10 Feb ৮৮তম তাহরীকে জাদীদের নতুন বছর ঘোষণা এবং আল্লাহ্র রাস্তায় খরচের গুরুত্ব জুমুআর খুতবা ৫ নভেম্বর ২০২১
যুক্তরাজ্যের (টিলফোর্ড, সারেস্থ) ইসলামাবাদের মুবারক মসজিদে প্রদত্ত সৈয়্যদনা আমীরুল মু’মিনীন হযরত মির্যা মসরূর আহমদ খলীফাতুল মসীহ্ আল্ খামেস (আই.)-এর ০৫ নভেম্বর, ২০২১ মোতাবেক ০৫ নবুয়্যত, ১৪০০ হিজরী শামসী’র জুমুআর খুতবা
তাশাহ্হুদ, তা’ঊয এবং সূরা ফাতিহা পাঠের পর হুযূর আনোয়ার (আই.) বলেন:
আল্লাহ্ তা’লা পবিত্র কুরআনে মু’মিনের যেসব বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন, সেগুলোর মাঝে একটি হলো, তারা নিজেদের পবিত্র সম্পদ থেকে আল্লাহ্ তা’লার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তাঁর পথে ব্যয় করে। আল্লাহ্ তা’লা পবিত্র কুরআনে অর্থ ব্যয় করার বিষয়ে উল্লেখ করে কোথাও শুধু এটি বলেছেন যে, মু’মিন- অর্থ ব্যয় করে থাকে। কোথাও সাদকার দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করতে গিয়ে সদকা নিয়ে কথা বলেছেন, কোথাও যাকাতের বিষয়ে বলতে গিয়ে আল্লাহ্ তা’লা ব্যয়ের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। এরপর যারা কুরবানী করে, নিজেদের ধনসম্পদ আল্লাহ্র পথে ব্যয় করে, সেই সম্পদ কোন কোন স্থানে কীভাবে ব্যয় করতে হবে তাও বলে দিয়েছেন। যেভাবে এই ঐশী জামা’তের পদ্ধতি হলো, তারা নিজেদের সম্পদ পবিত্র করার লক্ষ্যে, আল্লাহ্ তা’লার কৃপা অর্জন করার জন্য, আল্লাহ্ তা’লার সন্তুষ্টি লাভ করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ্র পথে ব্যয় করে। জামা’তের মাঝেও এভাবে আর্থিক কুরবানীর ধারা অব্যাহত আছে। জামা’তের সদস্যদেরও জানা আছে যে, আল্লাহ্ তা’লার আদেশ এটি আর তারা যে কুরবানী করে তা কীভাবে ব্যয় করা হয় (তাও তাদের জানা আছে)। হযরত মসীহ্ মাওউদ (আ.) যে মিশন নিয়ে এসেছিলেন তা হলো আল্লাহ্ তা’লার তৌহিদ (তথা একত্ববাদ) জগতে প্রতিষ্ঠিত করা এবং ইসলাম ও মহানবী (সা.)-এর পতাকা পৃথিবীতে উড্ডীন করা। এ কাজ কোন সহজ কাজ নয়, জগতে এই বাণী প্রচার করা বিশাল কাজ এবং এর জন্য অর্থের প্রয়োজন আছে আর আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় জামা’তের বন্ধুরা আল্লাহ্ তা’লার এই আদেশÑ ‘নিজ সম্পদ আল্লাহ্ তা’লার পথে ব্যয় কর’ অনুধাবন করে সেই ব্যয়ভার পূর্ণ করার চেষ্টা করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আহমদীরা নিজেদের আর্থিক কুরবানীর এমন সব দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যেগুলো দেখে মানুষ এ বিশ^াসের ওপর পূর্বাপেক্ষা আরো দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় যে, নিশ্চিতভাবে হযরত মসীহ্ মাওউদ (আ.) আল্লাহ্ তা’লার সেই মহাপুরুষ যার মাধ্যমে শেষ যুগে ইসলামের অনিন্দ্যসুন্দর শিক্ষা পৃথিবীতে বিস্তার লাভ করার ছিল। এই একটি নিদর্শনকেই বিরোধীরা যদি গভীর অভিনিবেশে সাথে দেখে এবং নিজেদের হৃদয়ের বিদ্বেষ দূরীভ‚ত করে ন্যায়ের ভিত্তিতে অনুধাবনে সচেষ্ট হয় তাহলে আহমদীয়াতের সত্যতার এই নিদর্শনটিই তাদের হৃদয়কে অযথা বিরোধিতা থেকে পবিত্র করতে পারে। কিন্তু তাদের হৃদয় তো পাথরের চেয়ে অধিক শক্ত, বিশেষকরে আলেমদের, অর্থাৎ নামসর্বস্ব আলেমদের। যাহোক, তাদের সাথে খোদা তা’লাই বোঝাপড়া করবেন। আমি যেভাবে বলেছি, আহমদী নিজেদের ধনসম্পদ খোদা তা’লার পথে ব্যয় করে এবং এই প্রেরণা নিয়ে ব্যয় করে যে, হযরত মসীহ্ মাওউদ (আ.)-এর মিশনকে পূর্ণ করার ক্ষেত্রে তাদেরকে সহায়তা করতে হবে। মহানবী (সা.)-এর পতাকা জগতে উড্ডীন করতে হবে। নিঃসন্দেহে মু’মিনের সাথে আল্লাহ্ তা’লার এই অঙ্গীকার রয়েছে যে, ‘তোমরা যা-ই ব্যয় কর, আল্লাহ্র পথে যে সম্পদই প্রদান কর আমি তা কয়েক গুণ বাড়িয়ে ফেরত দিব। কিন্তু এমন কতক আহমদী আছেন যারা এই চিন্তা চেতনা রাখেন যে, খোদা তা’লার সন্তুষ্টিই আমাদের উদ্দেশ্য। যদি জাগতিক কল্যাণ লাভ হয় তবে তা হবে আল্লাহ্ তা’লার বিশেষ অনুগ্রহ। তাদের অভিপ্রায় হলো, কুরবানীর মাধ্যমে যেন আল্লাহ্ তা’লা আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং আমাদের পরিণতি শুভ হওয়ার উপকরণ যেন সৃষ্টি হয়।
আহমদীয়া জামা’ত কোন কোটিপতির জামা’ত নয়। এটি এমন একটি জামা’ত যার অধিকাংশ সদস্য হয় নি¤œবিত্ত অথবা মধ্যবিত্ত। এতদ্বসত্তে¡ও কুরবানীর একটি স্পৃহা রয়েছে আর তারা এচেষ্টায় লেগে থাকে যে, ইসলামের পুনর্জাগরণে আমরাও অংশীদার হতে পারি। আর তখন তাদের নূন্যতম কুরবানীগুলোও আল্লাহ্ তা’লার দরবারে গৃহীত হয়ে লক্ষ কোটি পাউন্ডের সমান ফলাফল বয়ে আনে। সুতরাং প্রকৃত বিষয় হলো আল্লাহ্ তা’লার দরবারে গৃহীত হওয়া। আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় জামা’ত নিজের সীমিত উপকরণের ওপর নির্ভর করে যে কাজ আরম্ভ করে আল্লাহ্ তা’লা তাতে এত কল্যাণ রেখে দেন যে, লোকেরা মনে করে হয়তো এরা এ কাজে কয়েক মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করছে। কিন্তু তারা জানে না এটি দরিদ্র লোকদের অর্থ, যাতে আল্লাহ্ তা’লার পক্ষ থেকে বরকত দেয়া হয় আর এর ফলে আমাদের ক্ষুদ্র কাজও বৃহদাকারে দৃষ্টিগোচর হয়। এখানে একথাও বলে দিতে চাই যে, জামা’ত যখন বৃদ্ধি পায় তখন বিভিন্ন চিন্তাধারার এবং কম তরবিয়তপ্রাপ্ত অথবা পুরোনো আহমদীদের মাঝেও তরবিয়তের অভাবে এমন চিন্তাধারার লোক দৃষ্টিগোচর হয় যারা ঘরেও এ ধরনের প্রশ্ন করে, সন্তানদের সামনেও এ ধরনের কথা বলে, ফলে সন্তানদের হৃদয়েও এমন প্রশ্ন উঁকি দেয়। তারা প্রশ্ন করে, আমরা কেন চাঁদা দিব? সুতরাং এটি প্রধানত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব নিজেদের আচরণ ও কর্মের মাধ্যমে লোকদের সন্দেহ দূর করা। লোকদের মাঝে বিশ্বাস সৃষ্টি হতে হবে আর তারা যেন জানতে পারে, লোকেরা যে চাঁদা দিচ্ছে এর ব্যয়ের একটি বিশেষ ক্ষেত্র রয়েছে আর সেই উদ্দেশ্যেই তা ব্যয় হয়ে থাকে। দ্বিতীয়ত তাদেরকে ভালোবাসার সাথে বুঝান যে, আর্থিক কুরবানীর গুরুত্ব কী? খোদা তা’লার দৃষ্টিতে এটি কত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আর এই আর্থিক কুরবানীর কারণেই তারা আল্লাহ্ তা’লার সন্তুষ্টি অর্জন করে। প্রশ্ন হলো কোথায় ব্যয় হয় এসব কুরবানীর? (এর উত্তর হলো) ইসলামের প্রচারে ব্যয় হয়। আমাদের টেলিভিশন চ্যানেল চলছে এতে অনেক খরচ হয়। পুস্তকাদি প্রকাশিত হচ্ছে, পবিত্র কুরআন প্রকাশিত হচ্ছে। দরিদ্র শিশুদের শিক্ষায় ব্যয় হচ্ছে। ক্ষুধার্তদের আহার করাতে খরচ হচ্ছে। মোবাল্লেগদের প্রশিক্ষণ এবং তাদের মাধ্যমে তবলীগে খরচ হচ্ছে, মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে। এমন আরো অনেক ক্ষেত্রে জামা’তের খরচ হচ্ছে। একথা আমি এজন্য বলছি না যে, খোদা না করুক লোকদের মনে অনেক প্রশ্নের উদয় হচ্ছে। বরং এজন্য বলেছি যে, জামা’ত যখন বিস্তার লাভ করে তখন এই বিস্তৃতির কারণে অনিষ্ট বিস্তারকারী এবং শয়তানী কুমন্ত্রণাদাতারাও এসে পরে। যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে এবং কম তরবিয়তপ্রাপ্ত মস্তিষ্কগুলোতে সন্দেহ সৃষ্টির চেষ্টা করে। আল্লাহ্ তা’লার অনুগ্রহে জামা’তের সদস্যরা এমন দৃঢ়ধারণা রাখেন আর তারা জানে, জামা’তের ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করার জন্য খরচের প্রয়োজন আর আল্লাহ্ তা’লার আদেশ হলো, তাঁর পথে ব্যয় কর।
জামা’তের এমন অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে যে, লোকেরা নিজেদের কাছে কিছু না থাকা সত্তে¡ও আল্লাহ্ তা’লার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ব্যয় করে। কোন না কোনভাবে ব্যবস্থা করে আর আল্লাহ্ তা’লাও এমন কুরবানীসমূহকে বিনষ্ট হতে দেন না। আল্লাহ্ তা’লা তাদেরকে নিজের প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ (সূরা তা’লাক: ৪) অর্থাৎ আর তাকে সেখান থেকে রিযক দেন যেখান থেকে রিযক আসার কথা সে চিন্তাও করতে পারে না। আল্লাহ্ তা’লাও এভাবে নিজের প্রতিশ্রæতি পূর্ণ করেন। আহমদীরা কুরআন করীমে এটি শুধু পড়েই না; বরং এ যুগেও তারা এটি পূর্ণ হতে দেখে। এ বিষয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা আমাকে লিখে পাঠায়। আমি এর উদাহরণ উপস্থাপন করব। এটি কোন পুরোনো যুগের কথা নয়, পুরোনো লোকদের গল্প নয় যা আমরা শুনছি; বরং এমন অভিজ্ঞতায় আল্লাহ্ তা’লা আজও মু’মিনদের ঈমানকে দৃঢ় করেন। আর শুধুমাত্র যারা সরাসরি আল্লাহ্ তা’লার অনুগ্রহ লাভ করছে তাদের ঈমান দৃঢ় হয় না বরং যারা তাদের নিকটে থাকে, এর দ্বারা তাদেরও ঈমান সুদৃঢ় হয়। এ কারণে এই আর্থিক কুরবানীর চেতনাও তাদের মাঝে সৃষ্টি হয় আর তারাও নিজেদের কুরবানীর মান বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট হয় যেন তারা আল্লাহ্ তা’লার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। যেভাবে আমি পূর্বেই বলেছি, আল্লাহ্ তা’লা কীভাবে পুরস্কৃত করেছেন সে সম্পর্কিত কিছু দৃষ্টান্ত আপনাদের উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করছি, অর্থাৎ যারা তাদের কুরবানীর কথা উল্লেখ করে আমার কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন তা থেকে কিছু দৃষ্টান্ত এখন আপনাদের উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করব।
গিনি কোনাকরির একটি দৃষ্টান্ত, সেখানকার মোবাল্লেগ ইনচার্জ সাহেব লিখেন, যখন তিনি তাহরীকে জাদীদ সম্পর্কে প্রদত্ত আমার খুতবাসমূহ থেকে কতিপয় ঈমান উদ্দীপক ঘটনা জামা’তের সদস্যদের শোনান এবং তাদেরকে বলেন, এসব দৃষ্টান্ত আপনাদেরও প্রদর্শন করা উচিত, তখন মায়মূনা নামক একজন মহিলার ফোন আসে। তিনি বলেন, তার কাছে সাংসারিক ব্যয় নির্বাহের মত অর্থ ছিল না। তার স্বামী কোন এক ব্যক্তিগত কাজে শহরের বাইরে গিয়েছিলেন। জুমুআর নামাযের পর তার পিতা তাকে উপহারস্বরূপ এক লাখ গিনি ফ্রাঙ্ক দেন আর তা পেয়ে তিনি বলেন, আমি দ্বিধাদ্ব›েদ্ব ছিলাম যে, এই অর্থ কি আমি চাঁদাস্বরূপ দিয়ে দিব নাকি সাংসারিক প্রয়োজনে ব্যবহার করব। অতঃপর আমি দোয়া করে এর অর্ধেকটা, অর্থাৎ ৫০ হাজার ফ্রাঙ্ক তাহরীকে জাদীদ খাতে প্রদান করি। তিনি বলেন, চাঁদা প্রদানের পর ২৪ ঘন্টাও অতিক্রান্ত হয় নি, যে স্থান থেকে টাকা পাওয়ার কথা আমি ভাবতেও পারতাম না আল্লাহ্ তা’লা অলৌকিকভাবে সে স্থান থেকেই আমাকে তিন লাখ ফ্রাঙ্ক প্রদান করেন। এ কারণে আমি আল্লাহ্ তা’লার কৃতজ্ঞতা আদায় করি যে, তিনি আমাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার সামর্থ্য প্রদান করেছেন। এ ঘটনা আমার ঈমান বৃদ্ধির কারণ হয়েছে।
কানাডার কোন এক মজলিসের সদর সাহেবা বলেন, আমাদের সেক্রেটারি তাহরীকে জাদীদ সাহেবা তাহরীকে জাদীদের যে বাজেট রয়েছে তা পূর্ণ করার তাগাদা দেন। যারা চাঁদা প্রদান করেন নি তাদের মোট বকেয়া কত তা জিজ্ঞেস করে জানা গেল, তাদের হিসাবে তা ৩২৫ ডলার যা নিতান্তই সামান্য। তিনি বলেন, আমি ভাবলাম এটি আমি নিজেই দিয়ে দিব। কিন্তু আমি আমার ব্যাংক একাউন্ট চেক করে দেখি তাতে কোন অর্থ নেই, বরং তিন ডলার অতিরিক্ত খরচ করার কারণে একাউন্ট মাইনাসে আছে। কিন্তু তিনি বলেন, পরবর্তী দিন আমি যখন একাউন্ট চেক করি তখন সীমাহীন বিস্ময়ের সাথে আমি লক্ষ্য করি যে, আমার একাউন্টে তিন হাজার ডলারের চেয়েও অধিক অর্থ রয়েছে। তিনি বলেন, এই অর্থ অনেকদিন যাবত আটকে ছিল আর যা পাওয়ার কোন আশাও ছিল না। আল্লাহ্ তা’লার অশেষ কৃপা হলো, তিনি যখন আমার এই মর্মে সদিচ্ছা দেখেন যে, বাকি অর্থ আমি আদায় করব তখন তা আদায়ের ব্যবস্থাও করে দেন আর যে অর্থ অনেকদিন যাবত আটকে ছিল তা অতি দ্রæত পেয়ে যাই।
অতঃপর দক্ষিণ আফ্রিকার শাহীন সাহেব নামক এক বন্ধু বলেন, আমি আমার ব্যাংক একাউন্টে সংরক্ষিত অর্থের অর্ধেক তাহরীকে জাদীদ খাতে প্রদান করি। তিনি বলেন, এটি কোন বড় অংক ছিল না। কিন্তু তার দৃষ্টিপটে এটি ছিল যে, এখন তাহরীকে জাদীদের চাঁদা প্রদানের শেষ মাস চলছে। এখন যদি চাঁদা আদায় না করি তাহলে পরবর্তীতে সুযোগ পাই কিনা তার ঠিক নেই। তিনি বলেন, আমি এভাবে চাঁদা আদায় করে দিই। আর সেদিনই তার পিতা তার সাথে সাক্ষাত করতে আসেন। তার পিতা তাকে বলেন, আমি তোমার একাউন্টে কিছু টাকা পাঠিয়েছি যা তুমি পেয়ে যাবে আর এতে তোমার চাহিদা পূর্ণ হবে। শাহীন সাহেব বলেন, তার পিতার পক্ষ থেকে তিনি যে অর্থ লাভ করেন তা তার তাহরীকে জাদীদ খাতে প্রদানকৃত চাঁদার বিশগুণ বেশি ছিল। সুতরাং তিনি তার পিতা কাছ হতে প্রাপ্ত অর্থ থেকে পুনরায় তাহরীকে জাদীদ খাতে চাঁদা প্রদান করেন। পুনরায় তিনি বলেন, যেদিন আমি বলি, আমার আয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আল্লাহ্ আমাকে এমন স্থান থেকে অর্থ প্রদান করেছেন যেখান থেকে আমি আশা করি নি আর এরপর চাঁদা প্রদান করলে সেদিন সন্ধ্যায়ই আমার কর্মস্থল থেকে মালিকের ফোন আসে যে, তোমার সম্মতি থাকলে আমরা তোমাকে দুবাইয়ে একটি চাকরি দিতে চাই। যাহোক, তিনি সম্মত হন আর এভাবে তার বিদেশে একটি অনেক ভালো রোজগারেরও একটি ব্যবস্থা হয়ে যায়। তিনি বলেন, এই দুটি ঘটনা কাকতালীয় নয় বরং আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আল্লাহ তা’লার এ অনুগ্রহ কেবলমাত্র চাঁদা প্রদান এবং কুরবানীর ফলেই হয়েছে।
এরপর অস্ট্রেলিয়ার একজন মুরুব্বী সাহেব লিখেছেন, জামা’তের একজন সদস্য বলেন যে, তিনি চাঁদা দেয়ার ওয়াদা করেন (কিন্তু) তার আর্থিক আবস্থা ভাল ছিল না। ওয়াদা আনুযায়ী চাঁদা আদায় করার কারণে তার হৃদয়ে এ বিশ্বাস জন্মে যে, খোদা তা’লা শতগুন বাড়িয়ে দিবেন কেননা আল্লাহ্ তা’লার এরূপ প্রতিশ্রæতি রয়েছে। অনেকে এমন চিন্তা-ধারণাও পোষণ করেন। তিনি একটি প্লট ক্রয় করে রেখেছিলেন যার মূল বৃদ্ধির কোনরূপ আশা ছিল না কিন্তু তিনি বলেন, চাঁদা আদায়ের পর অলৌকিকভাবে সেই প্লটের মূল্য শতগুণের অধিক বৃদ্ধি পায়। তিনি আরও বলেন, এ বিষযে আমার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে যে, আল্লাহ্ তা’লা সেই আর্থিক কুরবানী গ্রহণ করে এই অনুগ্রহ করেছেন।
এরপর কাজাকিস্তানের মুবাল্লেগ সাহেব লিখেন, সেখানে আলী বেগ সাহেব নামে স্থানীয় একজন নিষ্ঠাবান আহমদী আছেন। তিনি স্থানীয় মূদ্রায় দশ হাজার ট্যংগে তাহরীকে জাদীদ খাতে প্রদান করেন। তিনি বলেন, এরপর আমি কর্মক্ষেত্রে চলে যাই। অল্প কয়েক দিন পর কোম্পানীর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আমাকে ডেকে বলেন যে, আমাদের প্রতিষ্ঠানের এ বছর অনেক লাভ হয়েছে তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পুরো কোম্পানীতে ভাল কাজের নিরীখে কেবল তিনজনকে এক লক্ষ করে বোনাস প্রদান করব। তিনি আরও বলেন আল্লাহ্ তা’লা এই চাঁদা আদয়ের ফলে দশগুণ বৃদ্ধি করে আমাকে প্রদান করছেন যা পাওয়ার বিষয়ে আমার কোন আশাই ছিল না।
এরপর যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামের এক ব্যক্তি বলেন, আমি ২০১৬ সালে পরিবারসহ বয়আত করি আর বয়আতের পূর্বে আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল এবং অনেক ঋণ ছিল। জামা’তে অর্ন্তভুক্ত হয়ে যখন নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী চাঁদা আদায় শুরু করি, বরং কখনও কখনও আবার সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে কোন কোন তাহরীকে অংশগ্রহণ করা শুরু করি। বয়াতের শুরুর দিকের ঘটনা, আমার স্ত্রীর একটি স্কুলে তবলীগি স্টল লাগানোর কথা ছিল, আমি সন্তাদের দেখাশোনার জন্য অফিস থেকে ছুটি নেই। সেই ছুটির কারনে একশত পাউন্ডের ক্ষতির হওয়ার আশংকা ছিল। সেই সময়কার অর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ার ফলে তা আমাদের জন্য অনেক বড় অংক ছিল। তিনি বলেন, আমি ভাবলাম আল্লাহর তা’লার কাজের জন্য ছুটি নিতে হবে, ত্যাগস্বীকার করা উচিত তাই আমি ছুটি নিয়ে নিলাম। কিন্তু আল্লাহর পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। তিনি বলেন, আমার স্ত্রী (বুকস্টলের) কাজ শেষে বাড়ি পৌঁছালে আমার কর্মকর্তা আমাকে ফোন করেন যে, সম্ভব হলে এক ঘন্টার মধ্যে কর্মস্থলে চলে আসো কেননা গুরুত্বপূর্ণ কাজ এসেছে। তিনি বলেন, আমি দ্রæত রওনা হই, সেদিন কেবল এক ঘন্টার জন্য কাজ করি কিন্তু পুরো দিনের একশত পাউন্ড পেয়ে যাই। ঘরে ফিরে আমি আমার স্ত্রীকে পুরো ঘটনা বলি। [দুজনেই নতুন নতুন আহমদী হয়েছেন।] বেশ কিছু দিন পর্যন্ত আমরা আল্লাহ্র পুরস্কার প্রাপ্ত হয়ে আনন্দিত হই এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছি।
কাদিয়ানের উকিলুল মাল তাহরীকে জাদীদ বলেন, কেরেলা প্রদেশে অবস্থিত আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত, কেরেলাইর এক অত্যন্ত ধনাঢ্য বন্ধু, খুব ভাল ব্যবসায়ী এবং তাহরীকে জাদীদের চাঁদা আদায়ের প্রতি অসামান্য উদ্দীপনা রাখেন। প্রত্যেক বছর অনেক বড় অংক প্রদান করতেন। এবছর করোনার কারণে বড় অংক আদায় করার মতো আর্থিক অবস্থা ছিল না। হিস্যায়ে আমদ ও অন্যান্য চাঁদা তো আদায় করে দিয়েছিলেন কিন্তু তাহরীকে জাদীদের চাঁদা আদায়ের মত পরিস্থিতি ছিল না। তিনি বলেন, সর্বদা আল্লাহ চাঁদা আদায়ের সামর্থ্য দান করেন, কিন্তু এখন বাহ্যত কোন উপায় চোখে পড়ছে না। তবুও আল্লাহ্র প্রতি ভরসা বা আস্থা ছিল যে, তিনি কোন ব্যবস্থা করে দিবেন আর আমি চাঁদা পরিশোধ করে দিব। তিনি বলেন, (বছর) শেষ হওয়ার মাত্র দুদিন পূর্বে তিনি ১০ লক্ষ রুপীর বড় অংক তাহরীকে জদীদ খাতে প্রদান করেন। তিনি বলেন, জুমুআর দিন মুরব্বী সাহেব তাহরীকে জাদীদ খাতে চাঁদা দেয়া প্রসঙ্গে পুনরায় দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং আমার খুতবা থেকে কিছু পুরোনো ঘটনা তাদেরকে পড়ে শোনান। এতে তিনি খুবই প্রভাবিত হন এবং ১০ লক্ষের পরিবর্তে প্রায় ১৮ লক্ষ রুপী চাঁদা প্রদান করেন। এখন তিনি আশা করছেন সরকারী একটি প্রকল্পের পাবেন। তিনি বলেন, সেই কাজটি পেলে তাহরীকে জাদীদ খাতে আরো বড় অংকের চাঁদা প্রদান করব। যাহোক বিত্তবান আহমদীদের মাঝেও এমন একটি শ্রেণি রয়েছে যারা কুরবানী করার প্রেরণা রাখেন আর হাতে অর্থ এলে লুকিয়ে রাখেন না বরং আল্লাহ্ তা’লার পথে ব্যয় করার চেষ্টা করেন।
বুরকিনা ফাসোর মোবাল্লেগ হাবিব সাহেব লিখেন, আমাদের একজন সদস্য হলেন সুরে সাঈদো সাহেব। ১৭ শত ফ্রাঙ্ক সেফা তার বকেয়া ছিল আর বছর শেষ হতে কেবল এক সপ্তাহ বাকি ছিল। তিনি অনেক চেষ্টা করে দুই হাজার সিফা পরিশোধ করেন যা তার বকেয়া হতে কিছুটা বেশি ছিল। তিনি বলেন, চাঁদা পরিশোধ করার পর এক ঘন্টা অতিবাহিত হতে না হতেনই কোন একজন পরিচিত ব্যক্তি আমাকে ১০ হাজার ফ্রাঙ্ক পাঠিয়ে দেয়, এক ঘন্টা পর আরও ১০ হাজার ফ্রাঙ্ক সিফা প্রেরণ করে এবং একই সাথে ফোন করে বলে, এই পুরো ২০ হাজার ফ্রাঙ্ক সিফাই আমি উপহারস্বরূপ তোমার জন্য পাঠিয়েছি। সাঈদো সাহেব বলেন, এই পরিচিত ব্যক্তি আজ পর্যন্ত আমাকে কোন অর্থ পাঠায় নি আর এমনটি প্রথমবার হয়েছে। তিনি বলেন, আমি দুই হাজার ফ্রাঙ্ক বকেয়া চাঁদা পরিশোধ করি আর আল্লাহ্ তা’লা দুই ঘন্টার মধ্যে বৃদ্ধি করে ২০ হাজার ফ্রাঙ্ক সিফা দান করেছেন। এভাবে মানুষের ঈমানও বৃদ্ধি পায়।
সিয়েরা লিওনের একটি স্থানের নাম লুঙ্গি। এই রিজিওয়নের মোয়াল্লেম আব্দুল্লাহ্ সাহেব লিখেন, বয়োবৃদ্ধ একজন সদস্য হলেন পা জেং কায়েন সাহেব। গত বছর তার তাহরীকে জাদীদের ওয়াদা ছিল ২৫ হাজার লিওন আর এ বছর তিনি ওয়াদা লিখিয়েছেন ৫০ হাজার লিওন। আর্থিকভাবে তিনি সমস্যার সম্মুখীন ছিলেন। তাহরীকে জাদীদের (চাঁদা) পরিশোধের জন্য ঘোষণা দেয়া হলে তিনি লোকাল মিশনারীকে জিজ্ঞেস করেন, আমার ওয়াদা কত? যখন তাকে বলা হয় ৫০ হাজার লিওন। একথা শুনে তিনি খুবই বিস্মিত হন। তিনি বলেন, এটি আমি কীভাবে লিখিয়ে দিলাম! আমি নিজে তো এটি পরিশোধ করতে পারব না। যাহোক, তাকে বলা হয়, আপনি নিজেই লিখিয়েছেন। এরপর তিনি নীরব হয়ে যান। তিনি বলেন, পরবর্তী সপ্তাহে আনসারুল্লাহর মিটিং ছিল আর তিনি এসে বলেন, আমার কাছে ৬০ হাজার লিওন ছিল (তা থেকে) ২০ হাজার লিওন বাড়িতে রেখে এসেছি আর ৪০ হাজার লিওন তাহরীকে জাদীদ খাতে চাঁদা দেয়ার জন্য নিয়ে এসেছি। এখন আমার কাছে ফিরে যাওয়ার ভাড়াও নেই। তিনি বলেন, আমি তাকে বলি আপনি ত্যাগস্বীকার করেছেন, আল্লাহ্ আপনার ব্যবস্থা করে দিবেন। তিনি পায়ে হেঁটেই যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে পুরোনো এক পরিচিত ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ হয়ে যায়। অনেক দিন পর তার সাথে সাক্ষাৎ হয় আর বন্ধুর সাথে তিনি কথা বলতে থাকেন। বন্ধু যখন চলে যাচ্ছিলেন, যেতে যেতে ৩০ হাজার লিওন বের করে এই বুযূর্গকে উপহার দিয়ে দেন। এই বুযূর্গ বলেন, একজন পরিচিত মহিলা ছিল, তার খোঁজ খবর নেয়ার জন্য (তার) বাড়িতে যান। (অর্থাৎ) তার শরীর স্বাস্থ্যের খবর নেয়ার জন্য। সেখান থেকে উঠে যাওয়ার সময় তিনি ১০ হাজার লিওন দেন এবং বলেন, এটি গাড়ি ভাড়ার জন্য। তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা’লা তাকে তার চাঁদার অর্থ এভাবেই ফিরিয়ে দেন। এরপর তিনি এ অর্থ দিয়ে তার সেই ওয়াদাও পূর্ণ করেন যা ৫০ হাজার (লিওন) ছিল। তিনি বলেন, এখানেই শেষ নয় বরং এরপর আরেকটি কৃপাও হয় আর সেটি হলো, এক আত্মীয় বিদেশে থাকত। তার ফোন আসে এবং সে বলে, অনেক দিন যাবৎ আপনার সাথে কোন যোগাযোগ নেই, এখন উপহারস্বরূপ আমি আপনাকে ৪ লক্ষ লিওন পাঠাচ্ছি। কেবল সমপরিমান অর্থই দেন নি বরং আল্লাহ্ তা’লা দশগুণ বৃদ্ধি করে দান করেছেন। তিনি বলেন, এভাবে আমার কুরবানী করার সৌভাগ্য হয়েছে আর আমার ঈমানও সমৃদ্ধ হয়েছে।
এরপর রয়েছে গিনি কোনাকোরির বোকে রিজিওয়নের ঘটনা। সেখানকার এক গ্রামের মিশনারী বলেন, তাহরীকে জাদীদের চাঁদা সংগ্রহের জন্য তাহরীকে জাদীদ সপ্তাহ পালন করা হয়। জুমুআর নামাযে দৃষ্টি আকর্ষণ করি এবং ব্যক্তিগতভাবেও বাড়ি বাড়ি যাই। একজন নিষ্ঠাবান আহমদী বন্ধু, নাম জিব্রাঈল সাহেব। পেশাগতভাবে একজন কাঠমিস্ত্রী। তার বাড়ি গিয়ে তাকে চাঁদা দেয়ার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, আমি আজকের ব্যয় নির্বাহের জন্য ২০ হাজার ফাঙ্ক রেখেছিলাম কিন্তু এর পুরোটাই আমি চাঁদা হিসেবে দিয়ে দিচ্ছি। এখন আমাদের কাছে এছাড়া আর কিছু নেই কিন্তু দোয়া করি, আল্লাহ্ তা’লা আমাদের এ কুরবানী গ্রহণ করুন। জিব্রাঈল সাহেব বলেন, গত তিন মাস যাবৎ তিনি একটি কাঠের খাট প্রস্তুত করে রেখেছিলেন কিন্তু কোন ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছিল না। অথচ চাঁদা দেয়ার কিছুক্ষণ পরই এক ব্যক্তি সেই খাট কেনার জন্য আসে আর সে এটি ১ মিলিয়ন ৫ লক্ষ ফ্রাঙ্ক দিয়ে কিনে নেয়। জিব্রাঈল সাহেব তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের মিশনারীকে ফোন করে বলেন, আমাদের কুরবানীকে আল্লাহ্্ তা’লা শুধু গ্রহণই করেন নি বরং কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে আমাদের ফেরত দিয়েছেন। এ কথা এখন তিনি তার বন্ধুবান্ধবকেও বলে বেড়ান যেন তাদের ঈমানও দৃঢ় হয়।
মুনীর হোসেন সাহেব ফ্রি টাউন সিয়েরা লিওনের একজন মোবাল্লেগ। তিনি বলেন, সূফী সঙ্গো নামে একজন খাদেম রয়েছেন। তিনি একজন ছাত্র, পড়াশোনা করছেন আর পড়াশোনার উদ্দেশ্যে তিনি মসজিদের অবস্থান করছেন। তিনি যখন আমার খুতবা শুনেন; রেকডিং শুনে থাকবেন অথবা গত বছরের তাহরীকে জাদীদের খুতবা শুনে থাকবেন যাতে আমি আর্থিক কুরবানীকারীদের কথা উল্লেখ করেছিলাম। তিনি বলেন, আমি অত্যন্ত মনোযোগের সাথে পুরো খুতবা শুনি। ফলে আমার মাঝে গভীর উদ্দীপনা ও প্রেরণা সৃষ্টি হয় যে, হায়! আমিও যদি অর্থিক কুরবানীতে অংশ নিতে পারতাম! কিন্তু সমস্যা হলো, আমি একজন ছাত্র, কোন কাজও করি না এবং পড়াশোনার খরচও অতি কষ্টে যোগাড় হয়। কিন্তু এই সমস্ত সমস্যা সত্তে¡ও আমার মাঝে ভীষণ অস্থিরতা বিরাজ করতে থাকে। আমি সেক্রেটারী তাহরীকে জাদীদ সাহেবকে আমার পাঁচ লাখ লিওনের ওয়াদা লিখিয়ে দেই যা পূরণ করা আমার জন্য ছিল অনেকটা দুঃসাধ্য। এরপর এ চাঁদা পরিশোধের ব্যাপারে আমি কিছুটা চিন্তিত হই এবং দিনরাত দোয়া করতে থাকি যেন আল্লাহ্ তা’লা কোন উপকরণ সৃষ্টি করে দেন আর আমি আমার ওয়াদা পূর্ণ করতে পারি। অতএব কিছু দিন পর আমার এক আত্মীয় তার ছেলেকে আহমদীয়া স্কুলে ভর্তি করার উদ্দেশ্যে নিয়ে আসেন। স্কুলের প্রিন্সিপাল সাহেবের সাথে আমি কথা বললে তিনি ছেলেটিকে ভর্তি করে নেন। (ফলে) সেই ছেলের পিতা আমাকে ১ লাখ লিওন দিয়ে বলেন, রেখে দাও! তোমার খাওয়া দাওয়ার ক্ষেত্রে কাজে আসবে। তিনি বলেন, সেদিন আমার কাছে খাওয়ার জন্যও কিছু ছিল না কিন্তু আমি এই পুরো অর্থই তাহরীকে জাদীদের চাঁদা খাতে দিয়ে দেই যাতে ওয়াদার কিছু অংশ পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি বলেন, কিছু দিন পর একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে (এবং বলে), একটি কাজ আছে যার ভাল পরিশ্রমিকও দেওয়া হবে, তুমি কি প্রস্তুত ? আমি তৎক্ষণাৎ সম্মত হয়ে যাই এবং আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় এ কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে আমি ১ মিলিয়ন লিওন পাই যাদ্বারা আমি আমার তাহরীকে জাদীদের চাঁদা তাৎক্ষণিকভাবে পরিশোধ করি।
গ্যাবোনের মোবাল্লেগ ইনচার্জ সাহেব লিখেন, ঈসা দীন্দা সাহেব একজন নবÑআহমদী। তিনি বলেন, বয়আত গ্রহণ এবং নিয়মিত চাঁদা প্রদানের পূর্বে আমার অবস্থা এমন ছিল যে, অনেক সময় দুই সপ্তাহ কিংবা তিন সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও কোন কাজ পেতাম না। কিন্তু যখন থেকে নিয়মিত চাঁদা দেয়া শুরু করেছি তখন থেকে প্রায় প্রতিদিনই কাজ পাই। তিনি অনেক দূর থেকে এসে নিয়মিত চাঁদা পরিশোধ করেন, বরং যে পরিমান অর্থ চাঁদা দিতেন সে পরিমান টেক্সিভাড়াও দিতেন। এখন তার জন্য দ্বিগুন খরচ করার পরিবর্তে বাড়ি থেকেই চাঁদা পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।
জর্ডানের এক ভদ্রমহিলার নাম অজস ফজর সাহেবা। তিনি বলেন, ২২ বছর পূর্বে আমি আহমদীয়াতে অন্তভর্‚ক্ত হয়েছি। আহমদী হওয়ার পর থেকেই আমি লক্ষ্য করেছি, যখনই আমি চাঁদা দেয়ার ইচ্ছা করি তখনই আল্লাহ্ তা’লা অদৃশ্য থেকে সাহায্য করে অর্থের ব্যবস্থা করে দেন। কখনও কখনও ঠিক ততটাই অর্থের সংস্থান হয় যতটা চাঁদা দেয়ার ইচ্ছা থাকে। এটি জামা’তের কল্যাণ। তিনি বলেন, আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছি। বাড়িতেই কোন কাজ পেলে করি। আমার অভ্যাস হলো, চাঁদার জন্য আমি আমার স্বামীর কাছ থেকে কোন অর্থ নেই না কেননা অধিকাংশ সময়ই তার হাতে অর্থকড়ি থাকে না। এজন্য আমি আমার ব্যক্তিগত উপার্জন থেকে চাঁদা দিয়ে থাকি। আমার ধারণা ছিল, এবছর আমি তাহরীকে জাদীদের চাঁদা দিয়ে দিয়েছি অথচ আসলে আমি ভুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু যখন আমাকে স্মরণ করানো হয় তখন আমার কাছে এক দিনারও ছিল না। আমি এ চিন্তায় ছিলাম যে, কীভাবে চাঁদা পরিশোধ হবে! তখন এক ছাত্রী আমার কাছে এসে বলে, আমাকে টিউশন পড়িয়ে দিন। আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় টিউশন ফি থেকে এখন চাঁদাও আদায় হয়ে যাবে আর কিছু অর্থ উদ্ধৃত্তও রয়ে যাবে।
বুরকিনা ফাসোতে বকু বিগালা নামে একটি জামা’ত আছে। সে জামা’তের প্রেসিডেন্ট সাহেব বলেন, আমার কাছে অÑআহমদী কয়েকজন বন্ধু এসে বলেন, আমরা আপনাদের ফসল দেখে বিস্মিত। কেননা আমরা দেখেছি আপনারা জামা’তের নির্মাণাধীন স্কুলের কাজে অনেক সময় দিয়েছেন আর আপনাদের ফসলের দেখাশোনার জন্য কেউ ছিল না। কিন্তু তা সত্তে¡ও আপনাদের ফসল আমাদের ফসলের চেয়ে ভালো হয়েছে। অথচ আমরা আমাদের পুরো সময় আমাদের জমির পেছনে দিয়েছি। কিন্তু তা সত্তে¡ও আমাদের ফসল ততটা ভালো হয় নি যতটা আপনাদের হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে জামা’তের প্রেসিডেন্ট সাহেব তাদেরকে বলেন, এ স্বেচ্ছাশ্রম আমরা সবাই আল্লাহ্ তা’লা এবং জামা’তের জন্য করেছিলাম। যে সময় আমরা স্কুলের জন্য দিতাম তখন এ দোয়াও করতাম যে, হে আল্লাহ্! তুমিই আমাদের ফসলের হিফাযত কর। কেননা আমরা তোমার ওপর ভরসা করেছি। এজন্য আল্লাহ্ তা’লা আমাদের দোয়া গ্রহণ করেছেন এবং আমাদের ফসলও ভালো হয়েছে। এখন আমরা সে অনুযায়ী চাঁদাও আদায় করে দিয়েছি।
শিশুরাও কীভাবে কুরবানীর চেতনা রাখে (দেখুন)! এসব শিশু দরিদ্র দেশের অধিবাসী। কিন্তু তাদের এ চেতনা এমন যা কোন উন্নত দেশের শিক্ষিত লোকদের মাঝেও নেই। বিস্তারিত ঘটনা হলো, যুনজুবার অঞ্চলের মোবাল্লেগ হোসাইন ইউসুফ সাহেব বলেন, একদিন মসজিদের বাইরে শিশুরা খেলা করছিল তখন এক বুযূর্গ সেপথে যাওয়ার সময় খুশি হয়ে শিশুদেরকে টফি ক্রয়ের জন্য ১৪শত শিলিং দেন। শিশুরা সেই অর্থ নিয়ে এক আহমদী দোকানদারের কাছে যায় এবং সেগুলোকে ভাঙ্গিয়ে নেয় অর্থাৎ চ্যাঞ্জ করিয়ে নেয়। সব শিশু সেই খুচরা পয়সা নিয়ে মসজিদে আসে এবং নিজ নিজ অংশের অর্থ দিয়ে টফি ক্রয়ের পরিবর্তে নিজ নিজ অংশের অর্থ থেকে প্রত্যেকে একশ শিলিং করে চাঁদা আদায় করে এবং খুব আনন্দের সাথে তাদের রশিদ নিজেদের কাছে রাখে। যখন আহমদী দোকানদার জানতে পারে যে, শিশুরা চাঁদা দেয়ার জন্য মুদ্রা পরিবর্তন করেছিল তখন তারও বিস্ময়ের সীমা ছিল না। এই শিশুরাই একদিন আহমদীয়া জামা’তের দৃঢ় ভিত্তিতে পরিণত হবে, ইনশাআল্লাহ্।
এরপর শিশুদের কুরবানীর আরেকটি বিস্ময়কর ঘটনা রয়েছে। এটিও তাঞ্জানিয়ার ঘটনা। সমুয়ের মোয়াল্লেম লিখেন, জামা’তের তিনজন শিশু রয়েছে যারা চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। মসজিদে তারা নিয়মিত তালীম তরবিয়তী ক্লাশে অংশ নেয়। তিনজনের পরিবারই আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। স্থায়ী কোন আয়-উপার্জনের ব্যবস্থা নেই। গত মাস থেকে তারা পরস্পর প্রতিযোগিতা করছিল আর এ প্রতিযোগিতা ছিল তাহ্রীকে জাদীদের চাঁদা প্রদানের ক্ষেত্রে। প্রত্যেকেই পৃথকভাবে নিজ নিজ চাঁদা নিয়ে আসত এবং তাদের কাছে যতটুকুই অর্থ থাকত তা তারা (চাঁদা) দেয়ার চেষ্টা করত। এভাবে তাদের কেউ ৫ শত কেউ ৪ শত আবার কেউ ৭ শত শিলিং, অর্থাৎ যাÑই তাদের কাছে ছিল (তা তারা চাঁদা) দিয়েছে। (মোয়াল্লেম সাহেব) লিখেন, একবার আমি তাদের জিজ্ঞেস করি, তাহ্রীকে জাদীদের জন্য তোমরা যে অর্থ নিয়ে আস তা কোত্থেকে নিয়ে আস? তাদের একজন বলে, আমি আমার মায়ের সাথে জঙ্গলে গিয়ে কাঠ কাটতে সাহায্য করি। হাতখরচ হিসেবে যে অর্থ পাই তাথেকে তাহ্রীকে জাদীদের চাঁদার জন্য রেখে দিই। সে আরো বলে, যখন থেকে আমি চাঁদা দেয়া আরম্ভ করেছি তখন থেকে সব সময় জ¦ালানী কাঠের গ্রাহক দ্রæত পেয়ে যাই আর কখনোই লোকসান হয় নি। দ্বিতীয় শিশু বলে, সেও তার হাতখরচ থেকে চাঁদার অর্থ পৃথক করে রাখে। তৃতীয় শিশুটি জানায়, তাদের বাড়ির কাছের ফলের গাছে ফল ধরে, (সেখান থেকে) কখনো কখনো তাদের খাওয়ার পর উদ্বৃত্ত কিছু ফল বিক্রি করে দেয় তা থেকে অর্জিত অর্থ দিয়ে চাঁদা দিয়ে থাকে। এই তিনজন শিশুই চাঁদা দেয়ার কল্যাণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে চাঁদা দেয়ার ফলে তাদের জীবনে কীভাবে প্রশান্তি অনুভ‚ত হয় তাও উল্লেখ করেছে। আল্লাহ্ তা’লা এই শিশুদের ঈমান ও নিষ্ঠার ক্ষেত্রে উত্তরোত্তর উন্নতি দান করুন। এই হলো সেই ঈমান যার স্বাদ আমাদের শিশুরাও পায়।
বেলিজের মোবাল্লেগ ইনচার্জ শিশুদের আরেকটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন। এটি একেবারে পৃথিবীর অপরপ্রান্ত। একটি এক প্রান্ত অন্যটি ভিন্ন প্রান্ত কিন্তু ভেবে দেখুন! তাদের চিন্তাধারা আশ্চর্যজনকভাবে এক ও অভিন্ন! বেলিজে মসজিদ নির্মাণকালে ১৪ বছরের এক কিশোর তার সমস্ত সঞ্চয় ও পুঁজি উপস্থাপন করে। সে তাহ্রীকে জাদীদ খাতেও কুরবানীর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। শিশুটি খুবই দরিদ্র ঘরের ছেলে। তার পিতা অতি কষ্টে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করে। তিনি বলেন, মুরব্বী সাহেব তাহ্রীকে জাদীদের গুরুত্ব সম্পর্কে উল্লেখ করলে এই কিশোর এক ডলার দিয়ে বলে, এটি আমার পরিবারের পক্ষ থেকে। এতে মুরব্বী সাহেব খুবই আনন্দিত হন, কেননা তাদের আর্থিক অবস্থার প্রেক্ষিতে এতটা কুরবানী করাও অনেক বড় বিষয় ছিল। কিন্তু দানিয়েল, অর্থাৎ সেই কিশোর বলে, এখানে আমার নাম লিখবেন না। এটি আমি আমার পরিবারের পক্ষ থেকে দিয়েছি। আমার অংশ আমি পরে দিব। পরের দিনই সেই কিশোর আরো ১০ ডলার দিয়ে বলে, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ^াস করি, আল্লাহ্ আমাদের পরিবারের সবার প্রতি কৃপা করবেন। একই সাথে নিজের পক্ষ এই (অর্থ চাঁদা) দিয়ে দেয়।
আল্লাহ্ তা’লা কীভাবে নব দীক্ষিতদের হৃদয়ে কুরবানীর প্রেরণা সৃৃষ্টি করেন এবং কীভাবে তাদেরকে কল্যাণমÐিত করেনÑ এ সম্পর্কে মরক্কোর নূরুদ্দীন সাহেব বলেন, ২০১৭ সনে বয়আত করার পর থেকেই আর্থিক কুরবানীতে অংশ নিতে আরম্ভ করি। তখন আমার আয় একেবারেই সামান্য ছিল। তিনি বলেন, একদিন জামা’তের ওয়েবসাইটে তিনি আমার খুতবা শুনেন যাতে আমি হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর সাহাবী এবং অন্যান্য আহমদীদের আর্থিক কুরবানীর ঘটনা তুলে ধরেছিলাম। তিনি বলেন, এর ফলে আমার হৃদয়ে এক ধরণের উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। কিছু দিন পর মরক্কো জামা’তের প্রেসিডেন্ট সাহেবকে আমি বলি, আমি ওসীয়্যত করতে চাই। তিনি কতক শর্ত এবং দায়-দায়িত্ব সম্পর্কে অবহিত করেন, ফলে আমার আগ্রহ আরো বৃদ্ধি পেয়ে যায় আর আমি ওসীয়্যত করে ফেলি। এর কয়েক মাস পরেই আমার (আর্থিক) অবস্থা ভালো হয়ে যায় আর একটি কোম্পানিতে ভালো বেতনের চাকরি পেয়ে যাই। আমি এখন ঐ কোম্পানিতেই অন্য একটি শহরে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছি। আমার বেতন কেবল তিন বছরে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমার ওপর কোম্পানির ভরসা এতটা বৃদ্ধি পেয়েছে যে, আমি যখন মরক্কোর রাজধানী থেকে অন্য শহরে যাচ্ছিলাম তখন ম্যানেজার আমাকে বলেন, তোমার মতো কাজ করে এমন অন্য কোন আহমদী যদি থাকে আর চাকরি করতে চায় তাহলে বলতে পার। তিনি বলেন, এটি শুনে আমি ভীষণ আবেগাপ্লুত হই আর আমার চোখে আশ্রæসজল হয়ে যায়। আমি আমার শহরের এক আহমদী বন্ধুর সাথে কথা বলি এবং তিনি চাকরিটি পেয়ে যান। তাকেও এখন ম্যানেজার বানিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, চাঁদা দেয়ার কারণে আমার ওপর পরিবারের চাপ রয়েছে এবং কতক আত্মীয়-স্বজনের পক্ষ থেকেও হাসিঠাট্টার সম্মুখীনও হতে হয়েছে, কিন্তু আল্লাহ্ তা’লার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যে, চাঁদা প্রদানের কারণে আমাকে কখনো আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হতে হয় নি।
অস্ট্রেলিয়ার পার্থ থেকে মুরব্বী সাহেব লিখেন, একজন খাদেম, যিনি তখনও এ বছরের তাহরীকে জাদীদের চাঁদা আদায় করেন নি, চাঁদা আদায়ের প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, কোভিডের কারণে কাজ পাই নি। আর্থিক সংকটের সম্মুখীন, কিন্তু কিছুদিন পর তার সাথে যখন পুনরায় সাক্ষাৎ হয় তখন তিনি বলেন, আমি আমার চাঁদা আদায়ের জন্য ঘরের কিছু আসবাবপত্র বিক্রি করে দিয়েছি যাতে চাঁদা পরিশোধ করতে পারি। তিনি আরও বলেন, আমি এরূপ করার কিছুদিন অতিবাহিত হতেই চারটি নতুন কন্ট্রাক্ট পাই এবং একইসাথে নতুন একটি চাকরিও পেয়ে যাই যা পেইড জব ছিল আর আয়ও পূর্বের চেয়ে বেশি ছিল। আমি অনুধাবন করি যে, এটি আল্লাহ্ তা’লার কৃপা। ঘরের জিনিসপত্র বিক্রি করে আমি যে চাঁদা আদায় করেছিলাম তা আল্লাহ্ তা’লা তৎক্ষণাৎ ফিরিয়ে দিয়েছেন।
এরপর দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার একটি শহর থেকে তাহরীকে জাদীদের সেক্রেটারী সাহেব বলেন, একজন নিষ্ঠাবান বন্ধুর তাহরীকে জাদীদের চাঁদা বকেয়া ছিল। তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আমি আমার বাড়ি বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দিয়ে রেখেছি। বিক্রি হতেই আমি চাঁদা পরিশোধ করে দিব। এর দু’দিন পরে তার ফোন আসে এবং তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় আশাতীত লাভজনক মূল্যে আমার বাড়িটি বিক্রি হয়েছে। আর তার বিশ্বাস যে, চাঁদা পরিশোধ করার অঙ্গীকারের কারণে এমনটি হয়েছে। সুতরাং তিনি তার ওয়াদার চেয়ে ছয়গুণ বেশি তাহরীকে জাদীদ খাতে চাঁদা আদায় করেছেন। আল্লাহ্ তা’লা যখন জাগতিক কল্যাণেও ভ‚ষিত করেন তখন একজন আহমদীর দৃষ্টি এদিকে আকৃষ্ট হয় যে, এটি আমার কোন শ্রেষ্ঠত্ব নয় বরং ত্যাগের ফসল। কেবল একজন আহমদীই এই চিন্তাচেতনায় সমৃদ্ধ, অন্য কারো মাথায় এমন কথা আসতেই পারে না।
আর্জেন্টিনার মুবাল্লেগ সাহেব লিখেন, আমি আর্থিক কুরবানীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে একটি প্রবন্ধ লিখি আর তাতে আমার (অর্থাৎ হুযূরের) খুতবার শব্দাবলী লিখেন যে, নও-মুবাঈনদের বলা উচিত, আর্থিক কুরবানী করা আবশ্যক। তাদেরকে বলুন, তোমাদের কাছে আহমদীয়াতের যে বাণী পৌঁছেছে তা তাহরীকে জাদীদ খাতে আর্থিক কুরবানীকারীদের কারণেই পৌঁছেছে। এ কারণে এতে অংশগ্রহণ কর যেন তোমরা নিজেদের জীবনকে সুন্দরভাবে সাজাতে পার এবং এই বাণী যেন অন্যদের মাঝে প্রচার করতে পারেÑ এই উদ্বৃতিটি তিনি আমার খুতবা থেকে নিয়েছেন এবং তা ছাপিয়ে দেন। তিনি বলেন, এই প্রবন্ধ যখন জামা’তের সদস্যদের নিকট প্রেরণ করা হয় তখন একজন খাদেম আনাস হিযকীর সাহেব আমার সাথে যোগাযোগ করেন এবং বলেন, তিনি তাহরীকে জাদীদের চাঁদা আদায়ের জন্য মিশন হাউসে আসতে চান। তীব্র গরম সত্তে¡ও স্কুল ছুটি হওয়ার তাৎক্ষণিক পরেই তিনি পাবলিক বাসে এক ঘণ্টারও বেশি সময় সফর করে মিশন হাউসে পৌঁছেন এবং এক হাজার আর্জেন্টাইন পিসো তাহরীকে জাদীদ-এর চাঁদা হিসেবে উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, আমি খুবই অবাক হই, কেননা তার আর্থিক অবস্থা এমন ছিল না এবং তিনি নিজেও একজন স্কুলছাত্র। তার বিশেষ কোন আয়ের ব্যবস্থাও ছিল না। পরিবারের আর্থিক অবস্থাও খুব একটা ভালো ছিল না। তিনি বলেন, সেদিন তিনি অর্থাভাবে নিজেও দুপুরের খাবার পর্যন্ত খান নি। জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, যুগ খলীফার এই বাণী তার হৃদয়ে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে যে, নব-দীক্ষিতদেরও তাহ্রীকে জাদীদের চাঁদায় অংশগ্রহণ করা উচিত, কেননা তাদের নিকট আহমদীয়াতের বাণী তাহরীকে জাদীদের মাধ্যমেই পৌঁছেছে। তিনি বলেন, একদিকে আমি এই বাক্য পড়ি আর অন্যদিকে সেদিনই পবিত্র কুরআনের (সেই) আয়াত পড়ি যেখানে আল্লাহ্ তা’লা বলেন, শহীদদেরকে এবং তাদের কুরবানী সমূহকে মৃত জ্ঞান করো না, বরং তারা চিরঞ্জীব। তিনি বলেন, আমার হৃদয়েও এই আকক্সক্ষা জন্মায় যে, আমিও যেন এরূপ কুরবানী করতে পারি যার উপকারিতা ও উত্তম পরিণাম আমার মৃত্যুর পরও জীবিত থাকবে। তিনি বলেন, আমার পরিবারের সদস্যরা যারা সবাই অ-মুসলিম, আমার জন্মদিনে কিছু নগদ অর্থ উপহারস্বরূপ প্রদান করেছিল। সুতরাং সেই অর্থ হতে যা-ই এখন আমার কাছে অবশিষ্ট ছিল তার সবটুকুই আমি তাহরীকে জাদীদ খাতে প্রদান করেছি, যাতে করে এই অর্থ দিয়ে অন্যদের নিকটও আহমদীয়াতের বাণী পৌঁছায় যেভাবে আমার নিকট পৌঁছেছে। এ হলো সেই বৈপ্লবিক পরিবর্তন যা আহমদীয়াত গ্রহণের পর মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয়।
নতুন আহমদী হোক বা পুরাতন, যখনই কেউ এটি শুনে যে, আহমদীয়া জামা’ত কীভাবে অর্থ ব্যয় করে এবং কোথায় কোথায় ব্যয় করে, তখন এর একটি বিশেষ প্রভাব পড়ে থাকে। যে সকল জামা’তে এদিকে মনোযোগের ঘাটতি রয়েছে, তারা যদি এদিকে মনোযোগ নিবদ্ধ করে এবং এর উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব বর্ণনা করে তবে তাদের চাঁদার পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে। যাহোক, লাইবেরিয়ার একটি ঘটনা রয়েছে। একজন স্থানীয় মুয়াল্লেম মুর্তজা সাহেব এমন একটি জামা’তে পদায়িত আছেন যে জামা’তের অধিকাংশ সদস্যই নবদীক্ষিত এবং তারা খ্রিষ্টধর্ম হতে ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করেছে। তিনি বলেন, তাহরীকে জাদীদের কাজে তিনি তার একটি জামা’তের সফরে যান। তিনি যখন গ্রামে পৌঁছেন তখন ছিল দুপুর বেলা। অধিকাংশ লোক তাদের ক্ষেতে কাজ করার জন্য চলে গিয়েছিল। তিনি সেখানে উপস্থিত সদস্যদের বলেন, আমি আজ রাতে এখানেই অবস্থান করব এবং ততক্ষণ পর্যন্ত ফিরে যাব না যতক্ষণ পর্যন্ত আপনাদের শতভাগ সদস্য এই কল্যাণমÐিত তাহরীকে অংশগ্রহণ না করবে। রাতে যখন গ্রামের সকল সদস্য ফিরে আসে তখন তিনি জামা’তের সকল সদস্যের সম্মুখে তাহরীকে জাদীদের মহান তাহরীকের পটভূমি ও গুরুত্ব বর্ণনা করেন এবং সবাইকে অংশগ্রহণের জন্য আহŸান জানান। আল্লাহ্ তা’লার অপার কৃপায় জামা’তের সকল সদস্য-সদস্যা অত্যন্ত উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে এতে অংশগ্রহণ করে। পরদিন সকালে ফিরে যাবার সময় কেউ তাকে বলে যে, এক বন্ধু আলফানসো সাহেব দু’মাস যাবৎ (গ্রামের) বাইরে নিজের খামারে অবস্থান করছেন এবং তাহরীকে জাদীদে অংশগ্রহণ করেন নি; কিন্তু আপনি তার নিকট যেতে পারবেন না, কেননা প্রথমত তার জমি অনেক দূরে আর দ্বিতীয়ত বৃষ্টির কারণে রাস্তাও বন্ধ হয়ে আছে। মুয়াল্লেম সাহেব বলেন, আমি তার নিকটও যাব (যেন) আপনাদের জামা’তের শতভাগ লোক এই কল্যাণমÐিত তাহরীকে অংশগ্রহণ করতে পারে। জামা’তের সদস্যরা তাকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু তিনি তার সিদ্ধান্তে অনঢ় থাকেন। যাহোক কিছু সদস্য তার সঙ্গী হয়ে যায়। আড়াই ঘণ্টা পায়ে হেটে সফর করার পর জামা’তের সদস্যরা যখন আলফানসো সাহেবের কাছে পৌঁছায় তখন তিনি অত্যন্ত আশ্চর্যান্বিত হন এবং আনন্দিতও হন। তিনি তৎক্ষনাৎ তাহরীকে জাদীদের চাঁদা প্রদান করেন। তার অর্থাৎ আলফানসো সাহেবের স্ত্রী-সন্তানরাও তার সাথেই অবস্থান করছিল। তার স্ত্রী তখনও আহমদী হন নি। এই পুরো দৃশ্য দেখার পর তার স্ত্রী বলেন, আমি আহমদীদের ধর্মসেবার স্পৃহা দেখে অভিভূত, সুতরাং আজ হতে আমিও এই জামা’তে প্রবেশ করছি এবং আমার সন্তানরাও এই জামা’তের অংশ হবে। এভাবে এর (অর্থাৎ তাহরীকে জাদীদের) কল্যাণে একটি পরিবার আহমদীয়াতে প্রবেশের সৌভাগ্য লাভ করে।
বয়আত করার পর কীভাবে মানুষ আর্থিক কুরবানীর গুরুত্ব অনুধাবন করে! (তা দেখুন) মালি থেকে মুবাল্লেগ সাহেব লিখেন, একটি অঞ্চলে সীদু সাহেব নামে এক ব্যক্তি আছেন। একদিন তিনি কিতা-এর আহমদী মিশন হাউসে আসেন এবং নিজের তাহরীকে জাদীদের চাদা দিয়ে বলেন, তাহরীকে জাদীদের বছর শেষ হতে যাচ্ছিল আর আমি বেশ কিছুদিন যাবৎ অস্থির ছিলাম যেন আল্লাহ্ তা’লা আমাকে তৌফিক দান করেন আর আমি তাহরীকে জাদীদ খাতে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করতে পারি। আজ আল্লাহ্ তা’লা আমাকে তৌফিক দিয়েছেন, তাই আমি এসেছি। সেই ব্যক্তির একটি পা অকেজো ছিল। তাকে যখন বলা হয় যে, আপনি কষ্ট করে কেন এসেছেন, আমাদের জানালে আমরা স্বয়ং আপনার কাছে পৌঁছে যেতাম। তিনি উচ্ছসিত কণ্ঠে বলেন, আমি ইমাম মাহদীকে মান্য করেছি। আমি আপাতঃ দৈহিক দুর্বলতা সত্তে¡ও নিজেকে কতিপয় সুস্থ মানুষ থেকেও উত্তম মনে করি। আর আল্লাহ্র কৃপায় ধর্মের জন্য ভালবাসা রাখি। হয়তো এই অবস্থায় আল্লাহ্র ধর্মের উন্নতির খাতিরে আমার এ পর্যন্ত হেটে আসা আল্লাহ্ তা’লার কাছে গ্রহণীয় হবে এবং আমার ক্ষমার কারণ হবে।
বেনিন থেকে মুবাল্লেগ সাহেব লিখেন, মোতুওয়ামা নামে একজন স্থানীয় মুয়াল্লেম সাহেব বলেন যে, তিনি তার এলাকায় একটি নতুন বয়আতকৃত জামা’তে সফরে যান। সেই জামা’তের প্রেসিডেন্ট ইসমাইল সাহেব বলেন, আমি জন্মগতভাবে মুসলিম এবং সর্বদা প্রতিবছর আর্থিক কুরবানী আর আল্লাহ্র রাস্তায় খরচের নামে কিছু না কিছু আমাদের ইমামকে দিয়ে এসেছি। আমাদের আহমদী হওয়ার এটি প্রথম বছর ছিল এবং প্রথমবার আমরা আহমদীয়া জামা’তে আর্থিক কুরবানী করছি। এর পূর্বে আমরা ইমামকে যা-ই দিতাম তার সবটাই তার (ব্যক্তিগত) কাজে ব্যয় হতো। কিন্তু যখন আমরা আহমদীয়া জামা’তের মুবাল্লেগের কাছে আর্থিক কুরবানী হিসেবে প্রদত্ত অর্থের ব্যয়খাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি আর উত্তরে যে মহান উদ্দেশ্যে খরচের কথা তিনি আমাদের জানিয়েছেন সে সম্পর্কে আমরা অনবহিত ছিলাম। জামা’ত এই সামান্য প্রদত্ত অর্থকেও নষ্ট করে না, বরং এই সামান্য প্রদত্ত অর্থকেও সমগ্র পৃথিবীতে চলমান ছোট বড় সকল প্রকার কল্যাণমূলক কাজ এবং ইসলাম প্রচারে ব্যয় করে। আর কোন ব্যক্তি যদি সামান্য কিছু ফ্রাঙ্কও চাঁদা দেয় সে এর সর্বোত্তম প্রতিদান লাভ করে। অতএব, কুরবানীর এই দর্শন অনুধাবন করে আমরা তাহরীকে জাদীদ খাতে চাঁদা দিয়েছি আর আমরা অনুভব করেছি যে, এই বছর আমাদের ঘরসমূহে আর্থিক সংকটও আসে নি আর আমাদের এবং আমাদের সন্তানদের চিকিৎসায় নিত্যদিন যে খরচ করতে হতো, তা-ও এ বছর করতে হয় নি। আমাদের নামাযের উপস্থিতি পূর্বের চেয়ে ভালো হয়েছে আর আল্লাহ্ তা’লা আমাদের সুরক্ষিত রেখেছেন। আর আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় এই বছর আর্থিক কুরবানী করার পর আমাদের আত্মিক প্রশান্তিও লাভ হয়েছে যে, আমাদের কুরবানী বৃথা যায় নি। মানুষ বলে, আফ্রিকার দুর্গম শহরে বসবাসকারী অশিক্ষিত লোকদের বিবেক বুদ্ধি নেই। কিন্তু এসব এমন পরিপক্ক চিন্তা এবং উচ্চমানের মানসিকতা যে বড় বড় জ্ঞানী মানুষের মাঝেও দেখা যায় না। কত সুন্দরভাবে তারা সবকিছু বর্ণনা করেছেন এবং আর্থিক কুরবানীর গুরুত্ব কীভাবে তাদের সামনে স্পষ্ট হয়েছে দেখুন! এটি হলো সেই বিপ্লব যা বয়আতের পর মানুষের মাঝে সৃষ্টি হচ্ছে।
আল্লাহ্ তা’লা আমাদের সবাইকে ইসলামের প্রচারের জন্য ত্যাগ স্বীকার করার তৌফিক দান করুন এবং আমরা যেন নিজেদের পবিত্র উপার্জন থেকে কুরবানী করতে পারি আর আল্লাহ্ তা’লার নিকট এই কুরবানী গৃহীত হোক এবং তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হোন।
এখন আমি তাহরীকে জাদীদের নতুন বছরের ঘোষণা দেব এবং কিছু পরিসংখ্যানও উপস্থাপন করব। আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় ৩১ অক্টোবর তারিখে তাহরীকে জাদীদের ৮৭তম বছর শেষ হয়েছে এবং ৮৮তম বছর শুরু হয়েছে। আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় জামা’তের সদস্যরা তাহরীকে জাদীদের আর্থিক খাতে এক কোটি তিপান্ন লক্ষ পাউন্ড আর্থিক কুরবানী করার তৌফিক লাভ করেছে, যা গত বছরের তুলনায় ৮ লক্ষ ৪২ হাজার পাউন্ড বেশি। জার্মানী সারা পৃথিবীর জামা’তগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য ভাবে এগিয়ে আছে। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো নয়। কুরবানীর ক্ষেত্রে যদিও তারা অগ্রসর থাকে। তাদের জন্যও দোয়া করুন। এছাড়া এমনিতেও তারা আজকাল সমস্যার সম্মুখীন। নিত্যদিন কোন না কোন মামলা-মোকদ্দমা এবং কারো না কারো বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হতে থাকে। আইনও তাদেরকে যতটা নিষ্পেষণ করতে পারে, কষ্টের সম্মুখীন করতে পারে, তা করার চেষ্টা করে। আল্লাহ্ তা’লা তাদের সমস্যাদি দূর করুন এবং তারাও যেন স্বাধীনভাবে নিজেদের সকল কর্মকাÐ করতে পারে, ইজতেমাও যেন হয়, জলসাও যেন হয়, আর প্রকাশ্যে নিজেদের কুরবানীর প্রকাশও যেন তারা করতে পারে। তারা তো প্রকাশ করবে না, কিন্তু আমরা যেন তাদের হয়ে প্রকাশ করতে পারি। বাধ্য-বাধকতার কারণে তাদের কোন কোন কুরবানীর উল্লেখ করাও সম্ভব হয় না।
যাহোক, এছাড়া যারা আর্থিক কুরবানীকারী রয়েছে (তাদের মাঝে) যেমনটি আমি বলেছি, জার্মানী প্রথম স্থানে রয়েছে। এরপর রয়েছে যুক্তরাজ্য। অতঃপর স্থানে রয়েছে আমেরিকা। কানাডা চতুর্থ, পঞ্চম স্থানে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের একটি জামা’ত, ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে ভারত, সপ্তম স্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, অষ্টম স্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, নবম স্থানে রয়েছে ঘানা, দশম স্থানে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আরেকটি জামা’ত।
আফ্রিকান দেশসমূহে সামগ্রিক আদায়ের দিক থেকে সর্বোচ্চ স্থান অর্জন করেছে ঘানা, এরপর রয়েছে যথাক্রমে নাইজেরিয়া, বুরকিনা ফাঁসো, তানজানিয়া এবং সিয়েরা লিওন যথাক্রমে। পূর্বেও আমি বলেছিলাম যে, সিয়েরা লিওনে অগ্রসর হওয়া সম্ভব এবং অনেক সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু যেরূপ দৃষ্টি দেয়া উচিত তা দেয়া হচ্ছে না। মানুষকে যদি সঠিকভাবে বলা হয় তাহলে মানুষ কুরবানী করে, যেমনটি আমি ঘটনাবলীতেও উল্লেখ করেছি। এরপর রয়েছে যথাক্রমে গ্যাম্বিয়া, বেনিন, উগান্ডা, কেনিয়া এবং লাইবেরিয়া যথাক্রমে।
অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রথম স্থানে রয়েছে নাইজেরিয়া। এরপর রয়েছে যথাক্রমে গ্যাম্বিয়া, সেনেগাল, ঘানা, তানজানিয়া, গিনি কোনাক্রি, মালাভী, উগান্ডা, গিনি বাসাও, কঙ্গো কিনশাসা, বুরকিনা ফাসোঁ, কঙ্গো ব্রাযভিল।
আফ্রিকার বাইরে অংশগ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে অন্যান্য যেসব দেশ রয়েছে, অর্থাৎ বড় জামা’তগুলোতে এ ক্ষেত্রে যে সংখ্যাবৃদ্ধি হয়েছে, তাদের মাঝে রয়েছে জার্মানী প্রথম স্থানে, এরপর রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাজ্য, হল্যান্ড, বাংলাদেশ আর অতঃপর রয়েছে মরিশাস।
দফতর আউয়াল-এর খাতসমূহ আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় সবগুলো চালু আছে।
জার্মানীর প্রথম দশটি জামা’ত হলো যথাক্রমে রুইডার মার্ক, নোয়েস, মেহদিয়াবাদ, কোলোন, রডগো, নিডা, ফ্লোরিয হায়েম, পিনে বার্গ, ফ্র্যাঙ্কানথল, অসামবুর্গ।
প্রথম দশটি স্থানীয় এমারত হলো যথাক্রমে হ্যামবুর্গ, ফ্র্যাঙ্কফুর্ট, গ্রসগ্রাও, ডিটসেনবাখ, উইয বাদেন, মরফিল্ডন, রেডস্টেড, ম্যানহাইম, ডামস্টেড এবং রিযেলশায়েম।
পাকিস্তানে তাহরীকে জাদীদের কুরবানীতে আদায়ের দিক থেকে প্রথম স্থানে রয়েছে লাহোর, এরপর রয়েছে রাবওয়া, এরপর রয়েছে করাচী। জেলাগুলোর মাঝে রয়েছে ইসলামাবাদ, এরপর রয়েছে যথাক্রমে গুজরাওয়ালা, শিয়ালকোট, ওমরকোট, মুলতান, টোবাটেকসিং, মিরপুর খাস, আটেক, মিরপুর আযাদ কাশ্মীর এবং ডেরা গাজী খান।
চাঁদা সংগ্রহের দিক থেকে অধিক কুরবানীকারী এমারতগুলো হলো যথাক্রমে ডিফেন্স লাহোর, গুলশান ইকবাল করাচী, আযীযাবাদ করাচী, টাউনশিপ লাহোর, মডেল টাউন লাহোর, মোঘলপুরা লাহোর, দিল্লী গেট লাহোর, ক্লিফ্টন করাচী, ভাওয়াল নগর শহর এবং হাফেযাবাদ শহর।
যুক্তরাজ্যের প্রথম পাঁচটি রিজিওন হলো, বাইতুল ফুতুহ, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ফযল মসজিদ, এরপর রয়েছে ইসলামাবাদ, মিডল্যান্ডস এবং বাইতুল এহসান রিজিওন।
সামগ্রিক আদায়ের দিক থেকে যুক্তরাজ্যের প্রথম দশটি বড় জামা’ত হলো, ফার্নহাম, এরপর রয়েছে যথাক্রমে ইসলামাবাদ, সাউথ চীম, ফযল মসিজদ, উস্টার পার্ক, বার্মিংহাম সাউথ, ওয়ালস হল, অল্ডারশট, জিলিংহাম, গিল্ডফোর্ড।
সামগ্রিক আদায়ের দিক থেকে আমেরিকার জামা’তগুলো হলোÑ মেরিল্যান্ড, লস এঞ্জেলেস, ডেট্রয়েট, সিলিকন ভ্যালি, শিকাগো, সিয়াটল, সেন্ট্রাল ভার্জিনিয়া, অশকোশ, আটলান্টা, জর্জিয়া, সাউথ ভার্জিনিয়া, হিউস্টন, এরপর ইয়র্ক এবং বোস্টন।
চাঁদা সংগ্রহের দিক থেকে কানাডার স্থানীয় এমারতগুলো হলোÑ ভন, পীস ভিলেজ ও ক্যালগেরী (উভয়টি একই স্থানে রয়েছে), এরপর রয়েছে ভ্যানকুভার, টরেন্টো ওয়েস্ট, অতঃপর রয়েছে টরেন্টো যথাক্রমে।
ভারতের প্রথম দশটি জামা’ত হলো, যথাক্রমে কাদিয়ান প্রথম, এরপর রয়েছে কোম্বিটর, হায়দ্রাবাদ, কেরোলাঈ, পাঠাপ্রিয়াম, কোলকাতা, ব্যাঙ্গালুর, কেরাঙ্গ, কালিকাট, মেলাপালেম।
আর কুরবানীর দিক থেকে প্রদেশগুলো হলো কেরালা প্রথম স্থানে, এরপর তামিলনাডু, এরপর জম্মু কাশ্মীর, এরপর যথাক্রমে কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, পশ্চিম বঙ্গ, দিল্লি, লাক্শদ্বীপ।
অস্ট্রেলিয়ার প্রথম দশটি জামা’ত হলো যথাক্রমে ম্যালবোর্ন, লঙ্গ ওয়ারেন, ক্যাসেল হিল, মার্সডন পার্ক, ম্যালবোর্ন বেরভিক, এডলাইড সাউথ, প্যানরিথ, পার্থ, এসিটি ক্যানবেরা, প্যারামাটা, এডলাইড ওয়েস্ট। এগুলো ছিল অস্ট্রেলিয়ার জামা’তসমূহ।
আল্লাহ্ তা’লা সমস্ত কুরবানীকারীর ধনসম্পদ ও জনসম্পদে বরকত দান করুন।