন বিশেষ মানের হয় আর এই বৈশিষ্ট্য যেন আরও উজ্জ্বল হয়। মহানবী (সা.)-এর যুগে যখন আগত অতিথির সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন তিনি (সা.) সাহাবীদের মাঝে অতিথিদের বণ্টন করে দিতেন। সাহাবীরা পরম আনন্দে অতিথিদের নিজেদের সাথে নিয়ে যেতেন। প্রভাতে যখন তিনি (সা.) অতিথিদের কাছে তাদের রাত্রিযাপন এবং সাহাবীদের আতিথেয়তা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেন, তাদের অবস্থা জানতে চাইতেন, সেবার মান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেন, তখন প্রত্যেকের উত্তর এটিই হতো যে, আমরা এমন অতিথিসেবক দেখি নি যারা এত উন্নত মানের আতিথেয়তা করেছেন। অতএব, এটি হল সেই আদর্শ যা মহানবী (সা.)-এর তরবীয়তের কল্যাণে সাহাবীরা আমাদের সামনে এবং আমাদের জন্য স্থাপন করেছেন। আর এ যুগে, যখন কিনা আমরা হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-কে মান্য করেছি, তিনি (আ.)ও আমাদেরকে সেই আদর্শ অনুসরণের উপদেশ দিয়েছেন, যার দৃষ্টান্ত সাহাবীরা স্থাপন করেছিলেন।
একবার হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) নিজ (জামা’তের) লোকদের উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, আমার নীতি অনুযায়ী যদি কোন অতিথি আসে আর গালমন্দ পর্যন্তও বিষয় গড়ায়, অর্থাৎ অতিথি যদি কটুভাষা ব্যবহার করে এবং কঠোর আচরণ করে, তাদের ব্যবহার ভালো না হয়, তবুও তা সহ্য কর। যদিও তিনি এখানে অ-আহমদী অতিথিদের বিষয়ে এই নসীহত করেছিলেন, কিন্তু আমাদের স্মরণ রাখা উচিত, অতিথি যে-ই হোক না কেন, আহমদী অতিথি হলেও একজন মেজবানের কাজ হল, উন্নত নৈতিক চরিত্র প্রদর্শন করা এবং কঠোরতার উত্তর কঠোরতার মাধ্যমে না দেয়া। আপন-পর সবার ক্ষেত্রে আমরা হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর আতিথেয়তার অসাধারণ মান দেখতে পাই। আপনজনদের সাথেও হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) অসাধারণ আতিথেয়তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আর কেনই বা হবে না, এ যুগে হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এরই সেই উন্নত নৈতিক চরিত্র প্রদর্শন করার ছিল যার মাধ্যমে ইসলামের অনিন্দ্য সুন্দর চিত্র আমাদের সম্মুখে আসার কথা যেন আমরা তা জগতের সামনে উপস্থাপন করতে পারি।
হযরত মুফতী মুহাম্মদ সাদেক সাহেব (রা.) বর্ণনা করেন, একদা আমি লাহোর থেকে কাদিয়ান আসি, হযরত সাহেব আমাকে মসজিদ মোবারকে বসান, যা তখন পর্যন্ত ছোট্ট একটি জায়গা ছিল। এখনও তা ছোট্ট মসজিদ, কিন্তু তখন খুবই ছোট ছিল, একটি কক্ষের সমান। এরপর তিনি (আ.) বলেন, আপনি বসুন, আমি আপনার জন্য খাবার নিয়ে আসছি। একথা বলে তিনি (আ.) ভেতরে যান। মুফতী সাহেব (রা.) বলেন, আমরা ধারণা ছিল, হয়ত কোন সেবকের হাতে খাবার পাঠিয়ে দিবেন, কিন্তু কয়েক মিনিট পরে যখন জানালা খুললো তখন আমি দেখি, তিনি নিজের হাতে থালায় করে আমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছেন। একটি ট্রেতে করে আমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছেন। আমাকে দেখে বলেন, আপনি খাবার খান আমি পানি নিয়ে আসছি। মুফতী সাহেব (রা.) বলেন, আবেগের আতিশয্যে আমার (চোখ থেকে) অশ্রু নির্গত হয় যে, আমাদের ইমাম ও নেতা হয়ে হযরত যেখানে আমাদের এমন সেবা করেন সেক্ষেত্রে আমাদের পরস্পরের কীরূপ সেবা করা উচিত!
একবার বিছানাপত্রের স্বল্পতা দেখা দিলে হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) নিজের বিছানাও অতিথিদের দিয়ে দেন, বরং বাড়ির সমস্ত বিছানাপত্র দিয়ে দেন আর নিজে বিছানা ছাড়াই সারা রাত কষ্টের মাঝে কাটিয়ে দেন, কিন্তু কাউকে বুঝতেও দেন নি যে, আমার কষ্ট হয়েছে। এটি হল, অতিথিসেবার জন্য সত্যিকার ত্যাগ বা কুরবানী। কতিপয় লোক কোন কোন সময় ত্যাগস্বীকার করে ঠিকই, কিন্তু আবার খোটাও দেয় যে, এই কুরবানী বা ত্যাগের কারণে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে।
একবার হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) বলেন, আমার সর্বদা এই বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি থাকে যে কোন অতিথির যেন কোন কষ্ট না হয়। বরং এজন্য সর্বদা তাগিদ দিতে থাকি যে, যতদূর সম্ভব অতিথির আরামের ব্যবস্থা করা উচিত। {তিনি (আ.)} বলেন, অতিথির হৃদয় কাঁচের মতো নাজুক বা স্পর্শকাতর হয়ে থাকে এবং সামান্য আঘাতেই তা ভেঙে যায়। তিনি (আ.) বলেন, ইতিপূর্বে আমি এই ব্যবস্থা করে রেখেছিলাম যে, (আমি) নিজেও অতিথিদের সাথে বসে আহার করতাম (আর) বুঝতে পারতাম যে, অতিথিসেবা কেমন হচ্ছে। (খাবার) কতটুকু আছে, যথেষ্ট আছে কিনা, সবাই পেয়েছে কিনা? {তিনি (আ.)} বলেন, কিন্তু অসুস্থতার কারণে যখন থেকে আমাকে বেছে খেতে হচ্ছে বা পরহেযী খাবার খেতে হচ্ছে তখন থেকে আর পূর্বাবস্থা বলবৎ থাকে নি, পাশাপাশি আরও একটি কারণ দেখা দেয় আর তা হল, অতিথির সংখ্যা এতটাই বেড়ে যায় যে, স্থান সংকুলান সম্ভব হতো না। এক জায়গায় বসে সবার আহার করা কঠিন হয়ে পড়ে। বিভিন্ন জায়গায় খাবার পরিবেশন করা হয়ে থাকবে অথবা হয়ত পালা করে (খাবার) পরিবেশন করা হতো, তাই অপারগ হয়ে পৃথক হতে হয়েছে।
একবার যখন অনেক অতিথি আসে তখন তিনি (আ.) লঙ্গরখানার ব্যবস্থাপককে বলেন, দেখ! অনেক অতিথি এসেছেন, তাদের মধ্যে কতককে তুমি চেন আর কতককে (চেন) না; তাই তোমার উচিত হবে সবাইকে সম্মানিত জ্ঞান করে সেবা করা। কাজেই, অতিথিসেবকের কাছে সকল অতিথি সমান। কারো সাথে কোন বৈষম্যমূলক ব্যবহার করবে না। এমন নয় যে, অমুক ব্যক্তি কর্মকর্তা অথবা অমুক আমার পরিচিত, তাই তার বেশি সেবা করব এবং তার সাথে বেশি ভালো ব্যবহার করব। সবাইকে অতিথি জ্ঞান করে সমান সেবা কর। প্রত্যেক অতিথির সাথে শ্রদ্ধাপূর্ণ ও সম্মানজনক ব্যবহার করা উচিত, এটিই অতিথিসেবার মূল। তিনি (আ.) তাকে বলেন, তোমার প্রতি আমার সুধারণা রয়েছে যে, তুমি অতিথিদের যত্মআত্তি করে থাক, তাদের সবার প্রাণঢালা সেবাযত্ন কর। অতএব, এটি হল সেই সুধারণা, যা আজও সকল সেবকের ক্ষেত্রে সত্য প্রমাণিত হওয়া উচিত। আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় সেবকদের অধিকাংশই এই সুধারণার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হন। যাদের মাঝে কোন দুর্বলতা রয়েছে তারা স্বয়ং নিজেদের যাচাই করুন আর দেখুন যে, কীভাবে তারা নিজেদের দুর্বলতা দূর করে অতিথিসেবার মান উন্নত করতে পারেন। আমি জানি, কোন কোন বিভাগের কর্মীদের কোন কোন অতিথির পক্ষ থেকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, কিন্তু আমাদের কাজ হল, কখনও উন্নত ব্যবহার পরিত্যাগ না করা, তা প্রদর্শন করুন। অতিথি যা ইচ্ছা বলুক, প্রত্যেক কর্মীকে নিজের জন্য এটি আবশ্যক করে নিতে হবে যে, সে উত্তম আচরণ প্রদর্শন করবে। এবার হয়ত সংখ্যা সীমিত হওয়ার কারণে কর্মীদের কোন কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না বা কর্মীদের ধারণা থাকবে যে, সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না। কিন্তু কর্মীরা যখন বিভিন্ন বিধিনিষেধের প্রতি অতিথিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে তখন হতে পারে, কোন কোন অতিথি সেটি পছন্দ করবেন না। যেমন, কর্মীরা যখন দৃষ্টি আকর্ষণ করবে যে, মাস্ক পরে থাকতে হবে, দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সাধারণত আমরা এগুলো মেনে চলি না। খাবার খাওয়ার সময় বিভিন্ন নিয়ম মেনে চলতে হবে। কিন্তু সব কথা শোনার পরও কেউ যদি রূঢ় আচরণ করে এবং নির্দেশিত বিষয়াদির প্রতি মনোযোগ না দেয় তাহলে মানুষের কথা শুনেও ভালোবাসার সাথেই অতিথিকে বুঝাবেন। সাধারণত অতিথিরাও বুঝেন যে, তাদেরকে বিভিন্ন নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে, কিন্তু কিছু মানুষ স্বভাবগতভাবেই কোন কোন বিষয়ে চটজলদি অসন্তুষ্ট হয়ে যান, আর এমন সমস্যা সৃষ্টিকারী লোকের সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকজনই হয়ে থাকে; আর অপরদিকে কর্মীদের ব্যবহারও যদি কঠোর হয় তাহলে চরম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই কারো যদি কাউকে বুঝাতেও হয়, কোন অনুরোধও যদি করতে হয়, কোন কথা বলতে হয়, তাহলে পরম ধৈর্য ও নম্রতার সাথে বুঝান। মহানবী (সা.) একজন মু’মিনের এই চিহ্ন উল্লেখ করেছেন যে, সে অতিথির সম্মান করে। অর্থাৎ মু’মিনের বৈশিষ্ট হল, সে অতিথির সম্মান করে। অতএব, এই মু’মিনসুলভ বৈশিষ্ট্য সবার মাঝে সৃষ্টি হওয়া উচিত। বৃষ্টির কারণে হাদীকাতুল মাহদীর পার্কিং এ সীমিত সংখ্যক (গাড়ি) পার্ক করার ব্যবস্থা থাকবে। প্রশস্ত মাঠ থাকলেও বৃষ্টির কারণে তা ভেজা, তাই সেখানে গাড়ি পিছলে যাওয়ার বা কাঁদায় আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই অন্যত্র পার্কিং এর জায়গা নেয়া হয়েছে এবং সেখান থেকে বাসে করে অতিথিদের নিয়ে আসা হবে। এখানে গাড়িতে করে যারা আসবেন তাদেরকে কর্তব্যরতদের অত্যন্ত কোমলতা ও ভালোবাসার সাথে বুঝাতে হবে। অনেকে সরাসরি (হাদীকাতুল মাহদীতে) চলে আসেন এবং জোরাজুরি করেন যে, আমরা এসে গেছি তাই আমাদের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হোক। পরম ভালোবাসার সাথে তাদেরকে বুঝান আর অতিথিদেরও কর্তব্যরতদের কথা বুঝতে হবে। পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতেই কাজে সহজসাধ্যতা ও গতি সঞ্চার হতে পারে।
অতএব, উভয়পাক্ষিক সহযোগিতার হাত প্রসারিত থাকা উচিত। কেবল অতিথিরাই অতিথিসেবকদের কাছে এই প্রত্যাশা রাখবেন না যে, এরাই আমাদের সেবায় নিয়োজিত, তাই আমাদের সমস্ত কথা শুনতে হবে এবং মানতে হবে। বরং যে নিয়মকানুন নির্ধারণ করা হয়েছে অতিথিদেরও তা মেনে চলা উচিত। তবেই (সকল) কাজ যথাযথভাবে এবং দ্রুততার সাথে হতে পারে। অতিথিরা এ বিষয়টিও সর্বদা স্মরণ রাখবেন যে, ইসলাম মেজবানকে যেখানে অতিথির সম্মান ও শ্রদ্ধা করতে নির্দেশ দিয়েছে, সেখানে অতিথিদেরও এ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে যে, অতিথি হিসেবে তোমাদেরও কিছু দায়-দায়িত্ব রয়েছে। ইসলাম সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে যে, অতিথি হিসেবে তোমরা যখন কারও কাছে যাবে তখন মেজবানের ব্যস্ততার প্রতিও খেয়াল রাখবে। আর সে আমন্ত্রণ জানালে যেও বা তাকে আগাম জানিয়ে যেও। একদিকে মেজবানকে নির্দেশ দিয়েছে যে, বাড়িতে আগত অতিথির সাথে তুমি সদাচরণ করবে, তা সে যখনই আসুক না কেন। অপরদিকে অতিথিকে বলেছে, কারো বাড়িতে যাওয়ার পূর্বে আগাম জানিয়ে যাবে। যদি না জানিয়ে যাও আর গৃহবাসী তোমাকে ভেতরে আসতে বারণ করে তাহলে কোন অভিযোগ না করে ফিরে যেও। জলসায় (আগত) অতিথিদের ক্ষেত্রে সাধারণত এ বিষয়টি প্রযোজ্য হয় না, কিন্তু যেমনটি আমি বলেছি, এ বছর বিশেষ পরিস্থিতির কারণে বয়সেরও একটি সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, অর্থাৎ এই বয়স থেকে এই বয়সের লোকেরা (জলসায়) আসতে পারবে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বয়সের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো কিছু বিধি-নিষেধ রাখা হয়েছে আর এগুলো দৃষ্টিপটে রেখে নীতি নির্ধারণ করা হয়েছে এবং জামা’তগুলোকে বলা হয়েছে যে, বেছে বেছে ঐ লোকদের পাঠাবেন যারা এসব শর্তে উত্তীর্ণ হয়। যেমনটি আমি পূর্বেও বলেছি, কোন কোন ক্ষেত্রে হয়ত লোক নির্বাচনের ক্ষেত্রে এদিক সেদিক হয়ে থাকবে এবং কারও কারও অভিযোগও থেকে থাকবে। এভাবে কতক লোক এ দেশে নতুন এসে থাকবেন আর তাদের ক্ষেত্রে শর্ত পূর্ণ হয় না কিন্তু তাদের দাবি হল, তাদেরকে যেন অবশ্যই জলসায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়। বহির্বিশ্ব থেকে আগমনকারী অনেকে হয়তো নিজ আত্মীয়স্বজনের সাথে চলে আসার চেষ্টাও করবে অথবা নিজ এলাকার ব্যবস্থাপনার ওপর চাপ প্রয়োগ করবে যে, (জলসায়) অংশগ্রহণের জন্য আমাদেরকে পাশ দেয়া হোক। তাদেরকে বলতে চাই, এভাবে নিয়ম ভঙ্গ করার ফলে সমস্যা সৃষ্টি হয়। আল্লাহ্ তা’লা একজন মু’’মিনের জন্য এই নীতিগত পথনির্দেশনা দিয়েছেন এবং মৌলিক চারিত্রিক আচরণবিধি বাতলে দিয়েছে যে, গৃহবাসীদের অনুমতি ব্যতিরেকে কারো বাড়িতে প্রবেশ করবে না আর যদি বলা হয় যে, ফেরত চলে যাও তাহলে কোনরূপ অনুযোগ ছাড়াই ফেরত চলে যাও। আল্লাহ্ তা’লা বলেন,وَإِنْ قِيلَ لَكُمُ ارْجِعُوا فَارْجِعُوا هُوَ أَزْكَى لَكُمْ (সূরা আন নূর: ২৯) আর যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ফেরত চলে যাও তাহলে তোমরা ফেরত চলে যেও। তোমাদের জন্য এ বিষয়টি অধিক পবিত্রতা অর্জনের কারণ হয়। জলসায় আগমন করা এবং এতে যোগ দেওয়ার একটি বড় উদ্দেশ্য হল, নিজেদের সংশোধন এবং নিজেদের আত্মশুদ্ধি। জোর করে অংশগ্রহণের পরিবর্তে যে নিয়ম নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, সেটি মেনে চলা অধিক পবিত্রতার কারণ। অতএব, যারা আমাকেও নাছোড়বান্দা হয়ে পত্র লিখেছেন, অথবা ব্যবস্থাপনাকে বলছেন, যে বিধি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, সেগুলো যদি তারা মেনে চলে তাহলে তা অধিক উত্তম। মন খারাপ করা উচিত নয় অথবা কোন অনুযোগ করাও উচিত নয়। আল্লাহ্র কাছে দোয়া করুন আর এমন অবস্থায় অধিক ব্যাকুলতার সাথে দোয়া নির্গত হয় এবং হবেও যেন আল্লাহ্ তা’লা অবস্থা দ্রæত স্বাভাবিক করে দেন যেন কতক লোক নিজ আকাক্সক্ষা অনুযায়ী জলসায় স্বাধীনভাবে যোগদান করতে পারে। কুরআনের নির্দেশাবলীকে কর্মে রূপায়নের ক্ষেত্রে সাহাবীদের রীতি আশ্চর্যজনক ছিল। এক সাহাবী বলেন, আমি বছরের পর বছর লোকদের বাড়ী-ঘরে বিভিন্ন সময় বা অসময়ে কেবল এ উদ্দেশ্যে যেতাম যাতে কেউ আমাকে বলে যে, এই অসময়ে বাড়ীতে প্রবেশ করা নিষেধ, এখন আমরা তোমার সাথে দেখা করতে পারব না, ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি দিতে পারছি না, সাক্ষাৎ করা সম্ভব নয় ফিরে যাও। তিনি বলেন, আমার বাসনা ছিল, কেউ যদি আমাকে এভাবে বলে তাহলে আমি কুরআনের আদেশ মান্য করে পুণ্যের ভাগী হবো। কিন্তু কখনোই এমনটি হয় নি যে, আমি কারও বাড়িতে গিয়েছি, আর আমার সামনে কেউ অপারগতা দেখিয়েছে। অতএব, উভয় পক্ষ তথা মেযবান এবং মেহমানও আল্লাহ্ তা’লার সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করতেন। এই সার্বিক চারিত্রিক গুণাবলী অবলম্বন এবং কুরআনের শিক্ষার ওপর আগ্রহ ও উদ্দীপনার সাথে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্পর্কে আমি এই বিষয়টি বলেছি এবং একটি নীতিগত নির্দেশনা দিয়েছি কিন্তু অনেকে এমনও আছেন যারা নিজেদের কথা মানানোর জন্য বলে দেন বা বলে দিবেন যে, তাহলে ব্যবস্থাপনারও না বলা উচিত নয়। স্বাভাবিক সময়ে ব্যবস্থাপনা না করে না আর করা উচিতও নয়। যদি করে তাহলে নিশ্চয় অতিথির প্রাপ্য অধিকার প্রদান করা হবে না এবং ইসলামী শিক্ষা-পরিপন্থী কাজ করা হবে, যে শিক্ষার ওপর আমল করার প্রতি হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) আমাদের বিশেষ জোর দিয়ে বলেছেন এবং স্বীয় আদর্শের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন অর্থাৎ অসময়ে রাতের বেলা অতিথি এসেছে আর তখনও তাদের আতিথেয়তার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু যেমনটি আমি বলেছি, এবারের জলসা যে পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তা একটি বিশেষ অবস্থা এতে বাধ্য হয়ে অতিথিদের অংশগ্রহণ করতে বারণ করা হচ্ছে। তাই কোন অভিযোগ না করে এটি মেনে নেয়া উচিত। কিন্তু একই সাথে আমি সেসব লোককে একথাও বলতে চাই যে, যারা আমন্ত্রণ পত্র পেয়েছেন একান্ত অপারগ না হলে তারা যেন অবশ্যই জলসায় অংশগ্রহণ করেন। অন্যথায় তাদের অংশগ্রহণ না করায় সেসব লোকের অধিকার হরণ হবে যাদেরকে অনুমতিপত্র দেওয়া হয় নি। বৈরি আবহাওয়াকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাবেন না। যেহেতু বিরূপ আবহাওয়ার কথা এসেছে; এক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারীদের স্মরণ রাখতে হবে যে, রাবওয়া কিংবা কাদিয়ানে শীতের দিনে উন্মুক্ত মাঠে জলসা হয়। রাবওয়াতে নিষেধাজ্ঞার কারণে (এখন জলসা) হয় না আর অনেক বছর যাবৎ হয় না কিন্তু (এক সময়) হতো। শীতকালে যখন জলসা হতো তখন বৃষ্টি হলেও কোনভাবে নিজেদের ঢেকে চুপচাপ বসে মানুষ জলসা শুনত। এখানেও যখন ইসলামাবাদে জলসা হতো তখন বৃষ্টির কারণে মার্কী থাকা সত্তে¡ও জলসা গাহের অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যেত। নীচে বসার জন্য শুধু ঘাস বিছানো হতো। বর্তমান সময়ের ন্যায় রীতিমত কোন মেঝে বানানো হত না, যেভাবে এখন কাঠ বা তকতা বিছানো হয়। আমি (যখন) জলসায় অংশগ্রহণ করেছি আমার মনে পড়ে, তখন বৃষ্টির কারণে জলসা গাহের কিছু অংশে পানি ঢুকে গিয়েছিল আর মাটি ভিজে গিয়েছিল। কিনারায় পানি জমে ছিল আর যারা কিনারায় দাঁড়িয়ে নামায পড়ত তাদের হাঁটু ও কপাল পানি অথবা কাদাতে থাকত। আমার সাথেও এমনটিই ঘটেছে। সিজদা থেকে উঠে প্রথমে কপাল পরিষ্কার করতে হতো যাতে চোখে পানি বা কাদা ঢুকে না যায় অথবা ঘাসতৃণ লেগে থাকত। কিন্তু আমি দেখেছি, সবাই এক ধরণের গভীর অবেগ নিয়ে জলসায় অংশগ্রহণ করত। আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় সেই আবেগ অনুভূতি এখনো রয়েছে আর বলা উচিত অধিকাংশ আহমদীর মাঝেই এমন আবেগ অনুভূতি বিদ্যমান। কিন্তু কেউ কেউ কিছুটা নাজুক বা স্পর্শকাতরও হয়ে থাকেন অথবা পরিস্থিতির কারণে বা যুগের ব্যবধানের কারণে স্পর্শকাতর হয়ে গিয়ে থাকবে, তাদের জন্য আমি বলছি তারা যদি অনুমতিপত্র পেয়ে থাকেন তাহলে তারা যেন অবশ্যই অংশগ্রহণ করে আর কোন অজুহাত যেন না দেখায়। এছাড়া যেমনটি আমি পূর্বেও বলেছি, কিছু লোক ঝগড়াটে স্বভাবের হয়ে থাকে, কিছু লোকের অভিযোগ করার অভ্যাস থাকে আর (তারা) ব্যবস্থাপনার সমালোচনাও (এই বলে) করবে যে, এই ব্যবস্থা এভাবে কেন হল না আর এভাবে হওয়া উচিত ছিল অথবা না আসার অজুহাত দেখিয়ে বলবে, এজন্য আমরা আসি নি। অতএব, যাই হোক এসব কথা মনে রাখতে হবে। আজ, কাল ও পরশু দিনের জন্য যারা আমন্ত্রণপত্র পেয়েছেন অথবা বলা উচিত যারা অনুমতিপত্র পেয়েছেন তারা যেন অবশ্যই অংশগ্রহণ করেন।
কিছু প্রশাসনিক কথাও বলে দিতে চাই। যেমন খাবারের তাঁবুতে খাবার নেওয়ার সময় এবং খাবার খাওয়ার সময় দূরত্ব বজায় রাখার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কর্তৃপক্ষ যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তা মেনে চলুন। বিভিন্ন স্থানে একথা লিখে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে যে, দূরত্ব বজায় রাখুন। কিন্তু যে নির্দেশনাই ঝুলানো হোক না কেন তা পড়ার অভ্যাস কিছু লোকের থাকে না, তারা এদিকে দৃষ্টি দেয় না। সাধারণত দেখা গেছে কিছু লোক এমনও আছে যারা আজকাল স্বাভাবিক অবস্থায়ও দূরত্ব বজায় রাখার প্রতি খেয়াল রাখে না। তাই খাবার খাওয়ার সময়ও আর খাবার নেওয়ার সময়ও দূরত্ব বজায় রাখার প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখবেন। খাবার খাওয়ার সময় তো বাধ্য হয়ে মাস্ক খুলতে হয়, কিন্তু খাবার নেওয়ার সময় যখন লাইনে দাঁড়াবেন তখন মাস্ক পরে রাখবেন। অনুরূপভাবে দায়িত্বরত কর্মীরাও এ বিষয়টি নিশ্চিত করুন যে, সর্বদা মাস্ক পরে থাকতে হবে। কর্মীরা যদি মাস্ক পরার ক্ষেত্রে উদাসীনতা প্রদর্শন করে বা দুর্বলতা দেখায় কিংবা বিধিনিষেধের প্রতি যতœবান না হয় তাহলে অতিথিরাও মান্য করবে না। এজন্য দায়িত্বরত কর্মীরা এবং অতিথিরা এ বিষয়টি নিশ্চিত করুন যে, আপনারা মাস্ক পরছেন তা হোক পার্কিং-এ বা গোসল খানায় অথবা পথ চলার সময় বা জলসা গাহে কিংবা খাবারের মার্কীতে। জলসা গাহেও মাস্ক পরে বসতে হবে। তবে হ্যাঁ! কর্তৃপক্ষ যদি কখনও মাস্ক খুলে চেহারা দেখাতে বলে তাহলে এক্ষেত্রে সহযোগিতা করুন। অনুরূপভাবে কোন বক্তব্য চলাকালীন যদি ব্যবস্থাপনার অধীনে শ্লোগান দেয়া হয় তাহলে এ বিষয়টিও নিশ্চিত করবেন যে, শ্লোগান দেওয়ার সময় বা এর উত্তর দেওয়ার সময় যেন কারও মাস্ক খুলে না যায়। অনেকে অসচেতনতা প্রদর্শন করেন। এবার এ বিষয়টি একেবারে নতুন তাই অনেক বেশি সচেতনতার সাথে এবং মনোযোগ সহকারে এ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে। নিজেদের সুরক্ষার জন্য এবং সেই সাথে অন্যদের সুরক্ষার জন্যও নাক ও মুখ উভয়ই ঢাকা আবশ্যক। এছাড়া গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশের সময় উভয় ধরনের চেকিং হবে। এইমস কার্ডও চেক করা হবে, আর সম্ভবত ভ্যাক্সিনেশন কার্ড এবং অন্যান্য অনুমতি পত্রও চেক করবেন। কাজেই, এক্ষেত্রেও যারা চেক করবেন তাদেরকে আশ্বস্ত করবেন এবং এমন কোন ধরনের মনোভাব প্রকাশ করবেন না যে, এত চেকিং আপনার খারাপ লাগছে। এসব সাবধানতামূলক ব্যবস্থা অংশগ্রহণকারীদের উপকারার্থেই গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া আমি আরেকটি কথা বলতে চাই তা হল, অংশগ্রহণকারী কম হওয়ার কারণে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নিশ্চিন্ত হয়ে যাবেন না। এক্ষেত্রে নিরাপত্তা কর্মীদেরও এবং অংশগ্রহণকারীদেরও সম্পূর্ণরূপে সচেতন থাকতে হবে যেমনটি পূর্বেও দিকনির্দেশনা পাওয়া যেত এবং নির্দেশনা থাকতো। এরপর খাবার সম্পর্কে একথাও বলে দিচ্ছি যে, দুপুরের খাবার ইনশাআল্লাহ্ মার্কীতেই দেওয়া হবে আর সেখানে আমার সেসব কথা মনে রাখবেন যা আমি বলেছি। কিন্তু ব্যবস্থাপনার পক্ষ থেকে রাতের খাবার প্যাকেট করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আপনারা খাবার নিজেদের ঘরে নিয়ে যেতে পারবেন। সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে তাড়াতাড়ি বিতরণ করার কিন্তু যদি কিছুটা সময় লেগেও যায় সেক্ষেত্রে অস্থির হবেন না। একইভাবে জলসা শোনার ব্যাপারেও সার্বিক যে দিকনির্দেশনা প্রতি বছর দেয়া হয়ে থাকে তা পুনারাবৃত্তি করে দিচ্ছি, জলসা শুনুন। আর অনেক দিন পর সাক্ষাৎ হবার কারণে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে এদিক সেদিক বসে গল্পগুজবে রত হবেন না। আপনারা যেহেতু জলসার জন্য এসেছেন তাই জলসাই শুনুন। এই মহামারির কারণে অনেক এমন লোকও থাকবেন বরং বলা উচিত, অনেক নিকট আত্মীয় ও বন্ধুও এমন থেকে থাকবেন যারা ভিন্ন ভিন্ন শহরে থাকার কারণে দীর্ঘদিন পর একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ করবেন। কারণ, এসময়ের মধ্যে জামাতীভাবেও কোন অনুষ্ঠান হয় নি। তাই, এই দীর্ঘসময়ের ব্যবধানে সাক্ষাৎ করা যেন তাদেরকে জলসার অনুষ্ঠান শোনা থেকে বঞ্চিত করে না দেয় বা দোয়ার প্রতি যেন অমনোযোগি না করে। যেহেতু জলসায় এসেছেন তাই এত্থেকে সর্বোচ্চ কল্যাণ লাভ করুন। হযরত মুসলেহ্ মওউদ (রা.) জলসার দিনগুলোতে যিকরে এলাহীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ পূর্বক একটি গূঢ়তত্ত¡ বর্ণনা করেছেন। তিনি (রা.) বলেন, আমার মনে হল, আল্লাহ্ তা’লা বলেছেন, জলসার দিনগুলোতে যিকরে এলাহী কর অর্থাৎ কোন সমাবেশে বসে থাকলে তাতে যিকরে এলাহী হওয়া উচিত। আর আল্লাহ্ তা’লা এর যে কল্যাণের কথা বলেছেন তা হল, উযকুরুল্লাহা ইয়াযকুরকুম অর্থাৎ তোমরা যদি যিকরে এলাহী কর তাহলে আল্লাহ্ তা’লা তোমাদের স্মরণ করতে আরম্ভ করবেন। এখন ভেবে দেখুন! সেই বান্দার চেয়ে সৌভাগ্যবান আর কে হতে পারে যাকে তার প্রভু স্মরণ রাখে অর্থাৎ যার যিকর খোদা তা’লা করেন?
অতএব, এ দিনগুলোতে যিকরে এলাহী আল্লাহ্ তা’লার কৃপারাজিকে আরো বেশি আকর্ষণ করার মাধ্যম হয়। তাই, এ দিনগুলোতে বিশেষভাবে যিকরে এলাহীর প্রতি জোর দিন এবং বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে যেখানে আহমদীরা একত্র হয়ে জলসা শুনছেন বা পরিবারের সদস্যদের সাথে বসে জলসা শুনছেন তারাও যিকরে এলাহীর প্রতি মনোযোগী হোন, যেন আমরা আল্লাহ্ তা’লার যতবেশি সম্ভব কৃপারাজি আকর্ষণ করতে পারি। আমরা যেন আমাদের আধ্যাত্মিক অবস্থাকে উন্নততর করতে পারি এবং আল্লাহর কৃপা আকর্ষণ করে আমরা যেন জাগতিক বিপদাপদ থেকেও সুরক্ষিত থাকতে পারি।
অতএব, জ্ঞানগর্ভ এবং তরবিয়তী বক্তৃতাসমূহ শুনে এবং দোয়ার প্রতি মনোযোগী হয়ে জলসার এই পরিবেশ থেকে পূর্ণরূপে উপকৃত হওয়ার চেষ্টা করুন। এবার উপস্থিতির সংখ্যা সীমিত হওয়ার কারণে সবার জন্য চেয়ারে বসার ব্যবস্থা রয়েছে তাই দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার সমস্যাও নেই। এমনিতেও জলসার একটি অধিবেশন খুব বেশি দীর্ঘ হয় না। সাধারণত দুই আড়াই বা সর্বোচ্চ তিন ঘণ্টার কাছাকাছি অধিবেশন হয় তাই যদি মেঝেতেও বসতে হয় এতটুকু সময়ের জন্য বসা কঠিন কিছু নয়। পরিশেষে আমি হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর একটি উদ্ধৃতি উপস্থাপন করছি, তিনি (আ.) বলেন,
সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনুন! আমি আমার জমা’ত এবং স্বয়ং নিজের জন্যও এটিই চাই এবং পছন্দ করি যে, কেবল বক্তৃতাসমূহে উপস্থাপিত বাহ্যিক কথাবার্তাকেই যেন সবকিছু মনে করা না হয় আর সকল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যেন এতেই সীমাবদ্ধ না হয়ে যায় যে, বক্তা কতই না জাদুকরী বক্তব্য প্রদান করছে আর তার শব্দমালা কতইনা উচ্চাঙ্গের। আমি এতে মোটেও সন্তুষ্ট নই। আমি কৃত্রিমভাবে বলছি না বরং আমার স্বভাব ও প্রকৃতির দাবি হল, যে কাজই করা হবে তা যেন খোদার জন্য করা হয় আর যে আলোচনাই হবে তা যেন খোদার খাতিরে করা হয়।
এরপর তিনি (আ.) বলেন, মুসলমানদের অধঃপতন ও পশ্চাদপদতার এটিই অন্যতম কারণ। নতুবা এত সম্মেলন, সমাবেশ ও বৈঠক হয় আর তাতে বিশিষ্ট ভাষাবিদ ও বাগ্মী বক্তারা তাদের বক্তৃতা পাঠ করে, কবিরা জাতির দুর্দশায় শোকগাঁথা পাঠ করে- তাহলে কারণ কি যে এসবের কোন প্রভাবই পড়ে না? উন্নতির পরিবর্তে জাতি দিন দিন আরো অধঃপাতে যায়? আসল কথা হল, এসব সমাবেশে আগমনকারী ব্যক্তিরা নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে অংশগ্রহণ করে না।
অতএব, প্রথম কথা হল; প্রতিটি বক্তৃতা শুনুন। এটি দেখবেন না যে, বক্তা ভালো কি না বা (মনে করবেন না যে) অমুকের বক্তৃতা শুনতে হবে অমুকেরটা শুনবো না। জলসায় বসে প্রতিটি বক্তৃতা শোনা উচিত এবং পুরো আন্তরিকতা ও মনোযোগ দিয়ে শোনা উচিত। আর এই আন্তরিকতা তখনই অর্জিত হবে যখন আল্লাহ্ তা’লার সন্তুষ্টি লাভের অধির আকাঙ্খা থাকবে। এই ব্যাকুলতা থাকলে, তা-ই আমাদের অবস্থার সংশোধন করতে পারে। আমাদের বংশধরদেরও সুধরে দিতে পারে এবং তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে। এজন্য আমাদের চেষ্টা-সাধনা করতে থাকা উচিত। আমাদের মধ্য থেকে যারাই এই জলসায় যোগদান করছে বা শুনছে প্রত্যেকে নিজের মাঝে সত্যিকার নিষ্ঠা ও বিশ্বশস্ততা সৃষ্টি করবে, আল্লাহ্ তা’লার কাছে আমার এ দোয়াই থাকবে আর আবওহায়ার জন্যও দোয়া করুন। এদিনগুলোতে আবওহাওয়া যেন আমাদের কোন অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে বরং আল্লাহ্ তা’লা এটি আমাদের অনুকূলে করে দেন, আমীন।