তিনি আরও বলিয়াছেনঃ
هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاء الْحُسْنَى
অর্থাৎ “ তিনি এমন খোদা যে, তিনি সকল দেহেরও স্রষ্টা এবং সকল আত্মারও স্রষ্টা; গর্ভাশয়ে রূপশিল্পী তিনিই। যত ভাল ভাল নাম ধারণা করা সম্ভব, সব তাঁহারই” (৫৯:২৫)
তিনি আরও বলেনঃ
يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
অর্থাৎ “আকাশমন্ডলের প্রাণীরাও তাঁহার নাম পবিত্রতার সঙ্গে স্মরণ করে এবং পৃথিবীর প্রাণীরাও করে”।
এই আয়াতে ইঙ্গিত রহিয়াছে যে, মহাকাশের গ্রহ-নক্ষত্রে বসতি আছে এবং ঐ সকল প্রাণীও খোদার হেদায়াতসমূহের অন্তর্ভুক্ত।
পুনরায় বলেনঃ
عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
অর্থাৎঃ “খোদা সর্বশক্তিমান” (২:১৪৯)
এই নাম উপাসকগণের জন্য বড়ই শান্তি প্রদায়ক। কারণ, খোদা যদি দুর্বল হন এবং সর্বশক্তিমান না হন, তবে এরূপ খোদার নিকট আমরা কি আশা করিব?
তারপর বলেনঃ
رَبِّ الْعَالَمِينَ * الرَّحْمـنِ الرَّحِيمِ * مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ
অর্থাৎঃ তিনিই খোদা যিনি সকল জগতের পালনকর্তা রহমান, রহীম এবং বিচার দিনের স্বয়ং মালিক। এই দিনের কর্তৃত্ব তিনি কাহারো হাতে দেন নাই। (১:২-৪)
أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ
প্রত্যেক আহ্বানকারীর আহ্বান শ্রবণকারী এবং জবাব দানকারী অর্থাৎ প্রার্থনা মঞ্জুরকারী। (২:১৮৭)
আবার বলিয়াছেনঃ
الْحَيُّ الْقَيُّومُ
অর্থাৎ, “সদা বিদ্যমান, সকল প্রাণের প্রাণ এবং সব অস্তিত্বের আশ্রয়” (২:২৫৬)
ইহা বলার কারণ, তিনি অনাদি ও অনন্ত না হইলে তাঁহার জীবন সম্বন্ধে আশঙ্কা রহিত যে, আমাদের পূর্বেই না তাঁহার মৃত্যু হইয়া যায়। তারপর বলেনঃ
قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ * اللَّهُ الصَّمَدُ * لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ * وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُواً أَحَدٌ
অর্থাৎ “সেই খোদা এক-অদ্বিতীয় খোদা। তিনি কাহারও পুত্র নহেন, এবং কেহ তাঁহার পুত্র নহে। কেহ তাঁহার সমকক্ষ নহে এবং কেহ তাঁহার স্বজাতীয় নহে”। (১১২:২-৫)
প্রতিশ্রুত মসীহ্ (আঃ) তাঁর এক ঐতিহাসিক বক্তৃতায় মহান আল্লাহ্র পরিচয় এভাবে তুলে ধরেনঃ
“…ইসলাম ধর্মের যাবতীয় বিধি-বিধানের মূখ্য উদ্দেশ্য হলো, ‘ইসলাম’ শব্দে নিহিত প্রকৃত মর্মার্থ যেন বাস্তবায়িত হয়। এই লক্ষ্য অর্জন করার জন্য খোদার ভালবাসা জাগ্রত করতে কুরআনের বিবিধ শিক্ষা সচেষ্ট। কখনো এটি খোদার সৌন্দর্য বর্ণনা করে, আবার কখনো তাঁর অনুগ্রহ স্মরণ করায়। কেননা, অন্তরে কারও ভালবাসা হয় তার সৌন্দর্যের কারণে জন্ম নেয় কিংবা তার অনুগ্রহের দরুণ সৃষ্টি হয়। তদনুযায়ী, খোদাকে নিজ গুণাবলীতে এক এবং অদ্বিতীয় বর্ণনা করা হয়েছে। তাঁর মাঝে কোন খুঁত নেই। তিনি পূর্ণ গুণাবলীর সমষ্টি আর পবিত্র শক্তিসমূহের আধার। তিনি সমস্ত সৃষ্টির ভিত্তি এবং যাবতীয় কল্যাণের উৎস। তিনি সর্বপ্রকার পুরস্কার ও শাস্তি-প্রদানের মালিক এবং যাবতীয় কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু। তিনি দূরত্ব সত্ত্বেও সন্নিকটে বিদ্যমান এবং নৈকট্য সত্ত্বেও তিনি দূরে অবসি’ত। তিনি সবচেয়ে গোপনীয় কিন্তু তাঁর চেয়েও বেশী প্রকাশ্য অন্য কেউ আছে একথা বলা যাবে না। তিনি নিজ সত্তায় জীবিত আর প্রত্যেক সত্তা তাঁর কারণে জীবন্ত। তিনি নিজ সত্তায় অনাদি এবং প্রতিটি জিনিষ তাঁর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত। তিনি যাবতীয় জিনিষের বাহক কিন্তু তিনি কারও দ্বারা বহনকৃত নন। এমন কিছুই নেই যা তাঁকে ছাড়াই নিজে নিজে সৃষ্ট কিংবা তাঁর সাহায্য ছাড়া নিজেই বেঁচে থাকতে পারে। তিনি প্রত্যেকটি বস্তুর পরিবেষ্টনকারী কিন্তু এই বেষ্টনী বোঝানো দুস্কর। তিনি আকাশ এবং পৃথিবীর প্রতিটি বস্তুর জ্যোতি এবং প্রত্যেকটি জ্যোতি তাঁর দ্বারা আলোকিত এবং তাঁরই সত্তার প্রতিবিম্ব। তিনি সমস্ত জগতের প্রতিপালক। এমন কোন আত্মা নেই যা তাঁর দ্��ারা পালিত না হয়ে নিজ সত্তায় বর্তমান। আত্মার যাবতীয় ক্ষমতা নিজ থেকে সৃষ্ট নয় বরং তাঁরই প্রদত্ত।” (ইসলাম ও এদেশের অন্যান্য ধর্মমত)
এই সুমহান বিশাল অস্তিত্বই আমাদের সবার আশ্রয়। আমাদের উৎস তিনি, আমাদের জীবন, আমাদের চৈতন্য, আমাদের যাবতীয় ইন্দ্রীয় ও শক্তি সব তাঁরই দান। এগুলোকে তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী কাজে লাগানোর যথাসাধ্য চেষ্টার নাম ইবাদত বা উপাসনা। সবশেষে আমাদের সবার প্রত্যাবর্তণ তাঁরই কাছে। তিনিই আমাদের হিসেব নিকেশ ও বিচার করবেন। আমরা তাঁর কাছে দয়া, ক্ষমা ও মার্জনা প্রত্যাশা করি।