
19 Aug হযরত খলীফাতুল মসীহ্ আল খামেস (আই.) কর্তৃক প্রদত্ত ১৩ আগষ্ট ২০২১ জুমুআর খুতবা৷
যুক্তরাজ্যের (টিলফোর্ড, সারেস্থ) ইসলামাবাদের মুবারক মসজিদে প্রদত্ত সৈয়্যদনা আমীরুল মু’মিনীন হযরত মির্যা মসরূর আহমদ খলীফাতুল মসীহ্ আল্ খামেস (আই.)-এর ১৩ আগস্ট, ২০২১ মোতাবেক ১৩ যহুর, ১৪০০ হিজরী শামসী’র জুমুআর খুতবা
তাশাহ্হুদ, তা’ঊয এবং সূরা ফাতিহা পাঠের পর হুযূর আনোয়ার (আই.) বলেন:
আলহামদুলিল্লাহ্, বিগত জুমুআয় আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত, যুক্তরাজ্যের সালানা জলসা এক বছর বিরতির পর, বরং বলা উচিত দুই বছর পর শুরু হয়ে তিন দিন আধ্যাত্মিক পরিবেশ উপহার দিয়ে গত রবিবার সমাপ্ত হয়েছে। ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে জলসা করা সম্ভব হয় নি। এছাড়া জলসার ব্যবস্থাপনা কমিটিও ভেবেছিল, পরিস্থিতি যেহেতু অনেকটা একই, তাই এবছরও জলসা হবে না। আর এই ধারণার কারণে প্রস্তুতির দিকেও মনোযোগ ছিল না, যার উল্লেখ আমি গত খুতবায়ও করেছিলাম। কিন্তু তাদেরকে যখন বলা হলো যে, জলসা ইনশাআল্লাহ্ তা’লা অনুষ্ঠিত হবে তখন তারা প্রস্তুতি নেয়া আরম্ভ করে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল, তারা মন দিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন না। আমার শঙ্কা ছিল, ব্যবস্থাপনা যেখানে এমন নিশ্চিন্তভাব, সেখানে কোথাও কর্মীরাও না আবার একই চিন্তাধারা নিয়ে বসে থাকে! কিন্তু আল্লাহ্ তা’লার কাছে এই আশা ছিল যে, তিনি চাইলে উত্তমরূপে জলসার প্রস্তুতি সম্পন্ন করিয়ে দিবেন আর কর্মীও পাওয়া যাবে। এ পটভূমিতে আমাকে একবার ব্যবস্থাপনাকে কঠোর ভাষায় বলতে হয়েছে যে, আপনারা যদি এমন অমনোযোগী হয়ে কাজ করেন আর মনে করেন যে, ‘জানি না জলসা হবে কি হবে না’ আর আপনাদের পক্ষ থেকে যদি নিরাশা প্রকাশ পায় তাহলে আমি নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটি নিযুক্ত করছি। মোটকথা আমার এই কথা তাদেরকে একটি ঝাঁকুনি দেয় আর দেরিতে আরম্ভ হলেও দ্রুততার সাথে কাজ শুরু হয়ে যায়। কর্মীবাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবক অর্থাৎ মূল কর্মীবাহিনী, নিম্ন পর্যায়ে যারা কাজ করে থাকে, প্রকৃতপক্ষে তারাই মূল জনশক্তি; মনে হচ্ছিল, পূর্ব থেকেই তারা (কাজের জন্য) উন্মুখ। তাৎক্ষণিকভাবে জলসার ব্যবস্থাপনার জন্য চতুর্দিক থেকে স্বেচ্ছাসেবক আসা শুরু হয়। জলসার সময় সেসকল ডিউটি প্রদানকারী কর্মীদের লাইন লেগে যায়। এ জলসা যেহেতু ক্ষুদ্র পরিসরে হওয়ার ছিল তাই কর্মী নির্বাচন করাটা একটি কঠিন কাজ ছিল। যাহোক এর জন্য পুরুষ-মহিলা উভয় পক্ষ কর্মী নির্বাচন করে। লাজনারা সম্ভবত কর্মীর এক পঞ্চমাংশ ডিউটি দেয়ার জন্য বেছে নিয়েছে আর পুরুষরা সম্ভবত কর্মীদের এক তৃতীয়াংশ বাদ দিয়েছে। যারা এ কাজের সুযোগ পায় নি তারা হতাশ হয়েছে। আমি এখানে সর্বপ্রথম ঐ সকল পুরুষ-মহিলা, ছেলে-মেয়ে এবং শিশুদের সম্বোধন করে বলতে চাই- ‘আল্লাহ্ তা’লা নিয়্যত অনুযায়ী পুরস্কৃত করেন’ [শিশুদের বলার উদ্দেশ্য হলো, তারাও ডিউটি দিত]। হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর অতিথিদের সেবা করার যে সদিচ্ছা আপনাদের ছিল, তা পূর্ণ হয়ে গেছে, যদিও আপনারা সেবা করার সুযোগ পান নি, কিন্তু আল্লাহ্ তা’লা আপনাদের নিয়্যতের কারণে প্রতিদান থেকে আপনাদেরকে বঞ্চিত করবেন না। যাহোক, আমি দোয়া করি, আল্লাহ্ তা’লা তাদের সবাইকে সেবার প্রেরণার জন্য উত্তম প্রতিদান দিন।
দ্বিতীয়ত যারা বিভিন্ন বিভাগে কাজ করে থাকে, আমার রীতি হলো জলসা পরবর্তী জুমুআয় আমি কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে থাকি। বন্ধুরা আমাকে লিখছেন আর পুরো পৃথিবীর যারা আমাকে পত্র লিখে তারা এই স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছেন। যেখানেই যাদের ডিউটি ছিল, তারা সেখানে নিজ দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করেছেন। বৃষ্টির কারণে পার্কিং থেকে গাড়ি বের করা এক পর্যায়ে কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। সেখানে স্বেচ্ছাসেবকরা অসাধারণ কাজ করেছেন। আক্ষরিকভাবে কাদা থেকে তুলে বাইরে নিয়ে এসেছে আর এক্ষেত্রে তাদের সাথে কোন কোন সময় অন্য বিভাগের কর্মীরাও যোগ দেয়, যাদের তখন ডিউটি থাকতো না। কেউ কেউ আমাকে লিখেছেন যে, আমরাও এ কাজে অংশ নিয়েছি। পরবর্তীতে পার্কিং-এর এই দুরবস্থা দেখে অন্যত্র পার্কিং-এর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যাহোক প্রথম আর দ্বিতীয় দিন অথবা দ্বিতীয় দিনের কিছু সময়ে যেসব গাড়ি এসেছিল সেগুলো সেই পার্কিং থেকে বের করা বড় কঠিন কাজ ছিল আর সেই সমস্যা ক্যামেরার চোখ দেখে ফেলে এবং এম.টি.এ. পুরো জগৎকে দেখিয়েও দিয়েছে। এর ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আহমদী এবং অ-আহমদী যারাই এই দৃশ্য দেখছিলেন, তারা খুব অবাক হয়েছেন। বরং অ-আহমদী ও অমুসলিমরা এই দৃশ্য দেখে বলেছে, আজকের পৃথিবীতে এমন দৃশ্য অবিশ্বাস্য৷ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হোক বা নিম্নপদস্থ- সবাই গাড়িগুলো কাদা থেকে বের করার জন্য কাদায় মাখামাখি হয়ে গিয়েছিল। এরাই ঐসকল লোক যারা জিন্নদের মতো কাজ করে এবং হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর জামা’তকে আল্লাহ্ তা’লা এমন লেকই দান করেছেন।
অনুরূপভাবে অন্যান্য বিভাগও রয়েছে, যেমন- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিভাগ, খাদ্য বিভাগ, রান্না বিভাগ ইত্যাদি। এছাড়া জলসার প্রারম্ভে প্রস্তুতিমূলক যেসব কাজ ছিল তা হলো, জলসার ব্যবস্থাপনা বিভাগ, তাঁবু নির্মাণ, ট্র্যাক ইত্যাদি বিছানো অথবা জলসার প্রারম্ভিক যেসব কাজ ছিল তা সম্পাদন করার জন্য কয়েক সপ্তাহ ধরে একাধারে স্বেচ্ছাসেবীরা আসতে থাকে। এছাড়া এখন সরঞ্জাম গুটানোর জন্যও তারা কয়েকদিন শ্রম দিচ্ছেন। অতএব এভাবে বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে। এদের সবার কাজ দেখে এম.টি.এ. এবং লাইভ স্ট্রীমিং এর মাধ্যমে যারা জলসা উপভোগ করছিলেন তারা খুব প্রভাবিত হন। আগমনকারী অতিথিরাও কৃতজ্ঞ ছিলেন আর এম.টি.এ. পৃথিবীকে যে দৃশ্য দেখিয়েছে আর অনুষ্ঠান দেখানোর জন্য বা বিভিন্ন দৃশ্য দেখানোর জন্য যেসব প্রোগ্রাম বানিয়েছে, তাতে তারা বেশ শ্রম দিয়েছে। এই দায়িত্ব তারা খুব সুন্দরভাবে পালন করেছে। তারা কেবল পৃথিবীর মানুষকেই জলসা দেখায় নি, বরং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যারা সংঘবদ্ধভাবে জলসা দেখেছে তাদের দৃশ্যও আমাদেরকে জলসাগাহে দেখিয়েছে এবং পুরো পৃথিবীকেও দেখিয়েছে। অতএব জলসার এই কার্যক্রম, অর্থাৎ কর্মীদের প্রারম্ভিক কাজকর্ম থেকে শুরু করে জলসা চলাকালে যারা কাজ করেছে, এরপর জলসাগাহে অনুষ্ঠিত জ্ঞানগর্ভ ও তরবিয়তী প্রোগ্রাম, বক্তৃতা ইতাদি, এম.টি.এ. এমনভাবে দেখিয়েছে যে, পৃথিবীর সকল দেশের আহমদী ও অ-আহমদী দর্শক অবাক হয়েছে এবং কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছে যে, আমরা এমন দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য লাভ করেছি।
এটি এক আন্তর্জাতিক ঘরের চিত্র অঙ্কন করেছিল। অতএব আমি পুরুষ নারী নির্বিশেষে সকল কর্মীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি, কেননা এমন বিরূপ পরিস্থিতিতে আর তাদের জন্য এক অর্থে হাঙ্গামী সিদ্ধান্ত ছিল, অধিকন্তু চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া, এতদসত্ত্বেও সকলেই নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছেন এবং জলসায় যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে যারা জলসা দেখেছে তাদের পক্ষ থেকেও আমি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি, কেননা তাদের পক্ষ থেকেও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনমূলক পত্র আমার কাছে আসছে। আমি ভেবেছিলাম, কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে আজ আমার ধারাবাহিক খুতবার বিষয় বর্ণনা করব, কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে জলসাসংক্রান্ত ভাবাবেগ এবং জলসা শোনার পর সুখকর ফলাফল, আহমদী এবং অ-আহমদীদের আবেগের অসাধারণ বহিঃপ্রকাশ সংক্রান্ত রিপোর্ট এবং পত্র এত বিপুল সংখ্যায় আসছে যে, আমি ভাবলাম স্থায়ী রীতি অনুসারে এবছরও উক্ত ভাবাবেগ এবং কৃপাবারির উল্লেখই আজকের খুতবায় করা উচিত। সবগুলো উল্লেখ করা সম্ভব নয়। উদাহরণস্বরূপ আমি কয়েকটা নিয়েছি।
এ বছরের অনন্য ব্যবস্থাপনার অধীনে অনুষ্ঠিত জলসা আল্লাহ্ তা’লার কৃপার এমন দ্বারসমূহ উন্মুক্ত করেছে যার ফলে মানুষ আল্লাহ্ তা’লার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করত তাঁর সম্মুখে বিনত না হয়ে পারে না। এমন বিরূপ পরিস্থিতি সত্ত্বেও আল্লাহ্ তা’লা জামা’তের প্রতি কতই না কৃপা করে যাচ্ছেন। লোকজন সাধারণভাবে একটি ঘাটতির কথা উল্লেখ করেছেন যে, এ বছর আন্তর্জাতিক বয়আত অনুষ্ঠিত হয় নি যার জন্য তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান ছিলেন। যাহোক এই অবস্থায় বয়আতের ব্যবস্থা করা কঠিন ছিল, অপারগতা ছিল।
এখন আমি সংক্ষেপে কিছু রিপোর্ট এবং কতিপয় অনুভ‚তি বর্ণনা করছি। এ বছর প্রথমবার জামা’তগুলো লাইভ স্ট্রীমিংয়ের মাধ্যমে জলসায় যোগ দিয়েছে, অর্থাৎ নিজেদের স্থানে বসে জলসা শ্রবণ করছিল এবং এখানে জলসাগাহে টিভির পর্দায় তাদেরকে দেখা যাচ্ছিল। যুক্তরাজ্যে ৫টি স্থানে সমষ্টিগতভাবে ব্যবস্থা ছিল এবং অন্য কতক দেশে বেশ কয়েক ঘন্টা সময়ের পার্থক্য সত্তে¡ও মানুষ সেখানে বসে জামা’তীভাবে জলসা শুনছিল, যাদের মাঝে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, গুয়াতেমালা, বাংলাদেশ প্রভৃতি জামা’ত। যুক্তরাজ্য ছাড়াও ২২টি দেশে ৩৭টি স্থানে সরাসরি সম্প্রচার এর মাধ্যমে বন্ধুরা জলসা সালানায় অংশগ্রহণ করেছেন। মহিলাদের পক্ষ থেকেও প্রথমবারের মতো লাইভ স্ট্রীমিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এ কারণে মহিলারাও বিভিন্ন দেশ থেকে অত্যন্ত আনন্দের বহিঃপ্রকাশ করেছে। একটি ধারণা অনুযায়ী মহিলাদের যে সেশন ছিল, তাদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত বক্তৃতায় ৩০-৩৫ হাজারের কাছাকাছি মহিলা সদস্য উক্ত প্রোগ্রাম দেখেছে এবং শুনেছে। এতে অংশ নেয়া দেশগুলোর মাঝে রয়েছে আমেরিকা, কানাডা, গুয়াতেমালার কোথাও দুই স্থানে, কোথাও তিন স্থানে, কোথাও চার স্থানে কেন্দ্র বানানো হয়েছিল, গিয়ানা, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, মরিশাস, কাবাবীর, ভারত, বুরকিনা ফাসোঁ, ঘানা, নাইজেরিয়া, গাম্বিয়া, তানজানিয়া, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, জার্মানী, সুইডেন, বেলজিয়াম, ফিনল্যান্ড, হল্যান্ড প্রভৃতি।
নাইজারে ঈসা সাহেব নামে এক অ-আহমদী বন্ধু জলসার তিন দিন মিশন হাউজে নিয়মিত আমার বক্তৃতাগুলো শ্রবণ করতে আসেন। তিনি বলেন, পূর্বে আমি শুনেছিলাম, জামা’তে আহমদীয়া ইসলাম বিরোধী এবং তারা মসজিদে টেলিভিশন রেখেছে যা বৈধ নয়। কিন্তু জলসা দেখার পর বুঝতে পারলাম, যদি পুরো মুসলিম বিশ্ব এমন হয়ে যায় যেভাবে আহমদীয়াত ঐক্যবদ্ধভাবে থাকে এবং ইসলামের বাণী প্রচার করছে, তাহলে মুসলমানরা এতটা শক্তিশালী হয়ে যাবে যে, পৃথিবীর কোন শক্তি ইসলামের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারবে না। জামা’তে আহমদীয়ায় যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ রয়েছে, যা আমি জলসায় প্রত্যক্ষ করেছি, তা আমার দৃষ্টিতে সত্যতার একটি প্রমাণ।
এরপর জাম্বিয়া থেকে নও মুবাঈন আহমদী সদস্যদের পাশাপাশি কতক অ-আহমদীও জলসা দেখেছে। সেখানে এক স্থানে ৩৫জন অ-আহমদী সমবেত ছিল। এক খ্রিষ্টান শিক্ষক জলসার প্রোগ্রাম শুনে এই অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেছেন যে, আজ আমি জলসার অনুষ্ঠান শুনে অনেক খুশি হয়েছি। আমি ইসলামি শিক্ষার জ্ঞানার্জন করেছি। তিনি আরো বলেন, আমার বিবেক বুদ্ধি অনুযায়ী এখন আমি বুঝতে পেরেছি যে, ইসলামই একমাত্র সত্য ধর্ম এবং পৃথিবীতে এমন কোন ধর্ম নেই যারা অভাবীদের সাহায্য করে। আমি অনেক কিছু শেখার সুযোগ পেয়েছি।
পুনরায় গ্যাবন-এর মুবাল্লেগ ইনচার্জ লিখেন, অমুসলিম এক পুলিশ অফিসার সস্ত্রীক জলসার প্রোগ্রাম দেখতে মিশন হাউজে আসেন। এর পূর্বে জামা’ত সম্পর্কে তেমন আগ্রহ দেখাতেন না। কিন্তু জলসায় লেবাননের এক নব-আহমদীর আহমদীয়াত গ্রহণের ঘটনা শুনে জিজ্ঞেস করেন, জলসার পর আমি কীভাবে এম.টি.এ. দেখতে পারব? তখন তাকে বলা হয়, ইউটিউব এর মাধ্যমেও এম.টি.এ. দেখতে পারেন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে নিজের মোবাইলে ইউটিউবে এম.টি.এ. ফ্রান্স চ্যানেল বের করেন এবং জলসা দেখতে শুরু করেন। তিনি বলেন, এখন আমি এই চ্যানেলে আহমদীয়া জামা’ত সম্পর্কে আরো জানতে পারব।
নাইজেরিয়া থেকে একজন অ-আহমদী বন্ধু জলসার অনুষ্ঠান শুনে বলেন, এই জলসার কার্যক্রম দেখে আমি নিশ্চিত হয়েছি, পৃথিবীতে যদি কোন সত্য ফির্কা থেকে থাকে তবে তা হলো আহমদীয়া জামা’ত; আমি অনতিবিলম্বে এই ফির্কায় যোগদান করব। একজন অ-আহমদী বন্ধু জলসা সম্পর্কে অনুভ‚তি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, নিশ্চিতভাবে এটি সত্যনিষ্ঠদের জামা’ত; এটি মু’মিনদের জামা’ত। আমি দেখেছি, মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে স্বেচ্ছাসেবকগণ নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত ছিল; তারা অতিথিবৃন্দের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করছিল। অনুরূপভাবে মহিলাদের উদ্দেশ্যে আমার ভাষণ সম্পর্কে তিনি তার মুগ্ধতার কথা ব্যক্ত করেন।
জাপানের মুবাল্লেগ ইনচার্জ সাহেব লিখেন, মুশিমা উসামি সাহেব নামে হিরোশিমার একজন জাপানি অ-আহমদী বন্ধু যিনি আমি যখন হিরোশিমা গিয়েছি সেখানেও উপস্থিত ছিলেন এবং আতিথ্য করেছিলেন আর ২০১৭ সনের শান্তিসম্মেলনেও যোগদান করেছেন, তিনি বলেন, আমি এখন জলসা দেখছি। আজ ০৬ আগস্ট তারিখের খুতবা শুনেও জাপান জামা’তের সেবার কথা মনে পড়ে গেল যে, জামা’তের ২য় খলীফা হযরত খলীফাতুল মসীহ্ সানী (রা.) জুমু’আর দিনেই ১০ই আগস্ট ১৯৪৫ ইং তারিখে হিরোশিমায় সংঘটিত পারমাণবিক ধ্বংসযজ্ঞ সম্পর্কে কিভাবে আওয়াজ তুলেছিলেন। এটি ছিল হিরোশিমার পক্ষে উত্থিত প্রথম কণ্ঠস্বরগুলোর অন্যতম; এরপর বর্তমান খলীফার হিরোশিমা সফর হয়। তখনকার শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তাও আমার জন্য বিশেষ অর্থবহ। হিরোশিমা দিবসে আজ এম.টি.এ. দেখে প্রথমত আমার ইচ্ছা হলো, এম.টি.এ. আফ্রিকার মতোই এম.টি.এ. জাপানও যেন অতিসত্তর প্রতিষ্ঠিত হয় আর জলসার পরিবেশ ও বিশ্ববাসীর সমাবেশ দেখে প্রতিনিয়ত আমার মনে এই অনুভূতি জাগে যে, গোটা বিশ্বকে একই মঞ্চে সমবেত করার লক্ষ্যে এবং পৃথিবীতে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠাকল্পে আহমদীয়া জামা’তের ভূমিকা কতটা তাৎপর্যপূর্ণ!
লুসাকা জাম্বিয়া থেকে একজন অ-আহমদী বন্ধু বলেন, আজকে আপনাদের খলীফার কাছ থেকে আমি একটি বিষয় শিখেছি, ইসলামে নারীর মতামত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা সংরক্ষিত রয়েছে আর ইসলাম নারীকে বিয়ে-শাদির ক্ষেত্রে নিজের পছন্দমত জীবনসঙ্গী নির্বাচনের পূর্ণ অধিকার প্রদান করে, অথচ কোন কোন সমাজে জোরপূর্বক বিয়ে-শাদি করিয়ে দেয়া হয় এবং মানবাধিকারের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয় না। অতঃপর তিনি বলেন, নারী অধিকারের প্রতি জোর তাগিদ প্রদানের ক্ষেত্রে ইসলামই একমাত্র ধর্ম। তিনি বলেন, ইসলাম পুরুষকে একাধিক বিয়ের অনুমতি প্রদানের পাশাপাশি ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার ব্যাপারেও জোর তাগিদ প্রদান করে যে, যদি ন্যায়বিচার করতে না পার তবে একটি বিয়েই যথেষ্ট। এটি অত্যন্ত সুন্দর ইসলামী শিক্ষা এবং আহমদীয়াত-ই এর পতাকাবাহী।
এরপর নাইজার-এর তাসাওয়া প্রদেশ থেকে একজন অ-আহমদী বন্ধু মামন গালি সাহেব বলেন, এটি আমার জীবনের প্রথম জলসা ছিল এবং আমি বেশ মুগ্ধ হয়েছি। অন্যান্য মুসলিম ফির্কাগুলো যদি এই আদর্শ ধারণ করে তবে নিশ্চিতভাবে পৃথিবীতে মুসলামানরা উন্নতির সোপান অতিক্রম করবে। এরপর নাইজার থেকে একজন অ-আহমদী প্রকৌশলী উসামা সাহেব বলেন, এতগুলো দেশের প্রতিনিধিত্ব আর মানুষ, ভাষা ও সংস্কৃতিগত বৈচিত্র থাকা সত্তে¡ও সবাই যে আনুগত্য প্রদর্শন করছিল আর করোনার মতো প্রাণঘাতি রোগ সত্ত্বেও নিখুঁত ব্যবস্থাপনা সত্যিকার অর্থেই দেখার মতো ছিল।
নাইজারের আমীর সাহেব লিখেন, অ-আহমদী মেহমান মরিয়ম সাহেবা বলেন, আজ আহমদীয়া জামা’তের ইমামের বক্তৃতা শুনে নারীর অধিকার এবং নারীর দায়-দায়িত্ব উভয় বিষয়ে প্রকৃত ধারণা পেয়েছি। অন্যথায়, এখানে আফ্রিকায় নারীরা যে হীন জীবন যাপন করছে উন্নত বিশ্বে তা কল্পনা করাও দুষ্কর। আর আপনাদের কর্ম যদি কথার সাথে সামঞ্জস্য রাখে, তিনি লিখেন, যদি আহমদীদের কথা ও কাজে মিল থাকে তাহলে আপনাদের চেয়ে ভালো আমি আর কাউকে দেখি না। অতএব, প্রত্যেক আহমদীকে নিজ নিজ পরিবারে এই শিক্ষার আদর্শও প্রদর্শন করতে হবে। এসব শুধু বক্তৃতার জন্য নয়, বরং ইসলামের প্রকৃত শিক্ষার যে প্রভাব মানুষের ওপর পড়েছে তা যেন প্রতিষ্ঠিতও হয়।
নাইজারের জনৈক অ-আহমদী বন্ধু ফরিদ মূসা সাহেব নারী অধিকার সংক্রান্ত বক্তৃতার প্রশংসা করেছেন। এছাড়া একজন অ-আহমদী মহিলা মরিয়ম ইলিয়াস সাহেবা বলেন, নারীর অধিকার সম্পর্কে যেসব কথা আহমদীয়া জামা’তের ইমাম বলেছেন এগুলো যে ইসলামী শিক্ষা তা জেনে নারী হিসাবে আমি গর্বিত। হায়, এ বিষয়টি যদি সবাই বুঝে যেত তাহলে পৃথিবী জান্নাতে পরিণত হতো।
নাইজারের এক অ-আহমদী মহিলা নাফিসা আদমুস বলেন, আমি প্রথমবার আহমদীয়া জামা’তের ইমামের বক্তৃতা শুনেছি আর আমার কাছে এ বিষয়টি দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, মহানবী (সা.) নারীদের যে সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছেন আজ যদি বিশ্বে কেউ সেই শিক্ষা বাস্তবায়ন করে থাকে তা কেবল আহমদীয়া জামা’তই করছে। অতএব, আমি পুনরায় একথাই বলবো যে, প্রত্যেক আহমদী পুরুষের জন্য এটি খুবই চিন্তার বিষয়, নিজেদের আচার-আচরণ নিজ ঘরে সঠিক রাখুন; বিশ্ববাসীকে ধোঁকা দিবেন না।
নাইজারের আমীর সাহেব লিখেন, একজন অ-আহমদী বন্ধু আলহাজ্জ্ব হোসেন সাহেব পেশাগতভাবে একজন ব্যবসায়ী। তিনি খুবই ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু তাকে যখন জলসায় আমন্ত্রণ জানানো হয় তিনি তা গ্রহণ করেন। জলসা শেষে তিনি বলেন, আমি প্রথাগতভাবে আপনাদের জলসায় এসেছিলাম। ভেবেছিলাম জাগতিক কোন মেলা হবে হয়ত, কিন্তু আমি যখন জলসা শুনা আরম্ভ করি তখন আমি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হই যে, নিয়মিত তিনদিনই আসব। আমাকে যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে তা হলো, জলসার পরিবেশ। স্বেচ্ছাসেবকদের কাজ করতে দেখে মনে হয়েছে, এদের হৃদয়ে এক বিশেষ আবেগ রয়েছে যা তাদেরকে শক্তি যোগাচ্ছে, নইলে বস্তুবাদী লোকদের পক্ষে এটি সম্ভবপর নয়।
গিনি কোনাক্রির মুবাল্লেগ ইনচার্জ সাহেব বলেন, কিনিয়ার অঞ্চলের স্থানীয় মুবাল্লেগ সাহেব বলেন, সেই অঞ্চলের মেয়রকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এতে তিনি বলেছিলেন যে, আমি অসুস্থ, কিন্তু আমার ছেলে যাবে। সে যখন এসেছে তখন লাজনাদের উদ্দেশ্যে আমার বক্তৃতা শুরু হচ্ছিল। সেখানে বিদ্যুৎ বিভ্রাট লেগেই থাকে আর এখন হলো বর্ষাকাল। একবার বিদ্যুত চলে গেলে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুত থাকে না। তিনি বলেন, অনুষ্ঠান শুরু হতে যাচ্ছিল এমন মহূর্তে বিদ্যুৎ চলে যায়, মেহমানরাও এসে গিয়েছিলেন আর জেনারেটরেরও কোন ব্যবস্থা ছিল না। মুবাল্লেগ সাহেব বলেন, আমরা দোয়া করি যে, আল্লাহ্ তা’লা জামা’তের সত্যতার জন্য আজকে মোজেযা দেখাও আর বিদ্যুৎ বহাল করে দাও। তিনি বলেন, আমরা আবেগঘন হৃদয়ে দোয়া করি। আমি বক্তৃতার জন্য ডাইসে আসার পূর্বেই বিদ্যুৎ চলে আসে এবং তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা’লা আমাদের মতো যুগ মসীহ্র অধম দাসদের দোয়া শুনেছেন এবং প্রতিশ্রুত মসীহ্ এবং ইসলামের সত্যতার জন্য নিদর্শন দেখিয়েছেন যার প্রভাব আমাদের মেহমানদের হৃদয়েও পড়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, বক্তৃতা শেষ হতেই আবার বিদ্যুৎ চলে যায়। তিনিও একই কথা বলেন যে, এত পূর্ণাঙ্গীন বক্তৃতা আমরা কখনো শুনিনি এবং সাধারণ মুসলমানরা জামা’ত সম্পর্কে যে গুজব ছড়িয়ে রেখেছে তা সবই ভ্রান্ত।
ক্যামেরুন থেকে সেখানকার মুয়াল্লেম সাহেব বলেন, ক্যামেরুনের উত্তরাঞ্চলের মারওয়া শহরের নিকটবর্তী একটি গ্রামের প্রধান আলহাজ্জ্ব উসমান সাহেব, যিনি অ-আহমদী, তিনি জলসার পুরো কার্যক্রম এম.টি.এ. আফ্রিকার মাধ্যমে দেখে বলেন, আমরা শৈশব থেকে শুনে আসছিলাম যে, ইমাম মাহদী আসবেন, সারা বিশ্ব তাঁকে দেখবে। আজ জলসার কার্যক্রম দেখে আমার দৃঢ় বিশ্বাস হয়েছে যে, এই জামা’ত সত্যিই ইমাম মাহদীর জামা’ত যাকে পুরো বিশ্ব এখন দেখছে। অনেক দেশের লোক নিজ নিজ দেশ থেকে এম.টি.এ.’র মাধ্যমে জলসায় যোগ দিয়েছিলেন। তারা আহমদীয়া জামা’তের ইমামকে দেখছিল এবং তাঁর কথাও শুনছিল। আল্লাহর নবীর ভবিষ্যদ্বাণী আজ আমি পূর্ণ হতে দেখেছি।
মালির আমীর সাহেব জলসার মাধ্যমে বয়আত সম্পর্কে লিখেন, কিতা শহরের একজন শিক্ষক উমর বারী সাহেব ফোন করে বলেন, আমি আহমদী নই, কিন্তু তা সত্তে¡ও শুধু আমিই নই বরং পরিবারের সকল সদস্য অত্যন্ত একাগ্রতার সাথে জলসার অনুষ্ঠানাদি শুনেছি আর বিশেষত যখন যুগ খলীফার কথার মাঝে বিভিন্ন নারা উচ্চকিত করা হতো তখন আমাদের ঘরের সকলেই উচ্ছসিত হয়ে আমরাও নারা উত্তোলিত করতাম। উমর বারী সাহেব বলেন, তারা অতিশীঘ্র আহমদীয়া কার্যালয়ে এসে নিজ পরিবারসহ আহমদীয়া জামা’তে অন্তর্ভুক্ত হবেন, ইনশাআল্লাহ্।
ক্যামেরুনের মুবাল্লেগ ইনচার্জ সাহেব বলেন, ক্যামেরুন থেকে প্রধান ইমাম ডাওয়ালা ফারুক সাহেব বলেন, আমি এম.টি.এ. আফ্রিকার মাধ্যমে জলসার বিভিন্ন বক্তৃতা শুনেছি। এই জামা’তকে মানুষ কাফের বলে এবং জঙ্গী সংগঠন বলে। স্টেজের পেছনে ব্যাকগ্রাউন্ডে বড় অক্ষরে লেখা খাতামান্নাবীঈন-এর আয়াতই তাদের আপত্তির উত্তর ছিল। এখন ইনশাআল্লাহ এম.টি.এ.’র মাধ্যমে জামা’ত সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণার অপসারণ হবে।
তানজানিয়ার আমীর সাহেব লিখেন, আরোশা রিজিওন থেকে এক অ-আহমদী বোন জাবু সাহেবা বলেন, এই প্রথমবার আমি জলসা সালানা দেখেছি। এত শান্তিপূর্ণ জনসমাবেশ আমি আমার সারা জীবনে কখনো দেখি নি। সাধারণত জনসমাবেশে মানুষ হৈচৈ করে এবং মানুষকে ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের হাস্যস্কর অনুষ্ঠান করা হয়, কিন্তু এই জলসায় এমন কিছুই ছিল না, বরং প্রতিটি অনুষ্ঠানে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা সম্পর্কে আলোচনা হচ্ছিল। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, খলীফার প্রতি আহমদীদের ভালোবাসার কোন দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
এরপর ক্যামেরুনের মারওয়া শহরের একজন স্থানীয় প্রধান এসব কার্যক্রম দেখে বলেন, এটি জামাতের শ্রেষ্ঠত্ব যে, এত অধিক ভাষায় জলসা সালানার কার্যক্রমের অনুবাদ হচ্ছে আর মানুষ এ থেকে উপকৃত হচ্ছে। আমি জলসার মাধ্যমে লাভবান হয়েছি আর আমার জ্ঞান বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এম.টি.এ. একটি মূর্তিমান বরকত। আমি এখন ক্যাবল সংযোগ নিব এবং নিজ ঘরে বসে এম.টি.এ. উপভোগ করব আর নিজের জ্ঞান বৃদ্ধি করব। এখন অ-আহমদীরাও এম.টি.এ.’র মাধ্যমে প্রভাবিত হয় আর যারা ধর্মীয় খাদ্যভাণ্ডার থেকে উপকৃত হতে চায় তারা এ থেকে উপকৃত হয়। আর আধ্যাত্মিকভাবে উন্নতি করতে হলে এটিই উন্নতির রহস্য। আহমদীদেরও এম.টি.এ.’র প্রতি পূর্বাপেক্ষা অধিক মনোযোগ দেয়া উচিত।
গ্যাবন-এর মুবাল্লেগ ইনচার্জ সাহেব লিখেন, একজন নবআহমদী লিখেন, সত্যিকার অর্থেই এটি সারা পৃথিবীর জলসা যাতে আমরাও অংশগ্রহণ করেছি এছাড়া অন্যান্য অগণীত দেশ থেকেও মানুষ এতে অংশগ্রহণ করেছে। এ বিষয়টিও আমাদের ঈমানকে সুদৃঢ় করছে। সময়ের ব্যবধান সত্তে¡ও সারা পৃথিবীতে মানুষ জলসায় বসে আছে, এই দৃশ্য কেবল আহমদীয়া জামা’তই উপস্থাপন করতে পারে। অন্যান্য মুসলমানদের পক্ষে এটি সম্ভবই নয়।
জাম্বিয়ার পূর্ব প্রদেশের লুসাঙ্গাযী শহরের নওমোবাঈন আলী সাহেব নিজ এলাকার আঞ্চলিক প্রধানও বটে। তিনি বলেন, আমরা খ্রিষ্টধর্ম থেকে আহমদী হয়েছি এবং আমাদের গ্রামে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আহমদীয়াত প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর অনেকবার অ-আহমদী আলেমগণ আমাদের এলাকায় আসে এবং আমাদের হৃদয়ে আহমদীয়াত বিরোধী সংশয়-সন্দেহ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। যতদিন খ্রিষ্টান ছিলাম ততদিন কেউ কিছু জিজ্ঞেস করতে আসে নি। যেইমাত্র আহমদী হয়ে গেলাম তখন অ-আহমদী আলেম-উলামা তাদের ধর্ম পরিশুদ্ধ করতে এসে পড়ে। তিনি বলেন, এবার আমরা জলসা সালানা যুক্তরাজ্য সরাসরি দেখার সুযোগ পেয়েছি। আমরা জীবনে প্রথম এমন সুশৃঙ্খল জলসার দৃশ্য দেখেছি যেখানে এই মহামারি সত্ত্বেও এত সংখ্যক মানুষ যোগ দিয়েছে আর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিরা নিজেদের ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছে। আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় জলসা দেখার পর আমাদের সকল সন্দেহ ও সংশয়ের নিরসন হয়েছে যে, আহমদীয়াত কোন ছোট দলের নাম নয় বরং একটি আন্তর্জাতিক জামা’তের নাম। যুগ-খলীফা যেভাবে নারী এবং অন্যান্যদের অধিকার সম্বন্ধে ইসলামী শিক্ষামালা উপস্থাপন করেছেন তা আমাদেরকে বিস্মিত করেছে যে, মহিলাদেরও অধিকার রয়েছে, নতুবা আমরা তো আমাদের মহিলাদের কিছুই মনে করতাম না! আমরা এখানে যা কিছু দেখেছি এবং শুনেছি ইনশা’ল্লাহ্ ফিরে গিয়ে তা অন্যদেরও শুনাবো যাতে তাদের ঈমান সুদৃঢ় হয় আর আমরা (এর ওপর) আমল করার পূর্ণ চেষ্টা করব।
মালয়েশিয়ার একজন নবাগত আহমদী রুসলি বিন মুপাসুলি সাহেব বলেন, জলসা সালানা যুক্তরাজ্য দেখার সুযোগ পেয়ে আমি খোদা তা’লার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি, কেননা আমি আহমদীয়া জামা’তভুক্ত হওয়ার এবং যুগ-ইমামকে শনাক্ত করার সৌভাগ্য লাভ করেছি। আমি যুক্তরাজ্যে ছিলাম না, কিন্তু তবুও যুগ-খলীফাকে দেখার ও তাঁর বক্তৃতাসমূহ শোনার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। আহমদীয়া জামা’তের অন্তর্ভুক্ত না হলে আমি এসব আশিস বা কল্যাণ থেকে বঞ্চিত থেকে যেতাম। তাই আমি ওয়াদা করছি, আমি সর্বদা খিলাফতের প্রতি বিশ্বস্ত ও অনুগত থাকব।
ব্রাজিলের এক ভদ্রমহিলা প্রিশিলা মারলিন সাহেবা, যিনি কয়েক মাস পূর্বে বয়আত করেছিলেন, তিনি বলেন, আমার সৌভাগ্য যে, আমি প্রথমবারের মতো জলসা সালানা দেখার সুযোগ পেয়েছি। ভাষা না জানা সত্তে¡ও আমি অনেক কিছু শেখার ও জানার সুযোগ লাভ করেছি। আমি খোদা তা’লার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি যে, তিনি আমাকে আহমদীয়াত গ্রহণের সৌভাগ্য দিয়েছেন।
গিনি বাসাও জামা’তের মুবাল্লেগ ইনচার্জ লিখেন, গিনি বাসাও জামা’তের কাসিনী নামক একটি দূরাঞ্চল থেকে চারজন লাজনা সদস্যা ৮ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে তাদের নিকটবর্তী জামাত মাসরা-তে যুক্তরাজ্য জলসা সালানার অধিবেশন শুনতে উপস্থিত হন। আমার বক্তৃতা শুনে তারা বলেন, আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় আমরা তো পূর্বেই আহমদীয়াত গ্রহণ করেছিলাম, কিন্তু আজ যুগ-খলীফার বক্তৃতা শুনে বুঝতে পারলাম যে, আমরা কত বড় নেয়ামত থেকে বঞ্চিত ছিলাম! আজ আহমদীয়াতে আমাদের ঈমান ষোলআনা পূর্ণ হয়েছে আর আমরা প্রতিজ্ঞা করছি, সর্বদা যুগ-খলীফার খুতবা শোনার জন্য আমরা আসব। দেখুন! আল্লাহ্ তা’লা তাদের মাঝে কীরূপ পরিবর্তন সৃষ্টি করছেন!
গিয়ানা থেকে সরাসরি লাইভ স্ট্রিমিং এর মাধ্যমে মানুষ জলসায় অংশগ্রহণ করেছিল। একজন নবাগত আহমদী মুজাফ্ফর কিয়ুসী সাহেব বলেন, এটি আমার প্রথম জলসা ছিল এবং এটি আমার জন্য অতীব মহান একটি অভিজ্ঞতা ছিল। বিশেষ করে আহমদী ভাইদের সঙ্গে জলসা দেখতে বসা এবং যুগ-খলীফাকে দেখা ও তাঁর বক্তৃতা শুনা, পুরোটাই আমার জন্য এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল। আমি এর পূর্বে কখনো কোন মহিলাকে এত সুন্দর সুললিত কণ্ঠে তিলাওয়াত করতে শুনি নি। তিনি তিলাওয়াতের ভূয়সী প্রশংসা করেন। অতঃপর তিনি বলেন, আমাদের জামা’তের সদস্যরা বিভিন্ন উপশহর ও গ্রাম থেকে জলসা শোনার জন্য এক জায়গায় সমবেত হয়েছিল যার সবই খিলাফত ও আহমদীয়াতেরই কল্যাণরাজি, যা আল্লাহ্ তা’লা এই জামা’তকে দান করেছেন। একইভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জামা’ত সালানা জলসায় ভার্চুয়ালী যুক্ত হয়েছে এটি দেখাও একটি বিরাট ব্যাপার ছিল। আমি এমন অনেক দেশ দেখেছি যাদের সম্পর্কে আমার কোন জ্ঞান ছিল না যে, সেখানেও আহমদীয়া জামা’ত পৌঁছে গেছে। অনুরূপভাবে এটিও দেখেছি যে, কীভাবে জামা’তের সদস্যরা মিলেমিশে জলসার জন্য কাজ করছে। যুক্তরাজ্যের এক ভদ্রলোক যিনি ব্যাংকে চাকরি করেন, তিনি ব্যাংক থেকে ছুটি নিয়ে জলসার জন্য স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন এবং নিজ গাড়িতে ঘুমাচ্ছেন। এসব বিষয় এটি প্রমাণ করে যে, জামা’তের সদস্যদের মাঝে নিষ্ঠা রয়েছে এবং তারা ত্যাগ স্বীকার করছে। বক্তৃতামালা থেকে বিভিন্ন অধিকার সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করেছি। এভাবে তিনি স্বীয় আবেগানুভূতি প্রকাশ করেছেন।
মরিশাসের একজন নবআহমদী সাফওয়ান নায়েক সাহেব লাইভ স্ট্রীমিংয়ের মাধ্যমে প্রথমবার জলসায় অংশগ্রহণের সৌভাগ্য লাভ করেন। তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে এ ধরনের অংশগ্রহণ আমাকে খিলাফতের অধিক সান্নিধ্যে এনেছে। যুগ খলীফার প্রতিটি কথা আমার হৃদয়ে প্রভাব ফেলছিল। জামা’তের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্তে আমি খুবই আনন্দিত। এম.টি.এ.’র অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে আমি হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) সম্পর্কে অনেক কিছু শিখছি।
অস্ট্রিয়া থেকে আশরাফ জিয়া সাহেব বলেন, ডোনা টিলা সাহেবা এ বছরের প্রারম্ভে বয়আত গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, যুগ খলীফা যা-ই বলেছেন তা আবেগকে উদ্দীপ্ত করছিল। তাঁর বক্তৃতাগুলো চলাকালে আমার অশ্রু ঝরছিল। সত্যিকার অর্থেই ইসলাম জীবনপ্রদ এবং সত্য ও ন্যায়ের পথ। আমার জীবন ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ পাল্টে যাচ্ছে। আমি আল্লাহ্ তা’লার নিকট খুবই কৃতজ্ঞ যে, তিনি আমাকে আহমদীয়াত গ্রহণের সৌভাগ্য দিয়েছেন। ইনি একজন অস্ট্রিয়ান।
জলসায় অংশ্রগ্রহণের পর আহমদীয়াত গ্রহণের অনেক ঘটনা রয়েছে।
আইভরি কোস্ট থেকে একজন অ-আহমদী বন্ধু হাসান সাহেব বলেন, জলসার তিন দিনের পুরো অনুষ্ঠান দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। খুবই ঈমান উদ্দীপক ছিল। তিনি বলেন, মিথ্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় না, তা নিজে নিজেই ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু সত্য স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকে। এ রীতি অনুযায়ী প্রতিনিয়ত আহমদীয়া জামা’তের উন্নতি স্বয়ং এর সত্যতার প্রমাণ। তিনি বলেন, সালানা জলসা সমাপ্ত হবার পর আমরা ক’জন বন্ধু একটি রেস্তোরায় আলাপ করছিলাম। একজন অপরিচিত লোক আমাদের কথা শুনে বলে, বর্তমানে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা পালনকারী কোন সম্প্রদায় যদি থেকে থাকে তবে তা শুধুমাত্র আহমদীয়া জামা’তই রয়েছে। এটুকু বলে সেই অপরিচিত ব্যক্তি তো চলে যায়, কিন্তু আমাদের কথার সত্যায়ন করে যায় যে, আহমদীয়াত শুধু কথায় নয় বরং বাস্তবিক অর্থেও প্রকৃত ইসলাম পালনকারী। এরপর হাসান সাহেব আমাদের মুয়াল্লেমের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং বলেন, আমি বয়আত করে আহমদীয়াত গ্রহণ করতে চাই। এখন আমি বেশিদিন নিজেকে এ সত্য থেকে বঞ্চিত রাখতে পারবনা।
কঙ্গো ব্রাযভিলের মুবাল্লেগ ইনচার্য বলেন, গাম্বুমা জামা’তে পুরো তিন দিন টিভি ও রেডিওতে জলসার সব অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারের সৌভাগ্য হয়। ঐ অঞ্চলে কেবল একটিই টিভি ষ্টেশন রয়েছে এবং সেটিতে আমাদের জলসার প্রোগ্রাম সম্প্রচারিত হয়। একটি সমীক্ষা অনুযায়ী চার হাজার লোক জলসা দেখে ও শুনে থাকবে। গম্বুমার আশপাশের ত্রিশটি গ্রাম্য জামা’তও রেডিওর মাধ্যমে সালানা জলসায় অংশ নেয়। ঐ অঞ্চলগুলোতে বিদ্যুতের সংযোগ নেই, তাই মানুষ রেডিওর মাধ্যমে শুনে থাকে।
তিনি এখানে আমার যত বক্তৃতা হয়েছে সেগুলো স্থানীয় ভাষা লাঙ্গালায় যে অনুবাদ হয়েছে তা-ও শুনেছেন। তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ্, অনুষ্ঠান অত্যন্ত সফল ছিল যার বহিঃপ্রকাশ আপন পর সবাই করেছে। তিন দিনই সর্বত্র জলসা সালানার পরিবেশ বিরাজমান ছিল। যেভাবে জলসায় আয়োজন করা হয় ঠিক সেভাবেই খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। জলসা চালাকালীন সময়ে আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় ১২জন ব্যক্তি বয়আত করে আহমদীয়া মুসলিম জামা’তে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার তৌফিক পেয়েছে।
গিনি বাসাও-এর মুবাল্লেগ লিখেছেন, আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় অধিকাংশ নবআহমদী আহমদীয়াত গ্রহণের পর নিজ নিজ অঞ্চলে এবং নিজেদের আত্মীয়স্বজনের মাঝে অনেক তবলীগ করছে। যুক্তরাজ্যের বার্ষিক জলসার কল্যাণময় সময়ে বন্ধুদেরকে যখন জলসার অনুষ্ঠানমালা দেখার আহ্বান জানানো হয় তখন সকল নবআহমদী সদস্যরা তাদের অ-আহমদী আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবকে জলসায় আমার যে তিন-চারটি বক্তৃতা ছিল সেগুলো শোনার জন্য বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, মানুষ ৩০ কিলোমিটার এবং ১৮ কিলোমিটার দূর থেকে সাইকেল চালিয়ে বা পায়ে হেঁটে সেখানে আসে। অধিকাংশ লোক কেবল প্রথম দিনের বক্তৃতা শোনার জন্য এসেছিল, কিন্তু আমার প্রথম দিনের বক্তৃতা শোনার পর তাদের সিদ্ধান্ত বদলে যায় এবং তারা তিন দিন অবস্থানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আর তৃতীয় দিন সমাপনী বক্তৃতা শোনার পর তারা বলে, আপনাদের খলীফা আমাদের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন। তিনি যে ইসলাম উপস্থাপন করেছেন সেটিই সত্যিকার ইসলাম। এ উপলক্ষ্যে ১২৭জন নারী ও পুরুষ আহমদীয়াত গ্রহণ করে। এভাবে সমষ্টিগত ভাবেও বয়আত হয়।
কঙ্গো থেকে জামা’তের মুয়াল্লেম ইব্রাহীম সাহেব বলেন, এক খ্রিষ্টান বন্ধু মুক নিগাচিবী সাহেবকে জলসা দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তিনি সস্ত্রীক জলসায় অংশগ্রহণ করেন। জলসা দেখার পর তিনি তার স্ত্রীকে বলেন, আমার তো মনে হয় এমন শিক্ষামালা ও দিক-নির্দেশনা আমরা আর কোথাও পাব না। আমরা আমাদের জীবনের দীর্ঘ একটি সময় খ্রিষ্টধর্মের পিছনে নষ্ট করেছি। এখানে আমরা তিন দিনে যা কিছু শিখেছি তা আমরা সারা জীবন খ্রিষ্টধর্মে থেকেও শিখতে পারব না। তাদের সাথে যুক্ত হওয়ার মাঝেই এখন আমাদের কল্যাণ নিহিত। এভাবে স্বামী, স্ত্রী ও তার সন্তানেরা বয়আত করে জামা’তভুক্ত হয়ে যায়।
গিনি বাসাও-এর মুবাল্লেগ ইনচার্জ লিখেন, গিনি বাসাও-এর বাফটা রিজিওনের এক অ-আহমদী বন্ধু কাম্বা জাও সাহেব যুক্তরাজ্যের বার্ষিক জলসার তিন দিনের কার্যক্রমই শুনেন এবং আমার বক্তৃতাগুলোও শুনেন আর এরপর বলেন, বর্তমানে ইসলামের একজন নেতা প্রয়োজন আর তা খলীফার সত্তায় আহমদীয়া জামা’তের কাছে রয়েছে। তাঁর হাতেই সমগ্র বিশ্ব একতাবদ্ধ হতে পারে। এভাবে জলসা শেষ হতেই তিনি বয়আত করে আহমদীয়াত গ্রহণ করে নেন।
কঙ্গো ব্রাজভীল থেকে এক খ্রিষ্টান বন্ধু আঙ্গুতানী সাহেব বলেন, আমি কখনো কোন ধর্মে আগ্রহ দেখাই নি। কেননা খ্রিষ্টধর্ম দেখে মনে হতো ধর্মীয় লোক আন্তরিক হয় না। আমার ভাই পূর্বেই জামা’তভুক্ত ছিল আর সে আমাকে এই জলসায় অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানায়। তার কথায়ই আমি চলে আসি। জলসা যতই দেখছিলাম আমার মাঝে পরিবর্তন আসতে থাকে আর ধর্মের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি হতে থাকে। খলীফার বক্তৃতা শোনার পর আমার হৃদয় প্রথমবার সাক্ষ্য দেয়, ধর্ম একটি বাস্তব সত্য। সত্য ধর্মের মাঝে হৃদয়ের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার শক্তি আছে। জীবনে আমি প্রথমবার ইসলাম আহমদীয়াতকে ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করছি।
নাইজারের একজন অ-আহমদী বন্ধু জলসা শোনার পর বয়আত করার সৌভাগ্য লাভ করেন। তিনি বলেন, জলসার অনুষ্ঠান দেখে খুবই প্রভাবিত হয়েছি আর যে সত্যের আমি অন্বেষণ করছিলাম তা পেয়ে গেছি, তাই এখন আমি বয়আত করতে চাই।
সেনেগাল থেকে জাফর ইকবাল সাহেব লিখেন, আম্বুর রিজিওনে জলসার তিন দিনই আমার বক্তৃতাগুলো চারটি রেডিও এবং একটি টিভি চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছিল। একটি রেডিওর সঞ্চালক এসব বক্তৃতা শুনে আহমদীয়াত গ্রহণ করেন। সেই সঞ্চালক খুবই শিক্ষিত এবং জনসাধারণের মাঝে অনেক জনপ্রিয়। তিনি বলেন, জামা’ত সম্পর্কে আমি অনেক কিছু শুনেছিলাম, কিন্তু আজ আমি জামা’তের ইমামের কথা শুনে প্রকৃত সত্য জানতে পেরেছি। কাজেই আমি আজ আহমদীয়া জামা’তে যোগ দিচ্ছি। সেদিনই তিনি সপরিবারে বয়আত করেন।
ক্যামেরুনের মারওয়ার একজন স্থানীয় ইমাম বলেন, জলসার বিশেষ আকর্ষণ হলো জামা’তের ইমামের বিভিন্ন বক্তৃতা। জামা’তের খলীফা প্রতিটি কথা কুরআন ও হাদীস থেকে উপস্থাপন করেন। এটি আমার হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলেছে। এ জামা’ত এবং খলীফা নিশ্চিতভাবে খোদার পক্ষ থেকে। আমার অন্তর পরিতৃপ্ত। অতএব তিনি তার বন্ধুবান্ধবসহ বয়আত করে জামা’তের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান। আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় আলেম সম্প্রদায়ের মাঝেও ন্যায়বিচারের দৃষ্টিতে দেখার লোক রয়েছে যারা সত্য দেখলে তা গ্রহণ করে। মালিতে এক অ-আহমদী বন্ধু জলসা দেখার পর (জামা’তের) অন্তর্ভুক্ত হয়। জলসার পূর্বে জামা’তী রেডিওতে জলসা সম্পর্কে অনুষ্ঠান করা হয় এবং প্রতিদিনই রেডিওতে জলসা সম্পর্কিত বিজ্ঞপ্তিও প্রচারিত হতে থাকে। তারা বলেন, সবাইকে আমরা জলসা দেখার জন্য মিশন হাউজে আসতে আমন্ত্রণ জানাই। অতএব জলসার দিনগুলোতে আহমদী বন্ধুরা ছাড়া অ-আহমদী লোকজনও জলসার সম্প্রচার দেখার জন্য আসে। জলসার শেষ দিন চার ব্যক্তি বয়আত করে আহমদীয়াতের অন্তর্ভুক্ত হয়। এসব লোক শিক্ষিত আর তারা বলে, আমরা অনেক দিন থেকে কাই শহরে রেডিও শুনছিলাম আর আহমদীয়াতের প্রতি আমাদের আগ্রহও ছিল। রেডিওতে জলসা সম্পর্কে শোনার পর আমাদের মাঝে এ আগ্রহ জন্মে যে, তাদের জলসা অবশ্যই দেখা উচিত। জলসা দেখার পর তারা বলেন, ইসলামের সফলতা ও উন্নতি কেবল আহমদীয়াতের সাথেই সম্পৃক্ত আর জগতের সামনে আহমদীয়াত যে ইসলাম উপস্থাপন করছে সেটিই প্রকৃত ও সত্যিকার ইসলাম। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, মুসলমানদের একজন খলীফা প্রয়োজন যিনি তাদের পথ দেখাবেন। বর্তমান যুগে ইসলামে খিলাফত আহমদীয়াতের মাধ্যমে চালু হয়েছে। তারা আরো বলেন, এখন আমরা পাকা আহমদী আর একজন আহমদীর জন্য মাসিক যে চাঁদা দেয়া আবশ্যক সে সম্পর্কে আমাদের বলুন, ধর্মের সেবার জন্য আমরা প্রতি মাসে চাঁদাও দিব।
মালির আমীর সাহেব লিখেন, কাই রিজিওনের মিশন হাউজে জলসার সম্প্রচার দেখার জন্য অ-আহমদী লোকেরা আসে। জলসার তৃতীয় দিন যখন পুরোনো বিভিন্ন বয়আত (অনুষ্ঠানের) ভিত্তিতে বয়আতের ঈমানোদ্দীপক দৃশ্য সম্বলিত একটি প্রামান্যচিত্র প্রচারিত হয় তখন একজন শিক্ষিত অ-আহমদী জিজ্ঞেস করে, বয়আত করার শর্তগুলো কী? বিরতির সময় উপস্থিত সবাইকে মুয়াল্লেম সাহেব বয়আতের শর্তগুলো স্থানীয় ভাষায় অনুবাদ করে শোনান। এই অ-অহমদী ব্যক্তি বলেন, এগুলো তো ইসলামের সারকথা আর এতে সামাজিক জীবন যাপনের ব্যাপারে উত্তমরূপে দিক-নির্দেশনা রয়েছে। তিনি বলেন, উত্তমরূপে এগুলোর অনুসরণ করা সবার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও আবশ্যকীয় বিষয়। অতএব জলসা শেষে তিনি বয়আত করেন।
ঘানায় মানুষ লাইভ স্ট্রীমিং-এর মাধ্যমে জলসায় যুক্ত হয়েছিল। বুস্তানে আহমদ আকরার সবুজশ্যামল প্রাঙ্গণে জলসা দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তারা বলেন, অভিভ‚ত করার মতো খুবই ভালো পরিবেশ ছিল। দুটি স্থানে দুটি বড় বড় পর্দায় নারী ও পুরুষরা জলসার দৃশ্য সরাসরি উপভোগ করছিল। তিন দিনই দুই হাজার পাঁচশতের অধিক নারী ও পুরুষ জলসায় যোগ দেয়। কুমাসি আহমদীয়া সেন্টার মসজিদে বড় পরিসরে ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেখানে তিন দিনই দুই হাজারের বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করেন। আপার ওয়েস্ট ওয়া-তে ১২টি মসজিদে সম্মিলিতভাবে জলসা সালানার কার্যক্রম শোনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল; অনুরূপভাবে বাদ বাকি রিজিওনগুলোতেও (ব্যবস্থা ছিল)। বাস্তবিক পক্ষে ওয়া শহরে ১২টি স্থানে ব্যবস্থা ছিল এবং অবশিষ্ট পুরো রিজিওনে ১৪টি স্থানে ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এভাবে এখানেও দুই হাজারের অধিক মানুষ সম্মিলিতভাবে শুনেছে এবং অন্যান্য চ্যানেলেও এম.টি.এ. দেখেছে। এম.টি.এ. আফ্রিকা ও এম.টি.এ. ঘানা ছাড়া ঘানার অন্য তিনটি টিভি চ্যানেলেও জলসার কার্যক্রম দেখা যাচ্ছিল।
ইয়েমেন থেকে আকরাম আলী আল কেহলানী সাহেব বলেন, আজ যুগ-খলীফা এই জলসা এবং বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে আমাদের মন ও প্রাণকে নতুনভাবে সঞ্জীবিত করেছেন। আমাদের চোখের অশ্রু শুকিয়ে গিয়েছিল যা এখন আবার ফিরে এসেছে আর আমাদের হৃদয় কঠিন হয়ে যাওয়ার পর আবার কোমল হয়েছে। লাজনার উদ্দেশ্যে প্রদত্ত যুগ-খলীফার ভাষণ যদি গোটা সমাজ শোনে এবং যথাযথভাবে তা পালন করে, তবে গোটা সমাজ শতভাগ শুধরে যাবে। তেমনিভাবে সমাপনী ভাষণ জলসার সার্বিক কার্যক্রমের সৌন্দর্যকে বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে। এই পুরো ব্যবস্থাপনার কোন দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে পাওয়া যাবে না। সবার মুখে হাসির ছটা দেখা যাচ্ছিল। এটি সেই খোদার কৃপা যিনি এই জামা’ত বানিয়েছেন।
ইয়েমেন থেকে ইয়ামার আলী সাহেব বলেন, জলসার তিনটি দিনই আমাদের জন্য ঈদ ছিল, যাতে আমরা খোদা তা’লার কৃপারাজি বর্ষিত হতে এবং হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর সাথে তাঁর অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ হতে দেখেছি। জলসার কারণে আহমদীয়া খিলাফতের প্রতি আমাদের ঈমান প্রতিদিন বৃদ্ধি পেতে থাকে, কেননা আমরা দেখেছি যে, কীভাবে আল্লাহ্ তা’লার সাহায্য ও সমর্থন আহমদীয়া খিলাফতের সাথে রয়েছে। খিলাফত ব্যতিরেকে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই নেই। যদিও আমরা জলসায় সশরীরে উপস্থিত ছিলাম না, কিন্তু আমাদের মন তার সাথেই ছিল আর আমরা জলসার পবিত্র আধ্যাত্মিক পরিবেশ এমনভাবে অনুভব করছিলাম যেন আমরা সেখানেই রয়েছি। তিনি বলেন, তাঁকে দেখে এবং তাঁর উপদেশাবলী শুনে যে আবেগ সৃষ্টি হয়েছিল তা ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়; হৃদয়ে অত্যন্ত গভীর প্রভাব পড়ছিল। ভাষণগুলো থেকে অনেক উপকৃত হয়েছি, কারণ নিজের অনেকগুলো দায়িত্বের প্রতি আমার মনোযোগ আকৃষ্ট হয়েছে। সেই সাথে অনেক ভুলভ্রান্তির বিষয়েও জানতে পেরেছি যেগুলোর ব্যাপারে আমি উদাসীন ছিলাম। তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে আহমদীদের একত্রিত হয়ে জলসায় অংশগ্রহণের দৃশ্য আমার হৃদয়ে গভীর বেদনার সৃষ্টি করেছে এবং আমি দোয়াও করেছি যেন আল্লাহ্ তা’লা দ্রুত ইয়েমেনেও আমাদেরকে এমন স্থান দান করেন যেখানে আমরা সম্মিলিতভাবে জলসায় অংশগ্রহণ করতে পারব।
জর্ডান থেকে হামিদ সাহেব বলেন, প্রতি বছর পৃথিবীর সব দেশ থেকে মানুষ হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতার সাক্ষী হয়ে জলসায় অংশগ্রহণ করে। এ বছরের জলসা এক বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিল, কেননা এ বছর ইন্টারনেট ও এম.টি.এ.’র মাধ্যমে সারা পৃথিবী থেকে আহমদীরা ব্যাপক সংখ্যায় এতে অংশগ্রহণ করেছে। আল্লাহ্ তা’লা সর্বাবস্থায়ই জামা’তকে সাহায্য করেন, কেননা এটি এক সত্য জামা’ত। আমি এ বছরের জলসায় যুগ-খলীফার উপস্থিতিকে এক আধ্যাত্মিক দিব্যদর্শন অথবা জাগতিক জান্নাতের সাথে তুলনা করি, যার ফল আমরা এই তিন দিন খেয়েছি। মনে হচ্ছিল যেন খাঁটি ইসলামের প্রচারের জন্য আধ্যাত্মিক পরিবেশে বিনির্মিত এক ঐশী তাঁবু এটি!
সিরিয়া থেকে মুহাম্মদ বদর সাহেব বলেন, জলসায় আহমদী মুসলমানগণ বর্ণ, গোত্র ও সংস্কৃতির ভিন্নতা সত্তে¡ও যুগ-খলীফার নেতৃত্বে জামা’তের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ ছিল। তিনি আরো বলেন, তাদের ক্ষেত্রে খোদা তা’লার এই বাণী যে, যদি তুমি পৃথিবীসম ধনভাণ্ডার ব্যয় করতে তবুও তাদের হৃদয়গুলোকে এক সুতোয় বাঁধতে পারতে না বরং একমাত্র আল্লাহ্ই তাদের হৃদয়কে এক সুতোয় গেঁথে দিয়েছেন সত্য সাব্যস্ত হচ্ছিল। এটি পবিত্র কুরআনের আয়াত। অতএব আমাদের ওপর আল্লাহ্ তা’লার অশেষ কৃপা। পুনরায় তিনি বলেন, জলসায় অংশগ্রহণকারীদের মুখমণ্ডল থেকে ভালোবাসাপূর্ণ আবেগ উচ্ছ্বাসের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছিল। তিনি বলেন, জলসায় প্রশান্তি এবং নিরাপত্তার এক গভীর অনুভ‚তি আমাদের মাঝে কাজ করেছে। এমন মনে হচ্ছিল যেন, আমরা সব আহমদী আমাদের আধ্যাত্মিক নেতার আলোতে মরুভূমির মাঝে অবস্থিত কোন আধ্যাত্মিক খেজুর বাগানে অবস্থান করছি যেখানে রয়েছে অনাবিল শান্তি ও বিনিদ্র নিরাপত্তা। চরমভাবে উপলব্ধি করেছি যে, এখনও আমার মাঝে অনেক দুর্বলতা রয়েছে। তাই আমাকে পবিত্র পরিবর্তন সাধনের জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করতে হবে। তাক্বওয়ার উচ্চ মার্গ অর্জন করতে হবে। ধর্মকে জাগতিকতার ওপর প্রাধান্য দিতে হবে। পারিবারিক জীবনকে সুন্দর করতে নারীদের সাথে ভালোবাসাপূর্ণ কোমল আচরণ করতে হবে।
জার্মানী থেকে আব্দুর রহমান লুবনানী সাহেব লিখেন, আমি বার্লিনের মসজিদে জামা’তের বন্ধুদের সাথে তিন দিনই জলসা শুনেছি। জলসার আধ্যাত্মিক পরিবেশ অনুভব করেছি। জলসা থেকে আমরা অনেক কল্যাণমণ্ডিত হয়েছি আর আধ্যাত্মিকতার যে ঘটতি অনুভূত করছিলাম তা ফিরে এসেছে।
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর থেকে উমর সাহেব বলেন, আমার আকাক্সক্ষা হলো এই জলসা যেন প্রতিদিনই অনুষ্ঠিত হয় যেন আমরা নবী বা ওলীদের মতো হতে পারি। একটি অসাধারণ অনুভূতি ছিল। সব ভাই একত্রে বসে জলসা শুনেছি। ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ একটি পরিবেশ বিরাজ করছিল।
আইভরি কোস্ট থেকে রিযওয়ান শাহেদ সাহেব লিখেন, মা শহরের জামা’তের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে সাহেব বলেন, জলসার সবচেয়ে হৃদয়গ্রাহী দৃশ্যটি ছিল, খিলাফতের পতাকাতলে সমগ্র বিশ্বের আহমদীরা ঐক্যবদ্ধ এবং খিলাফতের আনুগত্যে মত্ত। কোথাও দিন আবার কোথাও মাঝ রাত হওয়া সত্ত্বেও সবাই যুগ খলীফার বক্তৃতা শুনতে সর্বান্তঃকরণে কান পেতে বসে আছে এবং নিজেদের ঈমানের সবীজবতার উপরকরণ সংগ্রহে ব্যস্ত।
কিরিগিজস্তানের ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ইলিয়াস কুরবাতুফ সাহেব লিখেন, জলসায় এমন কিছু বক্তৃতা ছিল যা শুনে আমি আমার আবেগ ধরে রাখতে পারি নি এবং আমার চোখ থেকে অশ্রু ঝরতে থাকে। আমি ইউটিউবে জলসা সালানা দেখেছি আর যখন আমি ইউটিউবে আহমদী ভাইবোনদের কমেন্ট দেখছিলাম যেখানে তারা পরস্পরকে জলসার শুভেচ্ছা জানাচ্ছিল তখন আমার আনন্দের কোন সীমা ছিল না। এছাড়া তারা একে অপরকে শান্তি ও নিরাপত্তার সুসংবাদ দিচ্ছিল। আমার এসব ভাইবোন বিভিন্ন জাতির লোক ছিল, যেমন রাশিয়ান, ইউক্রেনিয়ান, আর্মেনিয়ান, তাতারী, কাজাকী এবং কিরগিজী ইত্যাদি। এই দৃশ্য অত্যন্ত প্রাণোদ্দীপক ছিল।
নাইজারের আহমদী বন্ধু সোলেমান সাহেব বলেন, যুগ খলীফার বক্তৃতা আমার মাতৃভাষা হাওসায় শুনা আমার জন্য সম্মানের কারণ ছিল। তিনি বলেন, এম.টি.এ. ফাইভে হাওসা ভাষার সংযোজন আমাদের জন্য জলসাকে আরো আড়ম্বরপূর্ণ করে দিয়েছে। আমাদের জন্য জলসা এবং ঈদ এক হয়ে গেছে। তিনি বলেন, যুগ খলীফাকে হাওসা ভাষায় শোনা একটি জাঁকালো ব্যাপার। যার স্বাদ কেবল একজন হাওসাই বুঝতে পারে। এবার প্রথম বারের মতো হাওসা ভাষায় সরাসরি অনুবাদ করা হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ায় জামা’তের এক বন্ধু সুভিতনু সাহেব বলেন, জলসা দেখার এবং যুগ খলীফার বক্তৃতাগুলো শোনার পর আমাদের পরিবারে খিলাফতের প্রতি ভালোবাসার এক নবচেতনা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা মানবীয় ভ্রাতৃত্ববোধের এক উন্নত দৃষ্টান্ত দেখেছি যা পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না। খিলাফত সত্যিই রং ও বর্ণের ঊর্ধ্বে গিয়ে মানুষের মাঝে ভালোবাসা এবং শান্তির মূর্ত প্রতীক প্রমাণিত হচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়া থেকে আতেফ যাহেদ সাহেব বলেন, রাত ১২:৫৫ মিনিটে সরাসরি সম্প্রচার অর্থাৎ (জলসার) উদ্বোধনী ভাষণ আরম্ভ হয়, তবুও লোকেরা সেখানে উপস্থিত হয়ে সম্মিলিতভাবে গভীর মনোযোগের সাথে জলসার কার্যক্রম শোনে। একজন তার ছোট ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন, রাত সাড়ে দশটায় খুতবা শেষ হওয়ার পর তিনি তার ছেলেকে বলেন, তুমি বাড়ি চলে যাও। সে বলে যে, না, আমি এখানে বসেই ভাষণ শুনব, আর সেও (গভীর) রাত পর্যন্ত বসে থাকে। তিনি বলেন, জলসার সমাপনী ভাষণ রবিবার গভীর রাতে আরম্ভ হওয়ার কথা ছিল আর পরের দিন ছিল কর্মদিবস। তাই দুশ্চিন্তা হচ্ছিল যে, লোকজন হয়ত মসজিদে আসবে না। কিন্তু আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় জামা’তের সদস্যরা ব্যাপক সংখ্যায় সমাপনী ভাষণ শোনার জন্য আসেন, বরং উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগদানকারীদের চেয়েও এই সংখ্যা বেশি ছিল।
ব্রাজিল থেকে গিনি বাসাউ এর ইব্রাহীম সাহেব, যিনি পড়াশোনার উদ্দেশ্যে ব্রাজিল গিয়েছেন, বলেন, একটি বিষয় যা বিশেষভাবে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে আর আমি বিশেষভাবে যার উল্লেখ করতে চাই তা হলো, নিযামে খিলাফত বা খিলাফত ব্যবস্থাপনা; যাঁর অধীনে একই সময়ে বিভিন্ন দেশের মানুষ খুব সুন্দরভাবে পরস্পরের সাথে মিলিত হয়ে একত্রে জলসার বক্তৃতামালা এবং কার্যক্রম শুনছিল এবং দেখছিল। এটি একথার প্রমাণ যে, আহমদীয়া জামা’তই ইসলামের সত্যিকার প্রতিনিধিত্বকারী জামা’ত। যদি ইমাম মাহদী না আসতেন তাহলে আমাদের মাঝে এই ঐক্য ও একতা সৃষ্টি হতো না। আমি এর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যে, এই জলসার মাধ্যমে আমার অনেক জ্ঞান বৃদ্ধি পেয়েছে আর এই জামা’তের সদস্য হতে পেরে (আমি) খোদার প্রতি কৃতজ্ঞ।
কিরগিজস্তান থেকে আতাখানু ওয়াদীলিয়ারা সাহেবা বলেন, বক্তাদের বক্তৃতামালা মনোযোগ সহকারে শোনা এবং দেখা কতই না আকর্ষণীয়। যুগ খলীফার বক্তৃতাগুলো শোনার সময় মানুষ এমন এক জগতে হারিয়ে যায় যেখানে ইসলামের পুনর্জাগরণ ঘটছে। আমরা সবাই একটি পরিবারের মতো সম্মিলিতভাবে যুগ খলীফার বক্তৃতাগুলো শুনছি। বিশেষত লাজনাদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত যুগ খলীফার যে ভাষণ ছিল, যাতে ইসলামে নারীর অধিকার বর্ণনা করা হয়েছে। (এই) ভাষণ শোনার পর আমাদের আরও বেশি আল্লাহ্ তা’লার প্রতি বিনত হওয়া উচিত যে, কীভাবে আল্লাহ্ তা’লা আমাদের নারীদের সুরক্ষা করেছেন। তিনি বলেন, (হুযূরের) বিভিন্ন বক্তব্য (আমাদের) গভীরভাবে আবেগাপ্লুত করে।
গুয়াতেমালা থেকে বায়রন সাহেব বলেন, আমার জন্য জলসার দিনটি ছিল একটি বিশেষ দিন, আর এটি কোন মো’জেযার চেয়ে কম নয়; কেননা জলসার কিছুদিন পূর্বে গুয়াতেমালা জামা’তের অগণিত সদস্য করোনা ভাইরাসের কারণে অসুস্থ হয় আর কয়েকজনের অবস্থা তো আশঙ্কাজনক অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিল, কিন্তু আজ গুয়াতেমালা (জামা’তের) সকল সদস্য এখানে বসে জলসা শুনছেন আর (এখন) কোন সদস্যই অসুস্থ নন। আমি যখন খ্রিষ্টান ছিলাম তখন মো’জেযা সম্পর্কে অলীক বিশ্বাস বা বা ধারণা ছিল। আহমদীয়া জামা’তে যোগ দেওয়ার পর আমি মো’জেযার সত্যিকার মর্ম বুঝতে পেরেছি যে, সত্যিকার মো’জেযা হলো মানুষের মাঝে পবিত্র পরিবর্তন সৃষ্টি করা। এক বছর পূর্বে আমি একা মসজিদে আসতাম আর আমার পরিবারের ইসলাম গ্রহণ করা ও মসজিদে আসা অসম্ভব মনে হতো। (কিন্তু) আজ আমি আমার স্ত্রী-সন্তান, মা এবং সম্পর্কের এক ভাই ও তার পরিবারকেও আমার সাথে নিয়ে এসেছি এবং একসাথে বসে এই জলসা দেখছি আর এটিকে অবশ্যই একটি মো’জেযা বলে বিশ্বাস করি। এই ভদ্রলোক খুবই নিষ্ঠাবান ও সরলপ্রাণ আহমদী। আয়উপার্জন যৎসামান্য হলেও তার মাঝে তবলীগের এক গভীর অনুপ্রেরণা বিদ্যমান রয়েছে। যেখানেই যান তবলীগ করেন এবং বিভিন্ন লোককে নিজের খরচে মসজিদ পরিদর্শন করান।
গুয়াতেমালা থেকেই রামীরো মাত্রিনিস (সাহেব) বলেন, আমার জন্য আজকের দিনটি খুবই বিশেষ (দিন) ছিল। এম.টি.এ.’র মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের জলসা এবং অন্যান্য স্থানের ভিডিও বা সচিত্র দৃশ্য দেখে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে যে, এই আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনা অবশ্যই ঐশী ব্যবস্থাপনা। যুগ খলীফা অবশ্যই খোদার পক্ষ থেকে মনোনীত, যিনি আমাদের বলছেন যে, মুসলমানদের কীরূপ চিত্র সমাজের সামনে উপস্থাপন করা উচিত। আমি খুবই আনন্দিত, আগামীতে যুগ খলীফার বক্তব্য সর্বদা শুনব। এই ভদ্রলোক বিভিন্ন খ্রিষ্টান ফির্কার সদস্য হিসেবে পঁয়ত্রিশ বছর যাবৎ মানুষকে বাইবেল পড়িয়েছেন, কিন্তু সর্বদা মতবিরোধের কারণে এক ফির্কা থেকে অন্য ফির্কায় যোগ দিতে থেকেছেন। (তিনি) স্বয়ং গবেষণা করে ইসলাম আহমদীয়াত গ্রহণ করেছেন। তার ঘর মসজিদ থেকে বিশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। যখন থেকে তিনি আহমদীয়াত গ্রহণ করেছেন, এর মধ্যে গাড়ি নষ্ট হওয়ার কারণে শুধুমাত্র একটি জুমুআয় আসতে পারেন নি, এছাড়া নিয়মিত জুমুআয় আসেন। নিজের বাড়িতে তিনি পাঁচবেলার নামাযের ব্যবস্থা করে রেখেছেন।
গুয়াতেমালা থেকে আওলীন গনজালীস বলেন, যুক্তরাজ্য জলসায় সরাসরি যোগদান করে জানতে পেরেছি, আহমদীয়া জামা’তের একটি (সুশৃঙ্খল) ব্যবস্থাপনা রয়েছে। সবাইকে এক মালায় গ্রথিত দেখা গেছে আর খোদা তা’লার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যে, তিনি আমাদেরকে এই ব্যবস্থাপনার অংশ হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। আমার দুঃখ হলো, যুগ খলীফার কথা শোনা থেকে বিশ্বের একটি বড় অংশ বঞ্চিত। এ কারণেই বিশ্বে সমস্যাদি ও যুদ্ধাবস্থা বিরাজমান। আমি আহমদীয়াতভুক্ত হয়ে এ বিষয়টি বুঝতে পেরেছি যে, দোয়া-দ্বারা সবকিছু হতে পারে আর দোয়ার মাধ্যমে আমাদের অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। যুগ খলীফার দোয়ার কল্যাণে আমার ধ্বংসপ্রায় সংসার রক্ষা পেয়েছে। এখন আমার কাছে যুগ খলীফার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মতো ভাষা নেই। তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো যোগদানের কারণে আমি বলতে পারি যে, এটি আমার জন্য সাফল্য ও বিজয়ের বছর। আমরা দুর্বলতামুক্ত নই বা সম্পূর্ণ নই ঠিকই, কিন্তু আমাদের আধ্যাত্মিকতার এক নতুন সফর আরম্ভ হয়েছে। আমি আগামীতেও প্রতি বছর জলসায় যোগদান করব।
নাইজারের আহমদী বন্ধু ঈসা বাবা সাহেব বলেন, ইমাম মাহদী (আ.) কীভাবে নিজের আরামের ওপর অতিথিদের আরামকে প্রাধান্য দিতেন, আমি (হুযূরের) খুতবায় অতিথিসেবা সম্পর্কে শুনেছি। আর খলীফা হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর দৃষ্টান্ত দিয়েছেন যে, অতিথিদের আরামের জন্য (তিনি) নিজের খাট পর্যন্ত দিয়ে দিয়েছেন আর সারা রাত কষ্টে কাটিয়েছেন। এরপর আমি বিরাজমান ভ্রাতৃত্ববোধের অভাবনীয় দৃষ্টান্ত জলসায় দেখেছি। খাদেমরা নিজেদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে কাদায় আটকে পড়া গাড়িগুলোকে বের বা উদ্ধার করছিল। সম্ভবত এরূপ ভ্রাতৃত্বের ঘাটতির কারণেই আজ মুসলমানরা বিশ্বে লাঞ্ছিত ও অপদস্থ। আর এই সমাধান খলীফাতুল মসীহ্ আমাদেরকে বাতলে দিয়েছেন।
আলবেনিয়া থেকে সামাদ গৌরী সাহেব লিখেন, একজন বন্ধু, ডাক্তার বিয়ার সাহেব বলেন, যুগ খলীফার বিভিন্ন বক্তব্য ছাড়াও যুক্তরাজ্যের বার্ষিক জলসার অন্যান্য অনুষ্ঠানও আমি দেখেছি। বর্তমান যুগে মানুষের হেদায়েতের জন্য জলসা সালানা সময়ের একটি অত্যন্ত আবশ্যকীয় দাবি। তিনি বলেন, যুগ খলীফার বক্তব্যগুলো অত্যন্ত সহজ বাক্যে হলেও বর্তমান যুগ সম্পর্কে এক মহা বার্তাবাহী ছিল। এমন সময়ে যখন সকল প্রকার নৈতিক নিয়মকানুনকে পদদলিত করা হয়েছে বা করা হচ্ছে, যখন এরা বলে যে, মানবাধিকার প্রদান করবে এবং বিশ্বকে রক্ষা করবে, অথচ এরা ভুলে যায় যে, এই নীতি মূলত পনেরশ’ বছর পূর্বে মহানবী (সা.) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, আজ আহমদীয়া জামা’ত যার পতাকাবাহী। এবার জলসা সালানায় যেসব দৃশ্য দেখেছি তাতে আফ্রিকার দরিদ্রাঞ্চলগুলোতে আহমদীয়া জামা’ত এবং হিউম্যানিটি ফার্স্ট-এর সেবামূলক (কর্মকাণ্ডের) দৃশ্যাবলী আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। সেসব শিশুদের উজ্জ্বল চোখগুলো বাস্তবতার ওপর থেকে এমনভাবে পর্দা উন্মোচনকারী ছিল যে, তাদের সামনে পৃথিবীর বড় বড় নেতাদের বাগাড়ম্বর ও প্রপাগান্ডাও তুচ্ছ। সেসব চোখ জীবনের প্রত্যাশী, আর পানি হলো জীবন, যা তারা প্রথমবার অত্যন্ত তৃপ্তির সাথে আস্বাদন করছিল।
সালানা জলসা উপলক্ষ্যে যেসব শুভেচ্ছাবাণী এসেছে তার মাঝে যুক্তরাজ্য ছাড়াও নয়টি দেশ থেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের ১০৯টি শুভেচ্ছাবাণী এসেছে, যেগুলোর মাঝে ভিডিও বার্তা, অডিও বার্তা এবং লিখিত বার্তা অন্তর্ভুক্ত। যুক্তরাজ্য ছাড়া যেসব দেশ থেকে বার্তা এসেছে সেগুলোর মাঝে রয়েছে আমেরিকা, সিয়েরা লিওন, গাম্বিয়া, সেনেগাল, কেনিয়া, স্পেন, হল্যান্ড ও জার্মানী। (বার্তাপ্রেরকদের মাঝে) যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী, কানাডার প্রধানমন্ত্রী, এছাড়া যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির নেতা, যুক্তরাজ্যের লিবডেম পার্টির নেতা, অনুরূপভাবে আরো অনেক রাজনীতিবীদ রয়েছে। এছাড়া আটজন মন্ত্রী, এগারোজন ছায়ামন্ত্রী, চারজন সাবেক স্টেট সেক্রেটারী, লন্ডনের পুলিশ কমিশনার, ছয়জন জাতীয় পর্যায়ের ধর্মীয় নেতা এবং তেরোজন মেয়রের পক্ষ থেকে বার্তা এসেছে। এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার সাথে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন মানুষেরও বার্তা এসেছে।
এম.টি.এ. আফ্রিকার রিপোর্ট হলো, বিগত বছরগুলোর ন্যায় এ বছরও এম.টি.এ. আফ্রিকার মাধ্যমে পুরো আফ্রিকাজুড়ে যুক্তরাজ্যের বার্ষিক জলসার সম্প্রচার দেখানো ও শুনানো হয়েছে, যা আমরা মানুষের প্রকাশিত অভিব্যক্তিতেও দেখেছি। আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় এম.টি.এ. আফ্রিকা ছাড়াও জলসার সম্প্রচার কতিপয় স্থানীয় টিভি চ্যানেলেও সম্প্রচারিত হয়েছে। এ বছর গাম্বিয়া, সিয়েরা লিওন, লাইবেরিয়া, ঘানা, ইউগান্ডা, মালী, রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, সেনেগাল, বুরকিনা ফাসোঁ-য় চৌদ্দটি ভিন্ন ভিন্ন টিভি স্টেশনে আমার বক্তৃতামালা সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। এক অনুমান অনুযায়ী (এভাবে) ৫৫মিলিয়নের অধিক মানুষের কাছে ইসলামের বার্তা পৌঁছেছে। করোনার কারণে আফ্রিকার বহিরাগত অতিথি যারা জলসায় যোগ দিতে পারে নি, তারাও সেখানে আসে যে, আমাদেরও (ভার্চুয়ালি) অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হোক।
হাওসা ভাষায় প্রথমবার অনুবাদ হয়েছে। আফ্রিকায় পঞ্চাশ মিলিয়নের অধিক মানুষ এই ভাষায় কথা বলে। আফ্রিকার ১৬টি ভিন্ন ভিন্ন টিভি চ্যানেল যুক্তরাজ্যের বার্ষিক জলসার বরাতে সংবাদ প্রচার করেছে। এসব চ্যানেলের দর্শক-সংখ্যা ৬০ মিলিয়নের অধিক। ইউগান্ডা থেকে মিশনারী যাকী সাহেব লিখেন যে, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরোধীরা জলসার পূর্বে জামা’তের বিরুদ্ধে অপপ্রচার আরম্ভ করেছিল আর তারা বলছিল যে, তাদের (অর্থাৎ আহমদীদের) নিজস্ব কুরআন রয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি, তাই কেউ জলসা শুনবেন না। যখন তারা (অর্থাৎ আহমদীরা) সেখানে বিজ্ঞাপন দেয় যে, জলসা শুনুন, তখন তারা (অর্থাৎ বিরোধীরা) অপপ্রচার আরম্ভ করে যে, জলসা শুনবেন না, কেননা তাদের কুরআন ভিন্ন। এই অপপ্রচারের ফলে ইউগান্ডাতে বহু সংখ্যক মানুষের দৃষ্টি বার্ষিক জলসার দিকে আকৃষ্ট হয়। অর্থাৎ উল্টো প্রভাব পড়ে আর বহু অ-আহমদী ব্যক্তি এ কথা জানিয়েছে যে, জামা’তের বিরুদ্ধে এই অপপ্রচারের ফলে আমাদের মাঝে জলসা সম্পর্কে জানার আগ্রহ জন্মে আর জলসা দেখার পর আমাদের হৃদয়ে পরিবর্তন এসেছে আর আমরা জানতে পেরেছি যে, আহমদীদের কুরআনও একই, বরং অন্যদের বিপরীতে তারা পবিত্র কুরআনকে বেশি ভালোবাসে।
ইউগান্ডার একজন ক্যাথলিক বন্ধু লিখেন, আমি ইউগান্ডার জাতীয় টিভিতে জলসার বিজ্ঞাপন দেখি যে, যুক্তরাজ্যে কোন ইসলামিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে আমি ভাবলাম যে, দেখা যাক তা কেমন সভা। অতএব শনিবার আমি টিভি চালালে সেখানে সাদা পাগড়ী পরিহিত এক ব্যক্তিকে দেখি যিনি বক্তৃতা করছিলেন। আমি বক্তৃতা শুনতে আরম্ভ করি। তখন টিভির সামনে থেকে উঠতে পারছিলাম না আর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো বক্তৃতা শুনি। তিনি বলেন, নারীদের সম্পর্কে (এত সুন্দর) ইসলামী শিক্ষা কোথাও পাওয়া যায় না, আর আমি কোন ব্যক্তিকে নারী-অধিকার সম্পর্কে এভাবে কথা বলতে দেখি নি। তিনি তখনই পর্দায় দেয়া নাম্বারে যোগাযোগ করেন এবং বলেন, এই বক্তৃতাটি লিখিত কপি আমার চাই, অর্থাৎ মহিলাদের উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তৃতার স্ক্রিপ্ট প্রয়োজন; তাকে ইনশাআল্লাহ্ তা প্রেরণ করা হবে।
লাইবেরিয়া নিবাসী অ-আহমদী বন্ধু আব্দুল্লাহ্ কোঈ সাহেব বলেন, জলসার অনুষ্ঠান দেখার পেছনে আমার উদ্দেশ্য ছিল এটি দেখা যে, আহমদী মুসলমান এবং অন্যান্য মুসলমানের মাঝে পার্থক্য কী আর আহমদীয়া জামা’ত সম্পর্কে অ-আহমদী আলেমরা যা বলে তার বাস্তবতা কতটুকু। জলসা দেখার পর আমার পুরোপুরি বিশ্বাস জন্মেছে যে, জামা’তের বিরুদ্ধে কৃত সমস্ত নেতিবাচক অপপ্রচার মিথ্যা। বাস্তবতা হলো আহমদীয়া জামা’তের মাধ্যমে ইসলামের বাণী সারা বিশ্বে পৌঁছাচ্ছে। আর অন্যদেরও এই বাস্তবতা সম্পর্কে অবহিত করাকে আমি আমার দায়িত্ব মনে করি যে, কেবল আহমদীয়া জামা’তই বাস্তবিক পক্ষে ইসলাম ধর্মের প্রচার করছে।
লাইবেরিয়ার এক অ-আহমদী বন্ধু বলেন, ধর্মীয় সহিষ্ণুতার প্রেরণায় জলসার অনুষ্ঠান দেখার জন্য যোগদান করেছিলাম। যখন আমি স্টেজের পর্দায় লেখা পবিত্র কুরআনের আয়াত পাঠ করি তখন এই বিষয়টি আমাকে খুবই অবাক করেছে যে, আহমদীদের সম্পর্কে অ-আহমদী আলেমরা এই কথা ছড়ায় যে, আহমদীরা রসূলুল্লাহ্ (সা.)-কে খাতামান্নাবীঈন মানে না এবং তাঁর (সা.) সম্মান করে না। কিন্তু এই সমস্ত কিছুর বিপরীতে আহমদীরা তো পুরো পৃথিবীতে মহানবী (সা.)-এর ভালোবাসার প্রচার করছে। আর যেভাবে আহমদীয়া জামা’তের খলীফা পবিত্র কুরআনের শিক্ষা এবং মহানবী (সা.)-এর উল্লেখ বার বার নিজের বক্তৃতায় করেছেন তা মহানবী (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসার জ্বলন্ত প্রমাণ।
প্রেস এবং মিডিয়ার মাধ্যমেও, মাঝখানে অন্য বিষয় চলে এসেছিল, যাহোক এখন পুনরায় প্রেস এবং মিডিয়ার উল্লেখ করা হচ্ছে। প্রেস এবং মিডিয়ার মাধ্যমেও আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় (ভালো) কভারেজ হয়েছে। বিবিসি তাদের আঞ্চলিক টিভিতে প্রচার করেছে, বিবিসি সাউথ প্রচার করেছে, একটি প্রমাণ্যচিত্রও তারা দেখিয়েছে, আর এই রিপোর্ট বিবিসি ওয়ার্ল্ডও প্রচার করেছে, যা ২০০টি দেশে দেখা যায়। এছাড়া বিবিসি ন্যাশনাল নিউজ চ্যানেলেও এই সংবাদ প্রচারিত হয়েছে এবং তা পুনঃপ্রচারও হতে থাকে। তারা বলছে যে, কত মানুষের কাছে সংবাদ পৌঁছেছে তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন, কিন্তু এক ধারণা অনুযায়ী এই কভারেজ ৫২ মিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছেছে। চল্লিশটি ওয়েবসাইট জলসার সংবাদ প্রচার করেছে। তাদের নিজস্ব পাঠকসংখ্যা হলো ২৭ মিলিয়ন। বিশটি পত্রপত্রিকায় জলসা সম্পর্কে প্রবন্ধ ইত্যাদি প্রকাশিত হয়েছে। এদের পাঠকসংখ্যা হলো সাত লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজার। জলসার বরাতে ষোলটি রেডিও প্রোগ্রাম প্রচারিত হয়েছে। (এভাবে) প্রায় ১৬ মিলিয়ন মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছেছে। অনুরূপভাবে বারোটি টেলিভিশন চ্যানেল জলসার সংবাদ প্রচার করেছে, যাদের কভারেজ প্রায় বাইশ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছে। উক্ত সমস্ত মাধ্যম ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আনুমানিক প্রায় তেষট্টি লক্ষ মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছেছে।
ঢাকা থেকে বাংলাদেশের আমীর সাহেব বলেন, কেন্দ্রীয় মসজিদ, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রাম থেকে লাইভ স্ট্রীমিংয়ের মাধ্যমে (জলসায়) যোগদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, রিপোর্ট অনুযায়ী ৮০০ এর অধিক অ-আহমদী অতিথি জলসার অনুষ্ঠান দেখেছে এবং উপভোগ করেছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের দশটি অনলাইন পোর্টাল এবং সংবাদপত্রে জলসার সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলোর মাঝে তিনটি খুবই প্রসিদ্ধ এবং সুপরিচিত। খুবই সতর্ক অনুমান অনুযায়ী অনলাইন পোর্টাল এবং সংবাদপত্রের মাধ্যমে কমপক্ষে চুয়ান্ন লক্ষ মানুষ এসব সংবাদ পাঠ করেছে।
এম.টি.এ. ইন্টারন্যাশনাল এর মাধ্যমে যে কভারেজ হয়েছে তা হলো, ইউটিউবে ১৫ মিলিয়নের অধিক মানুষ দেখেছে। ইউটিউবের মাধ্যমে প্রায় পাঁচ লক্ষ ঘন্টা এম.টি.এ. দেখা হয়েছে। ইন্সটাগ্রামে পঁয়ত্রিশ হাজার মানুষ এম.টি.এ.-র পেইজ দেখেছে আর ১.৯৭ মিলিয়ন মানুষের কাছে তা পৌঁছেছে। টুইটারে এক লক্ষের অধিক মানুষ এম.টি.এ.-র পেইজ দেখেছে আর পঁয়ত্রিশ হাজারের অধিক মানুষ তা পছন্দ করেছে এবং অন্যদের কাছে পৌঁছিয়েছে। ফেইসবুক-এর মাধ্যমেও সাড়ে পাঁচ লক্ষ মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছেছে। অনুরূপভাবে এম.টি.এ.-র নিজস্ব ওয়েবসাইটও এক লক্ষ বার দেখা হয়েছে। এম.টি.এ. অন ডিমান্ড-এর মাধ্যমেও দুই লক্ষের অধিক মানুষ জলসা দেখেছে।
এই ছিল সংক্ষিপ্ত কিছু কথা, এটিও বেশ সময় নিয়ে নিয়েছে। আল্লাহ্ তা’লা এই জলসার আরো ইতিবাচক ফলাফলও প্রকাশ করুন আর পুণ্যাত্মাদের আহমদীয়াত এবং প্রকৃত ইসলামের প্রতি পূর্বের চেয়ে অধিক মনোযোগ নিবদ্ধ হোক। আর তথাকথিত আলেমদের অনিষ্ট থেকে (আল্লাহ্ তা’লা) জামা’তকে এবং সকল পুণ্যাত্মাকে সুরক্ষিত রাখুন। (আমীন)