মজলিস খোদ্দামুল আহমদীয়া বাংলাদেশের ৪৮তম ইজতেমা সফলতার সাথে অনুষ্ঠিত

জাতীয় ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে মজলিস খোদ্দামুল আহমদীয়া বাংলাদেশের ৪৮তম জাতীয় বার্ষিক ইজতেমার শুভ উদ্বোধন করেন আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত, বাংলাদেশের ন্যাশনাল আমীর আলহাজ্জ মওলানা আব্দুল আউয়াল খান চৌধুরী, মজলিস খোদ্দামুল আহমদীয়া বাংলাদেশের সদর জনাব মুনাদিল ফাহাদ এবং ইজতেমার নাযেম আলা জনাব মাহবুবুর রহমান জেপি। আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঢাকার দারুত তবলীগ মসজিদ প্রাঙ্গনে ৪ অক্টোবর শুক্রবার সকাল ৭:০০ মিনিটে ইজতেমার উদ্বোধন করা হয়। পতাকা উত্তোলনপর্ব শেষে উদে¦াধনী অধিবেশনে ন্যাশনাল আমীর আলহাজ্জ মওলানা আব্দুল আউয়াল খান চৌধুরী, মজলিস খোদ্দামুল আহমদীয়ার সদর জনাব মুনাদিল ফাহাদ এবং ইজতেমার নাযেম আলা জনাব মাহাবুবুর রহমান জেপী বক্তব্য রাখেন। শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন জনাব হাসান মোহাম্মদ মিনহাজুর রহমান এবং নযম পাঠ করেন জনাব জুবায়ের আহমদ রিয়াদ। এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন জনাব মাহবুবুর রহমান জেপী। তিনি তার বক্তৃতায় ইজতেমায় আগত সকলকে নসীহত করেন যে, তারা যেন খেলাধূলা সহ সব বিষয়ে ঊন্নত আদর্শ স্থাপন করেন। ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী সবাই যেন সঠিক সময়ে বাজামাত নামায আদায় করেন এবং সব প্রোগ্রামে অংশ নেন এ বিষয়ে বিশেষ তাগিদ প্রদান করেন।

এ পর্যায়ে মোহতরম ন্যাশনাল আমীর সাহেব ঈমান উদ্দীপক বক্তব্য প্রদান করেন যা ইজতেমায় আগত সকল সদস্যগণকে বিশেষভাবে উজ্জীবিত করে। উদ্বোধনী ভাষণে তিনি পবিত্র কুরআন চর্চা, কুরআন শুদ্ধ ও বুঝে পড়া এবং উপলব্ধি করার প্রতি সকলের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সেই সাথে পবিত্র কুরআনের কোন স্থানে আমীন বলতে হবে আবার কোন স্থানে আস্তাগফিরুল্লা বলতে হয় আর কোন স্থানে আলহামদুলিল্লাহ বলা অর্থাৎ পবিত্র কুরআন পাঠের সময় কোন স্থানে কোন উত্তর দিতে হবে সে বিষয়েও সবাইকে অবগত করেন। এছাড়া তিনি তার বক্তৃতায় আরো বলেন-আহমদী যুবকরা যেন স্মার্ট ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে না পড়েন বরং শরীর চর্চা ও বিভিন্ন খেলাধূলায়ও সময় কাটান। এতে নিজের শরীর ও মন উভয় ভালো থাকবে আর এরফলে ধর্মের সেবা করারও দীর্ঘ সময় পাওয়া যাবে। কেননা ধর্মের সেবার জন্য সুস্থ থাকা চাই। শেষে তিনি বলেন-কেউ যদি সম্মানিত হতে চায় সে যেন পবিত্র কুরআনের আলোয় আলোকিত হয়।

উদ্বোধনী অধিবেশনের এ পর্যায়ে বক্তব্য রাখেন মজলিস খোদ্দামুল আহমদীয়া বাংলাদেশ-এর সদর জনাব মুনাদিল ফাহাদ। তিনি ইজতেমা উপলক্ষে আগত সকলকে স্বাগত জানিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা প্রদান করেন। তিনি তার বক্তৃতা নিখিলবিশ^ আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বর্তমান খলীফা হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের খোদ্দামুল আহমদীয়ার ইজতেমায় যে বক্তৃতা করেন তার আলোকে বলেন-আমাদেরকে নৈতিক, আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি বলেন- আমাদের ইজতেমা যেন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করে। আমাদের ইজতেমা যেন এই স্বাক্ষ্য দেয় যে ধর্মের সেবার জন্য যে কোন কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। শেষে তিনি সকলকে আহবান করে বলেন-আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজের উত্তম আদর্শ স্থাপন করা।

মোহতরম ন্যাশনাল আমীর সাহেবের দোয়া পরিচালনার মাধ্যমে উদ্বোধনী অধিবেশনের সমাপ্তি হয়। এরপর ইজতেমার বিভিন্ন কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে হতে থাকে।

৪ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টায় তরবিয়তী সভায় কারাগরি শিক্ষার গুরুত্বের ওপর বক্তব্য রাখেন ড.আব্দুল্লাহ শামস বিন তারেক এবং ধর্মের সেবা এ বিষয়ের ওপর বক্তব্য রাখেন মওলানা মোহাম্মদ সোলায়মান। উক্ত সভায় মজলিস খোদ্দামুল আহমদীয়া বাংলাদেশের সদর জনাব মুনাদিল ফাহাদ উপস্থিত ছিলেন। সভার শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে পাঠ করেন ইমরান সাঈদ আকাশ এবং নযম পাঠ করেন রাহুল আলী। এরপর ‘ইজলাসে আম্মা’ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মজলিস খোদ্দামুল আহমদীয়া বাংলাদেশের সদর জনাব মুনাদিল ফাহাদ। বাৎসরিক রিপোর্ট উপস্থাপন করেন মজলিস খোদ্দামুল আহমদীয়া বাংলাদেশের মোতামাদ ডা. এনামুর রহমান সাদাফ। শেষে সদর সাহেব মজলিসের আহাদ নামা পাঠ করান ও দোয়া পরিচালনা করেন।

৫ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টায় ক্যারিয়ার গাইড লাইন বিষয়ক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রাণ-আরএফএল সম্মানিত চেয়ারম্যান ও সিইও জনাব আহসান খান চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। এছাড়া খোদ্দামুল আহমদীয়া বাংলাদেশের সদর জনাব মুনাদিল ফাহাদ এতে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অপর দিকে আতফাল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

৬ অক্টোবর বিকালে ইজতেমার সমাপ্তি অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন মোহতরম ন্যাশনাল আমীর সাহেব, সদর সাহেব এবং নাযেম আলা সাহেব। পুরস্কার বিতরণ ও দোয়ার মাধ্যমে ইজতেমার সমাপ্তি ঘটে।

এবারের ইজতেমায় ৭৮টি মজলিস থেকে ১২০০ খোদ্দাম ও ৬০০জন আতফাল অংশগ্রহণ করেন। পঞ্চগড় থেকে ট্রেনের একটি বগি, ব্রা²ণবাড়িয়া ও তারুয়া মিলে ট্রেনের একটি বগি রিজার্ব করে ইজতেমায় যোগদান করেছেন। এছাড়া সুন্দরবন, মিরগাং, রংপুর জেলা এবং নাটোর জেলা থেকেও বাস রিজার্ভ করে ইজতেমায় যোগদান করেছেন।

এবারের ইজতেমায় খেলাধুলার জন্য আলাদা মাঠ ভাড়া করা হয়। যার ফলে যথা সময়ে খেলাধুলা সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়। ইজতেমায় দেয়ালিকা ও প্রকাশনার বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এছাড়া ইজতেমায় আগত সবাইকে শরবত পান করানোরও ব্যবস্থা ছিল। ইজতেমার বিভিন্ন তালিমী প্রতিযোগিতার জন্য ২৫জন ওয়াকেফে জিন্দেগী বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন।

ইজতেমা উপলক্ষ্যে ইশায়াত বিভাগের পক্ষ থেকে বিশেষ ইজতেমা বুলেটিন প্রকাশ করা হয়। যাতে হুযূর (আই.)-এর ৪ অক্টোবরের খুতবার সারসংক্ষেপ প্রকাশ করা হয় এবং ইজতেমায় আগত প্রায় সকলের কাছে তা বিনামূল্যে পৌঁছানো হয়। ইজতেমায় নতুনভাবে মাসিক আহবান গ্রাহক হয় ১০৩জন।