26 Feb প্রতিশ্রুত সংস্কারক: ভবিষ্যতবাণী ও প্রতিশ্রুত পুরুষ জুমুআর খুতবা, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২
যুক্তরাজ্যের (টিলফোর্ড, সারেস্থ) ইসলামাবাদের মুবারক মসজিদে প্রদত্ত সৈয়্যদনা আমীরুল মু’মিনীন হযরত মির্যা মসরূর আহমদ খলীফাতুল মসীহ্ আল্ খামেস (আই.)-এর ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ মোতাবেক ১৮ তবলীগ, ১৪০১ হিজরী শামসী’র জুমুআর খুতবা তাশাহ্হুদ, তা’ঊয এবং সূরা ফাতিহা পাঠের পর হুযূর আনোয়ার (আই.) বলেন: প্রতিবছর ২০শে ফেব্রুয়ারি আমরা মুসলেহ্ মওউদ সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণীর প্রেক্ষাপটে জলসা করি এবং এদিনটি স্মরণ করি। ইসলামের বিরুদ্ধে শত্রুদের বিভিন্ন আপত্তির উত্তরে আল্লাহ্ তা’লার কাছ থেকে সংবাদ লাভ করে হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) একজন পুত্র সন্তান লাভের এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। ইসলামের শত্রুরা বলে, ইসলাম কোন নিদর্শন দেখায় না। তিনি (আ.) বলেন, আমি আল্লাহ্ তা’লার পক্ষ থেকে সংবাদপ্রাপ্ত হয়ে বলছি, ইসলামের সত্যতার একটি বড় নিদর্শন যা আমার মাধ্যমে পূর্ণ হবে তা হল, আমার ঘরে এক পুত্র সন্তান হবে। যে দীর্ঘজীবন লাভ করবে, ইসলামের সেবা করবে। তিনি আরও বলেছেন, তার মাঝে অমুক অমুক গুণ বা বৈশিষ্ট্য থাকবে। প্রায় বায়ান্ন বা তেপ্পান্নটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেন। এটি কোন সাধারণ ভবিষ্যদ্বাণী ছিল না। একটি নির্দিষ্ট সময়ও বলে দিয়েছেন, আর সেই (নির্ধারিত) সময়ের মধ্যে সেই পুত্র জন্মগ্রহণ করে এবং সে দীর্ঘজীবনও লাভ করে আর সে ইসলামের অসাধারণ সেবার সৌভাগ্য লাভ করে। প্রত্যেক বছর এই ভবিষ্যদ্বাণীর বরাতে জামাতের জলসাগুলোতে বিভিন্ন আঙ্গিকে আলোকপাত করা হয়। এবছরও ইনশাআল্লাহ্ বিভিন্ন জামাতে জলসা হবে (আর সেখানেও) এসব আলোচনা হবে। এছাড়া এমটিএতেও অনুষ্ঠান সম্প্রচার হয়। সেখান থেকে(অর্থাৎ এমটিএ থেকে) বিস্তারিত জানা যাবে। এখন আমি হযরত মুসলেহ্ মওউদ (রা.)’র নিজের ভাষায় তাঁর প্রাথমিক জীবন কেমন ছিল আর তাঁর স্বাস্থ্য কেমন ছিল এবং তাঁর সাথে আল্লাহ্ তা’লার ব্যবহার কীরূপ ছিল এ সম্পর্কে কয়েকটি উদ্ধৃতি উপস্থাপন করবো। দীর্ঘায়ু লাভকারী সন্তান সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী ছিল। ভবিষ্যদ্বাণী ছিল যে, এক সন্তান দীর্ঘায়ু লাভ করবে। সেই দীর্ঘজীবন লাভকারী সন্তানের স্বাস্থ্যের অবস্থা কেমন ছিল তার ধারণা আপনারা কিছুটা এখান থেকে পেতে পারেনঃ হযরত মুসলেহ্ মওউদ (রা.) স্বয়ং বলেন, শৈশবে আমার স্বাস্থ্য খুবই দুর্বল ছিল, প্রথমে আমার হুপিং কাশি হয় এরপর আমার স্বাস্থ্য এতোটাই ভেঙ্গে পড়ে যে, ১১-১২ বছর বয়স পর্যন্ত জীবন-মৃত্যুর দোলাচালে দুলতে থাকি। আর সাধারণভাবে এটিই ধরে নেয়া হয় যে, আমার দীর্ঘ জীবন লাভ করা সম্ভব নয়। এরই মধ্যে আমার চোখের পীড়া দেখা দেয় আর এতো বেশি ব্যাথা হয় যে, আমার একটি চোখ বলতে গেলে অকেজোই হয়ে যায়। সে চোখে দেখা যেতো না অর্থাৎ সেচোখে আমি খুবই সামান্য দেখতে পাই। যখন একথা বলছিলেন, তিনি বলেন, এখনও খুবই কম দেখতে পাই। এরপর যখন আমি আরও বড় হই তখন লাগাতার ৬-৭ মাস পর্যন্ত আমার জ্বর আসতে থাকে। আর আমাকে যক্ষারোগী আখ্যা দেয়া হয়। অর্থাৎ টিবিরোগী হিসাবে চিন্নিত করা হয়। আর তিনি (রা.) বলেন, এসব কারণে আমি নিয়মিত পড়াশোনাও করতে পারতাম না। স্কুলে যেতাম না। লাহোরের মাস্টার ফকীর উল্লাহ্ সাহেব, {তিনি (রা.) লাহোরেই বক্তৃতা দিচ্ছিলেন} যার মুসলিম টাউনে বাংলো আছে, তিনি আমাদের স্কুলে অংক পড়াতেন। তিনি একবার আমার সম্পর্কে হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর কাছে অভিযোগ করেন যে, এ পড়তে আসে না আর প্রায় সময়ই স্কুলে অনুপস্থিত থাকে। হযরত মুসলেহ্ মওউদ (রা.) বলেন, হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) অসন্তুষ্ট হবেন ভেবে আমি ভয় পাই কিন্তু হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) বলেন, মাস্টার সাহেব! এর স্বাস্থ্য বা শরীর দুর্বল থাকে, সে যে কখনো কখনো স্কুলে চলে যায় আর কোন কথা তার কানে পড়ে এতেই আমরা (খোদার প্রতি) কৃতজ্ঞ, এর ওপর বেশি চাপ দিবেন না। তনি বলেন, এমনকি আমার মনে পড়ে যে, হযরত মসীহ মাওউদ (আ.) একথাও বলেছিলেন, তাকে অংক শিখিয়ে আমরা কী করবো? তাকে দিয়ে কি আমরা দোকান করাবো? অতএব, এ ছিল তার শৈশবের স্বাস্থগত বাস্তবতা ও বিদ্যালয় যাওয়ার অবস্থা। এমতাবস্থায় কে তার দীর্ঘ আয়ুর নিশ্চয়তা দিতে পারে। শুধু দীর্ঘায়ুরই নয় বরং সেই ভবিষ্যদ্বাণীতে একথাও ছিল যে, বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানে তাকে সমৃদ্ধ করা হবে। তার এহেন অবস্থায় কে বলতে পারে যে, এই ছেলে জ্ঞানও অর্জন করবে? যাহোক হযরত মসীহ মাওউদ (আ.) বলেন, (এই ছেলে) কুরআন ও হাদীস পড়তে পারলেই যথেষ্ট। তিনি বলেন, মোটকথা আমার স্বাস্থ্য এমন যে, জাগতিক জ্ঞান অর্জনে ছিল সম্পূর্ণভাবে অযোগ্য। আমার দৃষ্টিশক্তিও দুর্বল ছিল আর আমি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মেট্রিক পরীক্ষায়ও অকৃতকার্য হই কোন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারি নি কিন্তু খোদা তা’লা আমার সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছিলেন যে, আমি বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ হবো। তাই যদিও আমি জাগতিক কোন পড়ালোখা করি নি তা সত্ত্বেও আল্লাহ তা’লা এমন এমন জ্ঞানগর্ভ পুস্তকাদি আমার কলমে লিখিয়েছেন, জগতবাসী যা পাঠ করে হতভম্ভ। তারা একথা স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে, এরচেয়ে উত্তম ইসলামী বিষয়াদির বিষয়ে আর কিছুই লেখা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, সম্প্রতি তফসীরে কবীর নামে আমি পবিত্র কুরআনের তফসীরের একটি খন্ড লিখেছি এটি পাঠ করে বড় বড় বিরুদ্ধবাদীও স্বীকার করেছে যে, এমন তফসীর আজ পর্যন্ত লেখা হয় নি। তাছাড়া আমি প্রায়শই লাহোরে আসি আর এখানকার অধিবাসীরা জানেন যে, আমার সাথে কলেজের প্রফেসরগণ সাক্ষাত করতে আসেন, শিক্ষার্থীরা সাক্ষাত করতে আসে, ডাক্তারগণ সাক্ষাত করতে আসেন, বিশিষ্ট আইনবীদ ও উকিলরা সাক্ষাত করতে আসে কিন্তু আজ পর্যন্ত একটি বারও এমন হয় নি যে, কোন বিশিষ্ট আলেম আমার সামনে ইসলাম ও পবিত্র কুরআনের ওপর কোন আপত্তি করেছে আর আমি ইসলাম ও পবিত্র কুরআনের শিক্ষার আলোকেই তাকে নির্বাক ও নিরুত্তর করে না দিয়েছি। তাদেরকে একথা স্বীকার করতেই হয়েছে যে, সত্যিই ইসলামের শিক্ষার ওপর কোনরূপ আপত্তি হতে পারে না। এটি কেবল আর কেবলই আল্লাহর কৃপা যাতে আমি ধন্য, নইলে আমি জাগতিক শিক্ষা-দিক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে কোন জ্ঞানই আমি অর্জন করি নি। কিন্তু আমি একথা অস্বীকার করতে পারি না যে, খোদা তা’লা আমাকে নিজ সন্নিধান হতে জ্ঞান দান করেছেন এবং তিনি স্বয়ং আমাকে সব ধরনের বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান হতে অংশ দিয়েছেন। এরপর তিনি বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ হওয়া সম্পর্কে অর্থাৎ, কীভাবে আল্লাহ তা’লা জ্ঞান শিখিয়েছেন বলেন, আমি তখনো মাত্র বালক ছিলাম, আমি স্বপ্নে দেখি- একটি ঘণ্টা বেজে ওঠে আর তা থেকে ঝনঝন আওয়াজ সৃষ্টি হয় যা বৃদ্ধি পেতে পেতে একটি ছবির ফ্রেমের রূপ ধারণ করে। এরপর আমি দেখি, এই ফ্রেমে একটি চিত্র ভেসে ওঠে। কিছুক্ষণ পর সেই ছবি নড়তে থাকে আর এরপর হঠাৎ সেটি থেকে এক সত্তা লাফ দিয়ে আমার সামনে চলে এসে বলে যে, আমি আল্লাহর ফিরিশতা। আমি তোমাকে পবিত্র কুরআনের তফসীর শেখাতে এসেছি। আমি বলি, শেখাও। তখন সে সূরা ফাতেহার তফসীর শেখানো আরম্ভ করে আর সে শেখাতে থাকে, শেখাতে থাকে আর শেখানো অব্যাহত রাখে। একপর্যায়ে সে যখন ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তাঈন পর্যন্ত পৌঁছে তখন সে বলে যে, আজ পর্যন্ত যত তফসীরকারক গত হয়েছে তারা সবাই কেবল এই আয়াত পর্যন্তই তফসীর লিখেছে কিন্তু আমি তোমাকে এর পরবর্তী অংশের তফসীরও শিখাচ্ছি। অতএব সে পুরো সূরা ফাতেহার তফসীর আমাকে শিখিয়ে দেয়। এই স্বপ্নের মর্ম মূলত এটিই ছিল যে, পবিত্র কুরআন বুঝার ক্ষমতা আমার মাঝে অন্তর্নিহিত করা হয়েছে। আর এই দক্ষতা আমার মাঝে এত পরিমান রয়েছে, আমি দাবি করে বলি, যে সভাতেই তোমরা চাও আমি এই দাবি করার জন্য প্রস্তুত আছি যে, আমি সূরা ফাতেহা থেকে সকল ইসলামী শিক্ষা বর্ণনা করতে সক্ষম। তিনি জনসম্মুখে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিচ্ছেন, পৃথিবীবাসীকে অবগত করছেন, চ্যালেঞ্জ দিচ্ছেন; কিন্তু এরূপ কখনই ঘটেনি যে তাঁর মোকাবেলায় কেউ এভাবে সামনে আসবে। অতঃপর তিনি (রা.) বলেন, আমি ছোটই ছিলাম, স্কুলে পড়তাম। আমাদের স্কুলের ফুটবল টিম অমৃতসরের খালসা কলেজের টিমের সাথে খেলতে যায়। উভয় দল খেলে আর আমাদের টিম জয় লাভ করে। এতে মুসলমানরা আমাদের জামাতের সাথে বিরোধীতা থাকা সত্ত্বেও, যেহেতু এক দৃষ্টিকোণ থেকে মুসলমানদের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছিল সেজন্য অমৃতসরের এক নেতা আমাদের টিমকে চায়ের দাওয়াত দেয়। আমরা যখন সেখানে গেলাম তখন আমাকে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। আমি সেই বক্তৃতার জন্য কোন প্রস্তুতি গ্রহণ করিনি। যখন আমাকে দাঁড় করানো হল তৎক্ষনাত ফেরেশতার তফসীর শিখানোর সেই স্বপ্ন মনে পড়ে গেল। তখন সর্বপ্রথম আমি এ বিষয়ে খোদা তা’লার কাছে দোয়া করলাম যে, হে খোদা! তোমার ফেরেশতা স্বপ্নে আমাকে সুরা ফাতেহার তফসীর শিখিয়ে গিয়েছিল। আজ আমি এ বিষয়টি পরীক্ষা করতে চাই যে, এই স্বপ্ন তোমার পক্ষ থেকে ছিল নাকি তা আমার নফসের কোন প্রতারণা ছিল? যদি এ স্বপ্ন তোমার পক্ষ হয়ে থাকে তাহলে আজকে সূরা ফাতেহার এমন একটি বিশেষ গূঢ় কথা অবহিত কর যা ইতোপূর্বে পৃথিবীর কোন তফসীরকারক বর্ণনা করেনি। অতএব, এ দোয়ার অব্যবহিত পর খোদা তা’লা আমার হৃদয়ে একটি গূঢ় কথা সঞ্চার করেন। তখন আমি বলি, দেখ! খোদা তা’লা কুরআন করীমে ‘গায়রিল মাগযুবি আলাইহিম ওয়ালায যাল্লিন’ দোয়া শিখিয়েছেন ।অর্থাৎ, হে মুসলমানরা! তোমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে এবং নিজেদের নামাযের প্রত্যেক রাকা’তে এ দোয়া কর যে, আমরা যেন ‘মাগযূব’ এবং ‘দ্বাল’ না হয়ে যাই। মহানবী (সা.) স্বয়ং মাগযূবের অর্থ হাদীসে বর্ণনা করেছেন। যেমন, তিনি (রা.) বলেন, মাগযূবের অর্থ হল ইহুদী এবং ‘দ্বাল’-এর অর্থ হল খ্রীষ্টান। তাই ‘গায়রিল মাগযূব’ এর অর্থ হলো, হে আল্লাহ্! আমরা যেন ইহুদী না হয়ে যাই এবং ‘ওয়ালায দ্বাল্লীন’ এর অর্থ হলো, আমরা যেন খ্রীষ্টান না হয়ে যাই। এ বিষয়টি এ হতেও স্পষ্ট হয় যে, মহানবী (সা.) বলেছেন, এই উম্মতে একজন মসীহ্ আগমন করবেন। তাই, যারা তাঁকে অস্বীকার করবে তারা অবশ্যই ইহুদী বৈশিষ্ট্যধারী হয়ে যাবে। অপরদিকে তিনি এটিও বলেছেন যে, খ্রীষ্টীয় ফিতনা এক যুগে বিশেষভাবে বৃদ্ধি পাবে। মানুষজন আয়-উপার্জন, চাকরি, সমাজে সম্মান অর্জনার্থে খ্রীষ্টধর্ম গ্রহণ করবে অথবা প্রতারিত হয়ে এবং নিজ ধর্মের শিক্ষা সঠিকভাবে না বুঝার কারণে খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহণ করবে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো সূরা ফাতিহা মক্কায় অবতীর্ন হয়, আর সে সময় খ্রীষ্টানরা ইসলামের বেশি বিরোধী ছিল না আর ইহুদীরাও না। তখন সবচেয়ে বেশি বিরোধীতা মক্কার মূর্তিপূজারীদের পক্ষ থেকে করা হত। অথচ এ দোয়া শিখানো হয়নি যে, হে আল্লাহ্! আমরা যেন মূর্তিপূজারী না হয়ে যাই বরং এ দোয়া শিখানো হয়েছে যে, হে আল্লাহ্! আমরা যেন ইহুদী অথবা খ্রীষ্টান না হয়ে যাই। এথেকে স্পষ্ট প্রতিয়মান হয় যে, এ সূরার মাধ্যমে আল্লাহ্ তা’লা এ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, মক্কার মূর্তিপূজারীদের চিরতরে নিশ্চিন্হ করে দেয়া হবে এবং সেগুলোর নামচিহ্নও অবশিষ্ট থাকবে না। তাই, তাদের বিষয়ে মুসলমানদের কোন দোয়া শিখানোর কোন প্রয়োজনই নেই। হ্যাঁ, ইহুদী ধর্ম অথবা খ্রীষ্টধর্ম বা উভয়ই অবশিষ্ট থাকবে তাই তাদের ফিতনা থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য সর্বদা দোয়া করা তোমাদের জন্য আবশ্যক হবে। আমার এই বক্তৃতা শেষ হলে বড় বড় নেতৃবৃন্দ আমার সাথে সাক্ষাত করে এবং বলে যে, আপনি কুরআন খুব ভালোভাবে পড়েছেন। আমরা সারা জীবনে এই গূঢ় কথা প্রথমবার শুনছি। সত্যিকার অর্থে একথাই প্রকৃত সত্য, সব তফসীর খুলে দেখ কুরআনের কোন তফসীরকারক আজ পর্যন্ত এই গূঢ় কথাটি বর্ণনা করেনি। যদিও সে সময় আমার বয়স ছিল মাত্র বিশ বছরের কাছাকাছি যখন আল্লাহ্ তা’লা এ গূঢ় বিষয়টি আমার কাছে প্রকাশ করেছিলেন। বস্তুত, আল্লাহ্ তা’লা নিজ ফেরেশতার মাধ্যমে আমাকে কুরআন শরীফের তত্ত্বজ্ঞান প্রদান করেছেন আর আমার মাঝে তিনি এমন এক দক্ষতা সৃষ্টি করেছেন যে কেউ যেভাবে ধনভান্ডারের চাবি পেয়ে যায় তদ্রুপ আমিও কুরআন করীমের তত্ত্ব জ্ঞানের চাবি পেয়ে গেছি। পৃথিবীর কোন আলেম এমন নেই যে, আমার সামনে আসবে আর আমি পবিত্র কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব তার সামনে প্রকাশ করতে পারব না। এটি লাহোর। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। (তিনি লাহোরে এই বক্তৃতা করছিলেন।) বহু কলেজ এখানে খোলা হয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ের বড় বড় জ্ঞানী লোক এখানে পাওয়া যায়। আমি তাদের সবাইকে বলছি, পৃথিবীর যে কোন বিষয়ের জ্ঞানী পন্ডিত আমার সামনে আসুক, পৃথিবীর যে কোন প্রফেসর আমার সামনে আসুক, পৃথিবীর যে কোন বিজ্ঞানী আমার সামনে আসুক আর নিজের জ্ঞানবলে পবিত্র কুরআনের ওপর আক্রমণ করে দেখুক, আমি আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় তাকে এমন উত্তর দিতে পারব যে, জগদ্বাসী স্বীকার করবে, তার আপত্তি খন্ডিত হয়েছে। আর আমি দাবি করছি যে, আমি খোদার তা’লার বাণী থেকেই তার উত্তর দিব আর পবিত্র কুরআনের আয়াতের মাধ্যমেই তার আপত্তি সমূহ খন্ডন করে দেখাব। এই ঘটনার সময়, যেমনটি তিনি বলেছেন, তার বয়স ছিল ২০ বছর আর তখনই খোদা তা’লার প্রতি তার বিশ্বাস পূর্ণতা লাভ করেছিল। এই বিশ্বাস কোন্ বয়সে পূর্ণ হয়েছে সে সম্পর্কে স্বয়ং হযরত মুসলেহ্ মওউদ (রা.) বর্ণনা করেছেন, যা থেকে এটিও জানা যায় যে, আল্লাহ্ তা’লা স্বয়ং তাকে শৈশব থেকেই মুসলেহ্ মওউদ হওয়ার সত্যায়নস্থল হিসেবে গড়ে তুলছিলেন। যেমন তিনি বলেন, ১৯০০ সনটি আমার হৃদয়কে ইসলামী নির্দেশাবলীর প্রতি মনোযোগী করার কারণ হয়েছে। তখন আমার বয়স ছিল ১১ বছর। হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর জন্য জনৈক ব্যক্তি ছিটকাপড়ের তৈরি একটি জুব্বা নিয়ে আসে। আমি তাঁর (আ.) কাছ থেকে সেই জুব্বা নিয়ে নেই। অন্য কোন ধারণায় নয়, বরং এই জন্য যে, সেটির রং এবং সেটির নকশা আমার পছন্দ ছিল। আমি সেটি পরতে পারতাম না, কেননা সেটির প্রান্ত আমার পায়ের নীচে এসে যেতো। আমার বয়স যখন ১১ বছর হয় আর ১৯০০ সন আরম্ভ হয় তখন আমার হৃদয়ে প্রশ্ন জাগে, আমি খোদা তা’লার ওপর কেন বিশ্বাস করি, তাঁর অস্তিত্বের কী প্রমাণ রয়েছে? আমি রাতে দীর্ঘক্ষণ এই বিষয়ে চিন্তা করতে থাকি। অবশেষে দশটা বা এগারোটায় আমার হৃদয় এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, হ্যাঁ, একজন খোদা আছেন। সেই ক্ষণটি আমার জন্য কতই না আনন্দের ক্ষণ ছিল, কতই না আনন্দের সময় ছিল! এক শিশু তার মা-কে পেলে যেভাবে আনন্দিত হয় অনুরূপ আনন্দ আমার হয়েছিল যে, আমার সৃষ্টিকর্তাকে আমি পেয়ে গেছি। ১১ বছর বয়সে এরূপ চিন্তাধারা ছিল! শ্রুত ঈমান দর্শনভিত্তিক ঈমানে রূপান্তরিত হয়ে যায়। যাহোক তিনি বলেন, আমার আনন্দের কোন সীমা রইল না। আমি তখন আল্লাহ্ তা’লার কাছে দোয়া করি আর এক দীর্ঘকাল পর্যন্ত দোয়া করতে থাকি যে, হে আমার খোদা! তোমার সত্তা সম্পর্কে যেন কখনো আমার সন্দেহ না জাগে। তখন আমার বয়স ছিল ১১ বছর আর আজ আমার বয়স ৩৫ বছর। কিন্তু আজও আমি এই দোয়াকে খুবই গুরুত্বর দৃষ্টিতে দেখি। আমি আজও এটিই বলি যে, হে আমার খোদা! তোমার সত্তা সম্পর্কে যেন আমার কোন সন্দেহ সৃষ্টি না হয়। হ্যাঁ, তখন আমি এক বালক ছিলাম, আর এখন আমি অধিক অভিজ্ঞতা রাখি। এখন আমি (উক্ত দোয়াতে) এতটা যুক্ত করি যে, হে আমার খোদা! তোমার সত্তা সম্পর্কে যেন আমার নিশ্চিৎ বিশ্বাস ভিত্তিক ঈমান জন্মে। যাহোক, তিনি বলেন, কথা ভিন্ন দিকে চলে গেছে। আমি লিখছিলাম যে, হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর একটি জুব্বা আমি চেয়ে নিয়েছিলাম। আমার হৃদয়ে যখন চিন্তাভাবনার সেসব ¯্রােত বইতে আরম্ভ করে, যেগুলোর উল্লেখ আমি উপরে করে এসেছি, তখন একদিন যুহা বা ইশরাকের সময় আমি ওযু করি আর সেই জুব্বাটি পরিধান করি; এজন্য নয় যে, সেটি সুন্দর, বরং এই জন্য যে, এটি হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর এবং বরকতমন্ডিত । খোদা তা’লার প্রত্যাদিষ্ট ব্যক্তি যে পবিত্র হয়ে থাকেন সেসংক্রান্ত এটি ছিল প্রথম অনুভ‚তি যা আমার হৃদয়ে জাগ্রত হয়। অতঃপর তিনি বলেন, এরপর আমি দরজা বন্ধ করে নেই আর কেঁদে কেঁদে অনেক দোয়া করি (আর) নফল নামায পড়ি। কীভাবে তিনি এগারো বছর বয়সে খোদা তা’লার পরিচয় লাভ করেন সে বিষয়টি আরেক স্থানে তিনি আরও বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমার বয়স তখন এগারো বছর যখন আল্লাহ্ তা’লা নিজ কৃপায় আমাকে প্রথাগত ধর্মবিশ্বাস ঈমানের স্তরে উপনীত করার এই সৌভাগ্য দান করেন। সময়টি ছিল মাগরিবের পর; আমি আমাদের বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে ছিলাম, হঠাৎ আমার মনে চিন্তা আসে আমি কি এজন্য আহমদী যে, আমার বাবা আহমদীয়া জামা’তের প্রতিষ্ঠাতা, নাকি এজন্য আহমদী যে, আহমদীয়াত সত্য এবং এই জামা’ত খোদা তা’লা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত? এই চিন্তা হতেই আমি সিদ্ধান্ত নেই যে, এবিষয়ে গভীর প্রণিধানের পরেই আমি এখান থেকে বের হবো। যদি আমি নিশ্চিৎ হই যে, আহমদীয়াত সত্য নয়, তাহলে আমি আর আমার কামরায় ঢুকব না, বরং এই উঠোন থেকেই বাইরে চলে যাব। এ ছিল এগারো বছরের এক বালকের চিন্তা ! তিনি বলেন, যাহোক, এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পর আমি গভীরভাবে ভাবতে আরম্ভ করি এবং এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই আমার মাথায় কিছু যুক্তি-প্রমাণ উপস্থিত হয়, যেগুলো আমি বিশ্লেষণ ও খন্ডনের চেষ্টা করি। কখনো একটি যুক্তি দিয়ে সেটিকে খন্ডন করি; আবার দ্বিতীয় যুক্তি দিয়ে সেটি প্রত্যাখ্যান করি, আাবার তৃতীয় যুক্তি দিয়ে সেটি খন্ডন করি। এভাবে চলতে চলতে আমার সামনে এই প্রশ্ন উপস্থিত হয় যে, মুহাম্মদ (সা.) কি খোদা তা’লার সত্য রসূল ছিলেন? আমি কি এজন্য তাকে সত্য বলে বিশ্বাস করি যে, আমার বাবা-মা তাকে সত্য বলে বিশ্বাস করেন, নাকি আমি এজন্য তাঁকে সত্য বলে বিশ্বাস করি যে, যুক্তি-প্রমাণের নিরিখে এ বিষয়টি আমার কাছে সুস্পষ্ট হয়েছে যে, প্রকৃতপক্ষেই মহানবী (সা.) সত্য রসূল? যখন এই প্রশ্ন আমার সামনে উপস্থিত হয় তখন আমার মন বলে ওঠে, এখন আমি এই বিষয়টির সিদ্ধান্ত করেই ছাড়ব! এরপর স্বাভাবিকভাবেই খোদা তা’লা সম্পর্কেও আমার মনে প্রশ্ন আসে এবং আমি বললাম, এই প্রশ্নটিও সমাধান করা দরকার যে, আমি কি প্রথাগত বিশ্বাস হিসেবে খোদা তা’লাকে বিশ্বাস করি, নাকি আসলেই আমার ওপর এই সত্য প্রকাশিত হয়েছে যে, বিশ্বজগতের একজন খোদা আছেন? তখন আমি আল্লাহ্ তা’লার অস্তিত্ব সংক্রান্ত প্রশ্নের ওপরও গভীরভাবে ভাবতে আরম্ভ করি এবং আমার মন বলে, যদি খোদা থেকে থাকেন, তবে মুহাম্মদ (সা.) সত্য রসূল, আর যদি মুহাম্মদ (সা.) সত্য রসূূূল হন, তবে হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-ও সত্য; আর যদি হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) সত্য হয়ে থাকেন, তবে আহমদীয়াতও নিশ্চিতভাবে সত্য। আর যদি বিশ্বজগতের কোন খোদা না থেকে থাকেন, তবে এঁদের কেউ-ই সত্য নন। যাহোক, তিনি বলেন, আমি সিদ্ধান্ত নিই- আজ আমি এই প্রশ্নের সমাধান করেই ছাড়ব। যদি আমার মন এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, খোদা নেই তবে আমি নিজের বাড়িতে থাকব না, বরং সাথে সাথে বাইরে বেরিয়ে পড়ব। তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর আমি চিন্তা করতে আরম্ভ করি এবং চিন্তা করতে থাকি। আমার বয়সের নিরিখে আমি এই প্রশ্নের কোন যৌক্তিক উত্তর দিতে পারি নি; [বয়সে খুব ছোট ছিলেন;] কিন্তু তবুও আমি ভাবতে থাকি, চিন্তা করতে করতে আমার মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তখন আমি আকাশের দিকে তাকাই। সেদিন মেঘ ছিল না। আল্লাহ্ তা’লা তাকে কীভাবে শেখাতে চাচ্ছিলেন দেখুন! তিনি বলেন, আকাশ ঝকঝকে পরিষ্কার ছিল এবং আকাশে তারা খুব স্পষ্টভাবে জ্বলজ্বল করছিল। এক ক্লান্ত মস্তিষ্কের জন্য এর চেয়ে বেশি আনন্দদায়ক দৃশ্য আর কী হতে পারে! [আমি ক্লান্ত ছিলাম, তাই আকাশ দেখছিলাম আর তারকারাজি উপভোগ করছিলাম] আমি তারা দেখতে থাকি, আর দেখতে দেখতে তারার জগতে হারিয়ে যাই। কিছুক্ষণ পর যখন আমার মস্তিষ্কে সতেজতা ফিরে আসে তখন আমি মনে মনে বলি, কী সুন্দর তারা! কিন্তু এই তারাগুলোর পর কী থাকতে পারে? আমার মস্তিষ্ক এই প্রশ্নের উত্তরে বলে, এগুলোর পরে আরও তারা থাকবে। আমি ভাবলাম, সেগুলোর পরে কী থাকতে পারে? এর উত্তরেও আমার মন বলে, সেগুলোর পর আরও তারা থাকবে। এরপর আমি ভাবলাম, ঠিক আছে, সেগুলোর পর কী থাকতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তরেও আমার মন বলে, সেগুলোর পর আরও তারা থাকবে। আমি ভাবলাম, ঠিক আছে, তার পরে কী থাকতে পারে? এই প্রশ্নেরও আমার মন-মস্তিষ্ক সেই একই উত্তর প্রদান করে যে, আরও কিছু তারা থাকবে। তখন আমার হৃদয় বলে, এটি কীভাবে হতে পারে যে, একের পর দ্বিতীয় আর দ্বিতীয়ের পর তৃতীয় এবং তৃতীয়ের পর চতুর্থ পর্যায়েও তারকা থাকবে। এই ধারাবাহিকতা কি কোথাও শেষ হবে না? যদি শেষ হয় তাহলে তার পর কী আছে। এটিই সেই প্রশ্ন যার সম্পর্কে অধিকাংশ লোক হতভম্ব আর তারা বলে, আমরা যে বলি খোদা তা’লা হলেন অসীম সত্তা, এর অর্থ কী? আর আমরা যে বলি, খোদা তা’লা হলেন চিরস্থায়ী সত্ত¡া, এরই বা কী অর্থ? কোন না কোন সীমা তো থাকা উচিত! একই প্রশ্ন আমার হৃদয়ে তারকারাজি সম্পর্কে সৃষ্টি হয়। আর আমি বললাম, এগুলো অবশেষে কোথাও গিয়ে শেষ হয় কি-না? যদি শেষ হয় তাহলে এর পর কী রয়েছে? আর যদি শেষ না হয় তাহলে এটি কীরূপ ধারাবাহিকতা যার কোন শেষ নেই! আমার চিন্তাধারা যখন এই পর্যায়ে পৌঁছে তখন আমি বললাম, খোদা তা’লার অস্তিত্ব সম্পর্কে সসীম-অসীমের প্রশ্ন সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তোমরা খোদা তা’লার কথা বাদ দাও, এই তারকারাজি সম্পর্কে কী বলবে যেগুলো আমার চোখের সামনে রয়েছে। আমরা যদি এগুলোকে সীমাবদ্ধ বলি তাহলে সীমাবদ্ধ সেটি হয়ে থাকে যার পর অন্য জিনিস আরম্ভ হয়ে যায়। অতএব প্রশ্ন হলো প্রথমত যদি এগুলো সীমাবদ্ধ হয়ে থাকে তাহলে এগুলোর পর কী রয়েছে? আর যদি সেগুলো সীমাবদ্ধ হয়ে থাকে তাহলে সেগুলোর পর কী রয়েছে। আর যদি কোথাও বল যে, এগুলো অসীম তাহলে তারকারাজির অসীম হওয়ার বিষয়টি যদি মানুষ মেনে নিতে পারে তাহলে খোদা তা’লার অসীম হওয়ার বিষয়টি কেন মেনে নিতে পারবে না। তখন আমার হৃদয় বলে, হ্যাঁ, আসলেই খোদা আছেন, কেননা তিনি প্রকৃতির বিধানে সেই একই আপত্তি রেখে দিয়েছেন যা তাঁর সত্তা সম্পর্কে সৃষ্টি হয়। তিনি বলে দিয়েছেন যে, তুমি যদি আমাকে অদৃশ্য সত্তা মনে করে এই আপত্তি কর তাহলে যেসব জিনিস তুমি দেখতে পাচ্ছ সেগুলো সম্পর্কে তুমি কী উত্তর দিবে, যেখানে কিনা সেই একই আপত্তি যা তুমি আমার সম্পর্কে কর সেগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য আর তোমার কাছে এর কোন উত্তর নেই। তুমি খোদা তা’লা সম্পর্কে নির্দ্বিধচিত্তে এটি বলে দিবে, তিনি অসীম হওয়ার বিষয়টি আমরা বুঝতে পারি না। অপর স্থানে তিনি বলেন, এই যুক্তির মাধ্যমে খোদা তা’লার সত্তা আমার কাছে প্রমাণিত হয়ে যাওয়ার ফলে মহানবী (সা.)-এর সত্যতা আর হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) এর সত্যতা-ও আমার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে যায়। যাহোক আল্লাহ্ তা’লা যে তাকে জ্ঞানভান্ডারে পূর্ণ করেছিলেন এর এটিও একটি প্রমাণ। সামান্য পড়াশোনা জানা এক বালকের হৃদয়ে এভাবে প্রশ্ন সৃষ্টি করেন আর এরপর নিজেই পথপ্রদর্শন করেছেন। হযরত খলীফাতুল মসীহ্ আওয়াল (রা.) হযরত মুসলেহ্ মওউদ (রা.) সম্পর্কে কী ধারণা রাখতেন এর বহিঃপ্রকাশও হযরত খলীফাতুল মসীহ্ আউয়াল (রা.) করেছেন। তা থেকে প্রতিভাত হয় যে, তিনি এটিই মনে করতেন যে, এই বালক-ই মুসলেহ্ মওউদ হবে অর্থাৎ মুসলেহ্ মওউদ এর সত্যায়নস্থল হবে। হযরত মুসলেহ্ মওউদ দু-একটি ঘটনার উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বহুদিন আগের কথা। প্রথম দিকে আমি কতিপয় বন্ধুর সাথে মিলে ‘তাশহীযুল আযহান’ পত্রিকা চালু করেছিলাম। এই পত্রিকাটিকে পরিচিত করার জন্য যে প্রবন্ধ আমি লিখেছিলাম, যাতে এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে, সেটি যখন প্রকাশিত হয় তখন হযরত খলীফাতুল মসীহ্ আউয়াল (রা.) হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর সমীপে সেটির বিশেষ প্রশংসা করেন এবং নিবেদন করেন যে, এই প্রবন্ধটি অবশ্যই হুযূর (আ.) এর পড়ার যোগ্য। অতএব হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) মসজিদে মুবারকে সেই পত্রিকা আনান আর সম্ভবত মৌলভী মুহাম্মদ আলী সাহেবের মাধ্যমে সেই প্রবন্ধটি পাঠ করিয়ে শুনেন এবং প্রশংসা করেন। কিন্তু এরপর যখন আমি হযরত খলীফাতুল মসীহ্ আউয়াল (রা.)-এর সাথে সাক্ষাৎ করি, প্রথমে তিনি প্রশংসা করলেও পরবর্তীতে ব্যক্তিগতভাবে আমাকে বলেন, মিয়া! তোমার প্রবন্ধ খুবই ভালো ছিল, কিন্তু আমি প্রীত হইনি। আমাদের দেশে একটি প্রবাদ রয়েছে যে, উটের দাম চল্লিশ আর তার ছানার বিয়াল্লিশ। অর্থাৎ একটি উটের মূল্য কম আর তার ছানার মূল্য দুই রুপি বেশি। তোমার ক্ষেত্রে এ সংবাদ সত্য প্রমাণিত হয় নি। হযরত মুসলেহ্ মওউদ (রা.) বলেন যে, আমি এতটা পাঞ্জাবী ভাষা জানতাম না। হযরত মুসলেহ মওউদ (রা.) বলেন, এর অর্থ আমার জন্য বুঝা সম্ভব ছিল না তাই আমার চেহারায় বিস্ময়ের ছাপ দেখে হযরত খলীফাতুল মসীহ্ আউয়াল (রা.) বলেন, তুমি সম্ভবত এর অর্থ বুঝতে পার নি। তিনি [তথা খলীফাতুল মসীহ্ আউয়াল (রা.)] বলেন, আমাদের এলাকায় একটি গল্প প্রচলিত আছে। কোন এক ব্যক্তি উট বিক্রি করছিল এবং সাথে উটের বাচ্চাও ছিল যাকে সেখানকার স্থানীয় ভাষায় ‘টোডা’ বলে। কেউ বিক্রেতাকে উটের মুল্য জিজ্ঞেস করলে সে বলে উটের দাম চল্লিশ রুপি কিন্তু ‘টোডা’র মুল্য বিয়াল্লিশ রুপি। ক্রেতা জিজ্ঞেস করল, এ কেমন কথা!? তখন বিক্রেতা বলে, ‘টোডা’ একদিকে উট আর অপরদিকে উটের ছানাও। ঠিক অনুরূপভাবে তোমার সম্মূখে ছিল হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর রচনা বারাহীনে আহমদীয়া। যখন এটি প্রণয়ন করা হয় তখন তাঁর সম্মুখে তথা হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর সম্মুখে এমন কোন ইসলামী সাহিত্য ছিল না কিন্তু তোমার সম্মুখে তো এটি (তথা বারাহীনে আহমদীয়া) ছিল আর (আমার) প্রত্যাশা ছিল, তুমি এর তুলনায় উন্নত কিছু উপস্থাপন করবে এবং এটি থেকে (তথা বারাহীনে আহমদীয়া দ্বারা) উপকৃত হবে। তখন হযরত মুসলেহ মওউদ (রা.) বলেন, প্রত্যাদিষ্ট ব্যক্তির তুলনায় উন্নত জ্ঞান আনার সাধ্য কার? এর প্রশ্নই ওঠে না তবে তাঁর লুক্কায়িত জ্ঞানভান্ডার খুঁজে খুঁজে বের করে উপস্থাপন করা যায়! হযরত খলীফাতুল মসীহ আউয়াল (রা.)-এর উক্ত কথার অর্থ হলো, পরবর্তী প্রজন্মের কাজ হয়ে থাকে অতীতের ভিত উঁচু করা। অন্যদিকে হযরত খলীফাতুল মসীহ আউয়াল (রা.) তাঁর (রা.) শারীরিক অবস্থা সম্বন্ধেও জানতেন এবং তাঁর (রা.) জ্ঞানের পরিধি সম্বন্ধেও অবগত ছিলেন। এতদসত্ত্বেও তাঁর (রা.) সম্পর্কে এত উন্নত ধারণা পোষণ করা সাব্যস্ত করে, তিনি (রা.) নিশ্চিত জানতেন যে, এ বালক এমন এবং তার মাঝে এমন সামর্থ আছে যে উচ্চাঙ্গের প্রবন্ধ লিখতে সক্ষম। যাহোক, হযরত মুসলেহ মওউদ (রা.) বলেন, এটি এমন এক কথা, যদি পরবর্তী প্রজন্ম এটি মাথায় রাখে তাহলে নিজেরাও বরকত ও কল্যাণ অর্জন করতে সক্ষম হবে এবং জাতির জন্যও বরকত এবং কল্যানের কারণ হতে পারে তবে নিজ পিতৃপুরুষের চেয়ে অগ্রগামী হওয়ার চেষ্টা পুণ্যের বিষয়ে হওয়া উচিত, এমনটি নয় যে, চোরের সন্তান চেষ্টা করবে, সে যেন পিতার চেয়ে বড় চোর হতে পারে বরং উদ্দেশ্য হল, নামাযী ব্যক্তির সন্তান চেষ্টা করবে- সে যেন পিতার চেয়ে অধিক নামাযী হতে পারে। হযরত মুসলেহ মওউদ (রা.)-এর শৈশবের স্বাস্থ্যগত বিষয়ের একটি ঘটনা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর (রা.) স্বাস্থ্য এবং জ্ঞানের স্বরূপ বিষয়ক আরও একটি ঘটনা রয়েছে। এটিও মূলত হযরত খলীফাতুল মসীহ্ আউয়াল (রা.) এবং হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর তাঁর (রা.) প্রতি ভালবাসা এবং স্নেহের ঘটনা যা এটিও প্রমাণ করে যে, তাঁরা উভয়ে এ বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন- উক্ত সন্তান মুসলেহ্ মওউদ হতে যাচ্ছেন। উক্ত ঘটনার বিষয়য়ে হযরত মুসলেহ্ মওউদ (রা.) বলেন, ‘আমার শিক্ষাদীক্ষার বিষয়ে আমার প্রতি সবচেয়ে বেশি অনুগ্রহ করেছেন হযরত খলীফাতুল মসীহ্ আউয়াল (রা.)। তিনি যেহেতু একদিকে হেকিম ছিলেন এবং পুস্তকের দিকে অধিক সময় তাকিয়ে থাকা আমার স্বাস্থ্যগত কারণে সম্ভব ছিল না- একথাও তিনি জানতেন তাই তিনি একটি পদ্ধতি অবলম্বন করতেন আর তা হল, আমাকে তাঁর পাশে বসাতেন আর বলতেন, মিয়া! আমি পড়ছি, তুমি শুনতে থাকো। এরপর তিনি (রা.) তাঁর স্বাস্থ্যের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, শৈশবে আমার চোখে ট্র্যাকোমা হয়ে যায় [পূর্বেও তাঁর চোখের বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে] এবং অব্যাহতভাবে তিন-চার বছর আমার চোখে ব্যথা হতে থাকে আর ট্র্যাকোমার কারণে এত ভয়ানক পীড়া যে ডাক্তাররা বলে দেয়, এর চোখ নষ্ট হয়ে যাবে। একারণে হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) আমার চোখের জন্য বিশেষভাবে দোয়া করা শুরু করেন এবং এর পাশাপাশি আমার জন্য তিনি (আ.) রোযাও রাখা আরম্ভ করেন। হযরত মুসলেহ মওউদ (রা.) বলেন, তিনি (আ.) সেসময় কতগুলো রোযা রেখেছিলেন- আমার ঠিক স্মরণ নেই। যাহোক তিন থেকে সাতটি রোযা তিনি রেখেছিলেন। শেষ রোযার দিন তিনি যখন ইফতার করতে যাচ্ছিলেন এবং রোযা খোলার জন্য মুখে কোন জিনিস পুরলেন তখন আমি হঠাৎ চোখ খুলি এবং উচ্চস্বরে বলি, আমি দেখতে পাচ্ছি। হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) যখন ইফতারের সময় ইফতার করছিলেন তখন হযরত মুসলেহ মওউদ (রা.) বলেন, আমি চোখ খুলি এবং চোখ খুলে বলি, আমি দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু এই রোগের প্রাবল্য ও অব্যাহত আক্রমনের ফলাফল এই দাঁড়াল যে, আমার এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে গেল। এর বিশদ বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি (রা.) বলেন, মোটকথা আমার বাম চোখের দৃষ্টিশক্তি নেই। আমি এই চোখ দিয়ে পথ নির্ণয় করতে পারলেও বই পড়তে পারি না। যদি আমার পরিচিত কোন ব্যক্তি দুই চার ফিট দুরত্বে বসে থাকে তাহলে আমি তাকে দেখে চিনতে পারি কিন্তু অপরিচিত কেউ বসে থাকলে তার চেহারা আমি চিনতে পারি না। আমার শুধু ডান চোখ কাজ করছিল এবং তাতেও আবার ট্র্যাকোমা দেখা দেয়। আর এই ছত্রাক এত বেশী ছিল যে, আমি অনেক রাত নির্ঘুম অবস্থায় কাটিয়েছি। সুতরাং এ ছিল তাঁর স্বাস্থ্যের অবস্থা। অপর দিকে তাঁর জ্ঞানগত কর্মের দিকে লক্ষ্য করুন কীভাবে আল্লাহ্ তা’লার সাহায্য ও সমর্থন তাঁকে ধন্য করেছে। যাহোক তিনি (রা.) বলেন, বস্তুত হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) আমার শিক্ষকদের বলে দিয়েছিলেন যে, “পড়াশুনা তার ইচ্ছার ওপর নীর্ভর করবে, যতটুকু সে পড়তে চায় ততটুকুই পড়বে। আর পড়তে যদি না চায় তাহলে তাকে পড়তে বাধ্য করার প্রয়োজন নেই। পড়াশুনার চাপ সহ্য করার মত স্বাস্থ্যের অবস্থা তার নেই।” হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) বারবার আমাকে শুধু এই কথাই বলেছেন যে, “তুমি হযরত মৌলবী সাহেব [খলীফা আউয়াল (রা.)] -এর কাছে কুরআন করীমের অনুবাদ ও বুখারী শরীফ পড়ে নাও। এছাড়া হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) আমাকে এটিও বলেছিলেন যে, কিছুটা চিকিৎসা শাস্ত্রও পড়ে নাও কেননা এটি আমাদের পারিবারিক স্কিল।” তিনি (রা.) বলেন, মোটকথা এভাবেই আমার পড়াশুনা চলে আর প্রকৃতপক্ষে এ ক্ষেত্রে আমার অপারগতাও ছিল, কেননা শৈশবে চোখের সমস্যা ছাড়াও আমার যকৃতের সমস্যাও ছিল। আমার এমন আরো অনেক রোগ-ব্যাধি ছিল। অনেক সময় দীর্ঘ ছয় মাস পর্যন্ত আমাকে মুগ ডালের পানি বা শাক-সব্জির জুস দেয়া হত। এই রোগগুলোর পাশাপাশি আমার প্লীহাও বেড়ে যায়। প্লীহার স্থানে রেড আয়োডাইড অফ মার্কারি মালিশ করা হত। এভাবে গলাতেও এটি মালিশ করা হত কেননা আমার গলগন্ডারে সমস্যাও ছিল। মোটকথা চোখের ইনফেকশন, যকৃতের ব্যাধি, প্রচন্ড প্লীহা রোগ আর এর সাথে কালা জ্বরও থাকা যা কখনও কখনও ছয়মাস পর্যন্ত নামতো না। রোগ-ব্যাধির এই অবস্থা আর আমার পড়াশুনা সম্পর্কে বড়দের এই সিদ্ধান্ত দেয়া যে, ‘সে যতটুকু পড়তে চায় ততটুকু পড়–ক বেশী চাপ যেন দেয়া না হয়’-এই অবস্থা থেকে সবাই এই অনুমান করতে পারবে যে আমার শিক্ষাগত যোগ্যতার অবস্থা কি! একবার আমাদের নানাজান হযরত মীর নাসের নওয়াব সাহেব (রা.) আমার উর্দূ পরীক্ষা নিলেন। এখনও আমার হাতের লেখা ভালো নয় কিন্তু সেই সময় অর্থাৎ শৈশবে আমার হাতের লেখা এতটাই খারাপ ছিল যে, আমার হাতের লেখা পড়াই যেত না যে আমি কি লিখেছি। তিনি আমার হাতের লেখা পড়ার অনেক চেষ্টা করলেন কিন্তু তিনি কোনভাবেই তা পড়তে পারলেন না। মীর সাহেব অনেক রাগী প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। রাগান্বিত হয়ে তিনি তৎক্ষনাৎ হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর নিকট আসেন। ঘটনাক্রমে আমিও তখন ঘরেই ছিলাম। হযরত মুসলেহ্ মওউদ (রা.) বলেন আমরা তো আগে থেকেই তার স্বভাবে ভয় পেতাম, তিনি তাঁর নানা ছিলেন । তিনি স্বয়ং হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর নিকট নালিশ নিয়ে এসেছেন তাই আমার আরও বেশি ভয় হলো যে, না জানি এখন কি হয়। যাহোক মীর সাহেব এসে হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) কে বললেন, “মাহমুদের পড়াশুনার প্রতি আপনার একটুও খেয়াল নেই। আমি তার উর্দূ পরীক্ষা নিয়েছি। আপনি তার পরীক্ষার খাতাটি একটু দেখুন। তার হাতের লেখা এত খারাপ যে, কেউ তা পড়তে পারবে না।” এরপর এই উত্তেজিত অবস্থাতেই তিনি হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) কে বলতে লাগলেন “আপনি আদৌ ভ্রুক্ষেপ করেন না আর এ দিকে ছেলের পড়াশুনার বয়স নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।” হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) হযরত মীর সাহেবকে এত উত্তেজিত অবস্থায় দেখে বলেন যাও ‘মৌলবী সাহেবকে ডেকে আন’। যখনই তিনি কোন সমস্যার সম্মুখীন হতেন সদা হযরত খলীফাতুল মসীহ আওয়াল (রা.)-কে ডেকে পাঠাতেন। হযরত খলীফাতুল মসীহ্ আউয়াল (রা.)-এর আমার প্রতি বিশেষ ¯েœহের দৃষ্টি ছিল। তিনি আসলেন এবং রীতি অনুযায়ী মাথা নিচু করে একদিকে দাঁড়িয়ে গেলেন। হযরত মসীহ মওউদ (আ.) বললেন, মৌলবী সাহেব! আমি আপনাকে একারণে ডেকেছি যে, মীর সাহেব বলেন, মাহমুদের হাতের লেখা পড়া যায় না। আমি ইচ্ছা হয় তার পরীক্ষা নেয়ার। এটি বলে হযরত মসীহ মওউদ (আ.) কলম নিলেন এবং দুই তিন লাইনের এক প্যারা লিখে আমাকে দিলেন এবং বললেন, এর অনুলিপি তৈরি কর। হযরত মসীহ মওউদ (আ.) এই পরীক্ষাই আমার নিয়েছিলেন। আমি খুবই সাবধানতার সাথে এবং খুব ভেবেচিন্তে সেটিকে কপি করলাম। প্রথমত সেই প্যারাটি খুব দীর্ঘ ছিল না। দ্বিতীয়ত, আমার কেবল অনুলিপি করার কাজই ছিল আর অনুলিপি করা সহজতর হয়ে থাকে কেননা মূল বিষয় সামনে থাকে আর আমি তা ধীরে ধীরে কপি করি। আলিফ, বা প্রভৃতি অক্ষরগুলো সাবধানতার সাথে লিখলাম। হযরত মসীহ মওউদ (আ.) এটি দেখে বলেন, আমি মীর সাহেবের কথা শুনে অনেক দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম, কিন্ত তার হাতের লেখা তো আমার লেখার সাথে মিলে যায়। মুসলেহ মওউদ (রা.)-কে বলেন হযরত খলীফাতুল মসীহ্ আউয়াল (রা.), পূর্বেই আমার সমর্থনে বলার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। তিনি বলতে লাগলেন, মীর সাহেব এমনিতেই উত্তেজিত হয়ে গেছেন, নতুবা তার হাতের লেখা তো অনেক ভাল। এ ছিল আমার অবস্থা। তিনি বলেন, দেখুন এ অবস্থায় আমার জাগতিকভাবে জ্ঞানার্জন কতটুকু সম্ভব ছিল! নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে তিনি এক স্থানে বলেন ,হযরত খলীফাতুল মসীহ্ আউয়াল (রা.) আমাকে বলতেন, মিয়া তোমার স্বাস্থ্য এমন নয় যে তুমি নিজে পড়বে। আমার কাছে এসে, আমি পড়বো আর তুমি শুনো। তিনি জোর দিয়ে প্রথমে কুরআন পড়ান আর পরে বুখারী পড়িয়ে দেন। এমন নয় যে, তিনি ধীরে ধীরে কুরআন পড়িয়েছেন। বরং তার রীতি ছিল তিনি কুরআন পড়ে অনুবাদও করে যেতেন। যদি কোন বিষয় গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে বলে দিতেন, অন্যথায় দ্রæত পড়িয়ে যেতেন। তিনি (রা.) তিন মাসের মধ্যে আমাকে সম্পূর্ণ কুরআন পড়িয়ে দিয়েছিলেন। এরপর কিছুটা বিরতি তৈরি হতে থাকে। হযরত মসীহ মওউদ (আ.) এর মৃত্যুর পর তিনি (রা.) পুনরায় আমাকে বলেন, মিয়া আমার কাছে বুখারী সম্পূর্ণ পড়ে নাও। তিনি (রা.) বলেন, আমি মূলত খলীফাতুল মসীহ্ আউয়াল (রা.)-কে বলে দিয়েছিলাম যে, হযরত মসীহ মওউদ (আ.) আমাকে বলতেন, মৌলবী সাহেবের নিকট থেকে কুরআন এবং বুখারী পড়ে নাও। তাই হযরত মসীহ মওউদ (আ.) এর জীবদ্দশাতেই আমি তার নিকট কুরআন এবং বুখারী পড়া শুরু করে দিয়েছিলাম। যদিও মাঝে মাঝে বাদও যায়। একইভাবে আমি হযরত মসীহ মওউদ (আ.) এর নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসাশাস্ত্র পড়াও তার নিকট শুরু করে দিয়েছিলাম। যাহোক তিনি বলেন, মোটকথা আমি তার কাছ থেকে চিকিৎসাশাস্ত্র পড়েছি এবং কুরআন করীমের তফসীরও। কুরআন করীমের তফসীর তিনি ২মাসের মধ্যে শেষ করিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি আমাকে নিজের কাছে বসিয়ে নিতেন এবং কখনও অর্ধেক এবং কখনও পূর্ণাঙ্গীন পারা অনুবাদসহ পড়ে শুনাতেন। কোন কোন আয়াতের তফসীরও করে দিতেন। এভাবে তিনি দুই তিন মাসের মধ্যে বুখারী আমাকে পড়ে শেষ করে দিয়েছেন। একবার রমযান মাসে তিনি সম্পূর্ণ কুরআনের দরস শুনিয়েছিলেন তাতেও আমি অংশগ্রহণ করেছিলাম। তাঁর কাছে কতিপয় আরবী পুস্তিকা পাঠেরও সৌভাগ্য হয়েছে। মোটকথা এটি ছিল আমার জাগতিক জ্ঞানের বহর। তাঁর প্রথম বক্তৃতা এবং এ প্রেক্ষিতে হযরত খলীফাতুল মসীহ্ আউয়াল (রা.) এর সন্তুষ্টির বহিঃপ্রকাশ সম্পর্কে তিনি বর্ণনা করেন, আমাদের একজন শিক্ষক ছিলেন, আমি তাকে দেখেছি যে, আমি যখন দরস দিতাম তখন তিনি নিয়মিত আমার দরসে অংশগ্রহণ করতেন। কিন্তু এর বিপরীতে আমার আরেকজন শিক্ষক ছিলেন। যখন তিনি দরস দিতেন তখন প্রথমজন মসজিদে এসে তাঁকে দরস দিতে দেখলে চলে যেতেন এবং বলতেন, এর কথা কী শুনব, এগুলো তো শোনাই আছে। কিন্তু আমি তাঁর ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও আমার প্রতি ভাল ধারণার কারণে বলতেন, আমি তার দরসে এজন্য অংশগ্রহণ করি যে, এর মাধ্যমে আমি পবিত্র কুরআনের অনেক নতুন অর্থ জানতে পারি। এটি আল্লাহ্ তা’লার কৃপা যে, কোনো কোনো মানুষের প্রতি শৈশবেই এমন জ্ঞানের দরজা খুলে দেয়া হয় যা অন্যদের চিন্তচেতনা ও কল্পনাতেও থাকে না। আসলে বিষয় হলো, আল্লাহ্ তা’লা তাঁকে মুসলেহ্ মওউদ বানানোর ছিলেন, এজন্য নিজেই জ্ঞান দান করছিলেন। যাহোক তিনি (রা.) বলেন, এই মসজিদেই, সম্ভবত এটি মসজিদে আকসার কথা, ১৯০৭ সনে আমি সর্ব প্রথম জনসম্মুখে বক্তৃতা করি। এটি হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর জীবদ্দশায় ঘটে অর্থাৎ মৃত্যুর এক বছর পূর্বের ঘটনা। উপলক্ষটি ছিল জলসার আর অনেক লোক সমবেত হয়েছিল। হযরত খলীফাতুল মসীহ্ আউয়াল (রা.)ও উপস্থিত ছিলেন। আমি সূরা লুকমানের দ্বিতীয় রুকু পাঠ করে এর তফসীর উপস্থাপন করি। তখন আমার অবস্থা এমন ছিল যে, আমি যখন (বক্তৃতা দেয়ার জন্য) দন্ডায়মান হই, যেহেতু আমি ইতোপূর্বে কখনোই জনসম্মুখে বক্তৃতা করি নি এবং আমার বয়সও তখন কেবল ১৮ বছর ছিল আর তখন হযরত খলীফাতুল মসীহ্ আউয়াল (রা.) এবং আঞ্জুমানের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন, এছাড়া আরো অনেক বন্ধুও এসেছিলেন এজন্য আমার চোখের সামনে অন্ধকার ছেয়ে যায়। তখন আমার কিছুই জানা ছিল না যে, আমার সম্মুখে কে বসে আছেন আর কে নেই। বক্তৃতাটি আধা ঘন্টা বা পৌনে এক ঘন্টার ছিল। আমি যখন বক্তৃতা শেষ করে আসন গ্রহণ করি আমার স্মরণ আছে তখন হযরত খলীফাতুল মসীহ্ আউয়াল (রা.) দাঁড়িয়ে বলেন, মিয়া! আমি তোমাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি, কেননা তুমি অনেক উচ্চাঙ্গের বক্তব্য উপস্থাপন করেছ। আমি তোমাকে খুশি করার জন্য বলছি না, বরং আমি তোমাকে নিশ্চিত করে বলছি, আসলেই ভালো ছিল। অতএব আল্লাহ্ তা’লা তাঁকে এমনভাবে জ্ঞানে সমৃদ্ধ করেছিলেন যে, তাঁর ৫২ বছরের জীবন এর সাক্ষী। হোক সেটি ধর্মীয় বা জাগতিক কোনো বিষয়, যখনই তাঁকে কোনো বিষয়ে লিখতে বা বলতে বলা হয়েছে তখন তিনি (রা.) জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ¯্রােতস্বীনি বইয়ে দিয়েছেন। অসংখ্যবার তাঁর বিভিন্ন বক্তৃতার আআহমদীরাও ভ‚য়সী প্রশংসা করেছে আর এটি রেকর্ডেড কথা এবং প্রকাশ্যে জনসম্মুখে তাঁর প্রশংসাও করেছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকাও খবর প্রকাশ করেছে। এসব বিষয় থেকে সুস্পষ্ট যে, হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অত্যন্ত মহিমার সাথে পূর্ণ হয়েছে। যাহোক তাঁর লিখনী ও বিভিন্ন বক্তৃতা একটি অমূল্য ভান্ডার, এগুলোর হাজার হাজার পৃষ্ঠা হবে, বরং বলা উচিত সম্ভবত লক্ষ পৃষ্ঠার কাছাকাছি হবে। এখন এগুলো ইংরিজি ভাষায় এবং অন্যান্য ভাষায়ও অনূদিত হচ্ছে। আমাদেরও দায়িত্ব এগুলো থেকে লাভবান হওয়া। হযরত মুসলেহ্ মওউদ (রা.) নিজেকে মুসলেহ্ মওউদ সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যায়নকারী বা সত্যায়নস্থল সব্যস্ত করতে গিয়ে বলেন, আল্লাহ্ তা’লার কৃপা ও তাঁর দয়ায় সেই ভাবিষ্যদ্বাণী যার পূর্ণতার জন্য অনেক দিন যাবৎ অপেক্ষা করা হচ্ছিল সে সম্পর্কে আল্লাহ্ তা’লা স্বীয় ইলহাম ও বিভিন্ন আভাসের মাধ্যমে আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, সেই ভবিষ্যদ্বাণীটি আমার সত্তায় পূর্ণ হয়েছে। এছাড়া আল্লাহ্ তা’লা এখন ইসলামের শত্রুদের নিকট হুজ্জত পূর্ণ করে দিয়েছেন আর তাদের কাছে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, ইসলাম হল আল্লাহ্ তা’লার সত্য ধর্ম, মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ্ (সা.) আল্লাহ্র সত্য রসূল এবং হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) আল্লাহ্ তা’লার সত্য নবী। তারা মিথ্যাবাদী যারা ইসলামকে মিথ্যা বলে। মিথ্যুক হলো তারা যারা মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ্ (সা.)কে মিথ্যুক বলে। আল্লাহ্ তা’লা এই মহান ভবিষ্যদ্বাণীর মাধ্যমে ইসলাম এবং মহানবী (সা.)-এর সত্যতার একটি জ্বলন্ত প্রমাণ মানুষের সামনে উপস্থাপন করেছেন। কার সাধ্য ছিল যে, ১৮৮৬ সালে, অর্থাৎ আজ থেকে পুরো ৫৮ বছর পূর্বে [তিনি (রা.) যখন বর্ণনা করছিলেন তখন ৫৮ বছর হয়ে গিয়েছিল] নিজের পক্ষ থেকে এই সংবাদ দেয়ার যে, ৯ বছরের মধ্যে তার ঘরে এক পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করবে, সে দ্রæত বড় হবে, সে পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে খ্যাতি লাভ করবে, সে ইসলাম ও মহানবী (সা.)-এর নাম পৃথিবীতে প্রচার করবে, তাকে বাহ্যিক ও ধর্মীয় জ্ঞানে পরিপূর্ণ করা হবে, সে মহাপ্রতাপান্বিত খোদার ঐশী বিকাশের কারণ হবে এবং সে আল্লাহ্ তা’লার মহিমা, নৈকট্য ও অনুগ্রহের এক জীবন্ত দৃষ্টান্ত হবে। এই সংবাদ পৃথিবীর কোন ব্যক্তি নিজের পক্ষ থেকে প্রদান করতে পারে না! স্বয়ং খোদা এই সংবাদ প্রদান করেছেন এবং সেই খোদা-ই সেটিকে পূর্ণ করেছেন। সেই মানুষটির মাধ্যমে তা পূর্ণ করেছেন যার সম্বন্ধে ডাক্তারের এই প্রত্যাশা ছিল না যে, সে জীবিত থাকবে অথবা দীর্ঘায়ু লাভ করবে। অতঃপর তিনি (রা.) নিজের স্বাস্থ্যের বিষয়ে বলেন, শৈশবে আমার স্বাস্থ্যের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, একবার ডাক্তার মির্যা ইয়াকুব বেগ সাহেব (রা.) আমার বিষয়ে হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-কে বলেন, এর ক্ষয়রোগ হয়েছে, তাই তাকে কোন পাহাড়ি অঞ্চলে পাঠানো হোক, অর্থাৎ যক্ষা রোগের কারণে। কাজেই হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) আমাকে শিমলা পাঠিয়ে দেন, কিন্তু সেখানে গিয়ে আমি উদাস হয়ে যাই আর তাই দ্রুত ফিরে আসি। মোটকথা এমন ব্যক্তি যার স্বাস্থ্য একদিনের জন্যও ভাল ছিল না, সেই ব্যক্তিকে খোদা তা’লা জীবিত রেখেছেন আর একারণে জীবিত রেখেছেন যে, তার মাধ্যমে স্বীয় ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ করবেন এবং ইসলাম ও আহমদীয়াতের সত্যতার প্রমাণ মানুষের সামনে উপস্থাপন করবেন। এছাড়া আমি সেই ব্যক্তি ছিলাম যার কোন জাগতিক জ্ঞান ছিল না, কিন্তু আল্লাহ্ তা’লা নিজ অনুগ্রহে আমার শিক্ষদীক্ষার জন্য ফিরিশতাদের প্রেরণ করেন এবং আমাকে কুরআনের সেই সমস্ত জ্ঞান দান করেন যা কোন মানুষ ধারণা কিংবা কল্পনাও করতে পারত না। সেই জ্ঞান যা খোদা আমাকে দান করেছেন, সেই আধ্যাত্মিক ঝর্ণাধারা যা আমার বক্ষে প্রস্ফুটিত, তা কোন কাল্পনিক কিংবা আনুমানিক বিষয় নয়, বরং এটি অকাট্য ও সুনিশ্চিত বিষয়। আমি সমগ্র পৃথিবীকে চ্যালেঞ্জ করছি, এই ধরাপৃষ্ঠে যদি এমন কোন ব্যক্তি এ দাবি করে যে, তাকে আল্লাহ্ তা’লার পক্ষ থেকে কুরআন শিখানো হয়েছে তাহলে আমি সর্বদা তার মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু আমার মোকাবিলা করতে কেউ-ই আসে নি। অথচ আমি জানি, ধরাপৃষ্ঠে আজ আমি ছাড়া আর কেউ নেই যাকে খোদা তা’লার পক্ষ থেকে পবিত্র কুরআনের জ্ঞান দান করা হয়েছে। আল্লাহ্ আমাকে কুরআনের জ্ঞান দান করেছেন এবং বর্তমানে তিনিই আমাকে কুরআন শিখানোর জন্য জগদ্বাসীর শিক্ষক নিযুক্ত করেছেন। আল্লাহ্ তা’লা আমাকে এই উদ্দেশ্যে দাঁড় করিয়েছেন যেন আমি মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ্ (সা.) ও পবিত্র কুরআনের নাম পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে পৌঁছে দেই এবং ইসলামের বিপরীতে জগতে বিদ্যমান সকল মিথ্যা ধর্মকে পরাজিত করি। বাস্তবে তিনি (রা.) এ কাজ করে দেখিয়েছেন। তাঁর যুগে অগণিত ভাষায় পবিত্র কুরআনের অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। অগণিত নয় যথেষ্ট পরিমাণে কাজ হয়েছে আর সেই কাজকেই এখন আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাঁর জীবদ্দশায় ১৭-১৮টি ভাষায় পবিত্র কুরআনের অনুবাদ সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল। অনুরূপভাবে তাঁর জীবদ্দশায় ইসলামের প্রচার পৃথিবীর সকল প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। তিনি (রা.) বলেন, পৃথিবী সর্বশক্তি প্রয়োগ করুক। তারা তাদের সমস্ত শক্তি ও জনবল একত্রিত করুক আর খ্রিষ্টান বাদশাহরাও তাদের সকল রাজত্ব সমবেত হোক, এছাড়া ইউরোপ এবং আমেরিকাও যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে যায় আর পৃথিবীর সকল বড় সম্পশালী পরাশক্তিগুলোও যদি এক হয়ে যায় আর আমাকে এই উদ্দেশ্যে ব্যর্থ করতে একতাবদ্ধ হয়ে যায় তবুও আমি খোদার কসম খেয়ে বলছি, তারা আমার বিরুদ্ধে ব্যর্থমনোরথ হবে। খোদা আমার সকল দোয়া এবং পরিকল্পনার বিপরীতে তাদের সমস্ত ষড়যন্ত্র, কুটচাল ও প্রতারণাকে নিশ্চিহ্ন করে দিবেন। এছাড়া খোদা আমার মাধ্যমে অথবা আমার শিষ্য এবং অনুসারীদের মাধ্যমে এই ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতা প্রমাণের জন্য মহানবী (সা.)-এর নামের কল্যাণ ও বদৌলতে ইসলাম ধর্মের সম্মান ও মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন আর তারা সেই সময় পর্যন্ত পৃথিবীবাসীকে অবকাশ দেবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত না ইসলাম পুনরায় নিজ পূর্ণ মহিমার সাথে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং যতক্ষণ পর্যন্ত না মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ্ (সা.)-কে আবারো জগতের জীবন্ত নবী হিসেবে গ্রহণ করা হয়। অতএব এই ভবিষ্যদ্বাণী তো পূর্ণ হয়েছে এবং তিনি (রা.) তাঁর যুগও অতিবাহিত করেছেন, কিন্তু এই ভবিষ্যদ্বাণীর কথাগুলো আজ অবধি প্রতিষ্ঠিত রয়েছে আর ইনশাআল্লাহ্ সেই সময় পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত থাকবে এবং চলমান থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর মিশন পূর্ণ হয় আর ইসলামের পতাকা সমগ্র বিশ্বে উড্ডীন হয়। অতএব আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, এই ভবিষ্যদ্বাণী উপলক্ষে আমাদের বিভিন্ন সভা-সমাবেশ এবং একে স্মরণ রাখা তখনই উপকারী সাব্যস্ত হবে যখন আমরা এ উদ্দেশ্যকে সর্বদা দৃষ্টিপটে রাখব, অর্থাৎ আমাদেরকে মহানবী (সা.)-এর সম্মান ও মর্যদাকে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এছাড়া বিশ্ববাসীর নিকট ইসলামের সত্যতা তুলে ধরে সবাইকে মহানবী (সা.)-এর পতাকা তলে সমবেত করতে হবে। বর্তমানে হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর মান্যকারীরা ছাড়া আর কেউ নেই যাদের মাধ্যমে ইসলামের পতাকা পুনরায় ধরাপৃষ্ঠে উড্ডীন হবে এবং জগৎময় ইসলাম বিস্তার লাভ করবে। মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে এই কাজ করার তৌফিক দান করুন। (আমীন)