জুমুআর খুতবার সারমর্ম

শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) জুমুআর খুতবা ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২

যুক্তরাজ্যের (টিলফোর্ড, সারেস্থ) ইসলামাবাদের মুবারক মসজিদে প্রদত্ত সৈয়্যদনা আমীরুল মু’মিনীন হযরত মির্যা মসরূর আহমদ খলীফাতুল মসীহ্ আল্ খামেস (আই.)-এর ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ মোতাবেক ২৫ তবলীগ, ১৪০১ হিজরী শামসী’র জুমুআর খুতবা

তাশাহ্হুদ, তা’ঊয এবং সূরা ফাতিহা পাঠের পর হুযূর আনোয়ার (আই.) বলেন:
হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-এর স্মৃতিচারণ করা হচ্ছিল, এতে বিদায় হজ্জের একটি ঘটনার কথা এভাবে লিপিবদ্ধ আছে যে, দশম হিজরী সনের যুলকাদাহ্ মাসের ছয়দিন বাকি থাকতেই মহানবী (সা.) বিদায় হজ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন, দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। একটি ভাষ্য অনুসারে তিনি শনিবার দিন যাত্রা করেন। যাহোক, এ সম্পর্কে একটি রেওয়ায়েত রয়েছে যাতে হযরত আসমা বিনতে আবি বকর (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) যখন বিদায় হজ্জের সংকল্প করেন তখন হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) নিবেদন করেন, হে আল্লাহ্র রসূল (সা.)! আমার কাছে একটি উট আছে। (আপনি অনুমতি দিলে) এর পিঠে আমরা আমাদের পাথেয় তুলে নেই। মহানবী (সা.) বলেন, (ঠিক আছে) এমনটিই কর। কাজেই, মহানবী (সা.) এবং হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) উভয়ের মালপত্রের জন্য একটিই উট ছিল। তিনি (সা.) পাথেয় হিসেবে কিছু আটা ও ছাতু নেন আর (তা) হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-এর উটের পিঠে তুলে দেন। হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) সেটি (অর্থাৎ উটটি) তাঁর ভৃত্যের দায়িত্বে দিয়ে দেন।
হযরত আসমা বিনতে আবি বকর (রা.) বর্ণনা করেন, আমরা মহানবী (সা.)-এর সাথে হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হই। আমরা যখন আরশ নামক স্থানে ছিলাম তখন মহানবী (সা.) বাহন থেকে নামেন আর আমরাও নামি। এরপর হযরত আয়েশা (রা.) মহানবী (সা.)-এর একপাশে বসেন আর আমি আমার পিতার পাশে বসে পড়ি। মহানবী (সা.) এবং হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-এর মালপত্র একত্রে একটি উটের পিঠে রাখা ছিল। যেমনটি পূর্বে বর্ণিত হয়েছে যে, সেটি হযরত আবু বকর (রা.)-এর ভৃত্যের কাছে ছিল। হযরত আবু বকর (রা.) তার আসার অপেক্ষায় ছিলেন। (কিছুক্ষণ পর) সেই ভৃত্য এলেও উটটি তার সাথে ছিল না। হযরত আবু বকর (রা.) বলেন, তোমার উট কোথায়? সে বলে, গত রাতে আমি সেটি হারিয়ে ফেলেছি। হযরত আবু বকর (রা.) বলেন, একটিমাত্র উট ছিল, তা-ও তুমি হারিয়ে ফেলেছ? এরপর হযরত আবু বকর (রা.) তাকে প্রহার করতে উদ্যত হন আর তখন মহানবী (সা.) মুচকি হেসে বলেন, এই এহরাম বাঁধা ব্যক্তি কী করে দেখ! ইবনে আবি রিযমা বলেন, মহানবী (সা.) এই এহরাম বাঁধা ব্যক্তিকে দেখÑবলা ছাড়া আর বেশি কিছু বলেন নি আর তিনি মুচকি হাসতে থাকেন। যাহোক, কোন কোন সাহাবী যখন জানতে পারেন, মহানবী (সা.)-এর পাথেয় বা রসদপত্র হারিয়ে গেছে তখন তারা হীছ নিয়ে আসেন (হীছ হচ্ছে এক ধরনের উন্নত হালুয়া যা খেজুর, আটা এবং মাখন দিয়ে প্রস্তুত করা হয়) আর তা মহানবী (সা.)-এর সম্মুখে উপস্থাপন করেন। হযরত আবু বকর (রা.), যিনি তাঁর ভৃত্যের প্রতি রাগ ঝাড়ছিলেন, মহানবী (সা.) তাকে বলেন, হে আবু বকর! ন¤্রতা অবলম্বন কর। এ বিষয়টি তোমার হাতেও নেই আর আমাদের হাতেও না। এই ভৃত্য অবশ্যই চেষ্টা করে থাকবে যাতে উটটি না হারায়, কিন্তু (তারপরও) হারিয়ে গেছে। যাহোক, তিনি (সা.) বলেন, এগুলো নাও, আমাদের জন্য এই পবিত্র খাবার এসেছে যা আল্লাহ্ তা’লা পাঠিয়েছেন আর এই ভৃত্যের সাথে আমাদের যে খাবার ছিল তা এর বিনিময়স্বরূপ। এরপর মহানবী (সা.) এবং হযরত আবু বকর (রা.)ও সেই খাবার খান এবং তারাও খান যারা তাঁদের উভয়ের সাথে আহার করতেন; এমনকি তারা সবাই পরিতৃপ্ত হন। এরপর হযরত সাফওয়ান বিন মুয়াত্তাল (সেখানে) পৌঁছেন। তার দায়িত্ব ছিল কাফেলার পেছনে আসা। যেমনটি ইফ্কের ঘটনায় বর্ণিত হয়েছে, তার দায়িত্ব ছিল (কাফেলার) পেছনে কোন জিনিস পড়ে আছে কিনা তা দেখা। হযরত সাফওয়ান (রা.) যখন আসেন তার সাথে উট ছিল আর এর পিঠে পাথেয়ও রাখা ছিল। উটকে তিনি মহানবী (সা.)-এর তাবুর দরজায় এনে বসান। তখন মহানবী (সা.) হযরত আবু বকর (রা.)-কে বলেন, দেখ! তোমার জিনিসপত্রের মধ্য থেকে কিছু হারিয়ে যায় নি তো? হযরত আবু বকর (রা.) নিবেদন করেন, আমাদের পানি পান করার পেয়ালাটি ব্যতীত অন্য কিছুই হারায় নি। তখনই সেই ভৃত্য বলে, ওই পেয়ালাটি আমার কাছে আছে। হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) রেওয়ায়েত করেন যে, বিদায় হজ্জের সময় তিনি মহানবী (সা.)-এর সাথে হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হন এবং তাঁর সাথে তাঁর স্ত্রী হযরত আসমা বিনতে উমায়েস (রা.)ও ছিলেন। তারা যুল হুলায়ফায় পৌঁছেন সেখানে হযরত আসমার (রা.) গর্ভে মুহাম্মদ বিন আবু বকরের জন্ম হয়। যুল হুলায়ফা মদিনা থেকে ছয়Ñসাত মাইল দূরের একটি স্থান। যাহোক হযরত আবু বকর (রা.) মহানবী (সা.)-এর কাছে এসে তাঁকে সন্তান জন্মের সংবাদ দেন। তখন রসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেন, আসমাকে বল, সে যেন গোসল করে হজ্জের এহরাম বেঁধে নেয় এবং সেসব কাজ করে যা অন্যরা, অর্থাৎ হাজীরা করে; কিন্তু সে যেন কা’বা শরীফের তাওয়াফ না করে। রসূলুল্লাহ্ (সা.) যখন উসফান উপত্যকা অতিক্রম করেন তখন তিনি (সা.) জিজ্ঞেস করেন, হে আবু বকর! এটি কোন উপত্যকা? আবু বকর (রা.) উত্তরে বলেন, এটি উসফান উপত্যকা। তখন তিনি (সা.) বলেন, হযরত হুদ (আ.) এবং হযরত সালেহ্ (আ.) খেজুরের বাকলের লাগাম পড়ানো দুটি লাল উটে আরোহন করে আলখাল্লা পরিহিত অবস্থায়, সাদা ও কালো নকশা করা চাদর জড়িয়ে তালবিয়া বলতে বলতে ‘বায়তুল আতীক’Ñএর হজ্জের উদ্দেশ্যে এ পথ ধরে গিয়েছিলেন।
বিদায় হজ্জের সফরে যাদের সাথে কুরবানীর পশু ছিল তাদের মাঝে হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)ও ছিলেন। হযরত আবু বকর (রা.) বর্ণনা করেন, আমি বিদায় হজ্জের সময় দেখি, সুহায়েল বিন আমর কুরবানীর পশু জবাইয়ের স্থানে দাঁড়িয়ে আছেন আর রসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর কুরবানীর পশুকে তাঁর নিকটবর্তী করে দিচ্ছেন। মহানবী (সা.) নিজ হাতে এটি জবাই করেন আর এরপর চুল কামানোর দায়িত্বে নিযুক্ত লোককে চুল কামাতে ডাকেন। তিনি (রা.) বলেন, আমি সুহায়েলকে দেখি, সে নিজের চোখে মহানবী (সা.)-এর পবিত্র কেশ স্পর্শ করছিল। তিনি (রা.) বলেন, তখন আমার মনে পড়ে এই সুহায়েলই হুদায়বিয়ার সময় মহানবী (সা.)-কে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ লিখতে বাঁধা দিয়েছিল; যা সন্ধিতে লেখার কথা ছিল। হযরত আবু বকর (রা.) বলেন, আমি আল্লাহ্ তা’লার প্রশংসা করি যিনি সুহায়েলকে ইসলামের পানে হেদায়েত দিয়েছেন আর হেদায়েত দেয়ার পর তিনি নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততায় সীমাহীন উন্নতি করেছেন।
মহানবী (সা.)-এর অন্তিম শয্যায় হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-এর নামায পড়ানোর ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে। হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ্ (সা.) তাঁর অসুস্থতার সময় বলেন, আবু বকরকে নামায পড়াতে বল। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি নিবেদন করি, হযরত আবু বকর (রা.) যখন আপনার স্থলে (নামায পড়াতে) দাঁড়াবেন তখন কান্নার কারণে তিনি তিলাওয়াত করতে পারবেন না। তাই আপনি হযরত উমর (রা.)-কে নামায পড়াতে বলুন। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, এরপর আমি হযরত হাফসা (রা.)-কে বলি, মহানবী (সা.)-কে আপনি বলুন যে, হযরত আবু বকর (রা.) যখন আপনার জায়গায় দাঁড়াবেন তখন কান্নার কারণে লোকদের তিনি শোনাতে পারবেন না। তাই আপনি হযরত উমর (রা.)-কে বলে দিন, তিনি যেন নামায পড়ান। হযরত হাফসা (রা.) তা-ই করেন। এতে রসূলুল্লাহ্ (সা.) অসন্তুষ্ট হয়ে বলেন, চুপ কর। তোমরা তো দেখছি ইউসুফের মহিলাদের মতো (করছ)। আবু বকরকে বল, সে-ই যেন লোকদের নামায পড়ায়। মৃত্যুর পূর্বে মহানবী (সা.) যখন অসুস্থ ছিলেন তখন হযরত আবু বকর (রা.)-এর অনুপস্থিতিতে হযরত বিলাল (রা.) হযরত উমর (রা.)-কে নামায পড়াতে বলেন। রসূলুল্লাহ্ (সা.) কক্ষ থেকে হযরত উমর (রা.)-এর আওয়াজ শুনতে পেয়ে বলেন, আবু বকর কোথায়? আল্লাহ্ এবং মুসলমানরা আবু বকর ছাড়া অন্য কারো নামায পড়ানো পছন্দ করে না। তখন হযরত আবু বকর (রা.)-কে ডেকে পাঠানো হলে তিনি (রা.) তখন এসে পৌঁছেন যখন হযরত উমর (রা.) ইতোমধ্যেই নামায পড়িয়ে শেষ করেছেন। এরপর থেকে মহানবী (সা.)-এর অসুস্থতাকালীন সময় এবং তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত হযরত আবু বকর (রা.)-ই নামায পড়াতে থাকেন।
হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) নিজের অসুস্থতার সময় হযরত আবু বকর (রা.)-কে নামায পড়ানের নির্দেশ প্রদান করেন, তাই তিনি (রা.) তাদের নামায পড়াতেন। উরওয়া (রা.) বলতেন, রসূলুল্লাহ্ (সা.) তাঁর অসুস্থতায় কিছুটা আরাম বোধ করলে (কক্ষ থেকে) বেরিয়ে মসজিদে আসেন। এসে দেখেন, হযরত আবু বকর (রা.) নামাযে লোকদের ইমামতি করছেন। হযরত আবু বকর (রা.) মহানবী (সা.)-কে দেখে পিছনে সরে আসেন। এটি দেখে মহানবী (সা.) তাকে ইঙ্গিতে স্বস্থানেই অবস্থান করতে বলেন আর তিনি (সা.) হযরত আবু বকর (রা.)-এর সমান্তরালে তার পাশেই বসে পড়েন। হযরত আবু বকর (রা.) মহানবী (সা.)-এর নামাযের সাথে নামায পড়েন আর লোকেরা হযরত আবু বকর (রা.)-এর নামাযের সাথে নামায পড়ে।
এটিও বুখারী শরীফের রেওয়ায়েত। াঅনুরূপভাবে বুখারী শরীফেরই আরো একটি রেওয়ায়েত রয়েছে। হযরত আনাস বিন মালেক আনসারী (রা.) রেওয়ায়েত করেন, মহানবী (সা.) যে অসুস্থতায় মৃত্যুবরণ করেন সেই অসুস্থতার সময় হযরত আবু বকর (রা.) লোকদের নামায পড়াতেন। এভাবে যখন সোমবার আসে আর তিনি (রা.) নামাযের সারিতে (দাঁড়িয়ে) ছিলেন তখন মহানবী (সা.) কামরার পর্দা সরান। মহানবী (সা.) দÐায়মান অবস্থায় ছিলেন আর আমাদের দেখছিলেন। মহানবী (সা.)-এর পবিত্র চেহারা যেন কুরআন শরীফের পৃষ্ঠার মতো দেখাচ্ছিল। এরপর মহানবী (সা.) খুশি হয়ে মুচকি হাসেন আর আমাদের মনে হয়, মহানবী (সা.)-কে দেখার ফলে আনন্দে আমরা পরীক্ষায় পড়ে যাব। এমন সময় হযরত আবু বকর (রা.) পিছনের সারিতে যুক্ত হওয়ার জন্য পিছনে চলে আসেন আর তিনি (রা.) ধারণা করেন, মহানবী (সা.) নামাযের জন্য (হুজরা থেকে) বাহিরে আসছেন। কিন্তু মহানবী (সা.) ইঙ্গিতে বলেন, নামায পূর্ণ কর এবং এরপর পর্দা টেনে দেন আর সেই দিনই তিনি (সা.) মৃত্যু বরণ করেন।
প্রথম রেওয়ায়েত সম্পর্কে হযরত মুসলেহ্ মওউদ (রা.) এক স্থানে বলেন, হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন যে, মহানবী (সা.) যখন মরণ ব্যাধিতে আক্রান্ত তখন মারাত্মক দুর্বলতার কারণে তিনি নামায পড়াতে সক্ষম ছিলেন না, তাই তিনি (সা.) হযরত আবু বকর (রা.)-কে নামায পড়ানোর নির্দেশ দেন। হযরত আবু বকর (রা.) যখন নামায পড়ানো শুরু করেন তখন তিনি (সা.) কিছুটা সুস্থ বোধ করেন এবং নামাযের জন্য বের হন। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, হযরত আবু বকর (রা.)-কে নামায পড়ানোর নির্দেশ দেয়ার পর নামায শরু হয়ে গেলে তিনি (সা.) কিছুটা সুস্থ বোধ করেন। অতএব তিনি (সা.) দুই ব্যক্তির কাঁধে ভর দিয়ে বের হন। তিনি (রা.) বলেন, এখনও আমার দৃষ্টিপটে সেই দৃশ্য ভাসছে। অর্থাৎ ব্যথার তীব্রতার কারণে মহানবী (সা.)-এর পা মাটিতে ছেঁচড়াচ্ছিল। মহানবী (সা.)-কে দেখে হযরত আবু বকর (রা.) পিছনে সরে আসার ইচ্ছা করেন। এই ইচ্ছা সম্পর্কে বুঝতে পেরে রসূলুল্লাহ্ (সা.) আবু বকর (রা.)-কে ইশারায় বলেন, নিজের জায়গাতেই থাক। এরপর মহানবী (সা.)-কে সেখানে আনা হয় এবং তিনি (সা.) হযরত আবু বকর (রা.)-এর পাশে বসে পড়েন। এরপর মহানবী (সা.) নামায পড়া আরম্ভ করেন এবং হযরত আবু বকর (রা.) মহানবী (সা.)-এর অনুকরণে নামায পড়তে থাকেন আর অন্যরা হযরত আবু বকর (রা.)-এর নামাযের অনুসরণ করতে থাকে।
মহানবী (সা.)-এর ইন্তেকাল সম্পর্কে এক স্থানে হযরত উরওয়া বিন যুবায়ের মহানবী (সা.)-এর পবিত্র সহধর্মিণী হযরত আয়েশা (রা.)-এর বরাতে বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) যখন ইন্তেকাল করেন তখন হযরত আবু বকর (রা.) সুনা’য় ছিলেন, অর্থাৎ শহরতলীর একটি গ্রাম সুনা’য় ছিলেন। মহানবী (সা.)-এর মৃত্যু সংবাদ যখন পৌঁছে তখন উক্ত সংবাদ শুনে হযরত উমর (রা.) দাঁড়িয়ে যান। তখন হযরত আবু বকর (রা.) সেখানে ছিলেন না হযরত উমর সেখানে উপস্থিত ছিলেন, তিনি দাঁড়িয়ে যান এবং বলেন, আল্লাহর কসম! রসূলুল্লাহ্ (সা.) মৃত্যু বরণ করেন নি। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, হযরত উমর (রা.) বলতেন, আল্লাহ্র কসম আমার হৃদয়ে এ ভাবনারই উদয় হয় যে, আল্লাহ্ অবশ্যই কতক মানুষের হাত পা কাটার জন্য তাঁকে উত্থিত করবেন। ইত্যবসরে হযরত আবু বকর (রা.) এসে পড়েন এবং তিনি রসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর পবিত্র চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে তাঁকে চুম্বন করেন এবং বলেন, আমার পিতামাতা আপনার প্রতি উৎসর্গীত। আপনি জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায় পূত-পবিত্র। সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ! আল্লাহ আপনাকে কখনো দুটি মৃত্যর স্বাদ গ্রহণ করাবেন না। একথা বলে হযরত আবু বকর (রা.) বাইরে রেরিয়ে গিয়ে বলেন, হে শপথকারী! থাম। অর্থাৎ হযরত উমর (রা.)-কে বলেন, ক্ষান্ত হও। হযরত আবু বকর (রা.) যখন কথা বলা আরম্ভ করেন তখন হযরত উমর (রা.) বসে পড়েন। হযরত আবু বকর (রা.) আল্লাহ্র প্রশংসা-কীর্তন করে বলেন, الامن كان يعبد محمدا فإن محمدا قد مات ومن كان يعبد الله فإن الله حي لا يموت অর্থাৎ, দেখ! যে মুহাম্মদের উপাসনা করতো সে জেনে নিক নিশ্চয় মুহাম্মদ (সা.) ইন্তেকাল করেছেন। আর যে আল্লাহ্র উপাসনা করতো সে জেনে নিক, আল্লাহ্ চিরঞ্জীব, তিনি কখনো মরবেন না। এরপর হযরত আবু বকর (রা.) এই আয়াত পাঠ করেন, مَيِّتٌ وَإِنَّهُم مَّيِّتُونَ (সূরা যুমার: ৩১) অর্থাৎ তুমিও মরণশীল আর তারাও মরণশীল এরপর তিনি এই আয়াত পাঠ করেন, وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ الرُّسُلُ أَفَإِن مَّاتَ أَوْ قُتِلَ انقَلَبْتُمْ عَلَىٰ أَعْقَابِكُمْ وَمَن يَنقَلِبْ عَلَىٰ عَقِبَيْهِ فَلَن يَضُرَّ اللَّهَ شَيْئًا وَسَيَجْزِي اللَّهُ الشَّاكِرِينَ (সূরা আলে ইমরান: ১৪৫) অর্থাৎ মুহাম্মদ একজন রসূল বৈ কিছু নন। তাঁর পূর্বের সমস্ত রসূল মৃত্যু বরণ করেছেন। তাহলে তিনি যদি মারা যান বা নিহত হন তবে কি তোমরা তোমাদের গোড়ালিতে ফিরে যাবে (অর্থাৎ, পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে)? আর যে-ই নিজ গোড়ালিতে ফিরে যাবে সে কখনোই আল্লাহ্র কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না আর অচিরেই আল্লাহ্ কৃতজ্ঞদের প্রতিদান দিবেন। বর্ণনাকারী বলেন, একথা শুনে মানুষ এত কাঁদে যে, তাদের হেঁচকি উঠে যায়। হযরত ইবনে আব্বাস বলেন, আল্লাহ্র কসম! মনে হচ্ছিল, হযরত আবু বকর (রা.)-এর উক্ত আয়াত পাঠ করার পূর্বে মানুষ যেন জানতো-ই না যে, আল্লাহ্ এই আয়াত অবতীর্ণ করেছিলেন। সবাই যেন হযরত আবু বকর (রা.)-এর কাছে এই আয়াত শিখেছে। অতঃপর আমি যে ব্যক্তিকেই পেয়েছি তাকে উক্ত আয়াত পাঠ করতে শুনেছি। বর্ণনাকারী বলেন, সাঈদ বিন মুসাইয়্যেব আমাকে বলেন, হযরত উমর (রা.) বলেন, আল্লাহর কসম! আমি হযরত আবু বকর (রা.)-কে উক্ত আয়াত পাঠ করতে শুনা মাত্র এতটা শঙ্কিত হই যে, ভয়ে আমার পা আমার দেহের ভার বহনে অক্ষম হয়ে পড়ে আর আমি মাটিতে পড়ে যাই। আবু বকরকে এ আয়াত পড়তে শুনে আমি নিশ্চিৎ হয়ে যাই যে, মহানবী (সা.) ইন্তেকাল করেছেন।
হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন উমর (রা.) বর্ণনা করেন, হযরত আবু বকর (রা.) হযরত উমর (রা.)-এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন আর তখন তিনি বলছিলেন যে, মহানবী (সা.) ইন্তেকাল করেন নি এবং ততক্ষণ পর্যন্ত ইন্তেকাল করবেন না যতক্ষণ আল্লাহ্ তা’লা মুনাফিকদের পূর্ণরূপে হত্যা না করেন। হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন উমর (রা.) বলেন, তারা অর্থাৎ সাহাবীরা একথা শুনে আনন্দ প্রকাশ করেন এবং নিজেদের মাথা উঁচিয়ে তাকান। এমন সময় হযরত আবু বকর বলেন, হে ভদ্র মানুষ, রসূলুল্লাহ্ (সা.) নিশ্চয় মৃত্যুবরণ করেছেন! [অর্থাৎ হযরত উমরকে সম্বোধন করে বলেন যে, নিশ্চয় রসূলুল্লাহ্ (সা.) মৃত্যুবরণ করেছেন।] তুমি কি শোন নি যে, আল্লাহ্ তা’লা বলেছেন- إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُم مَّيِّتُونَ (সূরা যুমার: ৩১) অর্থাৎ তুমিও মৃত্যুবরণ করবে এবং তারাও মৃত্যুবরণ করবে; আর এ-ও বলেছেন- وَمَا جَعَلْنَا لِبَشَرٍ مِّن قَبْلِكَ الْخُلْدَ (সূরা আম্বিয়া: ৩৫) অর্থাৎ আর আমরা তোমার পূর্বে কোন মানুষকে চিরস্থায়ী জীবন দান করি নি? এরপর হযরত আবু বকর মিম্বরে উঠেন এবং ভাষণ প্রদান করেন। যাহোক, এই হাদীসের ব্যাখ্যায় আবু আব্দুল্লাহ্ কুরতুবী বর্ণনা করেন যে, এই ঘটনাটি হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-এর সাহসিকতার অনেক বড় প্রমাণ, কারণ সাহসিকতার চরমত্ব হলো বিপদাপদ আপতিত হবার সময় মনোবল দৃঢ় থাকা; আর মহানবী (সা.)-এর মৃত্যুর বিপদের চেয়ে বড় কোন বিপদ সে সময় মুসলমানদের জন্য ছিল না। অতএব সেই (কঠিন) মুহূর্তে তার সাহসিকতা ও পাÐিত্য প্রকাশ পেয়েছে। দু’টোই প্রকাশ পেয়েছে; বীরত্বও প্রকাশ পেয়েছে যে, শোকের ধাক্কা সামলে উঠেছেন, আর কুরআন শরীফের আয়াতের যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, তাত্থেকে পাÐিত্যও প্রকাশ পেয়েছে। হযরত মুসলেহ্ মওউদ (রা.) বর্ণনা করেন,
হাদীস ও ইতিহাস সংক্রান্ত গ্রন্থাবলীতে এই রেওয়ায়েত লিপিবদ্ধ আছে যে, সাহাবীদের ওপর মহানবী (সা.)-এর মৃত্যুর এত গভীর প্রভাব পড়ে যে, তারা ঘাবড়ে যান; কয়েকজন তো বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন এবং কয়েকজন চলৎশক্তি হারিয়ে বসে। কতক নিজেদের বোধ-বুদ্ধির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং কতকের ওপর এই শোকের এত গভীর প্রভাব পড়ে যে, কয়েকদিনের ভেতর শোকে তাদের অস্তিত্ব মিটে যায়। হযরত উমরের ওপর এই শোকের এমন আঘাত আসে যে, তিনি মহানবী (সা.)-এর মৃত্যুর সংবাদ বিশ্বাসই করতে পারেন নি এবং তিনি তরবারি হাতে উঠে দাঁড়ান ও বলেন, যদি কেউ একথা বলে যে, রসূলে করীম (সা.) মৃত্যুবরণ করেছেন- তবে আমি তাকে হত্যা করব! তাঁকে মূসা (আ.)-এর মতো ডেকে পাঠানো হয়েছে; তিনি যেভাবে চল্লিশ দিন পর ফিরে এসেছিলেন, তেমনিভাবে তিনি (সা.)-ও কিছুদিন পর ফিরে আসবেন এবং তাঁর (সা.) নামে অপবাদ রটনাকারী ও মুনাফিকদের হত্যা করবেন আর ক্রুশে ঝুলাবেন। তিনি এতটা উত্তেজনার সাথে এই দাবিতে অনড় ছিলেন যে, তার এই কথার খÐন করা সাহাবীদের কারো সাধ্যে কুলোয় নি। হযরত উমরের এই উত্তেজনা দেখে কারো কারো বিশ্বাস জন্মে যে, এটি-ই সঠিক কথা, মহানবী (সা.) মৃত্যু বরণ করেন নি; আর তাদের চেহারায় আনন্দের লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। মুহূর্তপূর্বে তারা নতশিরে বসে ছিলেন, আর এখন আনন্দে মাথা তুলছেন। এই পরিস্থিতি দেখে কয়েকজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সাহাবী মিলে একজন সাহাবীকে রওয়ানা করেন যেন তিনি গিয়ে হযরত আবু বকর (রা.)-কে দ্রæত নিয়ে আসেন, যিনি মাঝে মহানবী (সা.)-এর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় তাঁর (সা.) অনুমতি নিয়ে মদিনার পাশর্^বর্তী একটি গ্রামে গিয়েছিলেন। যাহোক, রওয়ানা হতেই তিনি হযরত আবু বকরের দেখা পেয়ে যান; [তিনি (রা.) ফিরে আসছিলেন;] তাকে দেখেই সেই সাহাবীর চোখ থেকে অশ্রæ ঝরা আরম্ভ হয়ে যায়, যিনি সাহাবীদের পক্ষ থেকে সংবাদ দিতে যাচ্ছিলেন; তিনি কান্নার আবেগ আর সামলাতে পারেন নি। হযরত আবু বকর ঘটনা বুঝে ফেলেন এবং সেই সাহাবীকে জিজ্ঞেস করেন, রসূলুল্লাহ্ (সা.) কি মৃত্যু বরণ করেছেন? তিনি উত্তর দেন, হযরত উমর বলছেন, যে ব্যক্তি বলবে রসূলে করীম (সা.) মৃত্যু বরণ করেছেন- আমি তরবারি দিয়ে তার শিরোñেদ করব। একথা শুনে হযরত আবু বকর (রা.) মহানবী (সা.)-এর বাড়িতে যান। তাঁর (সা.) পবিত্র দেহের ওপর যে চাদরটি ছিল তা সরিয়ে দেখেন এবং নিশ্চিত হন যে, তিনি (সা.) সত্য সত্যই মৃত্যু বরণ করেছেন। নিজ প্রেমাস্পদের বিচ্ছেদের শোকে তার অশ্রæ প্রবাহিত হতে থাকে এবং হযরত আবু বকর (রা.) নীচে ঝুঁকে তাঁর (সা.) ললাট চুম্বন করেন ও বলেন, আল্লাহ্র শপথ, আল্লাহ্ তা’লা আপনার ওপর দু’টি মৃত্যু একত্রিত করবেন না। আপনার মৃত্যুতে পৃথিবীর এমন ক্ষতি হয়েছে যা কোন নবীর মৃত্যুতে হয়নি। আপনার সত্তা বর্ণনার ঊর্ধ্বে এবং আপনার মর্যাদা এমন যে, কোন শোক আপনার বিচ্ছেদের কষ্ট কমাতে পারে না। আপনার মৃত্যু ঠেকানোর ক্ষমতা যদি আমাদের থাকত তাহলে আমরা সবাই আমাদের প্রাণের বিনিময়ে আপনার মৃত্যু থামাতাম। একথা বলে তিনি আবার তার গায়ে কাপড় জড়িয়ে দেন এবং সেখানে আসেন যেখানে হযরত উমর (রা.) সাহাবীদের মাঝে বসেছিলেন এবং লোকদের বলছিলেন যে, মহানবী (সা.) মৃত্যু বরণ করেন নি, বরং জীবিত আছেন। তিনি সেখানে এসে হযরত উমর (রা.)-কে বলেন, আপনি একটু চুপ থাকুন। কিন্তু তিনি তার কথা মানেন নি আর নিজের কথা অব্যাহত রাখেন। এতে হযরত আবু বকর (রা.) একপাশে সরে গিয়ে লোকদের বলেন, মহানবী (সা.) আসলে ইন্তেকাল করেছেন। সাহাবীগণ হযরত উমর (রা.)-কে ছেড়ে তাঁর চারপাশে সমবেত হন। আর অবশেষে হযরত উমর (রা.)-কেও তাঁর কথা শুনতে হয়। যেমনটি পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে হযরত আবু বকর (রা.) বলেন,
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ الرُّسُلُ أَفَإِن مَّاتَ أَوْ قُتِلَ انقَلَبْتُمْ عَلَىٰ أَعْقَابِكُمْ (সূরা আলে ইমরান: ১৪৫)
إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُم مَّيِّتُونَ(সূরা যুমার: ৩১)
یا ایھا الناس من كان يعبد محمدا فإن محمدا قد مات ومن كان يعبد الله فإن الله حي لا يموت
অর্থাৎ, আর মুহাম্মদ কেবল একজন রসূল। তাঁর পূর্বেকার সকল রসূল অবশ্যই মারা গেছেন। অতএব তিনি যদি মৃত্যু বরণ করেন অথবা নিহত হন, তাহলে কি তোমরা তোমাদের গোড়ালিতে ফিরে যাবে? তুমিও অবশ্যই মৃত্যু বরণ করবে আর তারাও মৃত্যু বরণ করবে। হে লোক সকল! যে মুহাম্মদ (সা.)-এর উপাসনা করতো সে শুনে নিক যে, মুহাম্মদ (সা.) মৃত্যু বরণ করেছেন। আর যে আল্লাহ তা’লার উপাসনা করতো সে স্মরণ রাখুক, আল্লাহ্ জীবিত, তিনি মৃত্যু বরণ করেন না। হযরত আবু বকর (রা.) যখন উপরোক্ত আয়াতদ্বয় পাঠ করে লোকদের বলেন যে, মহানবী (সা.) ইন্তেকাল করেছেন তখন সাহাবীদের কাছে সত্য স্পষ্ট হয়ে যায়; আর তারা অসহায়ের ন্যায় কাঁদতে থাকে। হযরত উমর (রা.) স্বয়ং বর্ণনা করেন যে, হযরত আবু বকর (রা.) যখন কুরআনের আয়াত দ্বারা তাঁর (সা.) মৃত্যু সাব্যস্ত করেন তখন আমার মনে হলো যেন, এই আয়াত দুটি আজই অবতীর্ণ হয়েছে। আর আমার হাঁটু আমার দেহভার বহন করার শক্তি হারিয়ে বসে। আমার পা দোদুল্যমান হতে থাকে। আর আমি দুঃখের আতিশয্যে মাটিতে পড়ে যাই।
এ প্রেক্ষাপটে মুসলমানদের প্রথম ইজমা বা ঐকমত্য সম্পর্কে হযরত মুসলেহ্ মওউদ (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) এর পূর্বের সকল রসূল মৃত্যু বরণ করেছেন যাদের মধ্যে মসীহ্ (আ.)ও অন্তর্ভুক্ত। অতএব মহানবী (সা.)-এর মৃত্যুতে যখন সকল মুসলমান আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং এ ধাক্কা তাদের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠে, তখন হযরত উমর (রা.) একই আতঙ্কে তরবারি বের করেন এবং বলেন, কেউ যদি বলে মহানবী (সা.) মারা গেছেন, আমি তার ঘাড় কেটে দেব। মহনবী (সা.) মৃত্যু বরণ করেন নি, বরং হযরত মূসা (আ.)-এর মতো খোদা তা’লার সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছেন, তিনি পুনরায় ফিরে আসবেন এবং মুনাফিকদের নির্মূল করবেন, তারপর তিনি মারা যাবেন। তাঁর বিশ^াস যেন এটি ছিল যে, মুনাফিকরা নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত মহানবী (সা.) মৃত্যু বরণ করতে পারেন না। আর যেহেতু মুনাফিকরা তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল, তাই তিনি ধরে নিয়েছেন যে, তিনি মৃত্যু বরণ করেন নি। হযরত আবু বকর (রা.) তখন মক্কার বাইরের একটি গ্রামে গিয়েছিলেন। তিনি ফিরে আসেন আর মহানবী (সা.) এর বাড়িতে যান। মহানবী (সা.) এর বরকতময় দেহ দেখেন। তিনি সত্যিই মারা গিয়েছেন কি-না তা নিশ্চিত হন। এরপর তিনি বাইরে বের হন এবং বলতে থাকেন যে, আল্লাহ্ তা’লা মহনবী (সা.) কে দুটি মৃত্যু দিবেন না। অর্থাৎ একটি দৈহিক মৃত্যু এবং অন্যটি আধ্যাত্মিক মৃত্যু, যার কারণে তাঁর মৃত্যুর অব্যবহিতপরে মুসলমানদের বিকৃত হওয়ার অশঙ্কা দেখা দেবে। অতঃপর তিনি সোজা সাহাবীদের সমাবেশে যান এবং মানুষকে বলেন যে, আমি কিছু বলতে চাই। হযরত উমর (রা.) তরবারি হাতে দÐায়মান ছিলেন আর এই সংকল্প নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন যে, যদি কেউ মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর মৃত্যুর ঘোষণা করে তাহলে আমি তাকে হত্যা করব। হযরত আবু বকর (রা.) দÐায়মান হন আর তিনি মানুষকে সম্বোধন করে সেই কথাই বলেন। অর্থাৎ ‘মান কানা মিনকুম ইয়াবুদু মুহাম্মাদান ফা ইন্না মুহাম্মাদান কাদ মাতা, ওয়া মান কানা মিনকুম ইয়াবুদুল্লাহা ফা ইন্নাল্লাহা হাইয়ুন লা ইয়ামুতু’। অর্থাৎ, যে ব্যক্তি মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর ইবাদত করতো সে শুনে নিক যে, মুহাম্মদ (সা.) মৃত্যু বরণ করেছেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’লার ইবাদত করতো সে আনন্দিত হোক, কেননা আল্লাহ্ তা’লা জীবিত আর কখনো মৃত্যু বরণ করবেন না।
অতঃপর যেভাবে পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে তিনি পবিত্র কুরআনের এই আয়াত পাঠ করেন যে, وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ الرُّسُلُ أَفَإِن مَّاتَ أَوْ قُتِلَ انقَلَبْتُمْ عَلَىٰ أَعْقَابِكُمْ (সূরা আলে ইমরান: ১৪৫) অর্থাৎ, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহ্ তা’লার রসূল ছিলেন আর তাঁর পূর্বে যত রসূল অতিবাহিত হয়েছেন সবাই মৃত্যু বরণ করেছেন। তাহলে তিনি কেন মৃত্যু বরণ করবেন না। তিনি যদি মৃত্যু বরণ করেন অথবা নিহত হন তাহলে কি তোমরা তোমাদের গোড়ালিতে ফিরে যাবে আর ইসলাম পরিত্যাগ করবে? হযরত উমর বলেন, হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) যখন পবিত্র কুরআনের এই আয়াত পাঠ করেন তখন আমার চোখ খুলে যায় আর আমার এমন মনে হচ্ছিল যেন এই আয়াত এখনই অবতীর্ণ হয়েছে। আর আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, মহানবী (সা.) মৃত্যু বরণ করেছেন আর আমার পা কেঁপে উঠে এবং আমি মাটিতে পড়ে যাই। এ কথা বর্ণনা করে হযরত মুসলেহ্ মওউদ (রা.) বলেন,
সাহাবীদের এটি একমাত্র ইজমা ছিল কেননা তখন সমস্ত সাহাবী উপস্থিত ছিলেন। আর প্রকৃতপক্ষে মুসলমানদের জীবনে এর পূর্বে কখনো এরূপ মুহূর্ত আসে নি, কেননা আর কখনো মুসলমানরা এভাবে একত্রিত হয় নি। এই ইজতেমায় হযরত আবু বকর (রা.) এই আয়াত পাঠ করেন যে, মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ্ (সা.) কেবল আল্লাহ্ তা’লার একজন রসূল আর তাঁর পূর্বে আল্লাহ্ তা’লার যত রসূল এসেছেন তারা সবাই মৃত্যু বরণ করেছেন। অতএব তাঁর মৃত্যু বরণ করাও কোন অসম্ভব বিষয় নয় আর সমস্ত সাহাবী তার সাথে সহমত পোষণ করেন।
হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-ও হযরত আবু বকর (রা.) এর বরাতে এই বিষয়টি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
এই উম্মতের প্রতি হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-এর কত বড় অনুগ্রহ রয়েছে! যার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা সাধ্যাতীত। তিনি যদি সকল সাহাবী (রা.)-কে মসজিদে নববীতে একত্রিত করে এই আয়াত না শুনাতেন যে, পূর্বের সকল নবী মৃত্যু বরণ করেছেন তাহলে এই উম্মত ধ্বংস হয়ে যেত, কেননা এরূপ অবস্থায় বর্তমান যুগের নৈরাজ্যবাদী আলেমরা এটিই বলতো যে, সাহাবীদেরও এই বিশ^াসই ছিল যে, হযরত ঈসা জীবিত আছেন। কিন্তু এখন হযরত আবু বকর কর্তৃক উপরোক্ত আয়াত উপস্থাপন করার মাধ্যমে এই বিষয়ে সমস্ত সাহাবীর ইজমা হয়েছে যে, পূর্বের সকল নবী মৃত্যু বরণ করেছেন। বরং সেই ইজমা সম্পর্কে কবিতা রচিত হয়েছে। আবু বকর (রা.)-এর রূহের প্রতি আল্লাহ্ তা’লা হাজার রহমতবারি বর্ষণ করুন। তিনি সবাইকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করেছেন। আর এই ইজমায় সকল সাহাবী অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তাদের মধ্য থেকে একজনও এর বাইরে ছিলেন না। আর এটি সাহাবীদের প্রথম ইজমা ছিল এবং এটি যারপরনাই কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করার ন্যায় কাজ ছিল। আবু বকর (রা.) এবং মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর মাঝে এক সাদৃশ্য রয়েছে। আর তা হলো পবিত্র কুরআনে উভয়ের সম্পর্কে খোদা তা’লার এই প্রতিশ্রæতি ছিল যে, ইসলামের ওপর যখন এক ভীতির অবস্থা ছেয়ে যাবে এবং মুরতাদ হওয়ার ধারা আরম্ভ হয়ে যাবে তখন তাদের আবির্ভাব ঘটবে। অতএব হযরত আবু বকর এবং মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর যুগে তদ্রæপই হয়েছে। অর্থাৎ হযরত আবু বকর (রা.)-এর যুগে মহানবী (সা.)-এর তিরোধানের পর শত শত অজ্ঞ মরুবাসী মুরতাদ তথা ধর্মত্যাগী হয়ে যায়, আর কেবল দুটি মসজিদ বাকি ছিল যেগুলোতে নামায পড়া হতো। হযরত আবু বকর পুনরায় তাদেরকে ইসলামের ওপর প্রতিষ্ঠিত করেন। আর একইভাবে মসীহ্ মওউদ এর যুগে কয়েক লক্ষ মানুষ ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিষ্টান হয়ে যায়। আর এই উভয় পরিস্থিতি পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, অর্থাৎ ভবিষ্যদ্বাণীরূপে তাদের উল্লেখ রয়েছে।
হযরত আবু বকর (রা.)-এর খিলাফত সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে যে, যখন সাহাবীগণ (রা.) মহানবী (সা.)-এর মৃত্যু সম্পর্কে জানতে পারেন তখন আনসাররা সাকিফা বনু সায়েদাতে একত্রিত হন। এই সমাবেশে খিলাফতের বিষয়ে আলোচনা হয়। আনসাররা খাযরাজ গোত্রের নেতা সা’দ বিন উবাদা-র চতুষ্পার্শ্বে একত্রিত হয়। হযরত সা’দ বিন উবাদা তখন অসুস্থ ছিলেন। তিনি আনসারদের ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং ইসলামের সেবার কথা বিস্তারিত উল্লেখ করে তাদেরকে খিলাফতের যোগ্য বলে ঘোষণা করেন, কিন্তু আনসাররা হযরত সা’দ বিন উবাদাকেই খিলাফতের যোগ্য বলে আখ্যায়িত করে। কিন্তু আনসাররা তখনও পর্যন্ত তার বয়আত গ্রহণ করেনি, এর মাঝেই তাদের মধ্য থেকে কেউ এই প্রশ্ন করে যে, যদি মুহাজেররা তাকে খলীফা হিসেবে মেনে না নেয়, তাহলে কী হবে? এর প্রেক্ষিতে একজন প্রস্তাব করেন যে, এক ব্যক্তি আনসারদের মধ্য থেকে এবং একজন মুহাজেরদের মধ্য থেকে খলীফা হোক। কিন্তু হযরত সা’দ বিন উবাদা এটিকে বনু অওস গোত্রের দুর্বলতা বলে আখ্যায়িত করেন। যখন আনসাররা সাকিফা বনু সায়েদাতে খিলাফত সম্পর্কে বিতর্ক করছিল তখন হযরত উমর বিন খাত্তাব, হযরত আবু উবায়দা বিন র্জারাহ এবং অন্যান্য বড় বড় সাহাবীরা মসজিদে নববীতে মহানবী (সা.)-এর বিয়োগান্তক হৃদয়বিদারক ঘটনা সম্পর্কে কথা বলছিলেন। আবু বকর সিদ্দীক (রা.), হযরত আলী (রা.) এবং আহলে বায়ত-এর অন্যান্য সদস্যরা মহানবী (সা.)-এর দাফন-কাফনের ব্যবস্থাপনায় ব্যস্ত ছিলেন। খিলাফত সম্পর্কে কারো কোন চিন্তাই ছিল না আর তারা এই বিষয়ে অনবহিত ছিলেন যে, আনসাররা এই বিষয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়েছে এবং আনসারদের মধ্য থেকে কাউকে নির্বাচিত করতে চাচ্ছে।
তাবাকাতে কুবরায় লিখা আছে, হযরত উমর (রা.) হযরত আবু উবায়দা বিন র্জারাহ (রা.)-এর কাছে আসেন এবং বলেন যে, আপনার হাত বাড়ান যাতে আমি আপনার বয়আত করতে পারি। মহানবী (সা.)-এর পবিত্র ভাষায় আপনাকে এই উম্মতের আমীন আখ্যায়িত করা হয়েছে। এতে হযরত আবু উবায়দা (রা.) হযরত উমর (রা.)-কে বলেন, আপনি ইসলাম গ্রহণের পর থেকে এর পূর্বে আমি আপনার মাঝে এতটা উদাসীনতাপূর্ণ কথা কখনো দেখিনি। আপনি কি আমার বয়আত করবেন, অথচ আপনাদের মাঝে সিদ্দীক এবং সানীয়াসনাইন (তথা দুজনের মাঝে একজন) অর্থাৎ আবু বকর উপস্থিত আছেন? এই আলোচনার মাঝেই তারা আনসারদের জমায়েত সম্পর্কে জানতে পারেন। এতে হযরত উমর (রা.) ভেতরে সংবাদ প্রেরণ করে হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-কে ডেকে পাঠান যে, জরুরী কাজ আছে। হযরত আবু বকর (রা.) দাফন-কাফনের ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে বাইরে আসতে অস্বীকৃতি জানান। এর প্রেক্ষিতে হযরত উমর (রা.) পুনরায় সংবাদ প্রেরণ করে যে, এমন এক তাৎক্ষণিক প্রয়োজন দেখা দিয়েছে যেখানে আপনার উপস্থিতি আবশ্যক। এতে হযরত আবু বকর (রা.) বাহিরে আসেন এবং হযরত উমর (রা.)-কে জিজ্ঞেস করেন যে, এই মুহূর্তে রসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর দাফন-কাফনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কোন্ কাজ থাকতে পারে, যার জন্য আপনি আমাকে ডেকেছেন? হযরত উমর (রা.) বলেন, আপনি কি জানেন আনসাররা সাকিফা বনু সায়েদায় একত্রিত হয়েছে আর হযরত সা’দ বিন উবাদা-কে খলীফা বানাতে চাচ্ছে। তাদের মাঝে এক ব্যক্তি বলেছে যে, একজন আমীর আমাদের মধ্য থেকে হবেন আর একজন আমীর কুরাইশদের মধ্য থেকে। একথা শুনতেই হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.), হযরত উমর এবং হযরত আবু উবায়দাকে সাথে নিয়ে সাকিফা বনু সায়েদা যান। সেখানে তখনও বিতর্ক চলছিল। হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.), হযরত উমর (রা.) এবং হযরত আবু উবায়দা (রা.) তাদের মাঝে গিয়ে বসে পড়েন। একটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত উমর (রা.) বলেন, আমরা আনসারদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। যখন আমরা তাদের নিকটবর্তী হই, তখন তাদের মধ্য থেকে দুইজন পুণ্যবান ব্যক্তি উয়েম বিন সায়েদা এবং আম্মান বিন আদীর সাথে সাক্ষাৎ হয়। তারা দুজন আনসারদের ইচ্ছা সম্পর্কে তাদেরকে অবগত করে প্রশ্ন করে যে, আপনারা কোথায় যাচ্ছেন? তারা বলেন, আমরা আমাদের এই আনসার ভাইদের কাছে যাচ্ছি। তারা উভয়ে বলেন, তাদের কাছে যাওয়া আবশ্যক নয়; আপনারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। তিনি বলেন, আমি বললাম, আল্লাহ্র কসম! আমরা অবশ্যই তাদের কাছে যাব। যাহোক, তারা সেখানে যান। হযরত উমর (রা.) বর্ণনা করেন, আমরা আনসারদের কাছে পৌঁছি। আমি মনে মনে একটি বিষয় বলার জন্য ভেবে রেখেছিলাম যে, আনসারদের সামনে তা বর্ণনা করব। অতএব আমি যখন তাদের কাছে পৌঁছি এবং কথা বলার উদ্দেশ্যে অগ্রসর হই তখন হযরত আবু বকর (রা.) আমাকে বলেন, থাম; যতক্ষণ না আমি কথা শেষ করি, এরপর তুমি যা খুশি বক্তব্য দিও। অতঃপর হযরত আবু বকর বক্তব্য আরম্ভ করেন আর আমি যা বলতে চেয়েছিলাম তা তিনি (রা.) বর্ণনা করে দেন, বরং তার চেয়েও অধিক বর্ণনা করেন। হযরত আবু বকর (রা.) যে বক্তৃতা করেছিলেন তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ হলোÑ হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন আব্দুর রহমান (রা.) বর্ণনা করেন যে, হযরত আবু বকর (রা.) বক্তব্য আরম্ভ করেন। আল্লাহ্ তা’লার গুণগান ও প্রশংসাকীর্তণের পর তিনি বলেন, নিশ্চই আল্লাহ্ তা’লা তাঁর সৃষ্টিকুলের প্রতি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে রসূল এবং নিজ উম্মতের তত্ত¡াবধায়ক হিসেবে প্রেরণ করেছেন যেন তারা আল্লাহ্র ইবাদত করে এবং তাঁর তওহীদ তথা একত্ববাদের কথা স্বীকার করে, অথচ ইতিপূর্বে তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যান্য উপাস্যের উপাসনা করতো এবং বলতোÑ এই উপাস্যরা খোদার কাছে তাদের জন্য সুপারিশকারী এবং কল্যাণকর; অথচ সেগুলো পাথরে খোদাই করা ছিল এবং কাঠ দ্বারা নির্মিত হতো। এরপর হযরত আবু বকর (রা.) নি¤েœাক্ত আয়াত পাঠ করেনÑ
وَيَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَٰؤُلَاءِ شُفَعَاؤُنَا عِندَ اللَّهِ(সূরা ইউনূস: ১৯)
অর্থাৎ, আর তারা আল্লাহ্কে ছেড়ে তার ইবাদত করে যা তাদের অপকারও করতে পারে না এবং উপকারও করতে পারে না এবং তারা বলে, এরা সবাই আল্লাহ্র নিকট আমাদের জন্য সুপারিশকারী।مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَىٰ (সূরা যুমার: ০৪) অর্থাৎ, আমরা তাদের কেবল এজন্য ইবাদত করি যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহ্র নিকটবর্তী করে নৈকট্যের উন্নত মর্যাদায় পৌঁছে দেয়। আরবরা এ বিষয়টি পছন্দ করে নি যে, তারা তাদের পিতৃপুরুষের ধর্ম পরিত্যাগ করবে। অর্থাৎ হযরত আবু বকর (রা.) এই আয়াতগুলো পাঠ করে বলেন, আরবদের এই বিষয়টি পছন্দ হয় নি যে, তারা তাদের পিতৃপুরুষের ধর্ম পরিত্যাগ করবে। অতএব আল্লাহ্ তা’লা তাঁর (সা.) জাতির মধ্য থেকে প্রাথমিক মুহাজেরদের মহানবী (সা.)-এর সত্যায়নের উদ্দেশ্যে এবং তাঁর (সা.) ওপর ঈমান আনার জন্য আর তাঁর (সা.) প্রতি সহমর্মিতা এবং স্বজাতির পক্ষ থেকে চরম কষ্ট দেয়া এবং প্রত্যাখ্যাত হওয়ার মুখে তাঁর (সা.) সাথে অবিচল থাকার জন্য বেঁছে নিয়েছেন। হযরত আবু বকর (রা.) বলেন, অথচ সবাই তাঁর বিরোধী ছিল এবং তাঁর ওপর নির্যাতন করতো। কিন্তু নিজেদের সংখ্যা স্বল্পতা এবং সকল মানুষের অন্যায়-অত্যাচার ও তাঁদের বিপক্ষে গোটা জাতির ঐক্যবদ্ধ হওয়া সত্তে¡ও তাঁরা কখনো ভীত-ত্রস্ত হন নি। আর তারাই সবার আগে এই পৃথিবীর বুকে আল্লাহ্র ইবাদত করেন এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল (সা.)-এর ওপর ঈমান আনেন। আর তাঁরা মহানবী (সা.)-এর বন্ধু ও পরিবার-পরিজন এবং তাঁর (সা.) তিরোধানের পর মানুষের মাঝে এই পদমর্যাদার সবচেয়ে বেশি অধিকার রাখে। এ ব্যাপারে সীমালঙ্ঘনকারী ছাড়া অন্য কেউ তাদের সাথে বিতÐা করবে না। হে আনসারগণ! তোমরা হলে তারা, যাদের ধর্মীয় বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব এবং ইসলাম গ্রহণে অগ্রগামী হওয়ার কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। আল্লাহ্র ধর্ম ও তাঁর রসূলের (সা.) সাহায্যকারী হওয়ার কারণে আল্লাহ্ তা’লা তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তিনি মহানবী (সা.)-এর হিজরতও তোমাদের দেশেই নির্ধারণ করেছেন। তাঁর (সা.) সহধর্মিণী ও সাহাবীদের অধিকাংশই তোমাদের এখানে বসবাস করেন। প্রাথমিক মুহাজেরদের পর আমাদের কাছে তোমাদের ন্যায় মর্যাদার আর কেউ নেই। আমাদের মধ্য থেকে আমীর হবে আর তোমরা হবে সাহায্যকারী। যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তোমাদের নিকট হতে পরামর্শ গ্রহণ করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তোমাদের পরামর্শ ছাড়া কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে না।
হযরত আবু বকর সাকিফা বনু সায়েদায় যে বক্তব্য রাখেন, সীরাতে হালবিয়াতে এর বর্ণনা এভাবে পাওয়া যায় যে, তিনি (রা.) বলেন, খিলাফতের যতটুকু সম্পর্ক রয়েছে, আরবের লোকেরা কুরাইশদের ব্যতিরেকে অন্য কোন গোত্রের অনুকূলে এটি মেনে নেবে না। কুরায়েশের লোক বংশীয় মান-মর্যাদায় মাতৃভূমি মক্কার অধিবাসী হিসেবে সর্বোত্তম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ। বংশধারায় আমরা সমস্ত আরবের সাথে সম্পর্কবন্ধনে আবদ্ধ, কেননা এমন কোন গোত্র নেই যারা কোন না কোন ভাবে কুরায়েশের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক রাখে না। অপর দিকে আমরা মুহাজিররা হলাম তারা, যারা সর্ব প্রথম ইসলাম কবুল করেছিল। আমরাই মহানবী (সা.)-এর আত্মীয় এবং বংশের লোক এবং রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়। আমরা আহলে নবুয়্যত এবং খিলাফতের অধিকার রাখি।
এসব ঘটনার উল্লেখ করতে গিয়ে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল নিজ মুসনাদে হযরত আবু বকর (রা.)-এর ভূমিকা বর্ণনা করেছেন এবং উক্ত বর্ণনার পর যে, হযরত আবু বকর (রা.) মহানবী (সা.)-এর মৃত্যুর পর মুসলমানদের মাঝে বক্তব্য প্রদান করেন এবং মহানবী (সা.)-এর মৃত্যুর ঘোষণা দেন, এরপর বর্ণিত হয়েছে যে, বর্ণনাকারী বলেন, বক্তব্য প্রদান এবং মৃত্যুর ঘোষণা দেয়ার পর হযরত আবু বকর (রা.) এবং হযরত উমর (রা.) দ্রæত সাকিফা বনু সায়েদা’র দিকে রওয়ানা হন, অতঃপর তাদের কাছে পৌঁছলে হযরত আবু বকর (রা.) বাক্যালাপ শুরু করেন এবং তিনি (রা.) পবিত্র কুরআনে আনসাদের বিষয়ে যাকিছু অবতীর্ণ হয়েছে তা থেকে কোন কিছু বাদ রাখেন নি এবং মহানবী (সা.) আনসারদের শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে যাকিছু বলেছেনÑ তা সব বর্ণনা করেন। এরপর হযরত আবু বকর (রা.) বলেন, তোমাদের কি জানা আছে, মহানবী (সা.) বলেছিলেন, সকল মানুষ যদি এক উপত্যকায় চলে যায় আর আনসাররা অন্য উপত্যকায় থাকে তাহলে আমি আনসারদের উপত্যকায় হাঁটব। এরপর হযরত সা’দ (রা.)-কে উদ্দেশ্য করে হযরত আবু বকর (রা.) বলেন, হে সা’দ! তোমার নিশ্চয় স্মরণ থাকবে, তুমি বসে ছিলে আর মহানবী (সা.) বলেছিলেন যে, খিলাফতের অধিকারী হবে কুরায়েশ। মানুষের মাঝে যারা সবচেয়ে পুণ্যবান তারা কুরায়েশের পুণ্যবান সদস্যের অনুগামী হবে আর যারা পাপী তারা কুরায়েশের পাপীদের অধীনস্থ হবে। হযরত সা’দ (রা.) বলেন, হ্যাঁ আপনি সঠিক বলেছেন, আমরা ‘উজির’ এবং আপনারা ‘আমীর’।
আগামীতেও এই স্মৃতিচারণ অব্যাহত থাকবে, ইনশাআল্লাহ্। পৃথিবীর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে দোয়ার অনুরোধ করতে চাই। অবস্থা চরম ভয়ানক রূপ ধারণ করতে পারে, বরং করবে আর (ভয়াবহতা) বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেবল একটি দেশ নয়, বরং এই উত্তেজনা যদি বাড়তে থাকে তাহলে অনেকগুলো দেশ এতে জড়িয়ে যাবে আর এর ফলাফল প্রজন্ম পরম্পরায় বিরাজমান থাকবে। আল্লাহ্ করুন, এরা যেন আল্লাহ্কে চিনতে পারে এবং নিজেদের জাগতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য যেন মানুষের প্রাণ নিয়ে ছিনিমিনি না খেলে। আমরা কেবল দোয়া করতে পারি এবং করিও, তাদেরকে বুঝাতে পারি এবং বুঝাইও আর এক দীর্ঘ সময় ধরে আমরা এই কাজ করে চলেছি। কিন্তু এ দিনগুলোতে বিশেষত আহমদীদের অনেক দোয়া করা উচিত। আল্লাহ্ তা’লা যুদ্ধের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি এবং ধ্বংসযজ্ঞ থেকে মানব সভ্যতাকে রক্ষা করুন; যে বিষয়ে মানুষ কল্পনাও করতে পারে না যে, কত ভয়ানক ধ্বংসযজ্ঞ হতে পারে।
নামাযের পর আমি এক ব্যক্তির অর্থাৎ মুরব্বী সিলসিলাহ্ মুকাররম খুশী মুহাম্মদ শাকের সাহেবের গায়েবানা জানাযা পড়াব। কয়েকদিন পূর্বে ৬৯ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন, إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ। আল্লাহ্র কৃপায় তিনি মূসী ছিলেন। তার বংশে আহমদীয়াতের সূচনা হয় তার দাদা হযরত মৌলভী করীম বখ্শ সাহেবের মাধ্যমে যিনি হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর সাহাবী ছিলেন। তিনি প্লেগের নিদর্শন দেখে বয়আত করেছিলেন।
হযরত মৌলভী করীম বখ্শ সাহেবের স্ত্রী ফযল বিবি সাহেবার ভাই হযরত হাজী মুহাম্মদ আবদুল্লাহ্ সাহেবও হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর হাতে বয়আত গ্রহণের সৌভাগ্য পেয়েছিলেন। হযরত হাজী মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ্ সাহেবের নাম আহমদীয়াতের ইতিহাসের অষ্টম খÐে হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর সাহাবীদের তালিকায় তেইশ নম্বরে উল্লেখ আছে। যাহোক, খুশী মুহাম্মদ শাকের সাহেবের ব্যাপারে জানা যায় যে, তিনি ১৯৬৯ সনে মেট্রিক পাশ করেন। তারপর জীবন উৎসর্গ করেন ও জামেয়া আহমদীয়ায় ভর্তি হন। ১৯৭৭ সনে জামেয়া থেকে শাহেদ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৮ সনে আরবী ফাযেল পরীক্ষা পাশ করেন, এরপর জামা’তের কাজ করতে থাকেন। এর পাশাপাশি তিনি ১৯৮৭ সনে ইসলামিয়াত-এ এম.এ. ডিগ্রিও অর্জন করেন এবং পাকিস্তানের বিভিন্ন শহর ছাড়াও তিনি গিনি কোনাক্রিতেও মুবাল্লেগ সিলসিলাহ্ হিসেবে দায়িত্ব পালনের সৌভাগ্য লাভ করেন। সেখানে তিনি ফ্রেঞ্চ ভাষায়ও ডিপ্লোমা করেন। আল্লাহ্ তা’লা তাকে ছয়জন পুত্র দান করেছেন। তার এক ছেলে নাসের ইসলাম সাহেব জামা’তের মুরব্বী। বর্তমানে রাবওয়াতেই দায়িত্বরত আছেন।
১৯৭৭ থেকে ১৯৯১ সন পর্যন্ত পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে তিনি কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। ১৯৯১ থেকে ২০০৭ সন পর্যন্ত সিয়েরা লিওন ও গিনি কোনাক্রিতে কাজ করার সৌভাগ্য পান। সেখান থেকে ফিরে আসার পর ২০০৮ সন থেকে আঞ্জুমানের বিভিন্নœ বিভাগে কাজ করার সৌভাগ্য লাভ করেন। এডিশনাল নাযের ইসলাহ্ ও ইরশাদ মকামী এবং নাযারত উমুরে আমা হিসেবে কাজ করার সৌভাগ্য লাভ করেন।
তিনি যখন আফ্রিকায় ছিলেন, সেখানে তার মাধ্যমে বেশ ক’জন পবিত্রাত্মা আহমদীয়াতে অন্তর্ভুক্ত হবার সৌভাগ্য লাভ করেন। তার প্রচেষ্টায় কয়েকটি জামা’তও প্রতিষ্ঠিত হয়। খুবই নিবেদিতপ্রাণ ও পরিশ্রমী মুবাল্লেগ ছিলেন। কর্মক্ষেত্রে তার বড়ই ঈমানোদ্দীপক ঘটনাবলী রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে কীভাবে আল্লাহ্ তা’লা তাকে সাহায্য করতেন তা বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ বর্ণনা করেছেন। ১৯৮৬ সনে কলেমা তাইয়্যেবা সংক্রান্ত মামলায় আল্লাহ্র পথে বন্দি হবারও তার সৌভাগ্য লাভ হয়েছে। তার স্ত্রী লিখেন যে, আমার সমগ্র জীবন এ বিষয়ের সাক্ষী যে, তিনি আজ পর্যন্ত না কখনো নামায ত্যাগ করেছেন আর না তাহাজ্জুদ। জামা’তী সফর থেকে ফিরে এসে কøান্তি সত্তে¡ও অবশ্যই নামায আদায় করতেন এবং বাজামা’ত আদায়ের চেষ্টা করতেন। চরম অসুস্থতা সত্তে¡ও বাজামা’ত নামায পড়তে অবশ্যই যেতেন। অগণিত গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন। আল্লাহ্র অধিকার ও বান্দার অধিকার আদায়ে সর্বন্তঃকরণে নিয়োজিত থাকতেন। তাকওয়ার সূ² পথে বিচরণকারী, খিলাফতের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা পোষণকারী, আনুগত্যকারী, বিনয়ী, মুরব্বী ও জামা’তী কর্মকর্তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, শিশুদের প্রতি ভালোবাসা, দানশীলতা, আত্মীয় ও দরিদ্রদের সাহায্যকারী, মিশুক ও তবলীগে বিশেষভাবে আগ্রহী লোক ছিলেন। জীবনের অন্তিম দিনগুলোতেও যখন স্বাস্থ্য খুব খারাপ হয়ে যায় তখন তাকে তিন দিন তিন রাত জরুরী বিভাগে নিতে হয়। যখনই ঘরে ফিরে আসতেন তাহাজ্জুদ নামায পরিত্যাগ করতেন না। একদিন তো হাসপাতাল থেকে আসেন আর ফযরের নামায পড়ে প্রস্তুতি নিয়ে অফিসে চলে যান। যাহোক, যখন তাকে বাধা দেয়া হতো তখন বলতেন এটিই একজন ওয়াকফে জিন্দেগীর কাজ এবং আমার কাজ থেকে আমাকে বিরত রেখো না।
তার ছেলে নাসের ইসলাম মুরব্বী সিলসিলাহ্ বলেন, যখন থেকে আমার জ্ঞান হয়েছে, বাবাকে সর্বদা তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত দেখেছি এবং আনুগত্যের উচ্চ মানে পেয়েছি। জামা’তের ছোট বড় যে কোন পর্যায়ের কর্মকর্তাই হোক, তাদের আনুগত্য করতেন। দৈনিক সদকা খয়রাত করা তার দৈনন্দিন রীতি ছিল। দিনের কাজ দিনেই করতেন। খুবই মিশুক প্রকৃতির মানুষ ছিলেন এবং তবলীগে খুবই অগ্রহ রাখতেন। তিনি বলেন, খাকসার স্বীয় পিতাকে নামাযে যাওয়ার সময় বা ফেরত আসার সময় বা প্রাতঃভ্রমণের সময় বা সফরের সময় আফ্রিকায় বা কোন হোটেলে বসে খাবার খাওয়ার সময় বা বিশ্রমাগারে অপেক্ষারত অবস্থায় পুলিশের কর্মকর্তাই হোক বা সেনা কর্মকর্তা, যাদের সাথেই সাক্ষাৎ হতো (তিনি) তাদের তবলীগ করতেন এবং কোন সুযোগ হাতছাড়া করতেন না। কোথাও কোন মানুষকে দেখলে আমরা বলতাম, এখন আমাদের বাবা এই ব্যক্তিকে দেখেছেন (তিনি আব্বার হাত থেকে) বাঁচতে পারবেন না, তাকে (তিনি) তবলীগ করেই ছাড়বেন।
অতঃপর তার এক ছেলে বলেন, বাবা বলেছেন, আফ্রিকায় তবলীগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সমস্যা দেখা দেয়, অনেক দোয়া করেছি, তাহাজ্জুদ পড়ার পর সেজদায় আওয়াজ শুনতে পাই “আমার প্রকৃতিতে ব্যর্থতার কোনো উপাদান নেই”। (তিনি) বলেন, পরবর্তী দিন তবলীগের ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা ছিল তা দূর হয়ে যায়। যাহোক, তার সম্পর্কে অনেক মানুষ বিভিন্ন ঘটনা লিখে পাঠিয়েছেন আর প্রত্যেকে এটিই লিখেছেন যে, (মরহুম) মিশুক ছিলেন, বিনয়ী ছিলেন, দোয়াকারী ছিলেন। খিলাফতের সাথে (মরহুমের) ছিল দৃঢ় সম্পর্ক এবং মহান আল্লাহ্র প্রতি তিনি পরিপূর্ণ আস্থাশীল একজন মানুষ ছিলেন। আল্লাহ্ তা’লা তার সাথে ক্ষমা ও দয়ার আচরণ করুন। (মরহুমের) পদমর্যাদা উন্নত করুন। তার সন্তানসন্ততিকে তার পুণ্যকর্ম সমূহ ধরে রাখার তৌফিক দিন।
(সূত্র: কেন্দ্রীয় বাংলাডেস্কের তত্ত¡াবধানে অনূদিত)